চাহিদা মতো ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না খুলনার তরুণ উদ্যোক্তারা

প্রতিবছর যে সংখ্যক শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন করে বের হচ্ছেন, সেই সংখ্যক কর্মসংস্থান বাংলাদেশে নেই। তাই অল্প কিছু পদের বিপরীতে নিজের একটা চাকরি জোগাড় করতে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন বহু শিক্ষার্থী। যারা এই চাকরি যুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়ছেন তারা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পুঁজির অভাবে সেটিও শুরু করতে পারছেন না। ব্যাংকগুলোও নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চাচ্ছে না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নতুন উদ্যোক্তাদের এমন সমস্যার কথা জানান তরুণ উদ্যোক্তা এবং আবাসন ব্যবসায়ী বিশ্বাস প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজগর বিশ্বাস তারা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সংবাদ-এর খুলনা ব্যুরো চিফ শুভ্র শচীন।

সংবাদ : খুলনা কেন ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়লো বলে মনে করেন?

আজগর বিশ্বাস তারা : বিগত দিনগুলোতে খুলনা নিয়ে চিন্তা করার মতো মানুষ ও মানসিকতার বেশ ঘাটতি ছিল। সরকার পরিচালনায় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। এ কারণে খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। তবে বর্তমান সরকারের খুলনার দিকে নজর আছে।

সংবাদ : খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ এখন কেমন?

তারা : খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল অনুন্নত যোগাযোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার কারণে অনেকে খুলনায় শিল্পকারখানা স্থাপনে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয়নি। তবে পদ্মা সেতু হচ্ছে, খুলনা ও মোংলা রেলপথ তৈরি হচ্ছে। মোংলা বন্দরের কাজের গতি বেড়েছে।

সংবাদ : ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কী ব্যবসাবান্ধব বলে মনে করেন?

তারা : প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সুষম হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, স্বাস্থ্য, কৃষি, চিকিৎসাসহ সর্বক্ষেত্রে জনগণ এর সুফল পাবে। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার দিক প্রসারিত হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অভিনন্দন। বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পদ্মা সেতু চালুর পাশাপাশি খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই চালু করা দরকার। লকডাউনের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখলেও দোকান ভাড়া, ভ্যাট, ট্যাক্স, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে, এতে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সংবাদ : খুলনার তরুণ উদ্যোক্তারা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

তারা : খুলনার তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেটুকু এগিয়ে আসছেন, সেটা পুরোটা ব্যক্তি উদ্যোগে। তরুণ উদ্যোক্তারা যে ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা চান, তারা সেটি পাচ্ছেন না। তরুণদের ব্যবসায় আকৃষ্ট করতে হলে ব্যাংকিং সুবিধা বাড়াতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্স সহজ করতে হবে।

সংবাদ : পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে?

তারা : পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা আশাবাদী। আশা করছি, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এজন্য খুলনা শহরকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে এখন থেকেই। বর্তমানে যা হচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিকায়ন করতে হবে। বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। সে বাজার ধরতে হলে শিল্পাঞ্চলে প্রাণ ফেরাতে হবে। এখানে কর্মসংস্থান তৈরি হলে এ শিল্পে জড়িত কলকারখানা, পাট পরিবহন, সরবরাহ সব খাতই চাঙা হবে।

সংবাদ : আবাসন ব্যবসা এখন কেমন?

তারা : গত এক বছরে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে বিভাগীয় শহর খুলনার আবাসন খাতের উর্ধ্বমুখী গতি ক্রমাগত কমেছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্লট ও ফ্ল্যাটের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শতাধিক প্রতিষ্ঠান এখন ধুঁকছে। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এই খাতের অসংখ্য নির্মাণ স্থাপনা। আবাসন ব্যবসায়ীরা এ খাতে যে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে। অথচ বর্তমানে কোন বিক্রি নেই। যারা বুকিং দিয়েছিলেন, তারা অর্থাভাবে টাকা ফেরত নিচ্ছেন। তবুও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মহামারীতে ঝুঁকিতে থাকা আবাসন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা বা প্রণোদনার প্রয়োজন।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

চাহিদা মতো ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না খুলনার তরুণ উদ্যোক্তারা

image

প্রতিবছর যে সংখ্যক শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন করে বের হচ্ছেন, সেই সংখ্যক কর্মসংস্থান বাংলাদেশে নেই। তাই অল্প কিছু পদের বিপরীতে নিজের একটা চাকরি জোগাড় করতে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন বহু শিক্ষার্থী। যারা এই চাকরি যুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়ছেন তারা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পুঁজির অভাবে সেটিও শুরু করতে পারছেন না। ব্যাংকগুলোও নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চাচ্ছে না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নতুন উদ্যোক্তাদের এমন সমস্যার কথা জানান তরুণ উদ্যোক্তা এবং আবাসন ব্যবসায়ী বিশ্বাস প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজগর বিশ্বাস তারা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সংবাদ-এর খুলনা ব্যুরো চিফ শুভ্র শচীন।

সংবাদ : খুলনা কেন ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়লো বলে মনে করেন?

আজগর বিশ্বাস তারা : বিগত দিনগুলোতে খুলনা নিয়ে চিন্তা করার মতো মানুষ ও মানসিকতার বেশ ঘাটতি ছিল। সরকার পরিচালনায় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। এ কারণে খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। তবে বর্তমান সরকারের খুলনার দিকে নজর আছে।

সংবাদ : খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ এখন কেমন?

তারা : খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল অনুন্নত যোগাযোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার কারণে অনেকে খুলনায় শিল্পকারখানা স্থাপনে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয়নি। তবে পদ্মা সেতু হচ্ছে, খুলনা ও মোংলা রেলপথ তৈরি হচ্ছে। মোংলা বন্দরের কাজের গতি বেড়েছে।

সংবাদ : ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কী ব্যবসাবান্ধব বলে মনে করেন?

তারা : প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সুষম হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, স্বাস্থ্য, কৃষি, চিকিৎসাসহ সর্বক্ষেত্রে জনগণ এর সুফল পাবে। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার দিক প্রসারিত হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অভিনন্দন। বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পদ্মা সেতু চালুর পাশাপাশি খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই চালু করা দরকার। লকডাউনের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখলেও দোকান ভাড়া, ভ্যাট, ট্যাক্স, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে, এতে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সংবাদ : খুলনার তরুণ উদ্যোক্তারা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

তারা : খুলনার তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেটুকু এগিয়ে আসছেন, সেটা পুরোটা ব্যক্তি উদ্যোগে। তরুণ উদ্যোক্তারা যে ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা চান, তারা সেটি পাচ্ছেন না। তরুণদের ব্যবসায় আকৃষ্ট করতে হলে ব্যাংকিং সুবিধা বাড়াতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্স সহজ করতে হবে।

সংবাদ : পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে?

তারা : পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা আশাবাদী। আশা করছি, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এজন্য খুলনা শহরকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে এখন থেকেই। বর্তমানে যা হচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিকায়ন করতে হবে। বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। সে বাজার ধরতে হলে শিল্পাঞ্চলে প্রাণ ফেরাতে হবে। এখানে কর্মসংস্থান তৈরি হলে এ শিল্পে জড়িত কলকারখানা, পাট পরিবহন, সরবরাহ সব খাতই চাঙা হবে।

সংবাদ : আবাসন ব্যবসা এখন কেমন?

তারা : গত এক বছরে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে বিভাগীয় শহর খুলনার আবাসন খাতের উর্ধ্বমুখী গতি ক্রমাগত কমেছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্লট ও ফ্ল্যাটের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শতাধিক প্রতিষ্ঠান এখন ধুঁকছে। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এই খাতের অসংখ্য নির্মাণ স্থাপনা। আবাসন ব্যবসায়ীরা এ খাতে যে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে। অথচ বর্তমানে কোন বিক্রি নেই। যারা বুকিং দিয়েছিলেন, তারা অর্থাভাবে টাকা ফেরত নিচ্ছেন। তবুও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মহামারীতে ঝুঁকিতে থাকা আবাসন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা বা প্রণোদনার প্রয়োজন।