মুকসুদপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতারণায় নিঃস্ব দুই পরিবার

গোপালগঞ্জের কাশালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও মুকসুদপুর আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের প্রতারণায় ২টি হিন্দু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

কাশালিয়া ইউপির হাজরাগাতি গ্রামের সুদেব ঢালী ওরফে মদন ঢালী বলেন, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে আমার ছেলে মিল্টন ঢালীকে হাজরাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী পদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। ধার ও চড়া সুদে দেনা করে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই । তিনি আমার ছেলেকে চাকরি না দিয়ে অন্যকে চাকরি দেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যস্থতায় চেয়ারম্যান আমাকে ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল ৪ লাখ টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন। পাওনা টাকা চাইতে গেলে ভয়ভীতি দেখান। এখন টাকা দেবেনা বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। আমি যাদের কাছ থেকে ধার দেনা ও সুদে টাকা এনেছিলাম, তারা টাকার জন্য আমার ওপর চাপ দিচ্ছে। টাকা ফেরত দেয়ার আবস্থা আমার নেই।

আরেক ঘটনার শিকার ননীক্ষির গ্রামের সুনিল বড়ৈ বলেন, আমরা গরিব কৃষক। ২৮ বছর আগে আমাদের গ্রামের ময়নাল ফকিরের মাধ্যমে ২ বিঘা জমি বিক্রির প্রস্তাব পাঠান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। আমরা মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা এনে ময়নাল ফকিরের মাধ্যমে নগদ ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই। তারপর থেকে ২৫ বছর আমরা জমিতে চাষাবাদ করে ফসল ফলিয়ে ভোগ দখল করে আসছিলাম। এরমধ্যে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও চেয়ারম্যান আমাদের জমি লিখে দেননি। আমরা এখনও মহাজনের টাকা শোধ করতে পারিনি। বর্তমানে এ জমির বাজার দর প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ৩ বছর আগে তিনি আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে জোরপূর্বক ক্ষেতের বোরো ধান কেটে নেন। এ ব্যাপারে আমারা কোর্টে মামলা করি ও গোপালগঞ্জ-১ আসনের সাংসদকে অবহিত করি। তিনি মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান মিয়াকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। আমরা অতিকুর রহমান মিয়ার অনুরোধে কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করি। ৫ বার সালিশ বৈঠক বসান আতিয়ার মিয়া। চেয়ারম্যান সালিশ অমান্য করেন। চেয়ারম্যানের পরিকল্পিত প্রতারণায় আমরা এখন দিশেহারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় হিন্দুরা জানান, চেয়ারম্যানের ছেলে রিমুর নেতৃত্বে এলাকায় মাদক ব্যবসা চলছে। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশ তাকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, হিন্দুদের কাছে আমি জমি বন্ধক রেখে ছিলাম। ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা ফেরত দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নিয়েছি। চাকরি দেয়ার কথা বলে সুদেব ঢালির কাছ থেকে যে টাকা নিয়ে ছিলাম, তার মধ্যে ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার বাগ্ বিত-া হয়েছে মাত্র। আমি তাদের কোন ভয়ভীতি দেখাইনি। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে ৫টি ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়ে ছিল। তার বিরুদ্ধে এ মাদক মামলা চলমান রয়েছে। তবে এ বিষয় নিয়ে তিনি সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

মুকসুদপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতারণায় নিঃস্ব দুই পরিবার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, গোপালগঞ্জ

image

গোপালগঞ্জের কাশালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও মুকসুদপুর আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের প্রতারণায় ২টি হিন্দু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

কাশালিয়া ইউপির হাজরাগাতি গ্রামের সুদেব ঢালী ওরফে মদন ঢালী বলেন, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে আমার ছেলে মিল্টন ঢালীকে হাজরাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী পদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। ধার ও চড়া সুদে দেনা করে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই । তিনি আমার ছেলেকে চাকরি না দিয়ে অন্যকে চাকরি দেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যস্থতায় চেয়ারম্যান আমাকে ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল ৪ লাখ টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন। পাওনা টাকা চাইতে গেলে ভয়ভীতি দেখান। এখন টাকা দেবেনা বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। আমি যাদের কাছ থেকে ধার দেনা ও সুদে টাকা এনেছিলাম, তারা টাকার জন্য আমার ওপর চাপ দিচ্ছে। টাকা ফেরত দেয়ার আবস্থা আমার নেই।

আরেক ঘটনার শিকার ননীক্ষির গ্রামের সুনিল বড়ৈ বলেন, আমরা গরিব কৃষক। ২৮ বছর আগে আমাদের গ্রামের ময়নাল ফকিরের মাধ্যমে ২ বিঘা জমি বিক্রির প্রস্তাব পাঠান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। আমরা মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা এনে ময়নাল ফকিরের মাধ্যমে নগদ ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই। তারপর থেকে ২৫ বছর আমরা জমিতে চাষাবাদ করে ফসল ফলিয়ে ভোগ দখল করে আসছিলাম। এরমধ্যে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও চেয়ারম্যান আমাদের জমি লিখে দেননি। আমরা এখনও মহাজনের টাকা শোধ করতে পারিনি। বর্তমানে এ জমির বাজার দর প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ৩ বছর আগে তিনি আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে জোরপূর্বক ক্ষেতের বোরো ধান কেটে নেন। এ ব্যাপারে আমারা কোর্টে মামলা করি ও গোপালগঞ্জ-১ আসনের সাংসদকে অবহিত করি। তিনি মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান মিয়াকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। আমরা অতিকুর রহমান মিয়ার অনুরোধে কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করি। ৫ বার সালিশ বৈঠক বসান আতিয়ার মিয়া। চেয়ারম্যান সালিশ অমান্য করেন। চেয়ারম্যানের পরিকল্পিত প্রতারণায় আমরা এখন দিশেহারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় হিন্দুরা জানান, চেয়ারম্যানের ছেলে রিমুর নেতৃত্বে এলাকায় মাদক ব্যবসা চলছে। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশ তাকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, হিন্দুদের কাছে আমি জমি বন্ধক রেখে ছিলাম। ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা ফেরত দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নিয়েছি। চাকরি দেয়ার কথা বলে সুদেব ঢালির কাছ থেকে যে টাকা নিয়ে ছিলাম, তার মধ্যে ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার বাগ্ বিত-া হয়েছে মাত্র। আমি তাদের কোন ভয়ভীতি দেখাইনি। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে ৫টি ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়ে ছিল। তার বিরুদ্ধে এ মাদক মামলা চলমান রয়েছে। তবে এ বিষয় নিয়ে তিনি সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন।