কোম্পানীগঞ্জ ফের অশান্ত, সংঘর্ষ, গুলি, আহত ১০

৪৮ ঘণ্টার হরতাল

আবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল এক পক্ষ ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়। হরতাল চলাকালে কোম্পানীগঞ্জ জুড়ে দুই পক্ষের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বাদলের পক্ষ রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ ও উস্কানিমূলক সেøাগান দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের গুলি করে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।

গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে এসপি আলমগীর হোসেন সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, আন্দোলনকারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে ও টায়ার জালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ওই সময় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ৯টার দিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আ’লীগ নেতা আলালসহ ঢাকায় রওনা দেয়। যাত্রাপথে বসুরহাট পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে কাদের মির্জা তার ৪০-৫০ জন অনুসারী নিয়ে বাজার পরিদর্শন করে আসার পথে বাদলের গাড়ির মুখোমুখি হয়। এ সময় কাদের মির্জার নির্দেশে তার অনুসারী রাসেল, মাসুদ, শিহাব, সজল, আরিফ, ওয়াসিমসহ ৪০-৫০ জন অনুসারী মিজানুর রহমান বাদলের গাড়ির গতি রোধ করে হামলা চালায়। সেতুমন্ত্রীর ভাগনে মঞ্জু অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা প্রথমে তার গাড়িতে গুলি করে। এক পর্যায়ে গাড়ির ভিতর থেকে তাকে টেনেহিচড়ে নামিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তার হাত-মাথা ফাটিয়ে দেয়, পা ও বুকের হাড় ভেঙে দেয় এবং কানে গুরুতর জখম করে।

বাদলের সফরসঙ্গী আ’লীগ নেতা আলাল জানান, চাপরাশিরহাট বাজার থেকে সকাল ৯টার দিকে আমরা দুইজন বসুরহাট হয়ে গাড়িতে করে ঢাকা যাচ্ছিলাম। যাত্রাপথে আমাদের গাড়িটি বসুরহাট বাজারে পৌঁছলে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা গাড়ির গতিরোধ করে প্রথমে গাড়ির পিছনে গুলি করে। একপর্যায়ে বাদলসহ আমাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে বুকের হাড়, হাত-পা ভেঙে দেয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. জোবায়ের জানান, তার বুক, হাত, পা, মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলার প্রতিবাদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ বাদল গ্রুপ ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের মুখপাত্র ও সেতুমন্ত্রীর ভাগনে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু উপজেলা আ’লীগের পক্ষ থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা এই হরতালের ডাক দেন।

এ সময় লাইভে তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সেতুমন্ত্রীর ভাগিনা জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম রাহাত।

মঞ্জু লাইভে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ডুয়েল রোল প্লে করছেন বলেও অভিযোগ করেন। এই ডুয়েল রোল প্লে করে আপনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের নেতাকর্মীদের মান-সম্মান নষ্ট করে দিয়েছেন। আমরা প্রতিবাদ করেছি। আপনি আমাদের মাঠে নামিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরাও মুখ খুলবো। তিনি কাদের মির্জা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর গ্রেপ্তার দাবি করেন। এ বিষয়ে জানতে কাদের মির্জার ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার এক অনুসারী জানান, বসুরহাট বাজারে বাদলের গাড়ি এক যাত্রীকে ধাক্কা দিলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়েছে বলে শুনেছি।

স্থানীয়রা জানান, হরতাল চলাকালে মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ। বাদল সমর্থকরা টেকেরবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেছে কোম্পানিগঞ্জ পুলিশ এখানে গেলে বাদল সমর্থকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পুলিশের গাড়িসহ পুলিশের নিরাপত্তার স্বার্থে শটগানের গুলি করলে বাদলের ৪ অনুসারী গুলিবিদ্ধ হয়।

বাদল অনুসারী চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন জানায়, গুলিবিদ্ধরা হলো, চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিয়াল্লাগো বাড়ির বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম সবুজ (৫৫), তার ছেলে চয়ন (২০), ও তার ভাগিনা আরিয়ান (২৩), চরকাঁকড়া ইউনিয়নের রুপনগর গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় (২৮) ।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, রাস্তায় পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে পুলিশ পাল্টা শটগানের গুলি ছোড়ে। তবে এ ঘটনায় কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল। পুলিশ সরাতে গেলে তারা পুলিশের গাড়ি ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের শটগানের ২০-২২ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ মাসের বেশি সময় ধরে কোম্পানীগঞ্জে এ সংঘর্ষ চলছে।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

আ’লীগের দু’গ্রুপে দ্বন্দ্ব

কোম্পানীগঞ্জ ফের অশান্ত, সংঘর্ষ, গুলি, আহত ১০

৪৮ ঘণ্টার হরতাল

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

আবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল এক পক্ষ ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়। হরতাল চলাকালে কোম্পানীগঞ্জ জুড়ে দুই পক্ষের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বাদলের পক্ষ রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ ও উস্কানিমূলক সেøাগান দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের গুলি করে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।

গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে এসপি আলমগীর হোসেন সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, আন্দোলনকারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে ও টায়ার জালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ওই সময় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ৯টার দিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আ’লীগ নেতা আলালসহ ঢাকায় রওনা দেয়। যাত্রাপথে বসুরহাট পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে কাদের মির্জা তার ৪০-৫০ জন অনুসারী নিয়ে বাজার পরিদর্শন করে আসার পথে বাদলের গাড়ির মুখোমুখি হয়। এ সময় কাদের মির্জার নির্দেশে তার অনুসারী রাসেল, মাসুদ, শিহাব, সজল, আরিফ, ওয়াসিমসহ ৪০-৫০ জন অনুসারী মিজানুর রহমান বাদলের গাড়ির গতি রোধ করে হামলা চালায়। সেতুমন্ত্রীর ভাগনে মঞ্জু অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা প্রথমে তার গাড়িতে গুলি করে। এক পর্যায়ে গাড়ির ভিতর থেকে তাকে টেনেহিচড়ে নামিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তার হাত-মাথা ফাটিয়ে দেয়, পা ও বুকের হাড় ভেঙে দেয় এবং কানে গুরুতর জখম করে।

বাদলের সফরসঙ্গী আ’লীগ নেতা আলাল জানান, চাপরাশিরহাট বাজার থেকে সকাল ৯টার দিকে আমরা দুইজন বসুরহাট হয়ে গাড়িতে করে ঢাকা যাচ্ছিলাম। যাত্রাপথে আমাদের গাড়িটি বসুরহাট বাজারে পৌঁছলে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা গাড়ির গতিরোধ করে প্রথমে গাড়ির পিছনে গুলি করে। একপর্যায়ে বাদলসহ আমাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে বুকের হাড়, হাত-পা ভেঙে দেয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. জোবায়ের জানান, তার বুক, হাত, পা, মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলার প্রতিবাদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ বাদল গ্রুপ ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের মুখপাত্র ও সেতুমন্ত্রীর ভাগনে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু উপজেলা আ’লীগের পক্ষ থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা এই হরতালের ডাক দেন।

এ সময় লাইভে তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সেতুমন্ত্রীর ভাগিনা জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম রাহাত।

মঞ্জু লাইভে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ডুয়েল রোল প্লে করছেন বলেও অভিযোগ করেন। এই ডুয়েল রোল প্লে করে আপনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের নেতাকর্মীদের মান-সম্মান নষ্ট করে দিয়েছেন। আমরা প্রতিবাদ করেছি। আপনি আমাদের মাঠে নামিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরাও মুখ খুলবো। তিনি কাদের মির্জা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর গ্রেপ্তার দাবি করেন। এ বিষয়ে জানতে কাদের মির্জার ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার এক অনুসারী জানান, বসুরহাট বাজারে বাদলের গাড়ি এক যাত্রীকে ধাক্কা দিলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়েছে বলে শুনেছি।

স্থানীয়রা জানান, হরতাল চলাকালে মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ। বাদল সমর্থকরা টেকেরবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেছে কোম্পানিগঞ্জ পুলিশ এখানে গেলে বাদল সমর্থকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পুলিশের গাড়িসহ পুলিশের নিরাপত্তার স্বার্থে শটগানের গুলি করলে বাদলের ৪ অনুসারী গুলিবিদ্ধ হয়।

বাদল অনুসারী চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন জানায়, গুলিবিদ্ধরা হলো, চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিয়াল্লাগো বাড়ির বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম সবুজ (৫৫), তার ছেলে চয়ন (২০), ও তার ভাগিনা আরিয়ান (২৩), চরকাঁকড়া ইউনিয়নের রুপনগর গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় (২৮) ।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, রাস্তায় পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে পুলিশ পাল্টা শটগানের গুলি ছোড়ে। তবে এ ঘটনায় কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল। পুলিশ সরাতে গেলে তারা পুলিশের গাড়ি ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের শটগানের ২০-২২ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ মাসের বেশি সময় ধরে কোম্পানীগঞ্জে এ সংঘর্ষ চলছে।