সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ, যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে গ্রেপ্তার জঙ্গি সাখাওয়াত

তিনদিনের রিমান্ডে

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এক নেতাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে আহলে হাদিসপন্থীদের একটি মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে শনিবার নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ জানিয়েছে। গ্রেপ্তার সাখাওয়াত আলী লালু (৪০) সংগঠনটির আইটি বিশেষজ্ঞ বলে পুলিশ জানিয়েছে। সে নগরীর দামপাড়া এমএম আলী সড়কের বাসিন্দা শেখ মো. শমসের আলীর ছেলে।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাছিব খান বলেন, শুক্রবার রাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় আহলে হাদিস জামে মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, সাখাওয়াত আলী ২০১২ সালে তার আত্মীয় মো. আরিফ মামুনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ অন্যদের নিয়ে জঙ্গি তৎপরতা চালান। যুদ্ধ করার জন্য চার বছর আগে বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় যান তিনি। এরপর গত ২২ মার্চ দেশে ফিরেন। খুলশী থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে সিরিয়া ফেরত আনসার আল ইসলামের ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’ সাখাওয়াত আলী ওরফে লালুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড পেয়েছে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজা পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপির সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়, শাখাওয়াত আলী ওরফে লালু ২০১২ সাল থেকে তার ভায়রা ভাই আরিফ এবং মামুনদের অনুপ্রেরণায় জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। তাদের সংগঠনের নেতা মোয়াজসহ (চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া) মনসুরাবাদ এলাকার হুজুর শফিক, চট্টগ্রাম লালখান বাজার এলাকার এসির দোকানে কর্মচারী ওমর ফারুকদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’-এর সদস্যদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। গ্রেপ্তার লালু বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে বিভিন্ন প্রকার জিহাদি কার্যক্রম প্রচারের কাজে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োজিত ছিল। পরবর্তীতে তিনি জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে তুরস্ক যান। তুরস্ক থেকে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়াতে প্রবেশ করে দীর্ঘ ছয় মাস ‘হায়াত তাহরীর আরশাম’ এর কাছে থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে সিরিয়ার ‘ইদলিব’ এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

পরবর্তীতে তিনি সিরিয়া থেকে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে তুরস্ক হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করে। এর পর ইন্দোনেশিয়া থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে পুনরায় ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে বসবাস করে। ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকালীন সময়ে জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে চলতি বছরের ২২ মার্চ বাংলাদেশে এসে জঙ্গি সংগঠনের পক্ষে বাংলাদেশের অ-তা, সংহতি, জননিরাপত্তা বিঘ্ন, বাংলাদেশেকে অস্থিতিশীল, অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার উদ্দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাক্তক অবনতি ও সন্ত্রাসী কার্য ঘটানোর উদ্দেশে বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিল।

রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২

সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ, যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে গ্রেপ্তার জঙ্গি সাখাওয়াত

তিনদিনের রিমান্ডে

চট্টগ্রাম ব্যুরো

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এক নেতাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে আহলে হাদিসপন্থীদের একটি মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে শনিবার নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ জানিয়েছে। গ্রেপ্তার সাখাওয়াত আলী লালু (৪০) সংগঠনটির আইটি বিশেষজ্ঞ বলে পুলিশ জানিয়েছে। সে নগরীর দামপাড়া এমএম আলী সড়কের বাসিন্দা শেখ মো. শমসের আলীর ছেলে।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাছিব খান বলেন, শুক্রবার রাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় আহলে হাদিস জামে মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, সাখাওয়াত আলী ২০১২ সালে তার আত্মীয় মো. আরিফ মামুনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ অন্যদের নিয়ে জঙ্গি তৎপরতা চালান। যুদ্ধ করার জন্য চার বছর আগে বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় যান তিনি। এরপর গত ২২ মার্চ দেশে ফিরেন। খুলশী থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে সিরিয়া ফেরত আনসার আল ইসলামের ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’ সাখাওয়াত আলী ওরফে লালুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড পেয়েছে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজা পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপির সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়, শাখাওয়াত আলী ওরফে লালু ২০১২ সাল থেকে তার ভায়রা ভাই আরিফ এবং মামুনদের অনুপ্রেরণায় জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। তাদের সংগঠনের নেতা মোয়াজসহ (চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া) মনসুরাবাদ এলাকার হুজুর শফিক, চট্টগ্রাম লালখান বাজার এলাকার এসির দোকানে কর্মচারী ওমর ফারুকদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’-এর সদস্যদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। গ্রেপ্তার লালু বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে বিভিন্ন প্রকার জিহাদি কার্যক্রম প্রচারের কাজে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োজিত ছিল। পরবর্তীতে তিনি জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে তুরস্ক যান। তুরস্ক থেকে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়াতে প্রবেশ করে দীর্ঘ ছয় মাস ‘হায়াত তাহরীর আরশাম’ এর কাছে থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে সিরিয়ার ‘ইদলিব’ এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

পরবর্তীতে তিনি সিরিয়া থেকে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে তুরস্ক হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করে। এর পর ইন্দোনেশিয়া থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে পুনরায় ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে বসবাস করে। ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকালীন সময়ে জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে চলতি বছরের ২২ মার্চ বাংলাদেশে এসে জঙ্গি সংগঠনের পক্ষে বাংলাদেশের অ-তা, সংহতি, জননিরাপত্তা বিঘ্ন, বাংলাদেশেকে অস্থিতিশীল, অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার উদ্দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাক্তক অবনতি ও সন্ত্রাসী কার্য ঘটানোর উদ্দেশে বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিল।