কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা করার জন্য জি-৭সহ ধনীদেশগুলোর ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করে অবশ্যই স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার মতো নাগরিক পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতিকারক কয়লা-বিদ্যুৎভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে সব ধরনের বিনিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। শনিবার চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এ আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্যাব যুব গ্রুপ, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।
যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে চলমান জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের (জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও কানাডা) প্রদত্ত ঋণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে এ মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে জি-৭ অন্যতম। এসব দেশ বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ও প্রধান বিনিয়োগকারী। এসব দেশই আবার জি-৭-এর সদস্য। আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বিপদে ফেলে এসব ধনী দেশ মুনাফা ভোগ করছে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক দেনার পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে যা দেশের বাজেটের সমান। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুসারে এ বছরও বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। এ বছর ঋণের সুদ হিসেবে ৫৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে- যা মোট বাজেটের প্রায় ১০% এবং কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতের মোট বরাদ্দের চেয়েও বেশি। এখন ঋণ শোধ করতে গিয়ে এ সমস্ত দেশগুলোর মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার টাকারও ওপরে। এছাড়া বৈদেশিক দেনার আসল ও সুদসহ পরিশোধ করতে হবে আরও ১৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক দেনা বাতিল করলে এ আর্থসামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার ভয়াবহ বিপর্যয় রোধ, পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন ও এ সংক্রান্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রকল্প তেল, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করে ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে, ২১০০ সাল নাগাদ মানুষের অস্থিত্ব রক্ষা করতে হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামাতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সবচেয়ে বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার। তাই, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)-এর সুপারিশ অনুসারে এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সে কারণে সিডর, আইলা, মহাসেন, বিজলি, আম্পান ও ইয়াসসহ ছোটবড় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টিতে প্রতিবছর আক্রান্ত হচ্ছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা হারাচ্ছে। আর এ সমস্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের পরিবেশ ধ্বংস করছে, বাতাসে আরও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করবে, মার্কারি ও সালফার দূষণের কারণে ফসল নষ্ট হবে, মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটবে এবং দেশ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জালে আটকে যাবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এসএম নাজের হোসাইন, অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ (এডাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, এডাব চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ও বনফুলের নির্বাহী পরিচালক রেজিয়া বেগম, বোয়ালখালী ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ চেয়ারম্যান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ জানে আলম, বাংলাদেশ ভেজিটেবল এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম জাহাঙ্গীর, বন গবেষণাগার ফরেস্ট কলেজের অধ্যাপক এবিএম হুমায়ন কবির, নারী নেত্রী ফারহানা জসিম, কিন্ডার গার্টেন ঐক্য পরিষদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, চান্দগাঁও ল্যাবরেটরি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাইল ফারুকী, প্রশিকার হারুন গফুর ভূইয়া, প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হক, ক্যাবের তাজমুন্নাহার হামিদ, সিএসডিএফ’র শম্পা কে নাহার, ক্যাব যুব গ্রুপের রাশিদা বিনতে ইসলাম, শাহরিয়ার আলম তৌওসিফ, আইএসডিই’র আরিফুল ইসলাম ও ইশিকা ফাউন্ডেশনের জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।
রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩১ রজব ১৪৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা করার জন্য জি-৭সহ ধনীদেশগুলোর ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করে অবশ্যই স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার মতো নাগরিক পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতিকারক কয়লা-বিদ্যুৎভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে সব ধরনের বিনিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। শনিবার চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এ আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্যাব যুব গ্রুপ, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।
যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে চলমান জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের (জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও কানাডা) প্রদত্ত ঋণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে এ মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে জি-৭ অন্যতম। এসব দেশ বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ও প্রধান বিনিয়োগকারী। এসব দেশই আবার জি-৭-এর সদস্য। আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বিপদে ফেলে এসব ধনী দেশ মুনাফা ভোগ করছে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক দেনার পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে যা দেশের বাজেটের সমান। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুসারে এ বছরও বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। এ বছর ঋণের সুদ হিসেবে ৫৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে- যা মোট বাজেটের প্রায় ১০% এবং কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতের মোট বরাদ্দের চেয়েও বেশি। এখন ঋণ শোধ করতে গিয়ে এ সমস্ত দেশগুলোর মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার টাকারও ওপরে। এছাড়া বৈদেশিক দেনার আসল ও সুদসহ পরিশোধ করতে হবে আরও ১৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক দেনা বাতিল করলে এ আর্থসামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার ভয়াবহ বিপর্যয় রোধ, পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন ও এ সংক্রান্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রকল্প তেল, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করে ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে, ২১০০ সাল নাগাদ মানুষের অস্থিত্ব রক্ষা করতে হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামাতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সবচেয়ে বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার। তাই, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)-এর সুপারিশ অনুসারে এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সে কারণে সিডর, আইলা, মহাসেন, বিজলি, আম্পান ও ইয়াসসহ ছোটবড় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টিতে প্রতিবছর আক্রান্ত হচ্ছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা হারাচ্ছে। আর এ সমস্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের পরিবেশ ধ্বংস করছে, বাতাসে আরও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করবে, মার্কারি ও সালফার দূষণের কারণে ফসল নষ্ট হবে, মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটবে এবং দেশ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জালে আটকে যাবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এসএম নাজের হোসাইন, অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ (এডাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, এডাব চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ও বনফুলের নির্বাহী পরিচালক রেজিয়া বেগম, বোয়ালখালী ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ চেয়ারম্যান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ জানে আলম, বাংলাদেশ ভেজিটেবল এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম জাহাঙ্গীর, বন গবেষণাগার ফরেস্ট কলেজের অধ্যাপক এবিএম হুমায়ন কবির, নারী নেত্রী ফারহানা জসিম, কিন্ডার গার্টেন ঐক্য পরিষদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, চান্দগাঁও ল্যাবরেটরি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাইল ফারুকী, প্রশিকার হারুন গফুর ভূইয়া, প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হক, ক্যাবের তাজমুন্নাহার হামিদ, সিএসডিএফ’র শম্পা কে নাহার, ক্যাব যুব গ্রুপের রাশিদা বিনতে ইসলাম, শাহরিয়ার আলম তৌওসিফ, আইএসডিই’র আরিফুল ইসলাম ও ইশিকা ফাউন্ডেশনের জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।