সংক্রমণের হট স্পট খুলনা

দশ জেলায় সংক্রমণ হার একদিনে ৩৭ শতাংশের বেশি, রাজশাহী দ্বিতীয়

করোনা সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগের দশ জেলায় গত একদিনে সংক্রমণের হার ছিল ৩৭ শতাংশের বেশি। সংক্রমণের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ; সেখানে গতকাল সংক্রমণের হার ছিল ১৮ শতাংশের কাছাকাছি। তবে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা বেশিরভাগই সীমান্তবর্তী জেলা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২৪ ঘণ্টার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ১০ জনের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছেÑ এমন জেলা ৪০টি। এর মধ্যে ৩১ জেলায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি।

ঢাকা বিভাগেও সংক্রমণ হার বাড়ছে। গত সপ্তাহে ঢাকা মহানগরসহ এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ০১ শতাংশ; আগের সপ্তাহে যা ছিল ৬ শতাংশের কাছাকাছি।

শনাক্তের হার কম থাকলেও শনাক্তের সংখ্যায় খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সমান অবস্থানেই রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা বেশি হচ্ছে; কারণ প্রতিদিন বিদেশগামী ৩ থেকে ৫ হাজার লোকের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, যাদের শরীরে করোনার উপসর্গ নেই।

সীমান্ত জেলার হাসপাতালে

‘শয্যা’ সংকট

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল এক বুলেটিনে জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা খালি থাকছে না।

গত জানুয়ারি থেকে হিসাব করলে এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে জানিয়ে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘জুনে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। গত কিছু দিনে আমরা খেয়াল করেছি, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ হার বেড়ে গেছে।’

সেই জেলাগুলোকে তিনটি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রথম ক্লাস্টারে রয়েছে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর। সেখানে শতকরা হিসেবে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় ক্লাস্টারে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ।’

তৃতীয় ক্লাস্টারে রয়েছে সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা। এই জেলাগুলোতে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে ডা. নাজমুল বলেন, ‘সেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা অনুরোধ করব মৃদু উপসর্গ দেখা দিলেই যেন প্রত্যেকে হাসপাতালে যান।’

সীমান্ত এলাকা ছাড়াও কিছু জেলায় পরীক্ষায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘যেমন ফরিদপুর। কম পরীক্ষা হচ্ছে বলেই শতকরা হার বেশি দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার চাপ বেশি সেখান থেকে তুলনামূলক চাপ কম এমন ল্যাবে নমুনা পাঠানো হবে। গতকাল রাজশাহীতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিছু নমুনা বগুড়ায় পাঠিয়ে দিতে।’

এই মুহূর্তে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সে জন্য উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর উপস্থিতি বাড়লে আমরা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়াতে পারি। অধিক সংক্রমিত সীমান্তবর্তী এলাকায় বিনামূল্যে পরীক্ষা হচ্ছে।’

ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার বেশি টাঙ্গাইলে

ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৫১০টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৭ দশমিক ০১ শতাংশ।

এর মধ্যে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ৫২৮ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে; শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া ফরিদপুরে ২২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ; কিশোরগঞ্জে ২২ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ; টাঙ্গাইলে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগে সংক্রমণ হারে শীর্ষে জামালপুর

ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় একদিনে ৫১৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় এদিন ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তে হার ১০ দশমিক ২১ শতাংশ; জামালপুরে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ; শেরপুরে ১৭ জনের করোনা পাওয়া গেছে এবং শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্তের হার বেশি নোয়াখালীতে

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৯১৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ; কক্সবাজারে ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ; নোয়াখালীতে ১০ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ; ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণে শীর্ষে রাজশাহী জেলা

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় গত একদিনে তিন হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ; চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ; নাটোরে ৬৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ; নওগাঁয় ৪৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ; সিরাজগঞ্জে ২০ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ; বগুড়ায় ২৩ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ; জয়পুরহাটে ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।

রংপুর বিভাগে সংক্রমণে শীর্ষে ঠাকুরগাঁও

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গত একদিনে ৫৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তে হার ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এর মধ্যে রংপুরে ২৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ; লালমনিরহাটে ১২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ; কুড়িগ্রামে ১৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ; ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৬৬ শতাংশ; দিনাজপুরে ৪৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

খুলনার ১০ জেলায় উচ্চ সংক্রমণ

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৬০৬ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

এর মধ্যে বাগেরহাটে ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের ৫০ শতাংশ; চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ; যশোরে ১৪৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের ৩৪ দশমিক ৫২ শতাংশ; ঝিনাইদহে ৫১ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ১৩ শতাংশ; খুলনায় ১১৮ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ; কুষ্টিয়ায় ৭৪ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ; মাগুরায় ১৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ; মেহেরপুরে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ; নড়াইলে ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৭৪ শতাংশ; সাতক্ষীরায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৬৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।

বরিশালের ৬টি জেলায় গত একদিনে ৩২২টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।

এছাড়া সিলেটের চার জেলায় গত একদিনে ৫২১টি নমুনা পরীক্ষায় ৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ বিভাগে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে সিলেটে ৫১ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ; মৌলভীবাজারে ১৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মৃত্যু

করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজার ৪৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

একদিনে মৃত্যুর ওই সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৯ মে দেশে এর চেয়ে বেশি (৫৬ জন) মৃত্যু হয়েছিল।

গত একদিনে নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো আট লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জনে আর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ১১৮ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

একদিনে দুই হাজার ২৪২ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১২টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ১১২টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ১৫ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। অন্যদের মধ্যে ৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ছয়জন রাজশাহী বিভাগের, আটজন খুলনা বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের, দুইজন সিলেট বিভাগের, চারজন রংপুর বিভাগের এবং দুইজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩২ এবং নারী ১৫ জন।

সাতক্ষীরায় আরও চারজনের মৃত্যু

সাতক্ষীরা : সাড়ে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সমাকে) ও সদর হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১২ জুন) রাত সাড়ে ৮টা থেকে রোববার (১৩ জুন) ভোর ৫টার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাদের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুইজন ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শতকরা হারে যা ৬৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩শ’ ৭৬ জন।

এদিকে, ঢিলেঢালাভাবে পালন করা হয় দ্বিতীয় দফা লকডাউনের দ্বিতীয় দিন। গ্রামাঞ্চলে পুলিশের তৎপরতা তেমন একটা দেখা যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিও দেখা যায়নি কোথাও। শহরে কিছু কিছু জায়গায় ব্যারিকেড দেয়া থাকলেও যান চলাচল বেশ স্বাভাবিক ছিল।

রংপুর বিভাগে আরও ৪ জনের মৃত্যু

রংপুর : করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ নিয়ে রংপুর বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪শ’ ৩৩ জনে। যে ৪ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে রংপুর , ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুরে একজন করে মারা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবে ৫৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষার পর ১৬২ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের মধ্যে সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুর জেলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

দিনাজপুরে নতুন শনাক্ত ৪৫

দিনাজপুর : সীমান্ত জেলা দিনাজপুরে দিন দিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সিভিল সার্জন জানান, ঝুঁকি বিবেচনায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া কোভিড-১৯ শনাক্তের বাড়িগুলোতে লাল পতাকা উড়িয়ে সতর্ক করছেন জনসাধারণকে।

দিনাজপুরে কোভিড-১৯ সংক্রমণসংক্রান্ত নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় দিনাজপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

গতকাল রোববার জেলায় ১৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আরও ৪৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৬ হাজার ২৭১ জনে।

লালমনিরহাটে বাড়ছে শঙ্কা

লালমনিরহাট : জেলায় গত এক সপ্তাহে বেড়েছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যাও। এতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে , গত এক সপ্তাহে জেলায় জ্বর, সর্দি বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

জানা যায়, প্রচণ্ড রোদ আবার কখনও বৃষ্টিতে শীতল হাওয়া বইছে লালমনিরহাটে। আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাবে জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। প্রতিটি বাড়িতে এক দুইজন করে সদস্য জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই করোনা আক্রান্তের ভয়ে পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শে গোপনে চিকিৎসা করছেন। এরপরও জেলা সদর হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যাদের অধিকাংশ জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি।

রাজশাহীতে আরও ১৩ মৃত্যু

রাজশাহী : রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। মৃতদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও একজন মহিলা বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।

সোমবার, ১৪ জুন ২০২১ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২ জিলকদ ১৪৪২

সংক্রমণের হট স্পট খুলনা

দশ জেলায় সংক্রমণ হার একদিনে ৩৭ শতাংশের বেশি, রাজশাহী দ্বিতীয়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

করোনা সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগের দশ জেলায় গত একদিনে সংক্রমণের হার ছিল ৩৭ শতাংশের বেশি। সংক্রমণের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ; সেখানে গতকাল সংক্রমণের হার ছিল ১৮ শতাংশের কাছাকাছি। তবে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা বেশিরভাগই সীমান্তবর্তী জেলা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২৪ ঘণ্টার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ১০ জনের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছেÑ এমন জেলা ৪০টি। এর মধ্যে ৩১ জেলায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি।

ঢাকা বিভাগেও সংক্রমণ হার বাড়ছে। গত সপ্তাহে ঢাকা মহানগরসহ এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ০১ শতাংশ; আগের সপ্তাহে যা ছিল ৬ শতাংশের কাছাকাছি।

শনাক্তের হার কম থাকলেও শনাক্তের সংখ্যায় খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সমান অবস্থানেই রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা বেশি হচ্ছে; কারণ প্রতিদিন বিদেশগামী ৩ থেকে ৫ হাজার লোকের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, যাদের শরীরে করোনার উপসর্গ নেই।

সীমান্ত জেলার হাসপাতালে

‘শয্যা’ সংকট

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল এক বুলেটিনে জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা খালি থাকছে না।

গত জানুয়ারি থেকে হিসাব করলে এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে জানিয়ে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘জুনে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। গত কিছু দিনে আমরা খেয়াল করেছি, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ হার বেড়ে গেছে।’

সেই জেলাগুলোকে তিনটি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রথম ক্লাস্টারে রয়েছে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর। সেখানে শতকরা হিসেবে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় ক্লাস্টারে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ।’

তৃতীয় ক্লাস্টারে রয়েছে সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা। এই জেলাগুলোতে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে ডা. নাজমুল বলেন, ‘সেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা অনুরোধ করব মৃদু উপসর্গ দেখা দিলেই যেন প্রত্যেকে হাসপাতালে যান।’

সীমান্ত এলাকা ছাড়াও কিছু জেলায় পরীক্ষায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘যেমন ফরিদপুর। কম পরীক্ষা হচ্ছে বলেই শতকরা হার বেশি দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার চাপ বেশি সেখান থেকে তুলনামূলক চাপ কম এমন ল্যাবে নমুনা পাঠানো হবে। গতকাল রাজশাহীতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিছু নমুনা বগুড়ায় পাঠিয়ে দিতে।’

এই মুহূর্তে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সে জন্য উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর উপস্থিতি বাড়লে আমরা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়াতে পারি। অধিক সংক্রমিত সীমান্তবর্তী এলাকায় বিনামূল্যে পরীক্ষা হচ্ছে।’

ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার বেশি টাঙ্গাইলে

ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৫১০টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৭ দশমিক ০১ শতাংশ।

এর মধ্যে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ৫২৮ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে; শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া ফরিদপুরে ২২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ; কিশোরগঞ্জে ২২ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ; টাঙ্গাইলে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগে সংক্রমণ হারে শীর্ষে জামালপুর

ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় একদিনে ৫১৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় এদিন ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তে হার ১০ দশমিক ২১ শতাংশ; জামালপুরে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ; শেরপুরে ১৭ জনের করোনা পাওয়া গেছে এবং শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্তের হার বেশি নোয়াখালীতে

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৯১৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ; কক্সবাজারে ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ; নোয়াখালীতে ১০ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ; ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণে শীর্ষে রাজশাহী জেলা

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় গত একদিনে তিন হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ; চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ; নাটোরে ৬৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ; নওগাঁয় ৪৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ; সিরাজগঞ্জে ২০ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ; বগুড়ায় ২৩ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ; জয়পুরহাটে ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।

রংপুর বিভাগে সংক্রমণে শীর্ষে ঠাকুরগাঁও

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গত একদিনে ৫৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তে হার ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এর মধ্যে রংপুরে ২৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ; লালমনিরহাটে ১২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ; কুড়িগ্রামে ১৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ; ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৬৬ শতাংশ; দিনাজপুরে ৪৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

খুলনার ১০ জেলায় উচ্চ সংক্রমণ

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৬০৬ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

এর মধ্যে বাগেরহাটে ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের ৫০ শতাংশ; চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ; যশোরে ১৪৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের ৩৪ দশমিক ৫২ শতাংশ; ঝিনাইদহে ৫১ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ১৩ শতাংশ; খুলনায় ১১৮ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ; কুষ্টিয়ায় ৭৪ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ; মাগুরায় ১৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ; মেহেরপুরে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ; নড়াইলে ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৭৪ শতাংশ; সাতক্ষীরায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৬৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।

বরিশালের ৬টি জেলায় গত একদিনে ৩২২টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।

এছাড়া সিলেটের চার জেলায় গত একদিনে ৫২১টি নমুনা পরীক্ষায় ৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ বিভাগে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে সিলেটে ৫১ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ; মৌলভীবাজারে ১৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মৃত্যু

করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজার ৪৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

একদিনে মৃত্যুর ওই সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৯ মে দেশে এর চেয়ে বেশি (৫৬ জন) মৃত্যু হয়েছিল।

গত একদিনে নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো আট লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জনে আর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ১১৮ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

একদিনে দুই হাজার ২৪২ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১২টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ১১২টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ১৫ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। অন্যদের মধ্যে ৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ছয়জন রাজশাহী বিভাগের, আটজন খুলনা বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের, দুইজন সিলেট বিভাগের, চারজন রংপুর বিভাগের এবং দুইজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩২ এবং নারী ১৫ জন।

সাতক্ষীরায় আরও চারজনের মৃত্যু

সাতক্ষীরা : সাড়ে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সমাকে) ও সদর হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১২ জুন) রাত সাড়ে ৮টা থেকে রোববার (১৩ জুন) ভোর ৫টার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাদের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুইজন ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শতকরা হারে যা ৬৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩শ’ ৭৬ জন।

এদিকে, ঢিলেঢালাভাবে পালন করা হয় দ্বিতীয় দফা লকডাউনের দ্বিতীয় দিন। গ্রামাঞ্চলে পুলিশের তৎপরতা তেমন একটা দেখা যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিও দেখা যায়নি কোথাও। শহরে কিছু কিছু জায়গায় ব্যারিকেড দেয়া থাকলেও যান চলাচল বেশ স্বাভাবিক ছিল।

রংপুর বিভাগে আরও ৪ জনের মৃত্যু

রংপুর : করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ নিয়ে রংপুর বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪শ’ ৩৩ জনে। যে ৪ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে রংপুর , ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুরে একজন করে মারা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবে ৫৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষার পর ১৬২ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের মধ্যে সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুর জেলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

দিনাজপুরে নতুন শনাক্ত ৪৫

দিনাজপুর : সীমান্ত জেলা দিনাজপুরে দিন দিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সিভিল সার্জন জানান, ঝুঁকি বিবেচনায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া কোভিড-১৯ শনাক্তের বাড়িগুলোতে লাল পতাকা উড়িয়ে সতর্ক করছেন জনসাধারণকে।

দিনাজপুরে কোভিড-১৯ সংক্রমণসংক্রান্ত নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় দিনাজপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

গতকাল রোববার জেলায় ১৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আরও ৪৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৬ হাজার ২৭১ জনে।

লালমনিরহাটে বাড়ছে শঙ্কা

লালমনিরহাট : জেলায় গত এক সপ্তাহে বেড়েছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যাও। এতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে , গত এক সপ্তাহে জেলায় জ্বর, সর্দি বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

জানা যায়, প্রচণ্ড রোদ আবার কখনও বৃষ্টিতে শীতল হাওয়া বইছে লালমনিরহাটে। আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাবে জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। প্রতিটি বাড়িতে এক দুইজন করে সদস্য জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই করোনা আক্রান্তের ভয়ে পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শে গোপনে চিকিৎসা করছেন। এরপরও জেলা সদর হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যাদের অধিকাংশ জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি।

রাজশাহীতে আরও ১৩ মৃত্যু

রাজশাহী : রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। মৃতদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও একজন মহিলা বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।