বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আলুবীজ শাখা ধ্বংসের জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে ‘বিএডিসি চুক্তিবদ্ধ কৃষক ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ’ নামের একটি সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘বর্তমানে বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আতাত ও ষড়যন্ত্র করে বিএডিসির সুনামকে নষ্ট করে বিএডিসি আলুবীজ শাখাকে ধ্বংস করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বিএডিসির আলুবীজ শাখা ধ্বংস হয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে চলে যাবে। আর আলুবীজ চাষিরা ব্যাপক লোকসানে পড়ে সর্বহারা হয়ে যাবে।’
ষড়যন্ত্রের প্রথম ধাপ হিসেবে আলুবীজের দাম কমানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আলুবীজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম হওয়ায় এবং অধিক শ্রমিক ও বালাইনাশক লাগায় আমাদের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দাঁড়িয়েছে। বিগত দিনে বিএডিসি আমাদের উৎপাদন খরচের চেয়ে আলুবীজের মূল্য ২৫ শতাংশ বেশি দিয়েছে। সেই হিসাবে এ বছর প্রতি কেজি আলুবীজের মূল্য হয় সাড়ে ৩৭ টাকা। কিন্তু গত ৫ এপ্রিল বিএডিসির বিজ্ঞপ্তিতে এ বছর আলুবীজের মূল্য এ-গ্রেড প্রতি কেজি ১৯ টাকা এবং বি-গ্রেড প্রতি কেজি ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ২৩ মে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ-গ্রেড প্রতি কেজি ২২ টাকা এবং বি-গ্রেড প্রতি কেজি ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয় যা আমাদের খুবই হতাশায় ফেলেছে।’
এ সময় বিগত তিন বছর ধরে বিএডিসির নিজস্ব খামারে উৎপাদিত ভিত্তি বীজের মান খারাপ হওয়ায় প্রত্যায়িত বীজের মানও খারাপ হচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আধুনিক দেশে পরপর তিন বছর ভিত্তি বীজের মান কীভাবে খারাপ হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ কৃষকরা যখন আলুবীজ বপন করেন সে সময় বিএডিসির বীজ বাজারে আসে না। ব্র্যাকের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো সে সময় বাজারে বীজ বিক্রি করে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর বীজ বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বিএডিসির বীজ বাজারে দেয়া হয়। এতে বিএডিসির বীজ অবিক্রিত থেকে যায়। কার স্বার্থে এমনটা করা হচ্ছে? একটি সিন্ডিকেট বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আতাত ও ষড়যন্ত্র করে বিএডিসির সুনামকে নষ্ট করছে।’
এ অবস্থায় চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে বিএডিসির আলুবীজ সংগ্রহের মূল্য সাড়ে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করাসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হলো, আলুবীজের মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে বিএডিসি আলুবীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে পাঁচজন প্রতিনিধি রাখতে হবে। বিএডিসির নিজস্ব খামারে ভিত্তি বীজের উৎপাদন ও সংগ্রহের সব প্রক্রিয়ায় কৃষক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে পাঁচজনকে পর্যবেক্ষণ কমিটিতে রাখতে হবে। মামলা ও চলমান প্রক্রিয়ার সঙ্গে কাউকেই বিএডিসি কোন রূপ হয়রানি করতে পারবে না।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, বিএডিসি আলুবীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষক ফোরাম তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র মোতাবেক পরিচালিত হবে। বিএডিসির কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবেন। আলুবীজ বপনের আগেই কৃষক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে উৎপাদিত আলুবীজের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। আলুবীজ সংগ্রহের সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে আলুবীজের সমুদয় মূল্য কৃষকদের পরিশোধ করতে হবে। প্রতিটি আলুবীজ জোনের স্ব স্ব জোনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে তিনজন সদস্যকে নিয়ে জোনের আলুবীজ সংগ্রহ, বিতরণ, মাঠের জমি বণ্টন, কৃষকদের ব্যাংকের ঋণের টাকার সব কার্যক্রমের ব্যাপারে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১ , ১ আষাড় ১৪২৮ ৩ জিলকদ ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আলুবীজ শাখা ধ্বংসের জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে ‘বিএডিসি চুক্তিবদ্ধ কৃষক ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ’ নামের একটি সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘বর্তমানে বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আতাত ও ষড়যন্ত্র করে বিএডিসির সুনামকে নষ্ট করে বিএডিসি আলুবীজ শাখাকে ধ্বংস করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বিএডিসির আলুবীজ শাখা ধ্বংস হয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে চলে যাবে। আর আলুবীজ চাষিরা ব্যাপক লোকসানে পড়ে সর্বহারা হয়ে যাবে।’
ষড়যন্ত্রের প্রথম ধাপ হিসেবে আলুবীজের দাম কমানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আলুবীজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম হওয়ায় এবং অধিক শ্রমিক ও বালাইনাশক লাগায় আমাদের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দাঁড়িয়েছে। বিগত দিনে বিএডিসি আমাদের উৎপাদন খরচের চেয়ে আলুবীজের মূল্য ২৫ শতাংশ বেশি দিয়েছে। সেই হিসাবে এ বছর প্রতি কেজি আলুবীজের মূল্য হয় সাড়ে ৩৭ টাকা। কিন্তু গত ৫ এপ্রিল বিএডিসির বিজ্ঞপ্তিতে এ বছর আলুবীজের মূল্য এ-গ্রেড প্রতি কেজি ১৯ টাকা এবং বি-গ্রেড প্রতি কেজি ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ২৩ মে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ-গ্রেড প্রতি কেজি ২২ টাকা এবং বি-গ্রেড প্রতি কেজি ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয় যা আমাদের খুবই হতাশায় ফেলেছে।’
এ সময় বিগত তিন বছর ধরে বিএডিসির নিজস্ব খামারে উৎপাদিত ভিত্তি বীজের মান খারাপ হওয়ায় প্রত্যায়িত বীজের মানও খারাপ হচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আধুনিক দেশে পরপর তিন বছর ভিত্তি বীজের মান কীভাবে খারাপ হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ কৃষকরা যখন আলুবীজ বপন করেন সে সময় বিএডিসির বীজ বাজারে আসে না। ব্র্যাকের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো সে সময় বাজারে বীজ বিক্রি করে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর বীজ বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বিএডিসির বীজ বাজারে দেয়া হয়। এতে বিএডিসির বীজ অবিক্রিত থেকে যায়। কার স্বার্থে এমনটা করা হচ্ছে? একটি সিন্ডিকেট বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আতাত ও ষড়যন্ত্র করে বিএডিসির সুনামকে নষ্ট করছে।’
এ অবস্থায় চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে বিএডিসির আলুবীজ সংগ্রহের মূল্য সাড়ে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করাসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হলো, আলুবীজের মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে বিএডিসি আলুবীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে পাঁচজন প্রতিনিধি রাখতে হবে। বিএডিসির নিজস্ব খামারে ভিত্তি বীজের উৎপাদন ও সংগ্রহের সব প্রক্রিয়ায় কৃষক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে পাঁচজনকে পর্যবেক্ষণ কমিটিতে রাখতে হবে। মামলা ও চলমান প্রক্রিয়ার সঙ্গে কাউকেই বিএডিসি কোন রূপ হয়রানি করতে পারবে না।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, বিএডিসি আলুবীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষক ফোরাম তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র মোতাবেক পরিচালিত হবে। বিএডিসির কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবেন। আলুবীজ বপনের আগেই কৃষক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে উৎপাদিত আলুবীজের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। আলুবীজ সংগ্রহের সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে আলুবীজের সমুদয় মূল্য কৃষকদের পরিশোধ করতে হবে। প্রতিটি আলুবীজ জোনের স্ব স্ব জোনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে তিনজন সদস্যকে নিয়ে জোনের আলুবীজ সংগ্রহ, বিতরণ, মাঠের জমি বণ্টন, কৃষকদের ব্যাংকের ঋণের টাকার সব কার্যক্রমের ব্যাপারে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।