থেকে আম কিনে লক্ষ্মীপুরে সংক্রমণ ধরা পড়ল ব্যবসায়ীর

তারা দুইজন আম ব্যবসায়ী। একজনের নাম মকবুল ও অন্যজন রব্বানী। তারা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পাইকারি আম কিনে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে বিক্রি করত। সম্প্রতি দু’জনই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের করোনা টেস্ট করা হয়। ধরা পড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত। ভর্তি হয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে। প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে তারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এরপরও বিষয়টি আরও পরীক্ষা করা হচ্ছে।

চলতি মাসে লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার অভিযোগ বেশি। মাস্ক ব্যবহার না করাসহ নানা কারণে এখন করোনাভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গফ্ফার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, এখন দিনে গড়ে ৭ থেকে ১০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০১ জন। মার্চ মাসে আক্রান্ত ৮৭ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ জন শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আরও ৭ জন শনাক্ত হয়েছে। গত বছর মার্চ মাস থেকে শুরু করে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৪ জন। এরমধ্যে মারা গেছে ৫৪ জন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা জেলা শহরে বাড়ছে। লক্ষ্মীপুর সদর পৌরসভা ও রামগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় করোনা রোগী বাড়ছে। লক্ষ্মীপুরে আক্রান্তদের মধ্যে বাড়িতে চিকিৎসাধীন ৯৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছে ৮ জন। আইসোলেশনে আছে ৮ জন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ এলাকায় আম কিনতে না গিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম আনলে সংক্রমণে আক্রান্ত হবে না। তাই ব্যবসায়ীরা আক্রান্ত জেলাগুলোতে না গেলে ভালো হয়। এতে রোগ ছড়াবে কম।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুল হক বলেন, এলাকায় নির্বাচনের এখন আগের মতো জনসংযোগ নেই। আগে যেভাবে মিছিল সমাবেশ হয়েছে এখন তা হচ্ছে না। তবে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মেনে চলছে না। জেলায় উপনির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে মাঝে মধ্যে জনসংযোগ ও মিটিং করা হয়। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে ভিড় কম। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এখন উৎসবের আমেজ চলছে। তারা মিছিল-মিটিং করতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না আবার এলাকাভিত্তিক দিনে-রাতে জনসংযোগ চলছে। এ কারণে অনেক এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরে ৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রামগতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা চলছে। তবে যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে। পুলিশ যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছে। যেহেতু ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। এতে গ্রামপর্যায়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সংক্রমণ আইন মেনে সবাইকে প্রচারণা চালাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

মহাখালী রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, ভারতীয় সংক্রমণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখান থেকে আম বাগানে ছড়াচ্ছে। তাই চলাচল যত বেশি সীমিত করা যাবে তত বেশি সংক্রমণ কমবে। এখন আম বাগানে চলাচল বেশি। তাই সেখানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। এ বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাচন হলে গ্রামে আড্ডা জন্মে। লোকজন জড়ো হয়। এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে সংক্রমণ আরও বেশি ছড়াবে বলে তিনি মনে করেন।

গতকাল রাতে ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, এখন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বেশি হচ্ছে। ভারতে কমলে বাংলাদেশে আরও বাড়বে। আক্রান্ত জেলায় যাওয়া-আসার কারণে অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে রোগ ছড়াচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

বুধবার, ১৬ জুন ২০২১ , ২ আষাড় ১৪২৮ ৪ জিলকদ ১৪৪২

সীমান্ত জেলা

থেকে আম কিনে লক্ষ্মীপুরে সংক্রমণ ধরা পড়ল ব্যবসায়ীর

বাকী বিল্লাহ

তারা দুইজন আম ব্যবসায়ী। একজনের নাম মকবুল ও অন্যজন রব্বানী। তারা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পাইকারি আম কিনে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে বিক্রি করত। সম্প্রতি দু’জনই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের করোনা টেস্ট করা হয়। ধরা পড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত। ভর্তি হয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে। প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে তারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এরপরও বিষয়টি আরও পরীক্ষা করা হচ্ছে।

চলতি মাসে লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার অভিযোগ বেশি। মাস্ক ব্যবহার না করাসহ নানা কারণে এখন করোনাভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গফ্ফার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, এখন দিনে গড়ে ৭ থেকে ১০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০১ জন। মার্চ মাসে আক্রান্ত ৮৭ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ জন শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আরও ৭ জন শনাক্ত হয়েছে। গত বছর মার্চ মাস থেকে শুরু করে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৪ জন। এরমধ্যে মারা গেছে ৫৪ জন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা জেলা শহরে বাড়ছে। লক্ষ্মীপুর সদর পৌরসভা ও রামগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় করোনা রোগী বাড়ছে। লক্ষ্মীপুরে আক্রান্তদের মধ্যে বাড়িতে চিকিৎসাধীন ৯৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছে ৮ জন। আইসোলেশনে আছে ৮ জন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ এলাকায় আম কিনতে না গিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম আনলে সংক্রমণে আক্রান্ত হবে না। তাই ব্যবসায়ীরা আক্রান্ত জেলাগুলোতে না গেলে ভালো হয়। এতে রোগ ছড়াবে কম।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুল হক বলেন, এলাকায় নির্বাচনের এখন আগের মতো জনসংযোগ নেই। আগে যেভাবে মিছিল সমাবেশ হয়েছে এখন তা হচ্ছে না। তবে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মেনে চলছে না। জেলায় উপনির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে মাঝে মধ্যে জনসংযোগ ও মিটিং করা হয়। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে ভিড় কম। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এখন উৎসবের আমেজ চলছে। তারা মিছিল-মিটিং করতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না আবার এলাকাভিত্তিক দিনে-রাতে জনসংযোগ চলছে। এ কারণে অনেক এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরে ৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রামগতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা চলছে। তবে যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে। পুলিশ যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছে। যেহেতু ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। এতে গ্রামপর্যায়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সংক্রমণ আইন মেনে সবাইকে প্রচারণা চালাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

মহাখালী রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, ভারতীয় সংক্রমণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখান থেকে আম বাগানে ছড়াচ্ছে। তাই চলাচল যত বেশি সীমিত করা যাবে তত বেশি সংক্রমণ কমবে। এখন আম বাগানে চলাচল বেশি। তাই সেখানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। এ বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাচন হলে গ্রামে আড্ডা জন্মে। লোকজন জড়ো হয়। এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে সংক্রমণ আরও বেশি ছড়াবে বলে তিনি মনে করেন।

গতকাল রাতে ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, এখন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বেশি হচ্ছে। ভারতে কমলে বাংলাদেশে আরও বাড়বে। আক্রান্ত জেলায় যাওয়া-আসার কারণে অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে রোগ ছড়াচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।