নাসির, অমি ৭ দিনের রিমান্ডে

ডিবি কার্যালয়ে পরীমনি

নায়িকা পরীমনির অভিযোগের পর গ্রেপ্তার নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তুহিন সিদ্দিকী অমিকে একটি মাদক মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল তাদের এবং আটক ৩ জন নারীকে আদালতে হাজির করা হয়। ডিবি পুলিশ তাদের দায়ের করা মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

আর পরীমনির দায়ের করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত নাসির ও অমিকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য গতকাল আদালতে আবেদন করে সাভার থানা পুলিশ।

এদিকে গতকাল বিকেল ৪টায় পরীমনি ডিবি কার্যালয়ে যান। সন্ধ্যা ৬টায় যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশিদের কার্যালয় থেকে বের হন। পুলিশ বলছে, পরীমনি ডিবি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছেন। দুই ঘণ্টা পর ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পরীমনি বলেন ‘আমাকে কেউ কোথাও নিয়ে যায়নি। আমি নিজেই এখানে (ডিবি কার্যালয়ে) এসেছি।

গত ১৩ জুন রাতে নায়িকা পরীমনি তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন, ‘তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে ঢাকা বোট ক্লাবে। মামলা করতে গিয়ে কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না। এরপর সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরার পর ১৪ জুন দুপুরে সাভার থানায় মামলাটি হয়। তৎপর হয় পুলিশ। আটক করা হয় নাসির মাহমুদ, তুহিন সিদ্দকী অমিকে।

পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে, বললেন পরীমনি

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পরীমনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমারা তো মিডিয়ার মানুষদের নিয়ে নতুন নতুন গল্প বানাই’।

যেমন আমাকে বাসা থেকে বের করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তো আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়নি, আমি নিজেই ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমি মেন্টালি অনেক রিফ্রেসড। আমি যে কাজে ফিরব এটা আমাকে কেউ বলেনি। আমার আশপাশে যারা ছিল সবাই আমাকে সান্ত¡Íনা দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার যে কাজে ফিরতে হবে আমার এ শক্তিটা তারা যুগিয়েছেন এতক্ষণে।

‘এত তারাতারি কাজগুলো হয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন শুধু আমার বিশ্বাস, আমি আসলে সঠিক বিচারটা পাব।’ পরীমনি শুরুর দিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো কী এখন বলার বিষয়। তারা (ডিবি) আমাকে গুডবাই দেয়ার ট্রাই করে যাচ্ছেন আর আপনারা আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

প্রথম থেকে যেটা বলেছি সেটাই। পুলিশ যে এত মাজিক্যাবল হয় এটা তার বড় প্রমাণ। আমি মদ ছিনতাই করতে গিয়েছিলাম বলে বলা হচ্ছে, এটা কি সম্ভব? বলেন তিনি। তিনি বলেন, সবাই আমাকে এত সাপোর্ট দিয়েছে আমি এখন উঠে দাঁড়াতে পারছি। আইজিপি প্রসঙ্গে পরীমনি বলেন, আমার প্রথম ভরসা ওনিই ছিলেন। আমি আসলে তার পর্যন্ত পৌঁছতে পারছিলাম না। বেনজির স্যার যখন জেনেছেন তার কান অবদি যখন আমি পৌঁছতে পেরেছি তখন তো আপনারা দেখলেন কয়েক ঘণ্টা লাগছে মাত্র। আমার তো ওইটাই মূল বিশ্বাস ছিল তার কান অবদি পৌঁছলে একদম তিনি নিজের মতো করে দেখবেন। আমি ওই পর্যন্ত (আইজিপি) যেতে পারছিলাম না এটা নিয়ে আমি হতাশা প্রকাশ করেছিলাম। আপনারা কী আমার কাছে ক্লিয়ারেন্স চেয়েছিলেন। এখন কি আমি তার সঙ্গে আমার চ্যাটিংগুলো দিব? আমি প্রথমেই জায়েদকে (চলচ্চিত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক) বলেছিলাম আমার সঙ্গে এটা হয়েছে আমি স্যারের সঙ্গে (আইজিপি) বসতে চাই। আমি বেনজির স্যারের সঙ্গে একটু বসতে চাই তোমরা আমাকে একটু ব্যবস্থা করো। শিল্পী সমিতির হয়ে। আমি মামলা করতে চাই। এগুলো আমি প্রথম দিনেই তাকে (জায়েদ খান) বলেছিলাম। তো সে বলেছে, ডিটেলসটা বলার জন্য তোমাকে আসতে হবে। তুমি আসো আমরা বসে কথাগুলো ঠিক করে নেব।

আমাকে জোর করে মদটা খাওয়ানো হয়েছিল। এ অবস্থায় আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না মদের সঙ্গে আর কি ছিল। আমি মরে যাচ্ছিলাম। আমি যে মরে যাচ্ছিলাম আমি এটা জানাইতেই থানায় গিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, আমাকে হসপিটালে নিয়ে যান। আমি বলেছিলাম আমি ঠিক নাই আমি সুস্থ নাই। আমি কিন্তু পুরোটাই তাদের বলেছিলাম। আমার সমস্যা হচ্ছে। হ্যা আমি থানা থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি।

পরীমনি বলেন, আমাকে নিয়ে গল্প বানানো বন্ধ করেন। আমাকে কাজ করার সুযোগ দিন। আমি একটু কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।

মামলা হওয়ার আগেই আসামি গ্রেপ্তার বললেন পুলিশ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবির) যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, আসলে পরীমনি হচ্ছে বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত স্বনামধন্য নায়িকা। একদিকে স্বনামধন্য নায়িকা অন্যদিকে সে আমাদের ছোট বোন। সে হিসেবে আমাদের দায়িত্বটি হচ্ছে.....। তো আমরা যখন ফেইস মিডিয়ায় তার ঘটনাটি জানলাম তখন আমাদের ইন্সপেক্টর জেনারের (আইজিপি) মহোদয় আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন যে বিষয়টা একটু দেখো। তো আপানারা দেখেছেন মামলা রুজু হওয়ার আগেই ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি। পরীমনিও আপনাদের বলেছে পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। এবং এ কথাটিও বলেছি, আমি আইজিপির কাছে যাওয়ার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পীদের কাছে আবেদনও করেছিলাম কিন্তু আমি যেতে পারিনি। তারপরও দেখেন আমাদের আইজিপি মহোদয় জানার পর পরই আমাদের ইনফর্ম করেছেন এবং আমরা রাতের বেলায় অভিযান চালিয়েছি। সকাল বেলায় আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি।

‘ওনি ধন্যবাদ দেয়ার জন্য বাসা থেকে চলে এসেছেন। আমরা মামলার যাবতীয় বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছি। ওনি আমাদের কাছে বলেছেন মামলাটা যেন সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত হয়। যারা এ কাজটি করেছেন তারা যতবড় শক্তিশালী হোক না কেন তাদের যেন ছাড় দেয়া না হয়। আমরাও তাকে আস্বস্ত করেছি। আসামি যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন আমরা আসামিদের ছাড় দেব না। আমরা এও বলেছি, চলচ্চিত্র সমিতির যে কোন শিল্পীর বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব, আমাদের ডাকলে আমরা এগিয়ে যাব। আমরা একসঙ্গে কাজ করব এবং এটাই আমাদের প্রতি আইজিপি স্যারের নির্দেশ এবং এটাও বলেছি, এ মামলা (ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা) শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা দেখভাল করব।’

ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় নাসির ও অমিকে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন সাভার থানার

পরীমনির সঙ্গে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আবাসন ব্যবসায়ী নাসির মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গতকাল ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করেছে সাভার থানা পুলিশ। গত সোমবার সকালে গ্রেপ্তার হলেও মাদক মামলায় এখন ডিবি হেফাজতে নাসির মাহমুদ এবং অমিসহ ৫ জন।

সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মঈনুল হোসেন টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলাটি আমরা রেকর্ড করেছি। তবে আমরা আসামি গ্রেপ্তারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিকে রিকুইজিশন পাঠিয়েছিলাম। সে পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আমরা এখনও তাদের বুঝে পাইনি। গতকাল তাদের মাদক মামলায় আদালতে তোলে ডিবি। পরে আমরা আদালতে নাসির ও অমিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানের আবেদন করেছি। তিনি বলেন, আমরা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামিদের বুঝে পাওয়ার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। এর বাইরে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।

মাদক মামলায় রিমান্ডে নাসির ও অমিসহ ৫ জন

নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের পর নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদক মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। বিমানবন্দর থানার এ মামলায় গ্রেপ্তার তিন নারী লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকেও তিনদিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। আসামিদের গতকাল বিকেলে আদালতে তোলা হলে শুনানি শেষে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে এ আদেশ দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম নিভানা খায়ের জেসী। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের এসআই মানিক কুমার শিকদার। গতকাল গ্রেপ্তার পাঁচজনকে সেই মামলায় আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের পরিদর্শক উদয় কুমার মন্ডল। ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম নিভানা খায়ের জেসীর আদেশে বলা হয়, নাসির ও অমিকে দশ কার্যদিবসের মধ্যে এবং তিন নারী আসামিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিমান্ডে নিতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে। আর নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে।

রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, সাজ্জাদুর রহমান শিহাব ও তাপস পাল। আসামিদের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করেন আইনজীবী এএইচ ইমরুল কাউছার, ঢাকা বারের সভাপতি আবদুল বাতেনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

বুধবার, ১৬ জুন ২০২১ , ২ আষাড় ১৪২৮ ৪ জিলকদ ১৪৪২

নাসির, অমি ৭ দিনের রিমান্ডে

ডিবি কার্যালয়ে পরীমনি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

নায়িকা পরীমনির অভিযোগের পর গ্রেপ্তার নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তুহিন সিদ্দিকী অমিকে একটি মাদক মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল তাদের এবং আটক ৩ জন নারীকে আদালতে হাজির করা হয়। ডিবি পুলিশ তাদের দায়ের করা মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

আর পরীমনির দায়ের করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত নাসির ও অমিকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য গতকাল আদালতে আবেদন করে সাভার থানা পুলিশ।

এদিকে গতকাল বিকেল ৪টায় পরীমনি ডিবি কার্যালয়ে যান। সন্ধ্যা ৬টায় যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশিদের কার্যালয় থেকে বের হন। পুলিশ বলছে, পরীমনি ডিবি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছেন। দুই ঘণ্টা পর ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পরীমনি বলেন ‘আমাকে কেউ কোথাও নিয়ে যায়নি। আমি নিজেই এখানে (ডিবি কার্যালয়ে) এসেছি।

গত ১৩ জুন রাতে নায়িকা পরীমনি তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন, ‘তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে ঢাকা বোট ক্লাবে। মামলা করতে গিয়ে কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না। এরপর সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরার পর ১৪ জুন দুপুরে সাভার থানায় মামলাটি হয়। তৎপর হয় পুলিশ। আটক করা হয় নাসির মাহমুদ, তুহিন সিদ্দকী অমিকে।

পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে, বললেন পরীমনি

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পরীমনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমারা তো মিডিয়ার মানুষদের নিয়ে নতুন নতুন গল্প বানাই’।

যেমন আমাকে বাসা থেকে বের করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তো আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়নি, আমি নিজেই ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমি মেন্টালি অনেক রিফ্রেসড। আমি যে কাজে ফিরব এটা আমাকে কেউ বলেনি। আমার আশপাশে যারা ছিল সবাই আমাকে সান্ত¡Íনা দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার যে কাজে ফিরতে হবে আমার এ শক্তিটা তারা যুগিয়েছেন এতক্ষণে।

‘এত তারাতারি কাজগুলো হয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন শুধু আমার বিশ্বাস, আমি আসলে সঠিক বিচারটা পাব।’ পরীমনি শুরুর দিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো কী এখন বলার বিষয়। তারা (ডিবি) আমাকে গুডবাই দেয়ার ট্রাই করে যাচ্ছেন আর আপনারা আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

প্রথম থেকে যেটা বলেছি সেটাই। পুলিশ যে এত মাজিক্যাবল হয় এটা তার বড় প্রমাণ। আমি মদ ছিনতাই করতে গিয়েছিলাম বলে বলা হচ্ছে, এটা কি সম্ভব? বলেন তিনি। তিনি বলেন, সবাই আমাকে এত সাপোর্ট দিয়েছে আমি এখন উঠে দাঁড়াতে পারছি। আইজিপি প্রসঙ্গে পরীমনি বলেন, আমার প্রথম ভরসা ওনিই ছিলেন। আমি আসলে তার পর্যন্ত পৌঁছতে পারছিলাম না। বেনজির স্যার যখন জেনেছেন তার কান অবদি যখন আমি পৌঁছতে পেরেছি তখন তো আপনারা দেখলেন কয়েক ঘণ্টা লাগছে মাত্র। আমার তো ওইটাই মূল বিশ্বাস ছিল তার কান অবদি পৌঁছলে একদম তিনি নিজের মতো করে দেখবেন। আমি ওই পর্যন্ত (আইজিপি) যেতে পারছিলাম না এটা নিয়ে আমি হতাশা প্রকাশ করেছিলাম। আপনারা কী আমার কাছে ক্লিয়ারেন্স চেয়েছিলেন। এখন কি আমি তার সঙ্গে আমার চ্যাটিংগুলো দিব? আমি প্রথমেই জায়েদকে (চলচ্চিত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক) বলেছিলাম আমার সঙ্গে এটা হয়েছে আমি স্যারের সঙ্গে (আইজিপি) বসতে চাই। আমি বেনজির স্যারের সঙ্গে একটু বসতে চাই তোমরা আমাকে একটু ব্যবস্থা করো। শিল্পী সমিতির হয়ে। আমি মামলা করতে চাই। এগুলো আমি প্রথম দিনেই তাকে (জায়েদ খান) বলেছিলাম। তো সে বলেছে, ডিটেলসটা বলার জন্য তোমাকে আসতে হবে। তুমি আসো আমরা বসে কথাগুলো ঠিক করে নেব।

আমাকে জোর করে মদটা খাওয়ানো হয়েছিল। এ অবস্থায় আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না মদের সঙ্গে আর কি ছিল। আমি মরে যাচ্ছিলাম। আমি যে মরে যাচ্ছিলাম আমি এটা জানাইতেই থানায় গিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, আমাকে হসপিটালে নিয়ে যান। আমি বলেছিলাম আমি ঠিক নাই আমি সুস্থ নাই। আমি কিন্তু পুরোটাই তাদের বলেছিলাম। আমার সমস্যা হচ্ছে। হ্যা আমি থানা থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি।

পরীমনি বলেন, আমাকে নিয়ে গল্প বানানো বন্ধ করেন। আমাকে কাজ করার সুযোগ দিন। আমি একটু কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।

মামলা হওয়ার আগেই আসামি গ্রেপ্তার বললেন পুলিশ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবির) যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, আসলে পরীমনি হচ্ছে বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত স্বনামধন্য নায়িকা। একদিকে স্বনামধন্য নায়িকা অন্যদিকে সে আমাদের ছোট বোন। সে হিসেবে আমাদের দায়িত্বটি হচ্ছে.....। তো আমরা যখন ফেইস মিডিয়ায় তার ঘটনাটি জানলাম তখন আমাদের ইন্সপেক্টর জেনারের (আইজিপি) মহোদয় আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন যে বিষয়টা একটু দেখো। তো আপানারা দেখেছেন মামলা রুজু হওয়ার আগেই ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি। পরীমনিও আপনাদের বলেছে পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। এবং এ কথাটিও বলেছি, আমি আইজিপির কাছে যাওয়ার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পীদের কাছে আবেদনও করেছিলাম কিন্তু আমি যেতে পারিনি। তারপরও দেখেন আমাদের আইজিপি মহোদয় জানার পর পরই আমাদের ইনফর্ম করেছেন এবং আমরা রাতের বেলায় অভিযান চালিয়েছি। সকাল বেলায় আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি।

‘ওনি ধন্যবাদ দেয়ার জন্য বাসা থেকে চলে এসেছেন। আমরা মামলার যাবতীয় বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছি। ওনি আমাদের কাছে বলেছেন মামলাটা যেন সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত হয়। যারা এ কাজটি করেছেন তারা যতবড় শক্তিশালী হোক না কেন তাদের যেন ছাড় দেয়া না হয়। আমরাও তাকে আস্বস্ত করেছি। আসামি যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন আমরা আসামিদের ছাড় দেব না। আমরা এও বলেছি, চলচ্চিত্র সমিতির যে কোন শিল্পীর বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব, আমাদের ডাকলে আমরা এগিয়ে যাব। আমরা একসঙ্গে কাজ করব এবং এটাই আমাদের প্রতি আইজিপি স্যারের নির্দেশ এবং এটাও বলেছি, এ মামলা (ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা) শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা দেখভাল করব।’

ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় নাসির ও অমিকে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন সাভার থানার

পরীমনির সঙ্গে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আবাসন ব্যবসায়ী নাসির মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গতকাল ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করেছে সাভার থানা পুলিশ। গত সোমবার সকালে গ্রেপ্তার হলেও মাদক মামলায় এখন ডিবি হেফাজতে নাসির মাহমুদ এবং অমিসহ ৫ জন।

সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মঈনুল হোসেন টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলাটি আমরা রেকর্ড করেছি। তবে আমরা আসামি গ্রেপ্তারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিকে রিকুইজিশন পাঠিয়েছিলাম। সে পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আমরা এখনও তাদের বুঝে পাইনি। গতকাল তাদের মাদক মামলায় আদালতে তোলে ডিবি। পরে আমরা আদালতে নাসির ও অমিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানের আবেদন করেছি। তিনি বলেন, আমরা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামিদের বুঝে পাওয়ার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। এর বাইরে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।

মাদক মামলায় রিমান্ডে নাসির ও অমিসহ ৫ জন

নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের পর নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদক মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। বিমানবন্দর থানার এ মামলায় গ্রেপ্তার তিন নারী লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকেও তিনদিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। আসামিদের গতকাল বিকেলে আদালতে তোলা হলে শুনানি শেষে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে এ আদেশ দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম নিভানা খায়ের জেসী। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের এসআই মানিক কুমার শিকদার। গতকাল গ্রেপ্তার পাঁচজনকে সেই মামলায় আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের পরিদর্শক উদয় কুমার মন্ডল। ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম নিভানা খায়ের জেসীর আদেশে বলা হয়, নাসির ও অমিকে দশ কার্যদিবসের মধ্যে এবং তিন নারী আসামিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিমান্ডে নিতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে। আর নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে।

রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, সাজ্জাদুর রহমান শিহাব ও তাপস পাল। আসামিদের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করেন আইনজীবী এএইচ ইমরুল কাউছার, ঢাকা বারের সভাপতি আবদুল বাতেনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।