গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরায় বিধিনিষেধ বাড়লো, হাসপাতালে শয্যা সংকট

করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। এ দু’বিভাগে একদিনে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় মারা গেছে ৪ জন। সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহী বিভাগে আজ থেকে আরও ৭ দিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে এবং চিকিৎসা সেবায় খুলনা সদরে আরও একটি করোনা ইউনিট খোলা হচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জের তিনটি এলাকায় ৭ দিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে এবং পুরো কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে বিশেষ বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে।

জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এসব করোনা রোগী মারা যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁয় একজন করে তিনজন মারা গেছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে ৪০০ জনের করোনা পরীক্ষা করে ১৬৬ জন সংক্রমিত বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। যা সংক্রমণের হারে ৪১. ৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী। হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত ৩০৯টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৫৮ জন আর নির্ধারিত ২২টি আইসিইউতে ভর্তি আছে ২০ জন করোনা রোগী।

এদিকে মৃত্যু ও সংক্রমণ না কমায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় বিশেষ লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। বুধবার জেলার সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, জেলায় করোনা পরিস্থিতি এখনও অবনতির দিকে। আক্রান্ত ও মৃত্যুহার এখন ঊর্ধ্বমুখী। সেজন্য আগামী ২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।

খুলনা : খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত-মৃত্যুর সংখ্যা। বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭৬৫ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সুস্থ হয়েছেন ২৮১ জন। গতকাল দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান।

রাশেদা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে খুলনায় ৪ জন, কুষ্টিয়ায় ৪ জন, যশোরে ৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২ জন, মেহেরপুরে ২ জন, বাগেরহাটে একজন, মাগুরায় একজন ও ঝিনাইদহে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ সামলাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০টি শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে প্রস্তুত করা হচ্ছে খুলনা সদর হাসপাতালকে। আগামী রোববার থেকে সেখানে রোগী ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মুখপাত্র কাজী আবু রাশেদ।

গতকাল দুপুরে তিনি বলেন, জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরো হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বুধবার থেকে হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। আগে যারা ভর্তি ছিলেন তাদেরও ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে আর একটু জটিল রোগীদের পাঠানো হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রাশেদ বলেন, হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হবে। এটি হবে ৭০ শয্যার আলাদা করোনা হাসপাতাল। এ হাসপাতালের যেসব চিকিৎসক রয়েছেন তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত আটজন চিকিৎসকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শ্বাসকষ্ট হওয়া রোগীদের হাসপাতাল থেকেই অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে, তবে যাদের আইসিইউ প্রয়োজন হবে তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে পাঠানো হবে।

খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে। বর্তমানে অতিরিক্ত করোনা রোগীর চাপ সামলাতে জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদর হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন বলেন, গত বছর ওই হাসপাতালে করোনা ইউনিট করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। বসানো হয়েছিল অক্সিজেন প্লান্ট। ১২টি আইসিইউ শয্যাও প্রস্তুত করা হয় কিন্তু করোনার প্রভাব কমে যাওয়ায় তা বাতিল হয়ে যায়।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন ও দেবহাটার পারুলিয়ায় বাড়িতে চিকিৎসাধীন একজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এ নিয়ে সাতক্ষীরায় করোনায় মারা গেলেন ৫৫ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন ২৫৫ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৮ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে।

পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। এদিকে, সাতক্ষীরায় চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে গত ৫ মে থেকে জেলায় প্রথম পর্যায়ে সাতদিনের লকডাউন শুরু হয়। এরপর ১১ মে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭ মে পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত জানান, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলায় তৃতীয় মেয়াদে চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন বহাল থাকবে।

উপসর্গ নিয়ে মৃতরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের মাহফুজা বেগম (৪৫), সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়া এলাকার আবুল হোসেন (৬০), শ্যামনগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের ইয়াসিন মোল্লা (৬৫)। এছাড়া দেবহাটার পারুলিয়া জেলেপাড়া গ্রামের অজয় ম-ল নামের একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় গোটা পৌরসভাকে বিশেষ বিধিনিষেধের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এ সময় বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য ও বিজিবির কমান্ডিং অফিসার জামাল হোসেন, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু প্রমুখ।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, গত দেড় সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে মারা গেছে ২ জন। কুড়িগ্রাম পৌরসভায় করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। গত ১৫ জুন কুড়িগ্রাম পৌরসভার ২, ৩ ও ৭নং ওয়ার্ডকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য এই ৩টি ওয়ার্ডে বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

এরপরও করোনা বৃদ্ধির মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার থেকে গোটা কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে বিশেষ বিধিনিষেধের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। এই বিধি নিষেধের সময় দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সব ধরনের যানবাহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে পরিবহন করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলে কৈফিয়ত দিতে হবে। বিশেষ বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পুলিশ বিভাগ থেকে শহরে প্রবেশের ৩টি পয়েন্টে পুলিশি চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে।

এই চেকপোস্টগুলো হচ্ছে, রংপুর থেকে কুড়িগ্রামে প্রবেশমুখ ত্রিমোহনী বাজার, নাগেশ^রী-ভূরুঙ্গামারী যাওয়ার প্রবেশ পথ ধরলা ব্রিজ ও চিলমারী-উলিপুর উপজেলা যাওয়ার প্রবেশ পথ টেক্সটাইলমুখ এলাকা।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ ও মুকসুদপুর পৌরসভা, সদর উপজেলার লতিফপুর ও কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নে ৭ দিনের বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। আজ সকাল ৭টা থেকে গোপালগঞ্জ, লতিফপুর ইউপি, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর সদরে এ লকডাউন কার্যকর হবে। সম্প্রতি গোপালগঞ্জে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গতকাল জেলা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কমিটির জরুরি ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

লকডাউন চলাকালে ওই ৪ স্থানে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত সব ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও কাঁচা-বাজার বন্ধ থাকবে। ফুটপাতে কোন দোকানপাট থাকবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু ওষুধের দোকান ও খাবার হোটেলগুলো খোলা থাকবে কিন্তু কোন হোটেলে বসে খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্রেতারা হোটেল থেকে পার্সেল খাবার কিনতে পারবেন। গোপালগঞ্জ শহরের কাঁচাবাজার শহরের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামসংলগ্ন অনুশীলন মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দেবেন। যানবাহন সীমিত আকারে চলবে। যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি থাকবে।

জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আয়োজিত জেলা কোভিড-১৯ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। আলোচনায় অংশ নেন সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, গোপালগঞ্জ আড়াইশ’ বেড জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক, শেখ সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন, জেলার পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ পৌর-মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু প্রমুখ।

শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ৬ জিলকদ ১৪৪২

গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরায় বিধিনিষেধ বাড়লো, হাসপাতালে শয্যা সংকট

সংবাদ ডেস্ক

করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। এ দু’বিভাগে একদিনে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় মারা গেছে ৪ জন। সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহী বিভাগে আজ থেকে আরও ৭ দিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে এবং চিকিৎসা সেবায় খুলনা সদরে আরও একটি করোনা ইউনিট খোলা হচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জের তিনটি এলাকায় ৭ দিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে এবং পুরো কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে বিশেষ বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে।

জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এসব করোনা রোগী মারা যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁয় একজন করে তিনজন মারা গেছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে ৪০০ জনের করোনা পরীক্ষা করে ১৬৬ জন সংক্রমিত বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। যা সংক্রমণের হারে ৪১. ৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী। হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত ৩০৯টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৫৮ জন আর নির্ধারিত ২২টি আইসিইউতে ভর্তি আছে ২০ জন করোনা রোগী।

এদিকে মৃত্যু ও সংক্রমণ না কমায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় বিশেষ লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। বুধবার জেলার সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, জেলায় করোনা পরিস্থিতি এখনও অবনতির দিকে। আক্রান্ত ও মৃত্যুহার এখন ঊর্ধ্বমুখী। সেজন্য আগামী ২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।

খুলনা : খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত-মৃত্যুর সংখ্যা। বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭৬৫ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সুস্থ হয়েছেন ২৮১ জন। গতকাল দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান।

রাশেদা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে খুলনায় ৪ জন, কুষ্টিয়ায় ৪ জন, যশোরে ৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২ জন, মেহেরপুরে ২ জন, বাগেরহাটে একজন, মাগুরায় একজন ও ঝিনাইদহে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ সামলাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০টি শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে প্রস্তুত করা হচ্ছে খুলনা সদর হাসপাতালকে। আগামী রোববার থেকে সেখানে রোগী ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মুখপাত্র কাজী আবু রাশেদ।

গতকাল দুপুরে তিনি বলেন, জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরো হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বুধবার থেকে হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। আগে যারা ভর্তি ছিলেন তাদেরও ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে আর একটু জটিল রোগীদের পাঠানো হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রাশেদ বলেন, হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হবে। এটি হবে ৭০ শয্যার আলাদা করোনা হাসপাতাল। এ হাসপাতালের যেসব চিকিৎসক রয়েছেন তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত আটজন চিকিৎসকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শ্বাসকষ্ট হওয়া রোগীদের হাসপাতাল থেকেই অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে, তবে যাদের আইসিইউ প্রয়োজন হবে তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে পাঠানো হবে।

খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে। বর্তমানে অতিরিক্ত করোনা রোগীর চাপ সামলাতে জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদর হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন বলেন, গত বছর ওই হাসপাতালে করোনা ইউনিট করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। বসানো হয়েছিল অক্সিজেন প্লান্ট। ১২টি আইসিইউ শয্যাও প্রস্তুত করা হয় কিন্তু করোনার প্রভাব কমে যাওয়ায় তা বাতিল হয়ে যায়।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন ও দেবহাটার পারুলিয়ায় বাড়িতে চিকিৎসাধীন একজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এ নিয়ে সাতক্ষীরায় করোনায় মারা গেলেন ৫৫ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন ২৫৫ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৮ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে।

পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। এদিকে, সাতক্ষীরায় চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে গত ৫ মে থেকে জেলায় প্রথম পর্যায়ে সাতদিনের লকডাউন শুরু হয়। এরপর ১১ মে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭ মে পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত জানান, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলায় তৃতীয় মেয়াদে চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন বহাল থাকবে।

উপসর্গ নিয়ে মৃতরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের মাহফুজা বেগম (৪৫), সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়া এলাকার আবুল হোসেন (৬০), শ্যামনগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের ইয়াসিন মোল্লা (৬৫)। এছাড়া দেবহাটার পারুলিয়া জেলেপাড়া গ্রামের অজয় ম-ল নামের একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় গোটা পৌরসভাকে বিশেষ বিধিনিষেধের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এ সময় বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য ও বিজিবির কমান্ডিং অফিসার জামাল হোসেন, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু প্রমুখ।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, গত দেড় সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে মারা গেছে ২ জন। কুড়িগ্রাম পৌরসভায় করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। গত ১৫ জুন কুড়িগ্রাম পৌরসভার ২, ৩ ও ৭নং ওয়ার্ডকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য এই ৩টি ওয়ার্ডে বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

এরপরও করোনা বৃদ্ধির মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার থেকে গোটা কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে বিশেষ বিধিনিষেধের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। এই বিধি নিষেধের সময় দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সব ধরনের যানবাহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে পরিবহন করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলে কৈফিয়ত দিতে হবে। বিশেষ বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পুলিশ বিভাগ থেকে শহরে প্রবেশের ৩টি পয়েন্টে পুলিশি চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে।

এই চেকপোস্টগুলো হচ্ছে, রংপুর থেকে কুড়িগ্রামে প্রবেশমুখ ত্রিমোহনী বাজার, নাগেশ^রী-ভূরুঙ্গামারী যাওয়ার প্রবেশ পথ ধরলা ব্রিজ ও চিলমারী-উলিপুর উপজেলা যাওয়ার প্রবেশ পথ টেক্সটাইলমুখ এলাকা।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ ও মুকসুদপুর পৌরসভা, সদর উপজেলার লতিফপুর ও কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নে ৭ দিনের বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। আজ সকাল ৭টা থেকে গোপালগঞ্জ, লতিফপুর ইউপি, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর সদরে এ লকডাউন কার্যকর হবে। সম্প্রতি গোপালগঞ্জে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গতকাল জেলা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কমিটির জরুরি ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

লকডাউন চলাকালে ওই ৪ স্থানে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত সব ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও কাঁচা-বাজার বন্ধ থাকবে। ফুটপাতে কোন দোকানপাট থাকবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু ওষুধের দোকান ও খাবার হোটেলগুলো খোলা থাকবে কিন্তু কোন হোটেলে বসে খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্রেতারা হোটেল থেকে পার্সেল খাবার কিনতে পারবেন। গোপালগঞ্জ শহরের কাঁচাবাজার শহরের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামসংলগ্ন অনুশীলন মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দেবেন। যানবাহন সীমিত আকারে চলবে। যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি থাকবে।

জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আয়োজিত জেলা কোভিড-১৯ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। আলোচনায় অংশ নেন সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, গোপালগঞ্জ আড়াইশ’ বেড জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক, শেখ সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন, জেলার পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ পৌর-মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু প্রমুখ।