রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে মদ, জুয়া ও অপকর্ম নিয়ে জাতীয় সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলের সদস্যদের পাশপাশি সরকারি দলের সদস্যরাও এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসব বন্ধের দাবিও উঠেছে। গতকাল অভিনেত্রী পরীমনির ঘটনার সূত্র ধরে জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু অনির্ধারিত আলোচনায় (পয়েন্ট অব অর্ডার) অংশ নিয়ে বিভিন্ন ক্লাবে বেআইনি কার্যকলাপের প্রসঙ্গ তোলেন।

একাধিক সংসদ সদস্য (এমপি) প্রশ্ন তুলেছেন, কারা এসব ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছে? পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয় বলেও দাবি করেন এক সদস্য। এ ব্যাপারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এমপিরা একে-অন্যকে দোষারোপ করেন।

জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী এবং বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা আলোচনায় অংশ নেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

মুজিবুল হক চুন্নু শুরুতে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরা বোট ক্লাব। কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হন? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হন? আমরা তো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত ইনকামও করি না।’

‘এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এত মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হন? এত টাকা কোথা থেকে আসে?’ যোগ করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু।

বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘এটা তো বোট ক্লাব। জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার চালু করেছিলেন। যারা অপরাধ শুরু করেছে, তাদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে।’

বিএনপি সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোন মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন, যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব।’

তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেন, ‘হারুন সাহেবের সদস্যপদ আজই ছেড়ে দেয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে, মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।’ এ সময় তিনি প্যালেস্টাইন ও উইঘুর মুসলিমদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন বন্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। ২১ বছরে আইনকে মিসইউজ (অপব্যবহার) করে এটা করা হয়েছে। বিদেশিদের অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য এটা করেছে। ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, দৈনিক মদ খেতে হবে। তারপর লাইসেন্স নেয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোন মুসলমান যদি মদ খায়, সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।’