সীমান্ত জেলাগুলোর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ, সংক্রমণ ঝুঁকিতে বরিশাল

বরিশাল থেকে সড়কপথে খুলনার দূরত্ব ১১৫ কিলোমিটার এবং ৮১ কিলোমিটার দূরত্ব বাগেরহাটের। এ হিসাবে বাগেরহাট ও খুলনা বরিশালের প্রতিবেশী জেলা। বাগেরহাট ও খুলনায় করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের প্রাদুর্ভাব ক্রমশ বাড়ছে। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে বরিশালও। বিষয়টি বরিশালের প্রশাসনকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখে পড়ার আগেই বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবহন চলাচল নিয়ন্ত্রন করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়। বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত বুধবার বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনার ভয়াবহ বিস্তারের কারণে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক পরিবহন বন্ধের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সরকার রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সেই নিরিখে খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন বন্ধে কোন বাধা থাকার কথা নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের তরফ থেকেও অবিলম্বে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন বন্ধের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, সারাদেশের মধ্যে এখনও দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অধিক সংক্রমিত এলাকার সঙ্গে অবাধ যাতায়াত বর্তমান পরিস্থিতির অবনতিসহ ঝুকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বসুদেব কুমার দাসের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমাদের তরফ থেকে ইতোমধ্যে বিভাগীয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অধিক সংক্রমিত দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক পরিবহন বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে রাজশাহী, চাঁপাইয়ের সঙ্গে আমের কারণে সড়ক যোগাযোগ অনেক বেড়ে গেছে। অথচ এই জেলাতেও করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস গতকাল বলেন, বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের মাধ্যমে বরিশালে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ বিষয়টি বিভাগীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইফুল আহসান বাদলকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। খুলনা ও বাগেরহাটে করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি এবং ওই দুই জেলাতে সড়কপথে অবাধ যাতায়াতের বিষয়টি বরিশালে করোনা বৃদ্ধির জন্য ঝুঁকি বলে মনে করেন ডা. বাসুদেব কুমার দাস। এ ব্যাপারে পরবর্র্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বিভাগীয় কমিশনার।

বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল আহসান বাদল সাংবাদিকদের বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এর প্রকোপ বরিশাল বিভাগের জেলাতেও ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কার কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক তাকে অবহিত করেছেন। এক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বিষয়টি জানতে তিনি (বিভাগীয় কমিশনার) সরকারের ঊর্ধ্বতন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলবেন।

বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আ. রাজ্জাক বলেন, করোনা রোধে বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে বিধি-নিষেধের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশের বিষয়ে তারাও একমত। তবে এটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মতামতের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা হয়ে আসতে হবে।

এদিকে খুলনা-বাগেরহাট থেকে বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে কাছের জেলা হচ্ছে পিরোজপুর। এ জেলা থেকে বাগেরহাটের দূরত্ব মাত্র ২১ কিলোমিটার এবং খুলনা ৫৫ কিলোমিটার। গত এক সপ্তাহে পিরোজপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় পিরোজপুর জেলায় নতুন করে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১৩ জনে। একই সময়ে বরিশাল জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১০৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বিভাগে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫৯। বিভাগে এ পর্যন্ত ২৯২ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ৬ জিলকদ ১৪৪২

সীমান্ত জেলাগুলোর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ, সংক্রমণ ঝুঁকিতে বরিশাল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

বরিশাল থেকে সড়কপথে খুলনার দূরত্ব ১১৫ কিলোমিটার এবং ৮১ কিলোমিটার দূরত্ব বাগেরহাটের। এ হিসাবে বাগেরহাট ও খুলনা বরিশালের প্রতিবেশী জেলা। বাগেরহাট ও খুলনায় করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের প্রাদুর্ভাব ক্রমশ বাড়ছে। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে বরিশালও। বিষয়টি বরিশালের প্রশাসনকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখে পড়ার আগেই বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবহন চলাচল নিয়ন্ত্রন করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়। বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত বুধবার বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনার ভয়াবহ বিস্তারের কারণে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক পরিবহন বন্ধের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সরকার রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সেই নিরিখে খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন বন্ধে কোন বাধা থাকার কথা নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের তরফ থেকেও অবিলম্বে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন বন্ধের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, সারাদেশের মধ্যে এখনও দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অধিক সংক্রমিত এলাকার সঙ্গে অবাধ যাতায়াত বর্তমান পরিস্থিতির অবনতিসহ ঝুকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বসুদেব কুমার দাসের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমাদের তরফ থেকে ইতোমধ্যে বিভাগীয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অধিক সংক্রমিত দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক পরিবহন বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে রাজশাহী, চাঁপাইয়ের সঙ্গে আমের কারণে সড়ক যোগাযোগ অনেক বেড়ে গেছে। অথচ এই জেলাতেও করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস গতকাল বলেন, বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের মাধ্যমে বরিশালে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ বিষয়টি বিভাগীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইফুল আহসান বাদলকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। খুলনা ও বাগেরহাটে করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি এবং ওই দুই জেলাতে সড়কপথে অবাধ যাতায়াতের বিষয়টি বরিশালে করোনা বৃদ্ধির জন্য ঝুঁকি বলে মনে করেন ডা. বাসুদেব কুমার দাস। এ ব্যাপারে পরবর্র্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বিভাগীয় কমিশনার।

বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল আহসান বাদল সাংবাদিকদের বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এর প্রকোপ বরিশাল বিভাগের জেলাতেও ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কার কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক তাকে অবহিত করেছেন। এক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বিষয়টি জানতে তিনি (বিভাগীয় কমিশনার) সরকারের ঊর্ধ্বতন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলবেন।

বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আ. রাজ্জাক বলেন, করোনা রোধে বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে বিধি-নিষেধের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশের বিষয়ে তারাও একমত। তবে এটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মতামতের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা হয়ে আসতে হবে।

এদিকে খুলনা-বাগেরহাট থেকে বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে কাছের জেলা হচ্ছে পিরোজপুর। এ জেলা থেকে বাগেরহাটের দূরত্ব মাত্র ২১ কিলোমিটার এবং খুলনা ৫৫ কিলোমিটার। গত এক সপ্তাহে পিরোজপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় পিরোজপুর জেলায় নতুন করে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১৩ জনে। একই সময়ে বরিশাল জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১০৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বিভাগে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫৯। বিভাগে এ পর্যন্ত ২৯২ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে।