উপকূলে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করুন

‘আর কোন দাবি নাই, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে জাতীয় সংসদে নিজ এলাকার মানুষের দাবির কথা তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাতে এমন অভিনব উপায় বেছে নিয়েছেন পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের এ সংসদ সদস্য। ঘূর্ণিঝড়ের পর নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনগণের রোষানলে পড়েছিলেন বলেও তিনি সংসদে জানান।

জাতীয় সংসদে তার এ দাবির মধ্য দিয়ে উপকূলের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। উপকূলবাসীও দীর্ঘদিন ধরে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রশ্ন হচ্ছে, হাজারো মানুষের সাধারণ একটি চাওয়া পূরণ করা যাচ্ছে না কেন। উপকূলীয় এলাকায় যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নিÑতা নয়। বহু এলাকায়ই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, আবার তা ভেঙে যাওয়ার পর সংস্কারও করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে এগুলো টেকসই না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়র তো বটেই অনেক সময় জলোচ্ছ্বাসই প্রতিরোধ করতে পারে না।

অভিযোগ আছে এক শ্রেণীর অসাধু ঠিকাদারদের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে, তারাই বারবার এসব বাঁধ নির্মাণের কাজ পায়। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধ টেকসই হয় না। এ চক্রটি ভাঙতে হবে। বাঁধ নির্মাণে অতীতে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

কোন এলাকার বাঁধ ভেঙে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা সংস্কার করতে বছরের পর বছর লেগে যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সিডর, আইলা এবং আম্পানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এখনও সংস্কার করা হয়নি। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে দেশে প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এর মধ্যে কোন কোন ঘূর্ণিঝড় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় এলাকা। এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে আঘাত করেনিÑএটা স্বস্তির বিষয়। কিন্তু এর প্রভাবে সমুদ্র এবং উপকূল এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে প্লাবিত হয় অনেক এলাকা। এটা যদি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানতো তাহলে বাঁধহীন বা দুর্বল বাঁধের উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের কী অবস্থা হতো! তাদের দায়-দায়িত্ব কে নিত। তাই এটাকে সতর্কবার্তা হিসেবে ধরে নিয়ে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিত মুখোমুখি হতে হবে।

বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারে সংশ্লিষ্টদের কোন উদাসীনতা বা দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পওয়া যায়। যেখানে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা দরকার সেখানে শুধু মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। অনেক স্থানে বাধের উচ্চতা বা পুরুত্ব প্রয়োজনের তুলনায় কম। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় বাঁধ নির্মাণে মানা হয় না নির্দিষ্ট দূরত্ব। নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিলে এলাকার বাসিন্দারে পরামর্শ না নিয়ে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করা হয়, ফলে ‘টেকসই বাঁধ নির্মাণ’ কাগজে কলমেই থেকে যায়। যাদের উদাসীনতা, অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে উপকূলের লাখ লাখ মানুষের জীবন অনিশ্চিত, তাদের বিরুদ্ধে কখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায় না।

উপকূলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে যেন কোন অনিয়ম-দুর্নীতি না হয় তা কঠোরভাবে নিশ্চিত করা জরুরি। নির্মাণের পর তা নিয়মিতভাবে তদারকি করতে হবে।

শনিবার, ১৯ জুন ২০২১ , ৫ আষাঢ় ১৪২৮ ৭ জিলকদ ১৪৪২

উপকূলে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করুন

‘আর কোন দাবি নাই, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে জাতীয় সংসদে নিজ এলাকার মানুষের দাবির কথা তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাতে এমন অভিনব উপায় বেছে নিয়েছেন পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের এ সংসদ সদস্য। ঘূর্ণিঝড়ের পর নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনগণের রোষানলে পড়েছিলেন বলেও তিনি সংসদে জানান।

জাতীয় সংসদে তার এ দাবির মধ্য দিয়ে উপকূলের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। উপকূলবাসীও দীর্ঘদিন ধরে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রশ্ন হচ্ছে, হাজারো মানুষের সাধারণ একটি চাওয়া পূরণ করা যাচ্ছে না কেন। উপকূলীয় এলাকায় যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নিÑতা নয়। বহু এলাকায়ই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, আবার তা ভেঙে যাওয়ার পর সংস্কারও করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে এগুলো টেকসই না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়র তো বটেই অনেক সময় জলোচ্ছ্বাসই প্রতিরোধ করতে পারে না।

অভিযোগ আছে এক শ্রেণীর অসাধু ঠিকাদারদের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে, তারাই বারবার এসব বাঁধ নির্মাণের কাজ পায়। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধ টেকসই হয় না। এ চক্রটি ভাঙতে হবে। বাঁধ নির্মাণে অতীতে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

কোন এলাকার বাঁধ ভেঙে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা সংস্কার করতে বছরের পর বছর লেগে যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সিডর, আইলা এবং আম্পানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এখনও সংস্কার করা হয়নি। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে দেশে প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এর মধ্যে কোন কোন ঘূর্ণিঝড় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় এলাকা। এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে আঘাত করেনিÑএটা স্বস্তির বিষয়। কিন্তু এর প্রভাবে সমুদ্র এবং উপকূল এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে প্লাবিত হয় অনেক এলাকা। এটা যদি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানতো তাহলে বাঁধহীন বা দুর্বল বাঁধের উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের কী অবস্থা হতো! তাদের দায়-দায়িত্ব কে নিত। তাই এটাকে সতর্কবার্তা হিসেবে ধরে নিয়ে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিত মুখোমুখি হতে হবে।

বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারে সংশ্লিষ্টদের কোন উদাসীনতা বা দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পওয়া যায়। যেখানে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা দরকার সেখানে শুধু মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। অনেক স্থানে বাধের উচ্চতা বা পুরুত্ব প্রয়োজনের তুলনায় কম। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় বাঁধ নির্মাণে মানা হয় না নির্দিষ্ট দূরত্ব। নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিলে এলাকার বাসিন্দারে পরামর্শ না নিয়ে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করা হয়, ফলে ‘টেকসই বাঁধ নির্মাণ’ কাগজে কলমেই থেকে যায়। যাদের উদাসীনতা, অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে উপকূলের লাখ লাখ মানুষের জীবন অনিশ্চিত, তাদের বিরুদ্ধে কখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায় না।

উপকূলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে যেন কোন অনিয়ম-দুর্নীতি না হয় তা কঠোরভাবে নিশ্চিত করা জরুরি। নির্মাণের পর তা নিয়মিতভাবে তদারকি করতে হবে।