গাইবান্ধায় হরিজন কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ

ইউপি মেম্বারসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরিজন সম্প্রদায়ের এক কিশোরী অপহরণের পর দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় ফুসে ওঠেছে সুন্দরগঞ্জ। এ ঘটনায় জড়িত এক ইউপি মেম্বরসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ঘটনা গত শুক্রবার রাতে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ার কুড়া গ্রামের মহাথিবর বাঁশফোরের একমাত্র কন্যা গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুরে তার নানার বাড়িতে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় সর্বানন্দ ইউনিয়নের হায়দার মেম্বরের বাড়ির সামনের রাস্তায় এলে সেখান থেকে ওই কিশোরীকে অপহরণ করে নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গণধর্ষণ করা হয়। রাতভর হায়দার মেম্বর, আবদুল মোতালেব, আবদুল মতিন ও মোজাম্মেল হক এই চারজন মিলে ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। ভোরের দিকে মেয়েটিকে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে ধর্ষকরা সটকে পড়ে। পরে মেয়েটির জ্ঞান ফিরে এলে সে বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি খুলে বলে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ চিকিৎসা দেয়া হয়।

শুক্রবার মেয়ের বাবা মহাবির বাঁশফোর মেয়েকে ধর্ষণের বিচার চেয়ে গ্রামবাসীর কাছে যায়। তারা বিচারের নামে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে থানা পুলিশ না করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু মেয়ের মা ও বাবা গ্রাম্য সালিসে বিচারের নামে টাকা নিয়ে ব্যবসা করার বিষয়টি মেনে নেয়নি। তারা তার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুন্দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ইউপি মেম্বরসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরিফুজ্জামান জানান, অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাসি চালানো হয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল্লাহিল জামান জানান, আসামি যেই হোক ধর্ষক ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় শহরের ডিবি রোডে হরিজন, আদিবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা গণধর্ষণকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই।

আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম, বাংলাদেশ বাঁশফোর (হরিজন) কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম), নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের সভাপতি সুনিল রবিদাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক ও আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, জাহাঙ্গীর কবির তনু, পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র জিএম চৌধুরী মিঠু, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের সদস্য সচিব ও অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলী রানী দেবী, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম, বাংলাদেশ বাঁশফোর (হরিজন) কল্যাণ পরিষদের সভাপতি কৃর্তন বাঁশফোর, দলিত নেতা খিলন রবিদাস, কৈলাশ রবিদাস, দুঃখু রবিদাস, সভাপতি বিআরএফ, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, সুজন রবিদাস, নয়ন ভুঁইমালী, বাবলু রবিদাস, সুজন রবিদাস, টুকু রবিদাস, দিপলাল রবিদাস, অধীর রবিদাস, মনোজ প্রসাদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, হরিজন জনগোষ্ঠীর নাবালিকা মেয়েকে প্রেমের অভিনয় করে স্থানীয় প্রভাবশালী মোতালেব টানা দেড় মাস পাশবিক নির্যাতনের পর পাঁচদিন আগে রাতে বাড়ির পাশের রাস্তায় ফেলে যায় তাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবেশীরা আর বাড়িতে উঠতে দেয়নি নির্যাতিতাকে। ঠাঁই হয়নি নানার বাড়ি ডোমেরহাটেও। মেয়েটির মা-বাবা বাধ্য হয়ে মেয়েটিকে সাবেক ইউপি সদস্য হায়দারের বাড়িতে রেখে আসে তার মা। সেখানেও ইউপি সদস্য হায়দার, মতিন ও এক সবজি বিক্রেতা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে গোপনে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে তার মা। এলাকায় সালিস বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রান্তিক অবস্থায় রয়েছে হরিজন জনগোষ্ঠী, তাই ভিকটিম পরিবারের নিরাপত্তাসহ উক্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সব আসামির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থাসহ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

রবিবার, ২০ জুন ২০২১ , ৬ আষাঢ় ১৪২৮ ৮ জিলকদ ১৪৪২

গাইবান্ধায় হরিজন কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ

ইউপি মেম্বারসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা

গাইবান্ধা সংবাদদাতা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরিজন সম্প্রদায়ের এক কিশোরী অপহরণের পর দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় ফুসে ওঠেছে সুন্দরগঞ্জ। এ ঘটনায় জড়িত এক ইউপি মেম্বরসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ঘটনা গত শুক্রবার রাতে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ার কুড়া গ্রামের মহাথিবর বাঁশফোরের একমাত্র কন্যা গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুরে তার নানার বাড়িতে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় সর্বানন্দ ইউনিয়নের হায়দার মেম্বরের বাড়ির সামনের রাস্তায় এলে সেখান থেকে ওই কিশোরীকে অপহরণ করে নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গণধর্ষণ করা হয়। রাতভর হায়দার মেম্বর, আবদুল মোতালেব, আবদুল মতিন ও মোজাম্মেল হক এই চারজন মিলে ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। ভোরের দিকে মেয়েটিকে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে ধর্ষকরা সটকে পড়ে। পরে মেয়েটির জ্ঞান ফিরে এলে সে বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি খুলে বলে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ চিকিৎসা দেয়া হয়।

শুক্রবার মেয়ের বাবা মহাবির বাঁশফোর মেয়েকে ধর্ষণের বিচার চেয়ে গ্রামবাসীর কাছে যায়। তারা বিচারের নামে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে থানা পুলিশ না করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু মেয়ের মা ও বাবা গ্রাম্য সালিসে বিচারের নামে টাকা নিয়ে ব্যবসা করার বিষয়টি মেনে নেয়নি। তারা তার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুন্দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ইউপি মেম্বরসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরিফুজ্জামান জানান, অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাসি চালানো হয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল্লাহিল জামান জানান, আসামি যেই হোক ধর্ষক ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় শহরের ডিবি রোডে হরিজন, আদিবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা গণধর্ষণকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই।

আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম, বাংলাদেশ বাঁশফোর (হরিজন) কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম), নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের সভাপতি সুনিল রবিদাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক ও আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, জাহাঙ্গীর কবির তনু, পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র জিএম চৌধুরী মিঠু, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের সদস্য সচিব ও অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলী রানী দেবী, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম, বাংলাদেশ বাঁশফোর (হরিজন) কল্যাণ পরিষদের সভাপতি কৃর্তন বাঁশফোর, দলিত নেতা খিলন রবিদাস, কৈলাশ রবিদাস, দুঃখু রবিদাস, সভাপতি বিআরএফ, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, সুজন রবিদাস, নয়ন ভুঁইমালী, বাবলু রবিদাস, সুজন রবিদাস, টুকু রবিদাস, দিপলাল রবিদাস, অধীর রবিদাস, মনোজ প্রসাদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, হরিজন জনগোষ্ঠীর নাবালিকা মেয়েকে প্রেমের অভিনয় করে স্থানীয় প্রভাবশালী মোতালেব টানা দেড় মাস পাশবিক নির্যাতনের পর পাঁচদিন আগে রাতে বাড়ির পাশের রাস্তায় ফেলে যায় তাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবেশীরা আর বাড়িতে উঠতে দেয়নি নির্যাতিতাকে। ঠাঁই হয়নি নানার বাড়ি ডোমেরহাটেও। মেয়েটির মা-বাবা বাধ্য হয়ে মেয়েটিকে সাবেক ইউপি সদস্য হায়দারের বাড়িতে রেখে আসে তার মা। সেখানেও ইউপি সদস্য হায়দার, মতিন ও এক সবজি বিক্রেতা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে গোপনে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে তার মা। এলাকায় সালিস বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রান্তিক অবস্থায় রয়েছে হরিজন জনগোষ্ঠী, তাই ভিকটিম পরিবারের নিরাপত্তাসহ উক্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সব আসামির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থাসহ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।