রাজধানীতে এক মেয়ের হাতে পরিবারের ৩ জন খুন

খুনি নিজেই ফোন করে পুলিশ ডাকে

বাবা মাসুদ রানা ওমান প্রবাসী ছিলেন দীর্ঘদিন। মা মৌসুমীর কাছে বড় হলেও কিশোরী বয়সেই তাদের দুই বোনকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো হতো। এক পর্যায়ে নিজের বিয়ে হলেও স্বামীর সংসারে কলহ লেগেই থাকত। বাবাও প্রবাসে থাকতে আরেক বিয়ে করেন। যা কোনভাবেই মানতে পারছিলেন না মেহজাবিন মুন। মা ও বোন জান্নাতুলকে অনৈতিক কাজ বাদ দিতে বলেও লাভ হয়নি। স্বামী শফিকুল ইসলাম অরণ্যের সঙ্গেও সম্পর্ক ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে থাকে। পুলিশ বলছে, পরিবারের সবার প্রতি আলাদা আলাদা ক্ষোভের কারণেই হত্যার পরিকল্পনা করেন মেহজাবিন। সবাইকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে পরে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেছে মেহজাবিন।

বাবা মাসুদ রানা (৫০), মা মৌসুমী ইসলাম জোসনা (৪৫) ও ছোট বোন জান্নাতুলকে (২০) অচেতন অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করলেও অজানা কারণে স্বামী সন্তানকে হত্যা করেননি। তবে ৩ জনকে হত্যার পর নিজেই পুলিশকে ফোন দিয়ে বলেন, দ্রুত এসে লাশ উদ্ধার করুন। না হলে অন্যদেরও হত্যা করা হবে। গতকাল রাজধানীর মুরাদপুর হাইস্কুল সংলগ্ন রজ্জব আলী সরদার রোডের ২৮ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে ৩টি লাশ উদ্ধারের পর ঘাতক মেহজাবিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, পরিবারের সবার প্রতি ক্ষোভ থেকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে মেহজাবিন।

এ ঘটনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় মেহজাবিন মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তার মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিকে (৪) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তাদের শিশুসন্তান শঙ্কামুক্ত রয়েছে। তাকে ঢামেকের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আটক মেহজাবিনের দেয়া তথ্যানুসারে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, বাবা প্রবাসে থাকায় মেহজাবিনের মা তাদের দুই বোনকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাত। নিজের বিয়ের পর মা ও অন্য বোন জান্নাতুল দেহ ব্যবসা বন্ধ না করায় মেহজাবিনের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম হয়। বাবা মাসুদ রানা প্রবাসে একটি বিয়ে করাতেও ক্ষোভ জন্ম নেয় বাবার প্রতি। ৩ মাস আগে ওমান থেকে মাসুদ রানা দেশে এসে তার মায়ের সঙ্গেই থাকত। অন্যদিকে নিজের সংসারেও কলহ লেগে থাকত মেহজাবিনের। সবকিছু মিলিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সে। এ ঘটনার পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ইসলাম জানান, মেয়ে তৃপ্তিয়া ও স্ত্রী ঘাতক মেহজাবিন ইসলাম মুনকে সঙ্গে নিয়ে কদমতলী বাগানবাড়ী এলাকায় থাকতেন। এলাকাতে চামড়া ব্যবসা করেন তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার মনোমালিন্য চলে আসছিল। গত শুক্রবার রাতে মেহজাবিন মুরাদপুরে বাবা মার বাসায় যেতে চায়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে মুন একাই চলে যাবে বললে পরে শফিকুল মেয়ে তৃপ্তিয়াসহ তাকে ওই বাসায় নিয়ে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে যাওয়ার পর স্ত্রী মুন তাকে চা পান করতে দেয়। পান করতে না চাইলেও জোর করে তাকে চা পান করায়। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।

বাবা-মার সঙ্গেও তার স্ত্রীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তার স্ত্রী উশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করত। কাউকে না বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে যেত। স্ত্রী মেহজাবিনের সঙ্গে তার বাবা মায়ের পারিবারিক ঝামেলার কারণে এই ঘটনা ঘটাতে পারে।

কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, মেহজাবিনের স্বামীকেও আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সম্পত্তির বিষয়ও এখানে রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের সদস্যরা। এ ঘটনায় কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়ীধীন।

রবিবার, ২০ জুন ২০২১ , ৬ আষাঢ় ১৪২৮ ৮ জিলকদ ১৪৪২

রাজধানীতে এক মেয়ের হাতে পরিবারের ৩ জন খুন

খুনি নিজেই ফোন করে পুলিশ ডাকে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বাবা মাসুদ রানা ওমান প্রবাসী ছিলেন দীর্ঘদিন। মা মৌসুমীর কাছে বড় হলেও কিশোরী বয়সেই তাদের দুই বোনকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো হতো। এক পর্যায়ে নিজের বিয়ে হলেও স্বামীর সংসারে কলহ লেগেই থাকত। বাবাও প্রবাসে থাকতে আরেক বিয়ে করেন। যা কোনভাবেই মানতে পারছিলেন না মেহজাবিন মুন। মা ও বোন জান্নাতুলকে অনৈতিক কাজ বাদ দিতে বলেও লাভ হয়নি। স্বামী শফিকুল ইসলাম অরণ্যের সঙ্গেও সম্পর্ক ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে থাকে। পুলিশ বলছে, পরিবারের সবার প্রতি আলাদা আলাদা ক্ষোভের কারণেই হত্যার পরিকল্পনা করেন মেহজাবিন। সবাইকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে পরে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেছে মেহজাবিন।

বাবা মাসুদ রানা (৫০), মা মৌসুমী ইসলাম জোসনা (৪৫) ও ছোট বোন জান্নাতুলকে (২০) অচেতন অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করলেও অজানা কারণে স্বামী সন্তানকে হত্যা করেননি। তবে ৩ জনকে হত্যার পর নিজেই পুলিশকে ফোন দিয়ে বলেন, দ্রুত এসে লাশ উদ্ধার করুন। না হলে অন্যদেরও হত্যা করা হবে। গতকাল রাজধানীর মুরাদপুর হাইস্কুল সংলগ্ন রজ্জব আলী সরদার রোডের ২৮ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে ৩টি লাশ উদ্ধারের পর ঘাতক মেহজাবিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, পরিবারের সবার প্রতি ক্ষোভ থেকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে মেহজাবিন।

এ ঘটনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় মেহজাবিন মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তার মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিকে (৪) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তাদের শিশুসন্তান শঙ্কামুক্ত রয়েছে। তাকে ঢামেকের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আটক মেহজাবিনের দেয়া তথ্যানুসারে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, বাবা প্রবাসে থাকায় মেহজাবিনের মা তাদের দুই বোনকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাত। নিজের বিয়ের পর মা ও অন্য বোন জান্নাতুল দেহ ব্যবসা বন্ধ না করায় মেহজাবিনের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম হয়। বাবা মাসুদ রানা প্রবাসে একটি বিয়ে করাতেও ক্ষোভ জন্ম নেয় বাবার প্রতি। ৩ মাস আগে ওমান থেকে মাসুদ রানা দেশে এসে তার মায়ের সঙ্গেই থাকত। অন্যদিকে নিজের সংসারেও কলহ লেগে থাকত মেহজাবিনের। সবকিছু মিলিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সে। এ ঘটনার পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ইসলাম জানান, মেয়ে তৃপ্তিয়া ও স্ত্রী ঘাতক মেহজাবিন ইসলাম মুনকে সঙ্গে নিয়ে কদমতলী বাগানবাড়ী এলাকায় থাকতেন। এলাকাতে চামড়া ব্যবসা করেন তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার মনোমালিন্য চলে আসছিল। গত শুক্রবার রাতে মেহজাবিন মুরাদপুরে বাবা মার বাসায় যেতে চায়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে মুন একাই চলে যাবে বললে পরে শফিকুল মেয়ে তৃপ্তিয়াসহ তাকে ওই বাসায় নিয়ে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে যাওয়ার পর স্ত্রী মুন তাকে চা পান করতে দেয়। পান করতে না চাইলেও জোর করে তাকে চা পান করায়। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।

বাবা-মার সঙ্গেও তার স্ত্রীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তার স্ত্রী উশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করত। কাউকে না বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে যেত। স্ত্রী মেহজাবিনের সঙ্গে তার বাবা মায়ের পারিবারিক ঝামেলার কারণে এই ঘটনা ঘটাতে পারে।

কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, মেহজাবিনের স্বামীকেও আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সম্পত্তির বিষয়ও এখানে রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের সদস্যরা। এ ঘটনায় কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়ীধীন।