বরিশাল ইউপি নির্বাচন নিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল

প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল জেলার ৫০ ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোতেই পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। গতকাল প্রচার-প্রচারনার শেষদিনেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে। দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছাড়াও নৌকার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা বলছেন, হামলার শিকার হয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন প্রতিকার মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

এদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১৯ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

বিএনপিবিহীন ইউপি নির্বাচনে এবার শুরুতেই উত্তাপ ছড়িয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে নৌকা প্রতীকের কর্মীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মারমুখী অবস্থানের কারণে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোতে ছিল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। শেষ মুহূর্তে এসে জাপা ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। বরিশাল নগরীসংলগ্ন জাগুয়া ইউনিয়নে গত বুধবার রাতে হামলায় আহত হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী হেদায়াতুল্লাহ খান আজাদীসহ ১০ নেতাকর্মী। প্রার্থী মুফতি হেদায়েতুল্লাহ জানান, গণসংযোগ শেষে ফেরার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করেছে। মুলাদির নাজিরপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি (জাপা) ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। উপজেলা জাপা সাধারণ সম্পাদক আরিফ সরদার বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাদল খান সহিংসতা করে ভোটে জেতার কৌশল নিয়েছেন। সেখানে জাপার অফিস ভেঙে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই উপজেলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪ জন।

বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, তিনি শুক্রবার সদর উপজেলার জাগুয়া ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন। তাকে প্রার্থীরা জানিয়েছেন, নির্বাচনী পরিবেশ একচেটিয়া। জাগুয়ায় চরমোনাইর পীরের দলের প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে, জাপার প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। বাকেরগঞ্জের গাড়–রিয়া ইউনিয়নে জাপার প্রার্থী কাইউয়ুম খান নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। একই ঘটনা ঘটছে মুলাদিতে। তিনি বলেন, ভোটাররা জানিয়েছেন ভোটের দিন নৌকার পক্ষে কেন্দ্র দখলের প্রস্ততি চলছে বিভিন্ন ইউনিয়নে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল জেলা সভাপতি মুফতি সৈয়দ এসহাক মো. আবুল খায়ের বলেন, আওয়ামী লীগের হুমকির কারণে তাদের দলীয় অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। যারা ভোটের মাঠে আছেন তাদের ভোটের পর এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

তবে বেশিরভাগ ইউনিয়নে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের শক্ত অবস্থানের জন্য। বরিশাল নগরী ঘেষা কাশিপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী কামাল হোসেন লিটন মোল্লা বরারবই নানা কারণে বিতর্কিত। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম। সদরের চড়বাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মাঠ না ছাড়ায় চাপের মুখে আছেন আওয়ামী লীগের হেবিওয়েট প্রার্থী জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহতাব হোসেন সুরুজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, নৌকার প্রার্থী লিটন মোল্লার সমর্থকরা শনিবার সকাল থেকে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। তার প্রচার মাইক ভাঙচুর করে নর্দমায় ফেলে দেয়া হয়েছে। বিকেলে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়ি থেকে বের হয়ে শেষ গণসংযোগ করেন।

হিজলার ৪টি ইউনিয়নেই বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক শাজাহান তালুকদারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছেন কৃষক লীগের সাবেক আহ্বায়ক মুন্সী মো. এসহাক আমিন। একই অবস্থা হিজলার মেমানিয়া, হরিনাথপুর, বড়জলিয়ায়।

হিজলার বহিষ্কার হওয়া বড়জালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প-িত শাহাবুদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুরু থেকে তার প্রচারে বাধা দিচ্ছে নৌকার প্রার্থীর লোকজন। প্রশাসন তাকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করছেন না। হিজলায় প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী লীগের নেতরা। এখানে সহিংসতা ঘটছে আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এখানে দু’জন নিহত হয়েছেন।

বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করতে মাঠ প্রশাসনকে সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশালের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, তিনি দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা করে ভোট সুষ্ঠু করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার দৃষ্টিতে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের অনুকূলে।

বহিষ্কার হলেন যারা

এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১০ জনসহ মোট ১৯ জনকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক প-িত শাহাবুদ্দিন ও ফারুক সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার নাসির উদ্দিন হাওলাদার, হরিনাথপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান সিকদার, মুলাদি উপজেলার বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সী, সদস্য মজিবর রহমান শরীফ, ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তাজেম আলী হাওলাদার, বরিশাল সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম হাওলাদার ও চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস জানান, দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা- করায় জেলার ৬টি উপজেলা থেকে শনিবার ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থন করায় আরও ৯ নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রবিবার, ২০ জুন ২০২১ , ৬ আষাঢ় ১৪২৮ ৮ জিলকদ ১৪৪২

বরিশাল ইউপি নির্বাচন নিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল জেলার ৫০ ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোতেই পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। গতকাল প্রচার-প্রচারনার শেষদিনেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে। দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছাড়াও নৌকার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা বলছেন, হামলার শিকার হয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন প্রতিকার মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

এদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১৯ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

বিএনপিবিহীন ইউপি নির্বাচনে এবার শুরুতেই উত্তাপ ছড়িয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে নৌকা প্রতীকের কর্মীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মারমুখী অবস্থানের কারণে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোতে ছিল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। শেষ মুহূর্তে এসে জাপা ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। বরিশাল নগরীসংলগ্ন জাগুয়া ইউনিয়নে গত বুধবার রাতে হামলায় আহত হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী হেদায়াতুল্লাহ খান আজাদীসহ ১০ নেতাকর্মী। প্রার্থী মুফতি হেদায়েতুল্লাহ জানান, গণসংযোগ শেষে ফেরার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করেছে। মুলাদির নাজিরপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি (জাপা) ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। উপজেলা জাপা সাধারণ সম্পাদক আরিফ সরদার বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাদল খান সহিংসতা করে ভোটে জেতার কৌশল নিয়েছেন। সেখানে জাপার অফিস ভেঙে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই উপজেলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪ জন।

বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, তিনি শুক্রবার সদর উপজেলার জাগুয়া ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন। তাকে প্রার্থীরা জানিয়েছেন, নির্বাচনী পরিবেশ একচেটিয়া। জাগুয়ায় চরমোনাইর পীরের দলের প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে, জাপার প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। বাকেরগঞ্জের গাড়–রিয়া ইউনিয়নে জাপার প্রার্থী কাইউয়ুম খান নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। একই ঘটনা ঘটছে মুলাদিতে। তিনি বলেন, ভোটাররা জানিয়েছেন ভোটের দিন নৌকার পক্ষে কেন্দ্র দখলের প্রস্ততি চলছে বিভিন্ন ইউনিয়নে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল জেলা সভাপতি মুফতি সৈয়দ এসহাক মো. আবুল খায়ের বলেন, আওয়ামী লীগের হুমকির কারণে তাদের দলীয় অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। যারা ভোটের মাঠে আছেন তাদের ভোটের পর এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

তবে বেশিরভাগ ইউনিয়নে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের শক্ত অবস্থানের জন্য। বরিশাল নগরী ঘেষা কাশিপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী কামাল হোসেন লিটন মোল্লা বরারবই নানা কারণে বিতর্কিত। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম। সদরের চড়বাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মাঠ না ছাড়ায় চাপের মুখে আছেন আওয়ামী লীগের হেবিওয়েট প্রার্থী জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহতাব হোসেন সুরুজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, নৌকার প্রার্থী লিটন মোল্লার সমর্থকরা শনিবার সকাল থেকে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। তার প্রচার মাইক ভাঙচুর করে নর্দমায় ফেলে দেয়া হয়েছে। বিকেলে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়ি থেকে বের হয়ে শেষ গণসংযোগ করেন।

হিজলার ৪টি ইউনিয়নেই বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক শাজাহান তালুকদারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছেন কৃষক লীগের সাবেক আহ্বায়ক মুন্সী মো. এসহাক আমিন। একই অবস্থা হিজলার মেমানিয়া, হরিনাথপুর, বড়জলিয়ায়।

হিজলার বহিষ্কার হওয়া বড়জালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প-িত শাহাবুদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুরু থেকে তার প্রচারে বাধা দিচ্ছে নৌকার প্রার্থীর লোকজন। প্রশাসন তাকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করছেন না। হিজলায় প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী লীগের নেতরা। এখানে সহিংসতা ঘটছে আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এখানে দু’জন নিহত হয়েছেন।

বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করতে মাঠ প্রশাসনকে সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশালের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, তিনি দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা করে ভোট সুষ্ঠু করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার দৃষ্টিতে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের অনুকূলে।

বহিষ্কার হলেন যারা

এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১০ জনসহ মোট ১৯ জনকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক প-িত শাহাবুদ্দিন ও ফারুক সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার নাসির উদ্দিন হাওলাদার, হরিনাথপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান সিকদার, মুলাদি উপজেলার বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সী, সদস্য মজিবর রহমান শরীফ, ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তাজেম আলী হাওলাদার, বরিশাল সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম হাওলাদার ও চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস জানান, দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা- করায় জেলার ৬টি উপজেলা থেকে শনিবার ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থন করায় আরও ৯ নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।