ত্ব-হা কাণ্ড, চাকরি গেল বন্ধু সিয়ামের

সিয়ামের দাবি, তিনি কিছুই জানতেন না পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান

বহুল আলোচিত কথিত ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান গাইবান্ধায় যে বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে সেই বন্ধু বলছেন তিনি এর কিছুই জানেন না। কিন্তু সেই বন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফ বলছেন এই ঘটনায় তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে।

সে রংপুর নগরীতে একটি মোবাইল ফোন সেট কোম্পানির মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সিয়াম বলছেন রোববার অফিসে গেলে তাকে জানানো হয় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

সিয়াম জানান, ত্ব-হা আদনান তার বাল্যবন্ধু। তারা এক সঙ্গে স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া করেছেন। কিন্তু আদনান ও তার কয়েকজন সহযোগী তাদের গাইবান্ধার ত্রিমোহনীর বাসায় আত্মগোপন ছিলেন সে বিষয়টি তার জানা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। চাকরির কারণে রংপুরে অবস্থান করায় বিষয়টি সম্পর্কে তার বাসা থেকেও কিছুই জানানো হয়নি।

‘ত্ব-হা আদনান শুক্রবার তার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসার পর গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি জানতে পারি আদনান ৮ দিন আমাদের বাড়িতেই আত্মগোপন করেছিল। পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হওয়ায় কোম্পানি আমাকে চাকরিচ্যুত করেছে। এটা আমার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে,’ বলেন সিয়াম।

সিয়াম জানান ত্ব-হা নিখোঁজ হওয়ার পর অন্যদের মতো তিনিও উদ্বিগ্ন ছিলেন। ‘অন্য বন্ধু-বান্ধবদের মতো ত্ব-হার সন্ধান ও উদ্ধারের দাবিতে নগরীতে বেশ কয়েকটি মানববন্ধন ও সমাবেশে কর্মসূচিতে আমিও অংশ নিয়েছিলাম,’ বলেন তিনি।

কান্না জড়িত কণ্ঠে সিয়াম বলেন, ‘আমার কোন অপরাধ নেই। অথচ ত্ব-হা আমার বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা এবং আমি তার (ত্ব-হার) সন্ধান চেয়ে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলাম বলেই চাকরিটা হারালাম। আমি সত্যি কিছু জানতাম না।’

তার মা কেন ত্ব-হা ও তার সঙ্গিদের বাসায় আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি জানালো না, এ প্রশ্নের উত্তরে সিয়াম বলেন, ‘ত্ব-হা তো প্রায়ই আমাদের বাড়িতে যেত। ও তো আমার স্কুল এবং কলেজ ফ্রেন্ড। আমাদের একসঙ্গে বেড়ে উঠার অনেক স্মৃতি। খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের। ত্ব-হা তার স্ত্রীকে নিয়েও আমাদের গ্রামে যেত।

আর এবার নাকি সে (ত্ব-হা) আমার মাকে অনুরোধ করেছিল, তাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য। পুলিশ ত্ব-হাকে উদ্ধারের পরই এটা জানতে পেরেছি।’

সিয়াম বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিপর্যন্ত সকলেই আমাকে ভুল বুঝছে। অনেক মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এতে একদিকে আমার মানসম্মানের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে আমাদের পারিবারিক সম্মান ক্ষুণœ হচ্ছে।’

তবে ত্ব-হার এভাবে ৮ দিন আত্মগোপন করে থাকার ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন সিয়াম।

গত ১০ জুন কথিত ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিত আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হন বলে পরিবার দাবি করে। এ ঘটনায় তার মা রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন।

নিখোঁজের আট দিন পর শুক্রবার, ১৮ জুন দুপুরে তার দুই সঙ্গিসহ রংপুর নগরীর চারতলা এলাকায় মাস্টারপাড়া মহল্লায় শ্বশুর আজহারুল ইসলামের বাড়িতে আসেন বলে খবর পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আবু ত্ব-হাসহ তিনজনকে গাড়িতে তুলে সরাসরি নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ মহানগর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধার আগে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (অপরাধ) মারুফ হোসেন সেখানে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আবু ত্ব-হা তাদের জানিয়েছেন তিনি স্বেচ্ছায় গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে তার বন্ধু সিয়ামের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।

পরে পুলিশ তাকেসহ সহযোগীদের রাতে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হাফিজার রহমানের আদালতে হাজির করে। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করার পর বিচারক স্বজনদের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। পরে আবু ত্ব-হা তার মা আজেফা বেগমের জিম্মায় তার সঙ্গে বাসায় ফিরে আসেন।

তবে এ বিষয়ে ত্ব-হা, তার সঙ্গী বা তাদের পরিবারের কারো কাছ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সোমবার, ২১ জুন ২০২১ , ৭ আষাঢ় ১৪২৮ ৯ জিলকদ ১৪৪২

ত্ব-হা কাণ্ড, চাকরি গেল বন্ধু সিয়ামের

সিয়ামের দাবি, তিনি কিছুই জানতেন না পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

বহুল আলোচিত কথিত ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান গাইবান্ধায় যে বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে সেই বন্ধু বলছেন তিনি এর কিছুই জানেন না। কিন্তু সেই বন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফ বলছেন এই ঘটনায় তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে।

সে রংপুর নগরীতে একটি মোবাইল ফোন সেট কোম্পানির মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সিয়াম বলছেন রোববার অফিসে গেলে তাকে জানানো হয় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

সিয়াম জানান, ত্ব-হা আদনান তার বাল্যবন্ধু। তারা এক সঙ্গে স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া করেছেন। কিন্তু আদনান ও তার কয়েকজন সহযোগী তাদের গাইবান্ধার ত্রিমোহনীর বাসায় আত্মগোপন ছিলেন সে বিষয়টি তার জানা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। চাকরির কারণে রংপুরে অবস্থান করায় বিষয়টি সম্পর্কে তার বাসা থেকেও কিছুই জানানো হয়নি।

‘ত্ব-হা আদনান শুক্রবার তার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসার পর গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি জানতে পারি আদনান ৮ দিন আমাদের বাড়িতেই আত্মগোপন করেছিল। পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হওয়ায় কোম্পানি আমাকে চাকরিচ্যুত করেছে। এটা আমার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে,’ বলেন সিয়াম।

সিয়াম জানান ত্ব-হা নিখোঁজ হওয়ার পর অন্যদের মতো তিনিও উদ্বিগ্ন ছিলেন। ‘অন্য বন্ধু-বান্ধবদের মতো ত্ব-হার সন্ধান ও উদ্ধারের দাবিতে নগরীতে বেশ কয়েকটি মানববন্ধন ও সমাবেশে কর্মসূচিতে আমিও অংশ নিয়েছিলাম,’ বলেন তিনি।

কান্না জড়িত কণ্ঠে সিয়াম বলেন, ‘আমার কোন অপরাধ নেই। অথচ ত্ব-হা আমার বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা এবং আমি তার (ত্ব-হার) সন্ধান চেয়ে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলাম বলেই চাকরিটা হারালাম। আমি সত্যি কিছু জানতাম না।’

তার মা কেন ত্ব-হা ও তার সঙ্গিদের বাসায় আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি জানালো না, এ প্রশ্নের উত্তরে সিয়াম বলেন, ‘ত্ব-হা তো প্রায়ই আমাদের বাড়িতে যেত। ও তো আমার স্কুল এবং কলেজ ফ্রেন্ড। আমাদের একসঙ্গে বেড়ে উঠার অনেক স্মৃতি। খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের। ত্ব-হা তার স্ত্রীকে নিয়েও আমাদের গ্রামে যেত।

আর এবার নাকি সে (ত্ব-হা) আমার মাকে অনুরোধ করেছিল, তাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য। পুলিশ ত্ব-হাকে উদ্ধারের পরই এটা জানতে পেরেছি।’

সিয়াম বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিপর্যন্ত সকলেই আমাকে ভুল বুঝছে। অনেক মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এতে একদিকে আমার মানসম্মানের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে আমাদের পারিবারিক সম্মান ক্ষুণœ হচ্ছে।’

তবে ত্ব-হার এভাবে ৮ দিন আত্মগোপন করে থাকার ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন সিয়াম।

গত ১০ জুন কথিত ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিত আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হন বলে পরিবার দাবি করে। এ ঘটনায় তার মা রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন।

নিখোঁজের আট দিন পর শুক্রবার, ১৮ জুন দুপুরে তার দুই সঙ্গিসহ রংপুর নগরীর চারতলা এলাকায় মাস্টারপাড়া মহল্লায় শ্বশুর আজহারুল ইসলামের বাড়িতে আসেন বলে খবর পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আবু ত্ব-হাসহ তিনজনকে গাড়িতে তুলে সরাসরি নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ মহানগর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধার আগে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (অপরাধ) মারুফ হোসেন সেখানে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আবু ত্ব-হা তাদের জানিয়েছেন তিনি স্বেচ্ছায় গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে তার বন্ধু সিয়ামের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।

পরে পুলিশ তাকেসহ সহযোগীদের রাতে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হাফিজার রহমানের আদালতে হাজির করে। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করার পর বিচারক স্বজনদের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। পরে আবু ত্ব-হা তার মা আজেফা বেগমের জিম্মায় তার সঙ্গে বাসায় ফিরে আসেন।

তবে এ বিষয়ে ত্ব-হা, তার সঙ্গী বা তাদের পরিবারের কারো কাছ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।