অনলাইনে অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা বেচা, গ্রেপ্তার ৪

হামিম প্রিন্স খানের শিক্ষাকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার

ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে হামিম প্রিন্স খান। প্রাতিষ্ঠানিক এ বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে অনলাইনে পারদর্শী হয়ে উঠে সে। অল্প দিনেই ইউটিউব চ্যানেল, সফট্যওয়ারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার পর শুরু করে অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা বিক্রির ব্যবসা। আর ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবসার পরিধি বাড়াতে অনলাইন কেন্দ্রিক বিভিন্ন কনটেন্টে পর্নো সাইট ছড়িয়ে তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করে তোলে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে মিলে অবৈধ ভার্চুয়াল বিক্রির কার্যক্রমে প্রতি মাসে দেড় কোটি টাকা লেনদেন করত সে। এসব টাকার অধিকাংশ পাচার হয়ে যেতো দেশের বাইরে’। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের অভিযানে ভার্চুয়াল বিক্রির সঙ্গে জড়িত প্রিন্স খানসহ ৪ জনকে আটকের পর এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

গতকাল রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে এ চক্রকে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ৪। আটক হওয়া অন্যরা হলেন রাহুল সরকার, সঞ্জিব দে, মো. সোহেল খান। তাদের কাছ থেকে উদ্ধর করা হয়েছে ২টি ল্যাপটপ এবং ক্রেডিট কার্ড।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচারল কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভার্চুয়াল মূদ্রা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের খোঁজ পাওয়ার পর র‌্যাব-৪ কাজ শুরু করে। অনুসন্ধানে র‌্যাব জানতে পারে চক্রটি শুধু ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করে পর্নো সাইট ক্রয় করে সেগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। এর বিনিময়ে চক্রটি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল।

‘চক্রটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মধ্যে পর্নো সাইটগুলোর ডোমেইন হোল্ডারদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে এসব সাইট নিজেরা কিনে নিত। এরপর অনলাইনে ছড়িয়ে দিত। এসব সাইটে প্রবেশকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করত। এসব সাইটে কিভাবে অর্থ আয় করা যায় সে বিষয়ে নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দিত। ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচারও প্রশিক্ষণ দিত। খুব অল্প সময়ে এ চক্র কয়েক হাজার সদস্য সংগ্রহ করে। ওইসব সদস্যদের কাছে ভার্চুয়াল মুদ্রা বিক্রি করত। আবার তাদের ভার্চুয়াল মূদ্রা বিক্রি করতে সহযোগিতা করত।

সম্প্রতি স্টিমকার, লাইকি, বিগোসহ বেশকিছু সফটওয়্যারে তরুণীদের সঙ্গে আড্ডার নামে অশ্লীল কর্মকা-ের অভিযোগে অভিযানে নামে র‌্যাব ও পুলিশ। পৃথক অভিযানে এসব কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি গ্রুপকে আটক করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। র‌্যাবের তদন্তে তখন এসব সাইটে ভার্চুয়াল মুদ্রায় জুয়া খেলার তথ্যও বেরিয়ে আসে। মূলত ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনে এসব সাইটে প্রবেশ করে নানা রকম অসামাজিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রলোভনে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের যুক্ত হতে আমন্ত্রণ জানাত সংঘবদ্ধ চক্র। পুলিশের একটি তদন্তে পাওয়া যায় প্রতিমাসে দেশ থেকে ১২শ’ কোটি টাকা ভাচুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচার নামে পাচার হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, এচক্রের প্রধান হামিম প্রিন্স খান ২০১৩ সালে ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করে। ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়র কারণে সে ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট দেখত। এরপর সে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়। এ প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে সে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবাচার সাইটগুলোতে প্রবেশ করে। সেখানে যে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিজেই একটি গ্রুপ তৈরি করে। ৫০ জনের এই গ্রুপকে ভার্চুয়াল মুদ্রাকেনা বেনার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়। তার গ্রুপের সদস্যদের কাজ ছিল মাঠ পর্যায়ে টার্গেট উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচায় আগ্রহী করে তোলা এবং বিনিয়োগ করা।

প্রিন্স খান অনলাইনে ১৫ থেকে ২০টি সাইটের সঙ্গে জড়িত। এসব সাইট থেকেই সে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা করত। অন্যরাও একাধিক সাইটে ভার্চুয়াল মুদ্রা বেচাকেনা করত। তাদের কাস্টমারদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজপড়–য়া উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী। এসব তরুণীদের ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো। এছাড়া নানারকম অসামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রলোভনও দেখানো হতো। এসব করে চক্রটি কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

র‌্যাব জানায়, আটক রাহুল সরকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়ণরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিন্স খানের সঙ্গে রাহুলের পরিচয় হয়। এরপর রাহুল ২০২০ সাল থেকে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস ফরিপুরের একটি স্থানীয় কলেজের ছাত্র। রাহুলের মতো প্রিন্স খানের সঙ্গে তারও একইভাবে পরিচয় হয়ে । প্রিন্স খানের প্রস্তাবে সঞ্জিব ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচার জন্য একটি একাউন্ট খুলে বসে। সোহেল খানও ভার্চুয়াল মুদ্রার বিষয়ে জানতে পেরে পিন্স খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর সে নিজে কয়েকটি সাইট খুলে। এসব সাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনবেচা করতে থাকে।

সোমবার, ২১ জুন ২০২১ , ৭ আষাঢ় ১৪২৮ ৯ জিলকদ ১৪৪২

অনলাইনে অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা বেচা, গ্রেপ্তার ৪

হামিম প্রিন্স খানের শিক্ষাকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে হামিম প্রিন্স খান। প্রাতিষ্ঠানিক এ বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে অনলাইনে পারদর্শী হয়ে উঠে সে। অল্প দিনেই ইউটিউব চ্যানেল, সফট্যওয়ারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার পর শুরু করে অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা বিক্রির ব্যবসা। আর ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবসার পরিধি বাড়াতে অনলাইন কেন্দ্রিক বিভিন্ন কনটেন্টে পর্নো সাইট ছড়িয়ে তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করে তোলে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে মিলে অবৈধ ভার্চুয়াল বিক্রির কার্যক্রমে প্রতি মাসে দেড় কোটি টাকা লেনদেন করত সে। এসব টাকার অধিকাংশ পাচার হয়ে যেতো দেশের বাইরে’। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের অভিযানে ভার্চুয়াল বিক্রির সঙ্গে জড়িত প্রিন্স খানসহ ৪ জনকে আটকের পর এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

গতকাল রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে এ চক্রকে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ৪। আটক হওয়া অন্যরা হলেন রাহুল সরকার, সঞ্জিব দে, মো. সোহেল খান। তাদের কাছ থেকে উদ্ধর করা হয়েছে ২টি ল্যাপটপ এবং ক্রেডিট কার্ড।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচারল কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভার্চুয়াল মূদ্রা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের খোঁজ পাওয়ার পর র‌্যাব-৪ কাজ শুরু করে। অনুসন্ধানে র‌্যাব জানতে পারে চক্রটি শুধু ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করে পর্নো সাইট ক্রয় করে সেগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। এর বিনিময়ে চক্রটি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল।

‘চক্রটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মধ্যে পর্নো সাইটগুলোর ডোমেইন হোল্ডারদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে এসব সাইট নিজেরা কিনে নিত। এরপর অনলাইনে ছড়িয়ে দিত। এসব সাইটে প্রবেশকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করত। এসব সাইটে কিভাবে অর্থ আয় করা যায় সে বিষয়ে নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দিত। ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচারও প্রশিক্ষণ দিত। খুব অল্প সময়ে এ চক্র কয়েক হাজার সদস্য সংগ্রহ করে। ওইসব সদস্যদের কাছে ভার্চুয়াল মুদ্রা বিক্রি করত। আবার তাদের ভার্চুয়াল মূদ্রা বিক্রি করতে সহযোগিতা করত।

সম্প্রতি স্টিমকার, লাইকি, বিগোসহ বেশকিছু সফটওয়্যারে তরুণীদের সঙ্গে আড্ডার নামে অশ্লীল কর্মকা-ের অভিযোগে অভিযানে নামে র‌্যাব ও পুলিশ। পৃথক অভিযানে এসব কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি গ্রুপকে আটক করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। র‌্যাবের তদন্তে তখন এসব সাইটে ভার্চুয়াল মুদ্রায় জুয়া খেলার তথ্যও বেরিয়ে আসে। মূলত ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনে এসব সাইটে প্রবেশ করে নানা রকম অসামাজিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রলোভনে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের যুক্ত হতে আমন্ত্রণ জানাত সংঘবদ্ধ চক্র। পুলিশের একটি তদন্তে পাওয়া যায় প্রতিমাসে দেশ থেকে ১২শ’ কোটি টাকা ভাচুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচার নামে পাচার হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, এচক্রের প্রধান হামিম প্রিন্স খান ২০১৩ সালে ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করে। ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়র কারণে সে ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট দেখত। এরপর সে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়। এ প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে সে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবাচার সাইটগুলোতে প্রবেশ করে। সেখানে যে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিজেই একটি গ্রুপ তৈরি করে। ৫০ জনের এই গ্রুপকে ভার্চুয়াল মুদ্রাকেনা বেনার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়। তার গ্রুপের সদস্যদের কাজ ছিল মাঠ পর্যায়ে টার্গেট উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচায় আগ্রহী করে তোলা এবং বিনিয়োগ করা।

প্রিন্স খান অনলাইনে ১৫ থেকে ২০টি সাইটের সঙ্গে জড়িত। এসব সাইট থেকেই সে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা করত। অন্যরাও একাধিক সাইটে ভার্চুয়াল মুদ্রা বেচাকেনা করত। তাদের কাস্টমারদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজপড়–য়া উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী। এসব তরুণীদের ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো। এছাড়া নানারকম অসামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রলোভনও দেখানো হতো। এসব করে চক্রটি কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

র‌্যাব জানায়, আটক রাহুল সরকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়ণরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিন্স খানের সঙ্গে রাহুলের পরিচয় হয়। এরপর রাহুল ২০২০ সাল থেকে ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস ফরিপুরের একটি স্থানীয় কলেজের ছাত্র। রাহুলের মতো প্রিন্স খানের সঙ্গে তারও একইভাবে পরিচয় হয়ে । প্রিন্স খানের প্রস্তাবে সঞ্জিব ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচার জন্য একটি একাউন্ট খুলে বসে। সোহেল খানও ভার্চুয়াল মুদ্রার বিষয়ে জানতে পেরে পিন্স খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর সে নিজে কয়েকটি সাইট খুলে। এসব সাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনবেচা করতে থাকে।