কাঁচামরিচের কেজি পাঁচ টাকা! দিশেহারা কৃষক

মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলাতে কাঁচামরিচ চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মরিচ চাষিদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। উৎপাদন খরচ, ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে যে টাকা খরচ হয় সে টাকাও উঠছে না তাদের। চাষিরা মরিচ নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে।

মানিকগঞ্জে প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৫ টাকায়। অথচ একই মরিচ রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে দাম বেড়ে হয়ে যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এবার যদি মরিচের দাম আর না বাড়ে তাহলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুণতে হবে এ অঞ্চলের চাষিদের। এ অঞ্চলের কাঁচামরিচ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণের দাবি মানিকগঞ্জের কৃষকদের। অপরদিকে করোনাভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণে নানা জটিলতার কারণে, প্রায় শূন্যের কোটায় মানিকগঞ্জের কাঁচা মরিচের রফতানি বাজার। নামে মাত্র অল্প কিছু মরিচ পাঠানো হচ্ছে বিদেশের বাজারে। যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় হাট-বাজারে। এতে করে লোকসানে রয়েছে মানিকগঞ্জের মরিচ চাষিরা। জেলার ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট, বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ড, কেল্লাই আড়ত, বাঠইমুড়ি বাজার, হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা, বাল্লা, বাস্তা, মাচাইন, শিবালয় উপজেলার বরংগাইল, নালী, রূপসা, তাড়াইল, শাকরাইল এবং মরিচ কেনা-বেচার বিখ্যাত হাট-বাজার। গত সোমবার জেলার বৃহত্তর মরিচ হাট বরংগাইলে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত কৃষক বস্তা ভর্তি মরিচ নিয়ে বসে আছেন একটু ভাল দাম পেয়ে বিক্রির আশায়। কিন্তু তাদের এই আশা সফল হয়নি। অনেকটা ক্রেতা শূন্য বাজার। এক সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের দাম একই জায়গাতেই রয়ে গেছে। হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার মরিচের বাম্পার ফলনই কাল হয়েছে কৃষকের। উৎপাদন কম হলে দাম ভাল পাওয়া যেতো এমন কথা অনেকের। ঘিওর বাজারের কাঁচামরিচ ব্যবসায়ী আরজু বেপারী জানান, জেলার ঘিওর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলা মরিচ চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে উৎপাদিত বিন্দু জাতের মরিচের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাল দাম পেলে এ এলাকার কৃষকরা মরিচ চাষে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। বরংগাইল আড়তে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে আসা রাধাকান্তপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো. মুন্নাফ মোল্লা বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। সময়মতো সার, কীটনাশক প্রয়োগ এবং পরিচর্যার ফলে এ বছর যথেষ্ট পরিমাণ ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে মরিচের চাহিদা না থাকায় আমরা হতাশার মধ্যে দিন পার করছি। বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকা দরে। ক্ষেত থেকে মরিচ তোলা বাবদ শ্রমিককে কেজি প্রতি দিতে হয় ৫ টাকা। বাজারে আনতে মণ প্রতি রিক্সাচালককে দিতে হয় ২০ টাকা। আমার নিজের পারিশ্রমিক দিনে ৫০০ টাকা। অথচ বাজারে নিয়ে ১ মণ মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ২শ’ টাকা থেকে ২৮০ টাকা। এখন আমাদের নিরবে কান্না করা ছাড়া অন্য কোন গতি নেই। শিবালয়ের বরংগাইল বাজারের কাঁচামরিচ ব্যবসায়ী জহিরুল হক জানান, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মরিচের আমদানি হয় বরংগাইল বাজারে। এখান থেকে প্রায় অর্ধশত আড়তদার মরিচ কিনে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠান। তবে বিমান চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় বিদেশের বাজারে মরিচ রপ্তানি করা যাচ্ছে না। যে কারণে চাহিদা কমেছে মরিচের। আর এতে করে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষিদের।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহ উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফউজ্জামান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলাতে ৫ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর। বর্তমানে দাম অনেক কম থাকায়, কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বিদেশে রপ্তানি না করতে পেরে মরিচের বাজার নিম্নমুখী। তবে বর্ষা মৌসুম আসার কারণে মরিচের বাজার এখন একটু চাঙ্গা হবে বলে তিনি জানান।

মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ , ৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১০ জিলকদ ১৪৪২

কাঁচামরিচের কেজি পাঁচ টাকা! দিশেহারা কৃষক

প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ

image

মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলাতে কাঁচামরিচ চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মরিচ চাষিদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। উৎপাদন খরচ, ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে যে টাকা খরচ হয় সে টাকাও উঠছে না তাদের। চাষিরা মরিচ নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে।

মানিকগঞ্জে প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৫ টাকায়। অথচ একই মরিচ রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে দাম বেড়ে হয়ে যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এবার যদি মরিচের দাম আর না বাড়ে তাহলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুণতে হবে এ অঞ্চলের চাষিদের। এ অঞ্চলের কাঁচামরিচ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণের দাবি মানিকগঞ্জের কৃষকদের। অপরদিকে করোনাভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণে নানা জটিলতার কারণে, প্রায় শূন্যের কোটায় মানিকগঞ্জের কাঁচা মরিচের রফতানি বাজার। নামে মাত্র অল্প কিছু মরিচ পাঠানো হচ্ছে বিদেশের বাজারে। যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় হাট-বাজারে। এতে করে লোকসানে রয়েছে মানিকগঞ্জের মরিচ চাষিরা। জেলার ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট, বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ড, কেল্লাই আড়ত, বাঠইমুড়ি বাজার, হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা, বাল্লা, বাস্তা, মাচাইন, শিবালয় উপজেলার বরংগাইল, নালী, রূপসা, তাড়াইল, শাকরাইল এবং মরিচ কেনা-বেচার বিখ্যাত হাট-বাজার। গত সোমবার জেলার বৃহত্তর মরিচ হাট বরংগাইলে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত কৃষক বস্তা ভর্তি মরিচ নিয়ে বসে আছেন একটু ভাল দাম পেয়ে বিক্রির আশায়। কিন্তু তাদের এই আশা সফল হয়নি। অনেকটা ক্রেতা শূন্য বাজার। এক সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের দাম একই জায়গাতেই রয়ে গেছে। হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার মরিচের বাম্পার ফলনই কাল হয়েছে কৃষকের। উৎপাদন কম হলে দাম ভাল পাওয়া যেতো এমন কথা অনেকের। ঘিওর বাজারের কাঁচামরিচ ব্যবসায়ী আরজু বেপারী জানান, জেলার ঘিওর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলা মরিচ চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে উৎপাদিত বিন্দু জাতের মরিচের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাল দাম পেলে এ এলাকার কৃষকরা মরিচ চাষে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। বরংগাইল আড়তে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে আসা রাধাকান্তপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো. মুন্নাফ মোল্লা বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। সময়মতো সার, কীটনাশক প্রয়োগ এবং পরিচর্যার ফলে এ বছর যথেষ্ট পরিমাণ ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে মরিচের চাহিদা না থাকায় আমরা হতাশার মধ্যে দিন পার করছি। বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকা দরে। ক্ষেত থেকে মরিচ তোলা বাবদ শ্রমিককে কেজি প্রতি দিতে হয় ৫ টাকা। বাজারে আনতে মণ প্রতি রিক্সাচালককে দিতে হয় ২০ টাকা। আমার নিজের পারিশ্রমিক দিনে ৫০০ টাকা। অথচ বাজারে নিয়ে ১ মণ মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ২শ’ টাকা থেকে ২৮০ টাকা। এখন আমাদের নিরবে কান্না করা ছাড়া অন্য কোন গতি নেই। শিবালয়ের বরংগাইল বাজারের কাঁচামরিচ ব্যবসায়ী জহিরুল হক জানান, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মরিচের আমদানি হয় বরংগাইল বাজারে। এখান থেকে প্রায় অর্ধশত আড়তদার মরিচ কিনে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠান। তবে বিমান চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় বিদেশের বাজারে মরিচ রপ্তানি করা যাচ্ছে না। যে কারণে চাহিদা কমেছে মরিচের। আর এতে করে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষিদের।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহ উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফউজ্জামান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলাতে ৫ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর। বর্তমানে দাম অনেক কম থাকায়, কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বিদেশে রপ্তানি না করতে পেরে মরিচের বাজার নিম্নমুখী। তবে বর্ষা মৌসুম আসার কারণে মরিচের বাজার এখন একটু চাঙ্গা হবে বলে তিনি জানান।