অমানবিক উচ্ছেদ ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে দাবিপত্র

আসাম রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বেআইনী উচ্ছেদ অভিযান, বাংলাদেশ থাকে আসা মুসলিম শরনার্থী তকমা দেয়ার নামে বর্তমান সরকারের সংখ্যালঘু বিরোধী অবস্থান পরিবর্তন করা কাছার ও নগাঁও বহু পুরানো কাগজকল পুনরায় চালু করাসহ বিভিন্ন গণবিরোধী দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে আসাম নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন সংগঠন (সিআরপিসিসি)। সংগঠনের উপদেষ্টা, সভাপতি, সম্পাদকসহ রাজ্যের শতাধিক সদস্য স্বাক্ষর করে রাজ্য সরকারের কাছে ঐ সমস্ত দাবির সমর্থনে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি দাবিপত্র সরকারের কাছে প্রদান করা হয়।

এই আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর স্বার্থে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক অগণতান্ত্রিক ও বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি জমি দখলমুক্ত করার নামে ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে বসবাস করা পরিবারকে বেআইনীভাবে উচ্ছেদ করছে।

সম্প্রতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মতো (বিশেষ করে মুসলিমদের) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির দায়ভার সংখ্যালঘুদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয় প্রতিটি ঘটনার পেছনে রাজ্য সরকারের মনোভাব পরিষ্কারভাবে প্রতফলিত হচ্ছে।

দাবিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের সঙ্গে এসব বেমানান। আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, কোভিড আতিমারির ফলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি শ্মশান, কবরস্থানে শবদেহ সৎকারের স্থান সংকুলান পর্যন্ত হয়নি। হাজার হাজার শিশু তাদের পিতা-মাতা হারিয়ে অনাথ হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, পর্যাপ্ত সরকারি সাহায্যের অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন।

দাবিপত্রে স্বাক্ষরকারীদের বক্তব্য, এই চরম বিপদের সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু আসাম সরকার শোণিতপুর, হোজাই, করিমগ?ঞ্জ, চিরাং ইত্যাদি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগণকে দখলদার ও বিদেশী তথা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা লাগিয়ে দীর্ঘবছর ধরে বসবাস করা বসতবাটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করছে যা মানবতা বিরোধী ও দানবিক।

এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আসাম সরকারে এই গণবিরোধী আচরণ নেতৃবৃন্দকে ব্যথিত করেছে।

তারা বলেছেন, বিজেপি রাজ্য সরকারের কেন এই আচরণ আমরা বুঝি! বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলো থেকে বেশি আসনে জেততে না পেরে সরকারের সংখ্যালঘুদের ওপর কি এই নৈবর্তণমূলক আচরণ? তাই যদি হয় বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে সরকারকে। একটি নির্বাচিত সরকারে এই আচরণ হতে পারে না।

সরকারের কাছে সংগঠনের পক্ষে আহ্বান, মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার, দীর্ঘ লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাদ্যের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সরকার জনবিরোধী সব কাজ না করে মানুষের যাতে কষ্ট লাঘব হয় সেই কাজ করুক সরকার। আসামেরর ‘ভূমিপুত্র মুসলিম’ আর ‘বাংলাদেশী মুসলমান’ এই নিয়ে বিভাজন করা থেকে বিরত থাকার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনের পক্ষে।

আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন সিআরপিসিসির সভাপতি তপোধির ভট্রাচার্য্য, নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতির সভাপতি নৃপেন্দ্রচন্দ্র সাহা, কবি-সাহিত্যিক বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য্য, মাওলানা সারিমূল হক লস্কর, আহলে সুন্নতোয়াল জামাত উত্তর-পূর্বা?ঞ্চলের মুখ্য উপদেষ্টা আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী ও সংগঠনের সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থদসহ শতাধিক সমমনা সংগঠনের সভাপতি ও সাধরণ সম্পাদকরা এই দাবিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ , ৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১০ জিলকদ ১৪৪২

আসাম রাজ্য সরকারকে

অমানবিক উচ্ছেদ ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে দাবিপত্র

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

আসাম রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বেআইনী উচ্ছেদ অভিযান, বাংলাদেশ থাকে আসা মুসলিম শরনার্থী তকমা দেয়ার নামে বর্তমান সরকারের সংখ্যালঘু বিরোধী অবস্থান পরিবর্তন করা কাছার ও নগাঁও বহু পুরানো কাগজকল পুনরায় চালু করাসহ বিভিন্ন গণবিরোধী দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে আসাম নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন সংগঠন (সিআরপিসিসি)। সংগঠনের উপদেষ্টা, সভাপতি, সম্পাদকসহ রাজ্যের শতাধিক সদস্য স্বাক্ষর করে রাজ্য সরকারের কাছে ঐ সমস্ত দাবির সমর্থনে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি দাবিপত্র সরকারের কাছে প্রদান করা হয়।

এই আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর স্বার্থে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক অগণতান্ত্রিক ও বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি জমি দখলমুক্ত করার নামে ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে বসবাস করা পরিবারকে বেআইনীভাবে উচ্ছেদ করছে।

সম্প্রতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মতো (বিশেষ করে মুসলিমদের) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির দায়ভার সংখ্যালঘুদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয় প্রতিটি ঘটনার পেছনে রাজ্য সরকারের মনোভাব পরিষ্কারভাবে প্রতফলিত হচ্ছে।

দাবিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের সঙ্গে এসব বেমানান। আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, কোভিড আতিমারির ফলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি শ্মশান, কবরস্থানে শবদেহ সৎকারের স্থান সংকুলান পর্যন্ত হয়নি। হাজার হাজার শিশু তাদের পিতা-মাতা হারিয়ে অনাথ হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, পর্যাপ্ত সরকারি সাহায্যের অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন।

দাবিপত্রে স্বাক্ষরকারীদের বক্তব্য, এই চরম বিপদের সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু আসাম সরকার শোণিতপুর, হোজাই, করিমগ?ঞ্জ, চিরাং ইত্যাদি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগণকে দখলদার ও বিদেশী তথা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা লাগিয়ে দীর্ঘবছর ধরে বসবাস করা বসতবাটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করছে যা মানবতা বিরোধী ও দানবিক।

এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আসাম সরকারে এই গণবিরোধী আচরণ নেতৃবৃন্দকে ব্যথিত করেছে।

তারা বলেছেন, বিজেপি রাজ্য সরকারের কেন এই আচরণ আমরা বুঝি! বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলো থেকে বেশি আসনে জেততে না পেরে সরকারের সংখ্যালঘুদের ওপর কি এই নৈবর্তণমূলক আচরণ? তাই যদি হয় বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে সরকারকে। একটি নির্বাচিত সরকারে এই আচরণ হতে পারে না।

সরকারের কাছে সংগঠনের পক্ষে আহ্বান, মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার, দীর্ঘ লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাদ্যের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সরকার জনবিরোধী সব কাজ না করে মানুষের যাতে কষ্ট লাঘব হয় সেই কাজ করুক সরকার। আসামেরর ‘ভূমিপুত্র মুসলিম’ আর ‘বাংলাদেশী মুসলমান’ এই নিয়ে বিভাজন করা থেকে বিরত থাকার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনের পক্ষে।

আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন সিআরপিসিসির সভাপতি তপোধির ভট্রাচার্য্য, নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতির সভাপতি নৃপেন্দ্রচন্দ্র সাহা, কবি-সাহিত্যিক বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য্য, মাওলানা সারিমূল হক লস্কর, আহলে সুন্নতোয়াল জামাত উত্তর-পূর্বা?ঞ্চলের মুখ্য উপদেষ্টা আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী ও সংগঠনের সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থদসহ শতাধিক সমমনা সংগঠনের সভাপতি ও সাধরণ সম্পাদকরা এই দাবিপত্রে স্বাক্ষর করেন।