কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধকর্ম থেমে নেই। নতুন নতুন কৌশলে চাঁদাবাজি করছে। রাস্তায় দলবদ্ধ হয়ে সংঘাত সৃষ্টি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। র্যাবের ধরপাকড় অভিযানের মধ্যেও তাদের চাঁদাবাজি ও ইভটিজিং থামছে না।
গত রোববার রাতেও রাজধানীর হাজারীবাগ ও দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত কয়েক দিনে র্যাব সদস্যরা রাজধানীসহ আশপাশ এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ১৬৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের অপরাধের তথ্য দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, পলাতক অন্যদের ধরতে চলছে অভিযান।
ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার কিশোর ডন সাগর ও মুন্না গ্যাংয়ের সদস্যরা হলো মো. সাগর, সরফরাজ আহমেদ রিমন, মো. রায়হান, পলাশ হোসেন, মো. মুন্না, রাসেল, উজ্জল হোসেন, শাকিল হাওলাদার, মুরাদ হোসেন, মামুন খান, রিফাদ হোসেন, মো. রায়হান, হাসান শেখ, হাসাইন, নাসির উদ্দিন আলবানী ও জয় চদ্র। তাদের কাছ থেকে ১১টি ছুরি, ১টি চাপাতি, ৩টি হোল্ডিং চাকু, ১টি ক্ষুর উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত কিশোর অপরাধীরা সংবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রাস্তায় পথচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদবাজি ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। র্যাব-২ গত এক মাসে তাদের ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
র্যাব সদস্যরা সম্প্রতি রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং সেভেন স্টার ও রবিন হুড গ্যাংয়ের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ৬টি সুইচ গিয়ার চাকু, তিনটি ছুরি, ৮টি মোবাইল ফোন ও নগদ এক হাজার ৭শ’ টাকা জব্দ করেছে।
এ গ্রুপের সদস্যরা জনসমাগমপূর্ণ স্থানে একাকী পথচারীদের আকস্মিক ঘিরে ধরে আশপাশের কেউ বুঝে উঠার আগেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক মানিব্যাগ, টাকা পয়সা, স্বর্ণলঙ্কার, মোবাইল সেট, ল্যাপটপসহ অন্যান্য সামগ্রী লুট করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করে, তারা চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, পাড়ামহল্লায় মারামারি, স্থানীয় ভূমি দস্যুদের পক্ষ নিয়ে জমিতে পেশিশক্তির মহড়া দেয়। তারা দলবদ্ধ হয়ে প্রভাব বিস্তার করে।
রাজধানীর তেজগাঁও, গোলাপলবাগ ও তেজগাঁও শিল্প এলাকায় কিশোর গ্যাং রয়েছে। এর মধ্যে আকাশ গ্যাং ও সীমা গ্যাং। এ দুই গ্যাংরে ১৮ সদস্যকে সম্প্রতি র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তারা টিকটক ও লাইকিসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ার করে অভিনেত্রী ও অভিনেতার ছবি তোলার মাধ্যমে ভাইরাল হওয়াসহ বিভিন্ন বয়সী নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক করে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বীকার করেছে। এমনকি নিজেদের গ্যাংয়ের মধ্যে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য অন্যান্য কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে মারপিটসহ নানা সংঘর্ষেও জড়ায়।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি শনির আখড়া থেকে কিশোর রকি গ্যাংয়ের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ গ্যাং হানিফ ফ্লাইওভারের উপর জয়কালী মন্দিরের কাছে যানবাহন আটক করে গাড়ি চালককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। ওই সময় গাড়িতে থাকা লোকজন আতঙ্কিত হয়। গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে এমন খবর পেয়ে র্যাব অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্যকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট, সুইচ গিয়ার চাকুসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এভাবে র্যাব সদস্যরা সম্প্রতি ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় পৃথক একাধিক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ১৬৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, পলাতক অন্যদের ধরতে চলছে র্যাবের অভিযান।
মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ , ৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১০ জিলকদ ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধকর্ম থেমে নেই। নতুন নতুন কৌশলে চাঁদাবাজি করছে। রাস্তায় দলবদ্ধ হয়ে সংঘাত সৃষ্টি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। র্যাবের ধরপাকড় অভিযানের মধ্যেও তাদের চাঁদাবাজি ও ইভটিজিং থামছে না।
গত রোববার রাতেও রাজধানীর হাজারীবাগ ও দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত কয়েক দিনে র্যাব সদস্যরা রাজধানীসহ আশপাশ এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ১৬৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের অপরাধের তথ্য দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, পলাতক অন্যদের ধরতে চলছে অভিযান।
ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার কিশোর ডন সাগর ও মুন্না গ্যাংয়ের সদস্যরা হলো মো. সাগর, সরফরাজ আহমেদ রিমন, মো. রায়হান, পলাশ হোসেন, মো. মুন্না, রাসেল, উজ্জল হোসেন, শাকিল হাওলাদার, মুরাদ হোসেন, মামুন খান, রিফাদ হোসেন, মো. রায়হান, হাসান শেখ, হাসাইন, নাসির উদ্দিন আলবানী ও জয় চদ্র। তাদের কাছ থেকে ১১টি ছুরি, ১টি চাপাতি, ৩টি হোল্ডিং চাকু, ১টি ক্ষুর উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত কিশোর অপরাধীরা সংবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রাস্তায় পথচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদবাজি ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। র্যাব-২ গত এক মাসে তাদের ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
র্যাব সদস্যরা সম্প্রতি রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং সেভেন স্টার ও রবিন হুড গ্যাংয়ের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ৬টি সুইচ গিয়ার চাকু, তিনটি ছুরি, ৮টি মোবাইল ফোন ও নগদ এক হাজার ৭শ’ টাকা জব্দ করেছে।
এ গ্রুপের সদস্যরা জনসমাগমপূর্ণ স্থানে একাকী পথচারীদের আকস্মিক ঘিরে ধরে আশপাশের কেউ বুঝে উঠার আগেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক মানিব্যাগ, টাকা পয়সা, স্বর্ণলঙ্কার, মোবাইল সেট, ল্যাপটপসহ অন্যান্য সামগ্রী লুট করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করে, তারা চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, পাড়ামহল্লায় মারামারি, স্থানীয় ভূমি দস্যুদের পক্ষ নিয়ে জমিতে পেশিশক্তির মহড়া দেয়। তারা দলবদ্ধ হয়ে প্রভাব বিস্তার করে।
রাজধানীর তেজগাঁও, গোলাপলবাগ ও তেজগাঁও শিল্প এলাকায় কিশোর গ্যাং রয়েছে। এর মধ্যে আকাশ গ্যাং ও সীমা গ্যাং। এ দুই গ্যাংরে ১৮ সদস্যকে সম্প্রতি র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তারা টিকটক ও লাইকিসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ার করে অভিনেত্রী ও অভিনেতার ছবি তোলার মাধ্যমে ভাইরাল হওয়াসহ বিভিন্ন বয়সী নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক করে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বীকার করেছে। এমনকি নিজেদের গ্যাংয়ের মধ্যে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য অন্যান্য কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে মারপিটসহ নানা সংঘর্ষেও জড়ায়।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি শনির আখড়া থেকে কিশোর রকি গ্যাংয়ের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ গ্যাং হানিফ ফ্লাইওভারের উপর জয়কালী মন্দিরের কাছে যানবাহন আটক করে গাড়ি চালককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। ওই সময় গাড়িতে থাকা লোকজন আতঙ্কিত হয়। গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে এমন খবর পেয়ে র্যাব অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্যকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট, সুইচ গিয়ার চাকুসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এভাবে র্যাব সদস্যরা সম্প্রতি ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় পৃথক একাধিক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ১৬৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, পলাতক অন্যদের ধরতে চলছে র্যাবের অভিযান।