এসএম লুৎফর রহমান
স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনৈতিক পুনবার্সন, পুনর্গঠন ও সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ঢেলে সাজানো। এক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং কার্যকর।
১৯৭০ সালে সাইক্লোন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। ১৯৭০ সালে সাইক্লোনে তৎকালীন মোট জাতীয় উৎপাদনের ৩.৮০% বিনষ্ট হয়। পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সাইক্লোন বিধ্বস্ত অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য অর্থনৈতিক বা সামাজিক পুনবার্সনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতি- সবমিলিয়ে পুরো দেশই ছিল প্রায় বিধ্বস্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকে কোন বৈদেশিক মুদ্রা বা গোল্ড রিজার্ভ ছিল না। দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন কাঠামো, আর্থিক কাঠামো, ব্যাংক ব্যবস্থা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে পড়ে। দেশের ভেতরে ব্যাংকের বহু শাখা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, বহু শাখা লুট করা হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ বাঙালি ব্যাংকারদের। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে এ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানত ও কেন্দীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দেয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ পুনর্গঠন ছিল দুরূহ কাজ। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নীতিনির্ধারণী কাজ, মুদ্রা ও বিষয়ক ব্যাংকিং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতো পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে। এ অবস্থায় পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও অর্থনৈতিক গতি চালু করতে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি আদেশ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠন করা হয়। এই আদেশ কার্যকর করা হয় ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম প্রশাসক নিযুক্ত করা হয় মুশফেক-উস-সালেহীনকে এবং ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রথম গর্ভনর নিযুক্ত করা হয় এএন হামিদুল্লাহকে। কোন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও গোল্ড রিজার্ভ ছাড়া এবং পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া ৩৫৮ কোটি টাকার দায় মাথায় নিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের যাত্রা। পাকিস্তানের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্যপদ লাভ করেছিল এবং আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলে জমা দেয়ার জন্য চাঁদা বাবদ ২০ লাখ ডলার মূল্যের স্বর্ণ কানাডা সরকারের কাছ থেকে ক্রয় করেছিল। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। ফলে স্টারলিং এলাকার সদস্য হয়েছিল। আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলের সদস্য পদ লাভ করেছিল; এই তহবিল থেকে নিজস্ব ভাগ বা কোটা এবং প্রত্যাহার বা ড্র্ইংয়ের অধিকার দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল না। পরবর্তীতে নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এর পরিমান ছিল ১৯৭৩ সালের জুন মাসে ১২৫ দশমিক ৩৪ কোটি; জুলাইয়ে ১৩৫ দশমিক ৬৮ কোটি; আগস্টে ১৫০ দশমিক ৬২ কোটি; সেপ্টেম্বরে ১৫১ দশমিক ৫১ কোটি; অক্টোবরে ১৫১ দশমিক ৬৯ কোটি; নভেম্বরে ১৩৫ দশমিক ১৩ কোটি এবং ডিসেম্বরে ১১৬ দশমিক ১৫ কোটি টাকা। এছাড়াও রেকর্ডসূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের মাসভিত্তিক রিজার্ভ স্থিতি ছিল জানুয়ারি মাসে ৯৬ দশমিক ৪৯ কোটি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৫ দশমিক ৯৭ কোটি, মার্চ মাসে ৮৪ দশমিক ২৮ কোটি, মে মাসে ৪২ দশমিক ৬৯ কোটি, জুন মাসে ৮৯ দশমিক ২৬ কোটি, জুলাই মাসে ৭৩ দশমিক ৮১ কোটি, আগস্ট মাসে ৩৪ দশমিক ৭৭ কোটি, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৪ দশমিক ৫২ কোটি, অক্টোবর মাসে ৫৪ দশমিক ৪৭ কোটি, নভেম্বর মাসে ১০১ দশমিক ২৭ কোটি এবং ডিসেম্বর মাসে ১১১ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা। ১৯৭৫ সালে প্রথম ত্রৈমাসিকেও রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত ছিল- জানুয়ারি মাসে ১৪২ দশমিক ১৭ কোটি; ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬৯ দশমিক ৭৯ কোটি এবং মার্চ মাসে ১৭২ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে দেখা যায় ব্যাংকের হাতে নগদ টাকা নেই, ব্যাংকে দায় ও সম্পদ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ঋণগ্রহীতাদের অধিকাংশ অবাঙালি; যারা স্বাধীনতার আগে বা পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। যেসব শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়া হয়েছিল তা অধিকাংশ বন্ধ এবং মালিক অনুপস্থিত। এ অবস্থায় ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থায় এ নাজুক অবস্থার সামাল দিতে এবং ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংক জাতীয়করণ করা হয়। স্বাধীনতার পূর্বে মোট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল ২২টি। এর মধ্যে ৩টি বিদেশ ব্যাংক, ৫টি ভারতীয় ব্যাংক, ১০টি অবাঙালি পাকিস্তানি মালিকানাধীন, ২টি বাঙালি মালিকানাধীন ব্যাংক এবং ২টি সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়- ১. গ্রাম অঞ্চলে শাখা সম্প্রসারণ করা; ২. ঋণ বণ্টনের ক্ষেত্রে কৃষিঋণ ও গ্রামীণ উন্নয়ন ঋণ প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া; ৩. রপ্তানিমুখী শিল্পে ঋণ প্রদান; ৪. বাণিজ্যিক লাভের চেয়ে সামাজিক লাভ ও সেবা প্রদানে অগ্রাধিকার প্রদান।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ১. পাট কলগুলো চালু করার জন্য তাদের স্থায়ী সম্পদের বিপরীতে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা, তাদের নতুন বিনিময় হারে রপ্তানি করার সুযোগ দেয়া হয়; ২. মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাড়ি, জমির বিপরীতে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং কোন জামানত ছাড়া পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়; ৩, ব্যাংকগুলোকে সুস্থ প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার নির্ধারণ করে দেয়; ৪. পূর্বে গৃহীত ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।
উল্লেখিত ২২টি ব্যাংকের মধ্যে অবাঙালি পাকিস্তানি মালিকানাধীন ১০টি ব্যাংক এবং বাঙালি মালিকানাধীন ২টি ব্যাংক রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী জাতীয়করণ করা হয়। এর ফলে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড এবং ব্যাংক অব ভাওয়ালপুর নিয়ে গঠিত হয় সোনালী ব্যাংক, সে সময় এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ২ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংক ও ইউনাইটেড ব্যাংক জাতীয়করণের পরবর্তীতে হয় জনতা ব্যাংক, সে সময় এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ দশমিক ৫০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক গঠিত হয় হাবিব ব্যাংক লিমিটেড ও কমার্স ব্যাংক লিমিটেড নিয়ে, সে ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ কোটি টাকা। মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড এবং অস্ট্রেলেশিয়া ব্যাংক একীভূত করে গঠিত হয় রূপালী ব্যাংক, সেই সময় এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ কোটি টাকা। জাতীয়করণের পরবর্তীতে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নামকরণ করা হয় পূবালী ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনের নামকরণ করা হয় উত্তরা ব্যাংক। সে সময় এ ব্যাংক দুটির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ কোটি টাকা।
উল্লেখিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন ছিল বাঙালি মালিকদের; বাকিগুলো ছিল অবাঙালি পাকিস্তানিদের।
দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক যা পূর্বেই সরকারের মালিকানাধীন ছিল তার নাম পরিবর্তন করা হয়। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক হিসেবে নামকরণ করা হয়, যার পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি টাকা। এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, যার পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি টাকা।
জাতীয়করণের থেকে বাদ দেয়া হয় তিনটি বিদেশি ব্যাংক এবং ৫টি ভারতীয় ব্যাংককে। ভারতীয় ৫টি ব্যাংক ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর অকার্যকর ছিল। তিনটি বিদেশি ব্যাংক হলো- ১. আমেরিকান এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক কর্পোরেশন; ২. ন্যাশনাল অ্যান্ড গ্রিনলেজ ব্যাংক ও ৩. চার্টাড ব্যাংক।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ২টি ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকার প্রতিষ্ঠা করে- ১. বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা ও ২. বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আরও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকার প্রতিষ্ঠা করে- বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন।
১৯৭৪ সালে ব্যাংকে কর্মরত জনবলের কর্মদক্ষতা ও মেধার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) স্থাপিত হয়।
উল্লেখিত ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিশেষায়িত ব্যাংক দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়। দেশের জনসাধারণের কাছে সঞ্চিত অর্থ জমাকরণ এবং জমাকৃত অর্থ উৎপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাকা গতিশীল করার জন্য ব্যাংকের শাখার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নেয়। এ প্রেক্ষিতে ১৯৭২ সাল সমাপ্তিতে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ১১৬৯টি শাখা ১৯৭৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১২৭৩টিতে, ১৯৭৪ সালে ১৪৯৩টিতে এবং ১৯৭৫ সালে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৫৯৪টিতে।
১৯৭২ সালে মোট ১১৬৯ শাখার মধ্যে শহর অঞ্চলের শাখা ৭৫৭টি এবং গ্রামীণ অঞ্চলে শাখা ছিল ৪১২টি।
এভাবে ব্যাংকের শাখা বৃদ্ধিতে কৃষকদের হাতে কৃষিঋণ সহজলভ্য করতে কৃষি ব্যাংকের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কারণ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা। এছাড়া তখন বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল।
এভাবে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ব্যাংক ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন ঘটেছিল। ১৯৭১-৭২ সালে তফসিলী ব্যাংকের শাখার পরিমাণ ছিল ১১৬৯টি, আমানতের পরিমাণ ছিল ৫২৩ দশমিক ৬১ কোটি টাকা ও ঋণ স্থিতি ছিল ৩৮৮ দশমিক ৫১ কোটি টাকা; যা ১৯৭২-৭৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৯৫টি, আমানতের পরিমাণ ৭০২ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা, ঋণ স্থিতি ৫৫৪২৫ কোটি টাকা, নিট মুনাফা ১ দশমিক ২৪ কোটি টাকা এবং মোট নিযুক্ত লোকবল ১৭৫১০ জন। ১৯৭৩-৭৪ সালে শাখার সংখ্যা ছিল ১৫১২টি, আমানতের পরিমাণ ছিল ৯১৩ দশমিক ২০ কোটি টাকা, ঋণ স্থিতি ছিল ৭৩৭ দশমিক ১০ কোটি টাকা, নিট মুনাফা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা এবং মোট নিযুক্ত লোকবল ছিল ২১৩২১ জন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তা উন্নীত হয়ে শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬১১টি, আমানতের পরিমাণ ছিল ১০১৪ দশমিক ২০ কোটি টাকা, ঋণ স্থিতি ছিল ৮০৬ দশমিক ৮০ কোটি টাকা, নিট মুনাফা হয়েছিল ৮ দশমিক ১৭ কোটি টাকা এবং মোট নিযুক্ত লোকবল ছিল ২৭১৭৩ জন।
[লেখক : এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড পরিচালনা পরিষদের সদস্য]
মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ , ৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১০ জিলকদ ১৪৪২
এসএম লুৎফর রহমান
স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনৈতিক পুনবার্সন, পুনর্গঠন ও সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ঢেলে সাজানো। এক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং কার্যকর।
১৯৭০ সালে সাইক্লোন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। ১৯৭০ সালে সাইক্লোনে তৎকালীন মোট জাতীয় উৎপাদনের ৩.৮০% বিনষ্ট হয়। পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সাইক্লোন বিধ্বস্ত অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য অর্থনৈতিক বা সামাজিক পুনবার্সনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতি- সবমিলিয়ে পুরো দেশই ছিল প্রায় বিধ্বস্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকে কোন বৈদেশিক মুদ্রা বা গোল্ড রিজার্ভ ছিল না। দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন কাঠামো, আর্থিক কাঠামো, ব্যাংক ব্যবস্থা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে পড়ে। দেশের ভেতরে ব্যাংকের বহু শাখা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, বহু শাখা লুট করা হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ বাঙালি ব্যাংকারদের। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে এ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানত ও কেন্দীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দেয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ পুনর্গঠন ছিল দুরূহ কাজ। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নীতিনির্ধারণী কাজ, মুদ্রা ও বিষয়ক ব্যাংকিং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতো পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে। এ অবস্থায় পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও অর্থনৈতিক গতি চালু করতে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি আদেশ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠন করা হয়। এই আদেশ কার্যকর করা হয় ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম প্রশাসক নিযুক্ত করা হয় মুশফেক-উস-সালেহীনকে এবং ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রথম গর্ভনর নিযুক্ত করা হয় এএন হামিদুল্লাহকে। কোন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও গোল্ড রিজার্ভ ছাড়া এবং পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া ৩৫৮ কোটি টাকার দায় মাথায় নিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের যাত্রা। পাকিস্তানের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্যপদ লাভ করেছিল এবং আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলে জমা দেয়ার জন্য চাঁদা বাবদ ২০ লাখ ডলার মূল্যের স্বর্ণ কানাডা সরকারের কাছ থেকে ক্রয় করেছিল। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। ফলে স্টারলিং এলাকার সদস্য হয়েছিল। আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলের সদস্য পদ লাভ করেছিল; এই তহবিল থেকে নিজস্ব ভাগ বা কোটা এবং প্রত্যাহার বা ড্র্ইংয়ের অধিকার দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল না। পরবর্তীতে নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এর পরিমান ছিল ১৯৭৩ সালের জুন মাসে ১২৫ দশমিক ৩৪ কোটি; জুলাইয়ে ১৩৫ দশমিক ৬৮ কোটি; আগস্টে ১৫০ দশমিক ৬২ কোটি; সেপ্টেম্বরে ১৫১ দশমিক ৫১ কোটি; অক্টোবরে ১৫১ দশমিক ৬৯ কোটি; নভেম্বরে ১৩৫ দশমিক ১৩ কোটি এবং ডিসেম্বরে ১১৬ দশমিক ১৫ কোটি টাকা। এছাড়াও রেকর্ডসূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের মাসভিত্তিক রিজার্ভ স্থিতি ছিল জানুয়ারি মাসে ৯৬ দশমিক ৪৯ কোটি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৫ দশমিক ৯৭ কোটি, মার্চ মাসে ৮৪ দশমিক ২৮ কোটি, মে মাসে ৪২ দশমিক ৬৯ কোটি, জুন মাসে ৮৯ দশমিক ২৬ কোটি, জুলাই মাসে ৭৩ দশমিক ৮১ কোটি, আগস্ট মাসে ৩৪ দশমিক ৭৭ কোটি, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৪ দশমিক ৫২ কোটি, অক্টোবর মাসে ৫৪ দশমিক ৪৭ কোটি, নভেম্বর মাসে ১০১ দশমিক ২৭ কোটি এবং ডিসেম্বর মাসে ১১১ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা। ১৯৭৫ সালে প্রথম ত্রৈমাসিকেও রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত ছিল- জানুয়ারি মাসে ১৪২ দশমিক ১৭ কোটি; ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬৯ দশমিক ৭৯ কোটি এবং মার্চ মাসে ১৭২ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে দেখা যায় ব্যাংকের হাতে নগদ টাকা নেই, ব্যাংকে দায় ও সম্পদ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ঋণগ্রহীতাদের অধিকাংশ অবাঙালি; যারা স্বাধীনতার আগে বা পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। যেসব শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়া হয়েছিল তা অধিকাংশ বন্ধ এবং মালিক অনুপস্থিত। এ অবস্থায় ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থায় এ নাজুক অবস্থার সামাল দিতে এবং ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংক জাতীয়করণ করা হয়। স্বাধীনতার পূর্বে মোট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল ২২টি। এর মধ্যে ৩টি বিদেশ ব্যাংক, ৫টি ভারতীয় ব্যাংক, ১০টি অবাঙালি পাকিস্তানি মালিকানাধীন, ২টি বাঙালি মালিকানাধীন ব্যাংক এবং ২টি সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়- ১. গ্রাম অঞ্চলে শাখা সম্প্রসারণ করা; ২. ঋণ বণ্টনের ক্ষেত্রে কৃষিঋণ ও গ্রামীণ উন্নয়ন ঋণ প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া; ৩. রপ্তানিমুখী শিল্পে ঋণ প্রদান; ৪. বাণিজ্যিক লাভের চেয়ে সামাজিক লাভ ও সেবা প্রদানে অগ্রাধিকার প্রদান।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ১. পাট কলগুলো চালু করার জন্য তাদের স্থায়ী সম্পদের বিপরীতে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা, তাদের নতুন বিনিময় হারে রপ্তানি করার সুযোগ দেয়া হয়; ২. মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাড়ি, জমির বিপরীতে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং কোন জামানত ছাড়া পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়; ৩, ব্যাংকগুলোকে সুস্থ প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার নির্ধারণ করে দেয়; ৪. পূর্বে গৃহীত ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।
উল্লেখিত ২২টি ব্যাংকের মধ্যে অবাঙালি পাকিস্তানি মালিকানাধীন ১০টি ব্যাংক এবং বাঙালি মালিকানাধীন ২টি ব্যাংক রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী জাতীয়করণ করা হয়। এর ফলে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড এবং ব্যাংক অব ভাওয়ালপুর নিয়ে গঠিত হয় সোনালী ব্যাংক, সে সময় এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ২ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংক ও ইউনাইটেড ব্যাংক জাতীয়করণের পরবর্তীতে হয় জনতা ব্যাংক, সে সময় এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ দশমিক ৫০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক গঠিত হয় হাবিব ব্যাংক লিমিটেড ও কমার্স ব্যাংক লিমিটেড নিয়ে, সে ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ কোটি টাকা। মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড এবং অস্ট্রেলেশিয়া ব্যাংক একীভূত করে গঠিত হয় রূপালী ব্যাংক, সেই সময় এ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ কোটি টাকা। জাতীয়করণের পরবর্তীতে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নামকরণ করা হয় পূবালী ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনের নামকরণ করা হয় উত্তরা ব্যাংক। সে সময় এ ব্যাংক দুটির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ কোটি টাকা।
উল্লেখিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন ছিল বাঙালি মালিকদের; বাকিগুলো ছিল অবাঙালি পাকিস্তানিদের।
দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক যা পূর্বেই সরকারের মালিকানাধীন ছিল তার নাম পরিবর্তন করা হয়। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক হিসেবে নামকরণ করা হয়, যার পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি টাকা। এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, যার পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি টাকা।
জাতীয়করণের থেকে বাদ দেয়া হয় তিনটি বিদেশি ব্যাংক এবং ৫টি ভারতীয় ব্যাংককে। ভারতীয় ৫টি ব্যাংক ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর অকার্যকর ছিল। তিনটি বিদেশি ব্যাংক হলো- ১. আমেরিকান এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক কর্পোরেশন; ২. ন্যাশনাল অ্যান্ড গ্রিনলেজ ব্যাংক ও ৩. চার্টাড ব্যাংক।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ২টি ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকার প্রতিষ্ঠা করে- ১. বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা ও ২. বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আরও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকার প্রতিষ্ঠা করে- বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন।
১৯৭৪ সালে ব্যাংকে কর্মরত জনবলের কর্মদক্ষতা ও মেধার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) স্থাপিত হয়।
উল্লেখিত ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিশেষায়িত ব্যাংক দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়। দেশের জনসাধারণের কাছে সঞ্চিত অর্থ জমাকরণ এবং জমাকৃত অর্থ উৎপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাকা গতিশীল করার জন্য ব্যাংকের শাখার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নেয়। এ প্রেক্ষিতে ১৯৭২ সাল সমাপ্তিতে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ১১৬৯টি শাখা ১৯৭৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১২৭৩টিতে, ১৯৭৪ সালে ১৪৯৩টিতে এবং ১৯৭৫ সালে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৫৯৪টিতে।
১৯৭২ সালে মোট ১১৬৯ শাখার মধ্যে শহর অঞ্চলের শাখা ৭৫৭টি এবং গ্রামীণ অঞ্চলে শাখা ছিল ৪১২টি।
এভাবে ব্যাংকের শাখা বৃদ্ধিতে কৃষকদের হাতে কৃষিঋণ সহজলভ্য করতে কৃষি ব্যাংকের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কারণ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা। এছাড়া তখন বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল।
এভাবে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ব্যাংক ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন ঘটেছিল। ১৯৭১-৭২ সালে তফসিলী ব্যাংকের শাখার পরিমাণ ছিল ১১৬৯টি, আমানতের পরিমাণ ছিল ৫২৩ দশমিক ৬১ কোটি টাকা ও ঋণ স্থিতি ছিল ৩৮৮ দশমিক ৫১ কোটি টাকা; যা ১৯৭২-৭৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৯৫টি, আমানতের পরিমাণ ৭০২ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা, ঋণ স্থিতি ৫৫৪২৫ কোটি টাকা, নিট মুনাফা ১ দশমিক ২৪ কোটি টাকা এবং মোট নিযুক্ত লোকবল ১৭৫১০ জন। ১৯৭৩-৭৪ সালে শাখার সংখ্যা ছিল ১৫১২টি, আমানতের পরিমাণ ছিল ৯১৩ দশমিক ২০ কোটি টাকা, ঋণ স্থিতি ছিল ৭৩৭ দশমিক ১০ কোটি টাকা, নিট মুনাফা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা এবং মোট নিযুক্ত লোকবল ছিল ২১৩২১ জন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তা উন্নীত হয়ে শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬১১টি, আমানতের পরিমাণ ছিল ১০১৪ দশমিক ২০ কোটি টাকা, ঋণ স্থিতি ছিল ৮০৬ দশমিক ৮০ কোটি টাকা, নিট মুনাফা হয়েছিল ৮ দশমিক ১৭ কোটি টাকা এবং মোট নিযুক্ত লোকবল ছিল ২৭১৭৩ জন।
[লেখক : এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড পরিচালনা পরিষদের সদস্য]