সড়ক সংস্কার বরাদ্দের টাকা লুটপাটের অভিযোগ

নদ-নদী এবং ভূ-গর্ভস্থের বালু উত্তোলন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও তা অমান্য করে টেন্ডারের পরিবর্তে প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে কুড়িগ্রামের উলিপুরে একটি সড়ক সংস্কার করে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর উপকণ্ঠের একটি অংশ বন্যার পানি থেকে মুক্ত রাখতে এবং জনসাধারণের চলাচল পথ সুগম করতে স্থানীয় এলজিইডি সাদুয়া দামার হাট বাঁধের বাজার মোড় থেকে সাতালস্কর হয়ে পুরাতন বজরা পাকাসড়ক সংযুক্ত ১ দশমিক ৯৭০ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সড়কে মাটি ভরাট করণের জন্য ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। শাতালস্কর পানি উন্নয়ন উপ ব্যবস্থাপনা নামে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে সড়কটি সংস্কার তথা নির্মাণ কল্পে প্ল্যান মোতাবেক মাটি ভরাটের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করেন। মাটি ভরাটের জন্য পরিবহন ব্যয়সহ বুলড্রোজার দিয়ে মাটি রোলার করার কথা থাকলেও তা না করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এই সড়ক থেকে ২শ মিটার দূরত্ব থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেন। অভিযোগ সূত্র জানায়, এই সড়কটি সংস্কার করতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ সিএফটি বালু ফেলানো হয়েছে। বালু দিয়ে ভরাট করার পর সড়কটির ওপর বালু দোআশ মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই সড়ক সংস্কার করতে ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু তালেবকে সভাপতি করে স্থানীয় ১২ সদস্যের একটি সংস্কার কমিটি গঠন করেন। ১২ সদস্যের এই কমিটির মধ্যে থেকে ৯টি গ্রুপের মাধ্যমে সড়ক সংস্কার তথা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন্ করেন। এই প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমান এবং অর্থায়ন জাইকা না সরকারিভাবে করা হয়েছে এর সঠিক তথ্য মিলছে না, এমনকি এর তথ্য বিষয় প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড ঝুলানো কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এদিকে এই প্রকল্পে সাদুয়া দামার হাট এলাকায় সড়কের ওপর নদী সংযুক্ত ছোট একটি খাল থাকলেও তা গতবছর বন্যার পানিতে আংশিক ভরাট হয়েছে। ৫০ মিটার এই খাল ভরাটের জন্য এরসঙ্গে ক্লোজার সড়ক নির্মাণ দেখিয়ে এর সঙ্গে ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই অংশটির মাটি ভরাটের জন্য যে গ্রুপটির ভাগে পড়েছে তাদের কিছু জানতে না দিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী অতি গোপনে তার আস্থাভাজন সড়ক সংস্কার কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য আবু তালেবের নামে আলাদাভাবে বিল তৈরি করে নিজেই স্বাক্ষর করে দুই দফায় আড়াই লাখ টাকা উত্তোলন করে পকেটস্থ করেছেন । বিয়ষটি ফাঁস হয়ে পড়লে ওই কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুস ছালাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট এ বিষয় প্রতীকার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এ অবস্থায় উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনা বেগতিক দেখে হাতিয়ে নেয়া অর্থ, ওই মাটি ভরাট গ্রুপ কমিটিকে ফেরত দেয়ার কথা বললেও তা দেয়া হয়নি। এই সড়ক সংস্কারে ইতোমধ্যেই দুই দফায় ভ্যাট বাদে ২৫ লাখ টাকা প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে, ফাইনাল বিল উত্তোলনের জন্য কার্যক্রম চলছে। জানা গেছে, উত্তোলনকৃত অর্থ উপজেলা প্রকৌশলী শতকরা ১০ ভাগ, নির্বাহী প্রকৌশলী ১০ ভাগ এবং অন্যান্য কর্তা ও অফিস সহকারী ২ ভাগ হাতিয়ে নিয়েছেন। ফাইনাল বিল উত্তোলনের পর এর পুরোটাই ভাগ বাটোয়ারা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এই সড়ক সংস্কার কমিটির নিকট থেকে জামানত স্বরূপ ইতোপূর্বেই সাড়ে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার স্বার্থে আগাম জমা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কেএম সাদেকুল আলম এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি ১০ ভাগ অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন আমরা টাকা দেই টাকা নেই না। কমিটির সভাপতির নামে ৫০ মিটার ক্লোজার সড়কের বিল করা হয়েছে সত্য তবে যে গ্রুপটি মাটির কাজ করেছে তাদের কিছু টাকা দেয়া হয়েছে বাকি টাকা পরে দেয়া হবে বলে তিনি স্বীকার করেন । নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান এর সঙ্গে কথা হলে তিনিও বিল প্রদানে ১০ ভাগ অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন এই প্রকল্পটির অর্থায়ন জাইকার কিনা তা ফাইল না দেখে বলতে পারব না। ওই সড়কের ৫০ মিটার ক্যানেল ভরাটে আলাদাভাবে একটি বিল অতিগোপনে তৈরি করে উপজেলা প্রকৌশলী আত্মসাতের চেষ্টা করেন এ বিষয় তিনি বলেছেন ঘটনা সত্য হলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । প্রকল্প কমিটির সভাপতি আবু তালেবসহ একাধিক সদস্য সংবাদকে জানিয়েছেন শতকরা ১০ ভাগ করে অর্থ তারা নিয়েছেন। তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সড়ক সংস্কারে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তা উচ্চ পর্যায় থেকে সরেজমিনে তদন্ত করলে লুটপাটের রহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে এলাকার মানুষ মনে করেন।

বুধবার, ২৩ জুন ২০২১ , ৯ আষাঢ় ১৪২৮ ১১ জিলকদ ১৪৪২

সড়ক সংস্কার বরাদ্দের টাকা লুটপাটের অভিযোগ

প্রতিনিধি, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

নদ-নদী এবং ভূ-গর্ভস্থের বালু উত্তোলন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও তা অমান্য করে টেন্ডারের পরিবর্তে প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে কুড়িগ্রামের উলিপুরে একটি সড়ক সংস্কার করে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর উপকণ্ঠের একটি অংশ বন্যার পানি থেকে মুক্ত রাখতে এবং জনসাধারণের চলাচল পথ সুগম করতে স্থানীয় এলজিইডি সাদুয়া দামার হাট বাঁধের বাজার মোড় থেকে সাতালস্কর হয়ে পুরাতন বজরা পাকাসড়ক সংযুক্ত ১ দশমিক ৯৭০ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সড়কে মাটি ভরাট করণের জন্য ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। শাতালস্কর পানি উন্নয়ন উপ ব্যবস্থাপনা নামে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে সড়কটি সংস্কার তথা নির্মাণ কল্পে প্ল্যান মোতাবেক মাটি ভরাটের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করেন। মাটি ভরাটের জন্য পরিবহন ব্যয়সহ বুলড্রোজার দিয়ে মাটি রোলার করার কথা থাকলেও তা না করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এই সড়ক থেকে ২শ মিটার দূরত্ব থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেন। অভিযোগ সূত্র জানায়, এই সড়কটি সংস্কার করতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ সিএফটি বালু ফেলানো হয়েছে। বালু দিয়ে ভরাট করার পর সড়কটির ওপর বালু দোআশ মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই সড়ক সংস্কার করতে ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু তালেবকে সভাপতি করে স্থানীয় ১২ সদস্যের একটি সংস্কার কমিটি গঠন করেন। ১২ সদস্যের এই কমিটির মধ্যে থেকে ৯টি গ্রুপের মাধ্যমে সড়ক সংস্কার তথা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন্ করেন। এই প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমান এবং অর্থায়ন জাইকা না সরকারিভাবে করা হয়েছে এর সঠিক তথ্য মিলছে না, এমনকি এর তথ্য বিষয় প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড ঝুলানো কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এদিকে এই প্রকল্পে সাদুয়া দামার হাট এলাকায় সড়কের ওপর নদী সংযুক্ত ছোট একটি খাল থাকলেও তা গতবছর বন্যার পানিতে আংশিক ভরাট হয়েছে। ৫০ মিটার এই খাল ভরাটের জন্য এরসঙ্গে ক্লোজার সড়ক নির্মাণ দেখিয়ে এর সঙ্গে ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই অংশটির মাটি ভরাটের জন্য যে গ্রুপটির ভাগে পড়েছে তাদের কিছু জানতে না দিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী অতি গোপনে তার আস্থাভাজন সড়ক সংস্কার কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য আবু তালেবের নামে আলাদাভাবে বিল তৈরি করে নিজেই স্বাক্ষর করে দুই দফায় আড়াই লাখ টাকা উত্তোলন করে পকেটস্থ করেছেন । বিয়ষটি ফাঁস হয়ে পড়লে ওই কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুস ছালাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট এ বিষয় প্রতীকার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এ অবস্থায় উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনা বেগতিক দেখে হাতিয়ে নেয়া অর্থ, ওই মাটি ভরাট গ্রুপ কমিটিকে ফেরত দেয়ার কথা বললেও তা দেয়া হয়নি। এই সড়ক সংস্কারে ইতোমধ্যেই দুই দফায় ভ্যাট বাদে ২৫ লাখ টাকা প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে, ফাইনাল বিল উত্তোলনের জন্য কার্যক্রম চলছে। জানা গেছে, উত্তোলনকৃত অর্থ উপজেলা প্রকৌশলী শতকরা ১০ ভাগ, নির্বাহী প্রকৌশলী ১০ ভাগ এবং অন্যান্য কর্তা ও অফিস সহকারী ২ ভাগ হাতিয়ে নিয়েছেন। ফাইনাল বিল উত্তোলনের পর এর পুরোটাই ভাগ বাটোয়ারা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এই সড়ক সংস্কার কমিটির নিকট থেকে জামানত স্বরূপ ইতোপূর্বেই সাড়ে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার স্বার্থে আগাম জমা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কেএম সাদেকুল আলম এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি ১০ ভাগ অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন আমরা টাকা দেই টাকা নেই না। কমিটির সভাপতির নামে ৫০ মিটার ক্লোজার সড়কের বিল করা হয়েছে সত্য তবে যে গ্রুপটি মাটির কাজ করেছে তাদের কিছু টাকা দেয়া হয়েছে বাকি টাকা পরে দেয়া হবে বলে তিনি স্বীকার করেন । নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান এর সঙ্গে কথা হলে তিনিও বিল প্রদানে ১০ ভাগ অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন এই প্রকল্পটির অর্থায়ন জাইকার কিনা তা ফাইল না দেখে বলতে পারব না। ওই সড়কের ৫০ মিটার ক্যানেল ভরাটে আলাদাভাবে একটি বিল অতিগোপনে তৈরি করে উপজেলা প্রকৌশলী আত্মসাতের চেষ্টা করেন এ বিষয় তিনি বলেছেন ঘটনা সত্য হলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । প্রকল্প কমিটির সভাপতি আবু তালেবসহ একাধিক সদস্য সংবাদকে জানিয়েছেন শতকরা ১০ ভাগ করে অর্থ তারা নিয়েছেন। তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সড়ক সংস্কারে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তা উচ্চ পর্যায় থেকে সরেজমিনে তদন্ত করলে লুটপাটের রহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে এলাকার মানুষ মনে করেন।