ইইউ-যুক্তরাজ্যের ফের নিষেধাজ্ঞা
মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে নবগঠিত মিলিশিয়া দলের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলটির করা বিভিন্ন পোস্ট ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে। এই সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনী সাঁজোয়া যান ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে তারা। রয়টার্স
রয়টার্স জানিয়েছে, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দমন করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এর প্রতিক্রিয়ায় মায়ানমারজুড়ে ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ বলে পরিচিত সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী দলগুলোর আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে।
এ পর্যন্ত হালকা অস্ত্রে সজ্জিত এসব মিলিশিয়াদের লড়াই ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার নিজেদের মান্দালয়ের নতুন ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ বলে দাবি করা একটি দল জানিয়েছে, সেনাবাহিনী তাদের একটি ঘাঁটিতে অভিযান চালানোর পর তারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দলটির ফেসবুক পেজে নিজেকে মেজর জিকওয়াত বলে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি বলেছেন, “আমাদের গেরিলাদের একটি বেইস ক্যাম্প আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা পাল্টা হামলা চালিয়েছি।” খিত থিট গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী তিনটি সাঁজোয়া যান নিয়ে মান্দালয়ের একটি বোর্ডিং স্কুলে অবস্থিত মিলিশিয়াদের একটি ঘাঁটি ঘিরে ফেলেছিল।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফোন করা হলেও সামরিক জান্তার এক মুখপাত্র জবাব দেননি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
দেশটির অন্যান্য এলাকায় মিলিশিয়া দলগুলো সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করার পর সেনাবাহিনী কামানের গোলা ছুড়ে ও বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এসব সংঘর্ষে উভয়পক্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ও লাখো লোক বাস্তুচ্যুত হয়ে নিকটবর্তী বনসহ আশপাশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। মায়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তার নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৮৭৩ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে বলে দেশটির একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছে। তবে সামরিক জান্তা এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত করে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক কম বলে দাবি করেছে।
এদিকে, মায়ানমার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আবারও নিষেধাজ্ঞা আরওপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে তিনবার ইইউর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লো দেশটি। মায়ানমারের ৮ ব্যক্তি, ৩ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশটির যুদ্ধ ভেটেরান্স অর্গানাইজেশনের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরওপ করা হয়। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মায়ানমারের গণতন্ত্রকামীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং মায়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মায়ানমারে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ক্ষুণœ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। যারা জান্তা সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করছে।
অন্যদিকে, ষষ্ঠ দফায় মায়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব। তিনি জানান, নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান টিম্বার এন্টারপ্রাইজ ও মায়ানমার পার্ল এন্টারপ্রাইজের ওপর। যুক্তরাজ্যে থাকা প্রতিষ্ঠান দুটির সব সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মায়ানমারের সামরিক শাসক বহু রাজস্ব আয় করে থাকে। এর আগেও ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানে যুক্ত মায়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। এছাড়া জানানো হয়, দেশটির সেনাবাহিনীর কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর কোনও ব্যবসা করবে না যুক্তরাজ্য।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে রয়েছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। ১ ফেব্রুয়ারির এই অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গণতন্ত্রকামীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে সেনা সরকার। এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৭১ জন। আটক রাখা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি আন্দোলনকারীকে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুন মায়ানমারের ওপর অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা আরওপের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটির জান্তা সরকারের প্রতি একটি নিন্দাপ্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে সেখানে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মায়ানমারের ওপর অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা আরওপের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ১১৯টি দেশ। স্বৈরশাসিত বেলারুশই একমাত্র এর বিপক্ষে মত দেয়। আর চীন-রাশিয়াসহ মোট ৩৬টি দেশ প্রস্তাবে মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকে। ভয়েস অব আমেরিকা
বুধবার, ২৩ জুন ২০২১ , ৯ আষাঢ় ১৪২৮ ১১ জিলকদ ১৪৪২
ইইউ-যুক্তরাজ্যের ফের নিষেধাজ্ঞা
মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে নবগঠিত মিলিশিয়া দলের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলটির করা বিভিন্ন পোস্ট ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে। এই সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনী সাঁজোয়া যান ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে তারা। রয়টার্স
রয়টার্স জানিয়েছে, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করার পর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দমন করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এর প্রতিক্রিয়ায় মায়ানমারজুড়ে ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ বলে পরিচিত সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী দলগুলোর আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে।
এ পর্যন্ত হালকা অস্ত্রে সজ্জিত এসব মিলিশিয়াদের লড়াই ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার নিজেদের মান্দালয়ের নতুন ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ বলে দাবি করা একটি দল জানিয়েছে, সেনাবাহিনী তাদের একটি ঘাঁটিতে অভিযান চালানোর পর তারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দলটির ফেসবুক পেজে নিজেকে মেজর জিকওয়াত বলে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি বলেছেন, “আমাদের গেরিলাদের একটি বেইস ক্যাম্প আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা পাল্টা হামলা চালিয়েছি।” খিত থিট গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী তিনটি সাঁজোয়া যান নিয়ে মান্দালয়ের একটি বোর্ডিং স্কুলে অবস্থিত মিলিশিয়াদের একটি ঘাঁটি ঘিরে ফেলেছিল।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফোন করা হলেও সামরিক জান্তার এক মুখপাত্র জবাব দেননি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
দেশটির অন্যান্য এলাকায় মিলিশিয়া দলগুলো সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করার পর সেনাবাহিনী কামানের গোলা ছুড়ে ও বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এসব সংঘর্ষে উভয়পক্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ও লাখো লোক বাস্তুচ্যুত হয়ে নিকটবর্তী বনসহ আশপাশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। মায়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তার নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৮৭৩ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে বলে দেশটির একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছে। তবে সামরিক জান্তা এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত করে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক কম বলে দাবি করেছে।
এদিকে, মায়ানমার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আবারও নিষেধাজ্ঞা আরওপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে তিনবার ইইউর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লো দেশটি। মায়ানমারের ৮ ব্যক্তি, ৩ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশটির যুদ্ধ ভেটেরান্স অর্গানাইজেশনের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরওপ করা হয়। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মায়ানমারের গণতন্ত্রকামীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং মায়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মায়ানমারে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ক্ষুণœ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। যারা জান্তা সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করছে।
অন্যদিকে, ষষ্ঠ দফায় মায়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব। তিনি জানান, নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান টিম্বার এন্টারপ্রাইজ ও মায়ানমার পার্ল এন্টারপ্রাইজের ওপর। যুক্তরাজ্যে থাকা প্রতিষ্ঠান দুটির সব সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মায়ানমারের সামরিক শাসক বহু রাজস্ব আয় করে থাকে। এর আগেও ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানে যুক্ত মায়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। এছাড়া জানানো হয়, দেশটির সেনাবাহিনীর কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর কোনও ব্যবসা করবে না যুক্তরাজ্য।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে রয়েছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। ১ ফেব্রুয়ারির এই অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গণতন্ত্রকামীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে সেনা সরকার। এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৭১ জন। আটক রাখা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি আন্দোলনকারীকে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুন মায়ানমারের ওপর অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা আরওপের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটির জান্তা সরকারের প্রতি একটি নিন্দাপ্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে সেখানে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মায়ানমারের ওপর অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা আরওপের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ১১৯টি দেশ। স্বৈরশাসিত বেলারুশই একমাত্র এর বিপক্ষে মত দেয়। আর চীন-রাশিয়াসহ মোট ৩৬টি দেশ প্রস্তাবে মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকে। ভয়েস অব আমেরিকা