মাদ্রাসা বন্ধে আসাম সরকারকে শপথনামা দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের

হিমন্তবিশ্ব শর্মা আসামে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার কথা বলে আসছে এবং এ ব্যাপারে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ছেলে ও মেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি না করিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। ফলে এসব শিক্ষার্থীরা মূল শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পেরে তারা বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে পিছিয়ে পড়ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে এসব শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় না পড়িয়ে সরাসরি সকলের জন্য শিক্ষার পীঠস্থান বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী, পাশাপাশি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে তরখন সরকারিভাবে বলা হয় এই সিদ্ধান্ত শুধু সরকারিভাবে রাজ্য পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোর জন্য নয়। শুধুমাত্র বেসরকারিভাবে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

জানা গেছে, গতবারের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল সর্বানন্দন মূলত মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। সর্বনন্দ ক্ষমতায় থাকাকালীন গত বছর ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা বন্ধ করার রাজ্য সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে গোয়াহাটি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। কিন্তু সরকার তখন এই মামলার শুনানিতে আদালতকে জানিয়েছিল মাদ্রাসা বন্ধ করতে সরকার এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি, বলা হয় এই জন্য বিধান সভায় আইন পাস করার প্রয়োজন। আইন পাস হলেই সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। তখন আদালত ২০২২-র আগে মাদ্রাসা বন্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। মাদ্রাসা বন্ধের ব্যাপারে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও পূর্বসূরি মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। সরকারের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

রাজ্যে সরকারের মাদ্রাসা বন্ধ নিয়ে গতকাল গোয়াহাটি হাইকোর্টে শুনানি হয়। সে সঙ্গে এই নিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়টি সরকার একপক্ষীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ায় আদালত এই নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়। কেননা, সরকার এ ক্ষেত্রে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সব পক্ষের মতামত নেয়াটা উচিত ছিল বলেই মনে করছে আদালত। তাই এ নিয়ে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা নিয়ে সরকারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত।

সরকারি মাদ্রাসা বন্ধের জন্য ‘দ্যা আসাম রিপিলিং অ্যাক্ট ২০২০’-র নামে একটি বিল বিধানসভায় পাস করা হয়। উল্লেখ্য, বিজেপি সরকার গঠনের পর আসামে সরকারি মাদ্রাসাগুলোকে সাধারণ বিদ্যালয়ে রূপান্তর করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল যে, সরকারি খরচে কোন ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা চলবে না।

বুধবার, ২৩ জুন ২০২১ , ৯ আষাঢ় ১৪২৮ ১১ জিলকদ ১৪৪২

মাদ্রাসা বন্ধে আসাম সরকারকে শপথনামা দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

হিমন্তবিশ্ব শর্মা আসামে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার কথা বলে আসছে এবং এ ব্যাপারে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ছেলে ও মেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি না করিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। ফলে এসব শিক্ষার্থীরা মূল শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পেরে তারা বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে পিছিয়ে পড়ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে এসব শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় না পড়িয়ে সরাসরি সকলের জন্য শিক্ষার পীঠস্থান বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী, পাশাপাশি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে তরখন সরকারিভাবে বলা হয় এই সিদ্ধান্ত শুধু সরকারিভাবে রাজ্য পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোর জন্য নয়। শুধুমাত্র বেসরকারিভাবে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

জানা গেছে, গতবারের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল সর্বানন্দন মূলত মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। সর্বনন্দ ক্ষমতায় থাকাকালীন গত বছর ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা বন্ধ করার রাজ্য সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে গোয়াহাটি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। কিন্তু সরকার তখন এই মামলার শুনানিতে আদালতকে জানিয়েছিল মাদ্রাসা বন্ধ করতে সরকার এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি, বলা হয় এই জন্য বিধান সভায় আইন পাস করার প্রয়োজন। আইন পাস হলেই সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। তখন আদালত ২০২২-র আগে মাদ্রাসা বন্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। মাদ্রাসা বন্ধের ব্যাপারে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও পূর্বসূরি মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। সরকারের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

রাজ্যে সরকারের মাদ্রাসা বন্ধ নিয়ে গতকাল গোয়াহাটি হাইকোর্টে শুনানি হয়। সে সঙ্গে এই নিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়টি সরকার একপক্ষীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ায় আদালত এই নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়। কেননা, সরকার এ ক্ষেত্রে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সব পক্ষের মতামত নেয়াটা উচিত ছিল বলেই মনে করছে আদালত। তাই এ নিয়ে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা নিয়ে সরকারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত।

সরকারি মাদ্রাসা বন্ধের জন্য ‘দ্যা আসাম রিপিলিং অ্যাক্ট ২০২০’-র নামে একটি বিল বিধানসভায় পাস করা হয়। উল্লেখ্য, বিজেপি সরকার গঠনের পর আসামে সরকারি মাদ্রাসাগুলোকে সাধারণ বিদ্যালয়ে রূপান্তর করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল যে, সরকারি খরচে কোন ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা চলবে না।