জ্বলে উঠুক অলিম্পিকের মশাল

মুশফিকুর রহমান

আজ ২৩ জুন, বিশ্ব অলিম্পিক দিবস। প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রে অতীতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা হতো। যেমন : দৌড় প্রতিযোগিতা, মল্লযুদ্ধ, মুষ্টিযুদ্ধ। সেখান থেকেই এই অলিম্পিকের ধারণা আসে। এই গ্রীসেই আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৮৬ সালেই সর্বপ্রথম অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতি চার বছর পর পর এই গেমস অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত দু’ধরনের অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়। একটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, অন্যটি হলো শীতকালীন অলিম্পিক।

গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ২৮ ধরনের খেলাধুলা, ৩৮ রকমের ডিসিপ্লিন এবং শীতকালীন অলিম্পিক ৭ ধরনের খেলাধুলা ও ৬টি ডিসিপ্লিনের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতি চার বছর পর এই গেমসের ভেন্যু ও পরিবর্তন হয়। যে দেশে ভেন্যু আয়োজন করা হয় সেই দেশকে বলা হয় হোস্ট কান্ট্রি। এই অলিম্পিয়াড গেমসকে পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কমিটি। ১৯৪৭ সালে স্টকহোমে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কমিটির ৪১ তম অধিবেশনে গ্রাস নামক ব্যক্তি অলিম্পিয়াড দিবস পালনের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। দিবস পালনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল অলিম্পিকের ধারণাকে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত করা এবং পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ধারাবাহিকভাবে ৪২তম অধিবেশনে এ দিনটিকে অলিম্পিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সেই থেকে আজ অবধি দিনটি পালিত হয়ে আসছে।

প্রায় ২০০টি দেশের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ইভেন্টে যেমন : ফুটবল, বাস্কেটবল, সুইমিং, ক্যারাটেসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে। নিয়মানুযায়ী প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ইভেন্টে তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়ে যথাক্রমে স্বর্ণ পদক, রৌপ্য পদক ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এইসব বিষয়ের দেখাশোনা করে। এটি একটি সত্যিকারের বৈশ্বিক সংস্থা। এটি অলিম্পিক স্টকহোল্ডারসদের (এথলেট, জাতীয় অলিম্পিয়াড কমিটি, বিশ্বব্যাপী অলিম্পিক পার্টনারস, মিডিয়া পার্টনার্স, ইত্যাদি) মধ্যে একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং সবগুলো সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখে এবং এর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এক কথায়, অলিম্পিক গেমস এর অভিভাবক হিসেবে কাজ করে এই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কমিটি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সমাজের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা ও এই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের উদ্দেশ্য।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড গেমসকে সারা পৃথিবীতে গেইমস এর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গেইমসের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা তাদের জাতীয় অঙ্গন পার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাধুলার সুযোগ পায় এবং এটি খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা নয়, আক্ষরিক অর্থে কোন জাতি খেলাধুলায় কত এগিয়ে তা ই নির্ধারণ করে। একজন অলিম্পিয়াড একটা জাতির প্রতিনিধি হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতা করে তার দেশকে সবার সামনে তুলে ধরে এবং এতে সর্বোপরি তার দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এই গেমসের মাধ্যমে সব দেশের খেলোয়াড়রা একটি প্ল্যাটফর্মে আসার সুযোগ পায়। এই গেমস প্রতিযোগীদের খেলাধুলার একটি অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে। ফলে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা একে অপরকে জানার ও বোঝার সুযোগ পায় এবং বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব কাছ থেকেই অবলোকন করা সম্ভব। এতে করে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র?্য বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে অলিম্পিক কমিটি গঠন করে এবং এটি অনুমোদন পায় ১৯৮০ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সিদ্দিকুর রহমান গলফ খেলার জন্য মনোনীত হন এবং আন্তর্জাতিক দরবারে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন। একই বছর বাংলাদেশ সাতজন প্রতিযোগী পাঠায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোন পদক অর্জন করতে পারেনি তবে যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রশিক্ষণ পেলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা সাফল্যের মুখ দেখবে শিগগিরই।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ পাঁচটা বিভাগ থেকে ৮ জন প্রতিযোগী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিভাগগুলো হলো আর্চারি, শুটিং, ভারোত্তোলন, বক্সিং এবং ক্যারাটে। কিন্ত অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষকে বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত বছরের টোকিও অলিম্পিক গেমস স্থগিত করতে হয়েছিল। এ বছর ও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। খুব শিগগির এ মহামারীর অবসান ঘটুক। অলিম্পিকের মতো পৃথিবী হয়ে উঠুক আরও দ্রুত, আরও ঊর্ধ্বে, আরও শক্তিশালী। ধরণী ফিরে যাক তার সুস্থ, স্বাভাবিক খেলাধুলার পরিবেশে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

বুধবার, ২৩ জুন ২০২১ , ৯ আষাঢ় ১৪২৮ ১১ জিলকদ ১৪৪২

জ্বলে উঠুক অলিম্পিকের মশাল

মুশফিকুর রহমান

আজ ২৩ জুন, বিশ্ব অলিম্পিক দিবস। প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রে অতীতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা হতো। যেমন : দৌড় প্রতিযোগিতা, মল্লযুদ্ধ, মুষ্টিযুদ্ধ। সেখান থেকেই এই অলিম্পিকের ধারণা আসে। এই গ্রীসেই আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৮৬ সালেই সর্বপ্রথম অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতি চার বছর পর পর এই গেমস অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত দু’ধরনের অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়। একটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, অন্যটি হলো শীতকালীন অলিম্পিক।

গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ২৮ ধরনের খেলাধুলা, ৩৮ রকমের ডিসিপ্লিন এবং শীতকালীন অলিম্পিক ৭ ধরনের খেলাধুলা ও ৬টি ডিসিপ্লিনের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতি চার বছর পর এই গেমসের ভেন্যু ও পরিবর্তন হয়। যে দেশে ভেন্যু আয়োজন করা হয় সেই দেশকে বলা হয় হোস্ট কান্ট্রি। এই অলিম্পিয়াড গেমসকে পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কমিটি। ১৯৪৭ সালে স্টকহোমে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কমিটির ৪১ তম অধিবেশনে গ্রাস নামক ব্যক্তি অলিম্পিয়াড দিবস পালনের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। দিবস পালনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল অলিম্পিকের ধারণাকে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত করা এবং পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ধারাবাহিকভাবে ৪২তম অধিবেশনে এ দিনটিকে অলিম্পিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সেই থেকে আজ অবধি দিনটি পালিত হয়ে আসছে।

প্রায় ২০০টি দেশের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ইভেন্টে যেমন : ফুটবল, বাস্কেটবল, সুইমিং, ক্যারাটেসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে। নিয়মানুযায়ী প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ইভেন্টে তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়ে যথাক্রমে স্বর্ণ পদক, রৌপ্য পদক ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এইসব বিষয়ের দেখাশোনা করে। এটি একটি সত্যিকারের বৈশ্বিক সংস্থা। এটি অলিম্পিক স্টকহোল্ডারসদের (এথলেট, জাতীয় অলিম্পিয়াড কমিটি, বিশ্বব্যাপী অলিম্পিক পার্টনারস, মিডিয়া পার্টনার্স, ইত্যাদি) মধ্যে একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং সবগুলো সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখে এবং এর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এক কথায়, অলিম্পিক গেমস এর অভিভাবক হিসেবে কাজ করে এই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কমিটি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সমাজের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা ও এই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের উদ্দেশ্য।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড গেমসকে সারা পৃথিবীতে গেইমস এর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গেইমসের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা তাদের জাতীয় অঙ্গন পার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাধুলার সুযোগ পায় এবং এটি খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা নয়, আক্ষরিক অর্থে কোন জাতি খেলাধুলায় কত এগিয়ে তা ই নির্ধারণ করে। একজন অলিম্পিয়াড একটা জাতির প্রতিনিধি হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতা করে তার দেশকে সবার সামনে তুলে ধরে এবং এতে সর্বোপরি তার দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এই গেমসের মাধ্যমে সব দেশের খেলোয়াড়রা একটি প্ল্যাটফর্মে আসার সুযোগ পায়। এই গেমস প্রতিযোগীদের খেলাধুলার একটি অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে। ফলে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা একে অপরকে জানার ও বোঝার সুযোগ পায় এবং বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব কাছ থেকেই অবলোকন করা সম্ভব। এতে করে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র?্য বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে অলিম্পিক কমিটি গঠন করে এবং এটি অনুমোদন পায় ১৯৮০ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সিদ্দিকুর রহমান গলফ খেলার জন্য মনোনীত হন এবং আন্তর্জাতিক দরবারে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন। একই বছর বাংলাদেশ সাতজন প্রতিযোগী পাঠায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোন পদক অর্জন করতে পারেনি তবে যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রশিক্ষণ পেলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা সাফল্যের মুখ দেখবে শিগগিরই।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ পাঁচটা বিভাগ থেকে ৮ জন প্রতিযোগী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিভাগগুলো হলো আর্চারি, শুটিং, ভারোত্তোলন, বক্সিং এবং ক্যারাটে। কিন্ত অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষকে বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত বছরের টোকিও অলিম্পিক গেমস স্থগিত করতে হয়েছিল। এ বছর ও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। খুব শিগগির এ মহামারীর অবসান ঘটুক। অলিম্পিকের মতো পৃথিবী হয়ে উঠুক আরও দ্রুত, আরও ঊর্ধ্বে, আরও শক্তিশালী। ধরণী ফিরে যাক তার সুস্থ, স্বাভাবিক খেলাধুলার পরিবেশে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]