খুলনা-ময়মনসিংহ ছাড়া সব বিভাগে সংক্রমণ বেড়েছে

খুলনা বিভাগে একদিনে করোনা সংক্রমণের হার ও শনাক্ত কিছুটা কমেছে। তবে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে এই বিভাগে। আর ময়মনসিংহ ছাড়া বাকি সব বিভাগেই গত একদিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। দেশে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হারও ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সামনে করোনার ‘নাজুক’ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ঢাকা রক্ষায় সাত জেলা ‘লকডাউন’র দ্বিতীয় দিন শুধুমাত্র ঢাকা মহানগর ও জেলাতেই রোগী শনাক্ত বেড়েছে পাঁচ শতাধিক। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হারও বাড়তির দিকে রয়েছে। এই বিভাগের ফরিদপুর ও টাঙ্গাইল করোনা সংক্রমণের নতুন হটস্পটে পরিণত হচ্ছে। ফরিদপুরে গত একদিনে ২১২ জন ও টাঙ্গাইলে ১৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গতকাল এক ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন বিভাগে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

গত ১৪ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে।

আড়াই মাসের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে পাঁচ হাজার ৭২৭ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

আগের দিন দেশে চার হাজার ৮৪৬ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওইদিন করোনা সংক্রমণে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এর আগে একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল গত ১৩ এপ্রিল। ওইদিন ছয় হাজার ২৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীসহ এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জনে।

দুইমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু

করোনায় গত একদিনে দেশে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল গত ২৯ এপ্রিল। ওইদিন ৮৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকালের ৮৮ জনসহ করোনা সংক্রমণে এ পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৭৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

শনাক্ত রোগীর মধ্যে একদিনে তিন হাজার ১৬৮ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৯১ হাজার ৫৫৩ জন।

বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ‘চরম বিপর্যয়’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন বলেছেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোরভাবে ‘লকডাউন’ (বিধিনিষেধ) প্রতিপালন এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি ‘লকডাউন’ প্রতিপালনে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং হাসপাতালের সেবাদান সুশৃঙ্খল রাখার উদ্দেশে ঢাকার চারপাশে ‘লকডাউন’ দেয়া হয়েছে জানিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যারা আছেন, প্রয়োজনে তাদের কঠোর হতে হবে।’

বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ পরিস্থিতিতে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিশেষ অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য, হাসপাতালে সেবাদানের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহায়ক জনবলের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। নিত্যদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ এর ব্যতিক্রম হলে করোনা পরিস্থিতি চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও পরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি।’

গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন বিভাগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুর বিভাগে ৮৬ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে প্রায় ৫০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪২ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ১৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে প্রায় ৫০ শতাংশ ও ময়মনসিংহে প্রায় ৬২ শতাংশ সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণ বর্তমানে কিছুটা কম, প্রায় ১৩ শতাংশ।’

দ্রুতগতিতে শনাক্ত বাড়ছে ঢাকায়

মহানগরসহ ঢাকা জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ২৪০টি নমুনা পরীক্ষায় দুই হাজার ৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

আগের দিন ঢাকায় এক হাজার ৪৯৬ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এ হিসঠবে একদিনেই ঢাকায় পটাচ শতাধিক রোগী বেশি পাওয়া গেছে। এর আগে ২১ জুন ঢাকায় এক হাজার ২৯৪ জন ও ২০ জুন ৮২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

একদিনে রেকর্ড মৃত্যু খুলনা বিভাগে

খুলনা বিভাগে গত একদিনে সর্বোচ্চ ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিভাগে এটাই একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু।

এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, বরিশাল বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে একজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রায় অর্ধেক রোগী শনাক্ত ঢাকা বিভাগে

২২ জুন ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৯৬৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। আর গত একদিনে এই বিভাগে শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৬৯৫ সংক্রমণ। এটি দেশের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে ঢাকা বিভাগে সংক্রমণের হার ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে একদিনে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৫৩২ থেকে বেড়ে ৬৭৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৬৩ জন থেকে বেড়ে ৮৪৭ হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণের হার ছিল ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে শনাক্ত কিছুটা কমেছে। এ বিভাগে গত একদিনে ৯৯৮ জন থেকে কমে ৯০৩ জন ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল এ বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

অন্য বিভাগের মধ্যে গত একদিনে ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩৪ জন, রংপুর বিভাগে ২৬৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৮৩ জন ও সিলেট বিভাগে ১২২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

একদিনে যেসব জেলায় বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩৫২ জন, খুলনায় ৩০৫ জন, চট্টগ্রামে ২৩৬ জন, যশোরে ১২১ জন, ঝিনাইদহে ১১৭ জন, কুষ্টিয়ায় ১২২ জন, দিনাজপুরে ১৪১ জন, নোয়াখালীতে ১১৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১১ জন, কক্সবাজারে ১০৭ জন এবং নাটোরে ১০২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫৫৪টি ল্যাবে ২৮ হাজার ২৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ৫ হাজার ৭৫টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন এবং নারী ৩০ জন। এর মধ্যে ৬৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন মারা গেছেন বাসায়।

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ , ১০ আষাঢ় ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪২

খুলনা-ময়মনসিংহ ছাড়া সব বিভাগে সংক্রমণ বেড়েছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

খুলনা বিভাগে একদিনে করোনা সংক্রমণের হার ও শনাক্ত কিছুটা কমেছে। তবে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে এই বিভাগে। আর ময়মনসিংহ ছাড়া বাকি সব বিভাগেই গত একদিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। দেশে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হারও ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সামনে করোনার ‘নাজুক’ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ঢাকা রক্ষায় সাত জেলা ‘লকডাউন’র দ্বিতীয় দিন শুধুমাত্র ঢাকা মহানগর ও জেলাতেই রোগী শনাক্ত বেড়েছে পাঁচ শতাধিক। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হারও বাড়তির দিকে রয়েছে। এই বিভাগের ফরিদপুর ও টাঙ্গাইল করোনা সংক্রমণের নতুন হটস্পটে পরিণত হচ্ছে। ফরিদপুরে গত একদিনে ২১২ জন ও টাঙ্গাইলে ১৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গতকাল এক ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন বিভাগে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

গত ১৪ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে।

আড়াই মাসের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে পাঁচ হাজার ৭২৭ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

আগের দিন দেশে চার হাজার ৮৪৬ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওইদিন করোনা সংক্রমণে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এর আগে একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল গত ১৩ এপ্রিল। ওইদিন ছয় হাজার ২৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীসহ এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জনে।

দুইমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু

করোনায় গত একদিনে দেশে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল গত ২৯ এপ্রিল। ওইদিন ৮৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকালের ৮৮ জনসহ করোনা সংক্রমণে এ পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৭৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

শনাক্ত রোগীর মধ্যে একদিনে তিন হাজার ১৬৮ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৯১ হাজার ৫৫৩ জন।

বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ‘চরম বিপর্যয়’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন বলেছেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোরভাবে ‘লকডাউন’ (বিধিনিষেধ) প্রতিপালন এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি ‘লকডাউন’ প্রতিপালনে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং হাসপাতালের সেবাদান সুশৃঙ্খল রাখার উদ্দেশে ঢাকার চারপাশে ‘লকডাউন’ দেয়া হয়েছে জানিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যারা আছেন, প্রয়োজনে তাদের কঠোর হতে হবে।’

বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ পরিস্থিতিতে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিশেষ অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য, হাসপাতালে সেবাদানের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহায়ক জনবলের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। নিত্যদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ এর ব্যতিক্রম হলে করোনা পরিস্থিতি চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও পরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি।’

গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন বিভাগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুর বিভাগে ৮৬ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে প্রায় ৫০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪২ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ১৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে প্রায় ৫০ শতাংশ ও ময়মনসিংহে প্রায় ৬২ শতাংশ সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণ বর্তমানে কিছুটা কম, প্রায় ১৩ শতাংশ।’

দ্রুতগতিতে শনাক্ত বাড়ছে ঢাকায়

মহানগরসহ ঢাকা জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ২৪০টি নমুনা পরীক্ষায় দুই হাজার ৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

আগের দিন ঢাকায় এক হাজার ৪৯৬ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এ হিসঠবে একদিনেই ঢাকায় পটাচ শতাধিক রোগী বেশি পাওয়া গেছে। এর আগে ২১ জুন ঢাকায় এক হাজার ২৯৪ জন ও ২০ জুন ৮২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

একদিনে রেকর্ড মৃত্যু খুলনা বিভাগে

খুলনা বিভাগে গত একদিনে সর্বোচ্চ ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিভাগে এটাই একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু।

এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, বরিশাল বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে একজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রায় অর্ধেক রোগী শনাক্ত ঢাকা বিভাগে

২২ জুন ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৯৬৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। আর গত একদিনে এই বিভাগে শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৬৯৫ সংক্রমণ। এটি দেশের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে ঢাকা বিভাগে সংক্রমণের হার ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে একদিনে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৫৩২ থেকে বেড়ে ৬৭৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৬৩ জন থেকে বেড়ে ৮৪৭ হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণের হার ছিল ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে শনাক্ত কিছুটা কমেছে। এ বিভাগে গত একদিনে ৯৯৮ জন থেকে কমে ৯০৩ জন ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল এ বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

অন্য বিভাগের মধ্যে গত একদিনে ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩৪ জন, রংপুর বিভাগে ২৬৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৮৩ জন ও সিলেট বিভাগে ১২২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

একদিনে যেসব জেলায় বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩৫২ জন, খুলনায় ৩০৫ জন, চট্টগ্রামে ২৩৬ জন, যশোরে ১২১ জন, ঝিনাইদহে ১১৭ জন, কুষ্টিয়ায় ১২২ জন, দিনাজপুরে ১৪১ জন, নোয়াখালীতে ১১৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১১ জন, কক্সবাজারে ১০৭ জন এবং নাটোরে ১০২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫৫৪টি ল্যাবে ২৮ হাজার ২৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ৫ হাজার ৭৫টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন এবং নারী ৩০ জন। এর মধ্যে ৬৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন মারা গেছেন বাসায়।