লকডাউন তবুও বন্ধ হয়নি মানুষের চলাচল

ঢাকার আশপাশের ৭ জেলার বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ হয়নি মানুষের চলাচল। গতকাল সংশ্লিষ্ট জেলায় সাধারণ মানুষদের চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের চলাচলসহ ৭ জেলার সার্বিক কার্যাবলী ২২-৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘করোনাভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের সার্বিক কার্যাবলী/জনসাধারণ চলাচলসহ ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এ সময় শুধু আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিষেধাজ্ঞার আওতা মুক্ত থাকবে।’

কিন্তু গতকালও মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মাকিনগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢাকামুখী হতে দেখা গেছে অনেকেই। কারণ তারা ঢাকায় বিভিন্ন অফিসে কাজ করেন। তাদের অফিস-কারখানা খোলা থাকায় হেঁটে ও ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসছেন তারা। যাত্রাপথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি তাদের। যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও মানুষ চলচলা বন্ধ হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকলেও ঢাকামুখী মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়নি। ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার বিভিন্ন সড়কে ছিল মানুষের ভিড়। অনেকে হেঁটে, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও ইঞ্জিলচালিত নৌকায় ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে।

রাজধানীর গাবতলীর আমিনবাজার সেতু, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, ডেমরা সুলতানা কামাল সেতু, আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও পোস্তগোলা ব্রিজে এলাকায় ছিল ঢাকামুখী মানুষের জটলা। পুলিশের বাধার কারণে যাত্রীবাহী পরিবহন ঢাকা প্রবেশ করতে পারেনি। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আগত আটকেপড়া যাত্রীরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে এসব এলাকায় জটলা করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন সড়কে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। পুলিশ আটকালেই চিকিৎসাপত্র দেখিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে যাত্রীরা জানান।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইমরান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘২ হাজার টাকায় প্রাইভেট কার ভাড়া করে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসলাম। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে ছিল। কিন্তু ডাক্তারের কাগজ থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি।’’

গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসার মিন্টু নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ঢাকায় আসতে হয়েছে। প্রথমের সিএনজিতে আব্দুল্লাহপুর আসি। তারপর সেখান থেকে বাসের ঢাকা প্রবেশ করি। যাওয়ার সময় একই অবস্থা বাসে টঙ্গি পর্যন্ত আসি। তারপর হেঁটে টঙ্গি ব্রিজ পার হয়ে। লেগুনায় গাজীপুরে কালীগঞ্জ পর্যন্ত যায়। বাসে ঢাকায় আসতে ভাড়া লাগতো ৫০ টাকা। এখন প্রায় ২০০-৩০০ টাকা খরচ হচ্ছে।’’

এ বিষয়ে সানারপাড় এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. ফারুক সাংবাদিকদের জানান, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে নিয়ম মানানোর কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সবাইকেই মহামারী করোনার সংক্রমণ রোধে নিয়ম-কানুন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তবেই করোনা রোধ করা সম্ভব।’’

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিভিন্ন ছোট পরিবহন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে বলে যাত্রীরা জানান। গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা পরিষদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ঢাকামুখী মানুষ বন্ধ করা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায় ওসমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘বাসে করে গাইবান্ধা থেকে মির্জাপুরে আসতে প্রতি টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা। মির্জাপুর থেকে চন্দ্রা ভ্যানে এসেছেন জনপ্রতি ৩০০ টাকায়। সেখান থেকে নবীনগর এসেছেন ৪০০ টাকায়। আবার নবীনগর থেকে আমিনবাজার ব্রিজের গোড়া পর্যন্ত লেগুনায় এসেছেন ৩০০ টাকায়। এরপর শুধু চালের বস্তাটা ভ্যানে করে আমিনবাজর ব্রিজ পার হতে লেগেছে ২০০ টাকা।’’

ফরিদা বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘গাইবান্ধা থেকে আসতে স্বাভাবিক সময়ে ৫০০ টাকার বেশি লাগে না। এখন জনপ্রতি লাগছে দেড় হাজার টাকার মতো। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় গাইবান্ধা থেকে গাড়ি উঠি। সকালে মির্জাপুর নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে ভেঙে গাবতলী পর্যন্ত আসি। হঠাৎ সব বন্ধ না করে দিয়ে তিন-চার দিন আগে ঘোষণা দিলে এতো ভোগান্তিটা হতো না জানান তিনি।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজবাড়ীতে কঠোরভাবে চলছে লকডাউন। শহরের দোকানপাট, শপিংমল রয়েছে বন্ধ। শুধু কাঁচাবাজার, ফলমুল এবং ওষুধের দোকান খোলা ছিল। গত সোমবারের চেয়ে গতকার শহরে পুলিশী তৎপরতা ছিল বেশি। শহরে কিছু রিক্সা, অটো বাইক ও মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। এছাড়া জেলা প্রশাসনের তৎপরাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ছোটছোট দোকানী এবং রিক্সা, ভ্যান এবং অটোবাইক চালকদের দাবি লকডাউন চলাকালীন সময়ে তাদের সরকারিভাবে অনুদান দেয়া হোক। নইলে তাদের পরিবার পরিজনসহ অনাহা অর্ধাহারে দিন যাপন করতে হবে।

মানিকগঞ্জের আরিচা প্রতিনিধি : লকডাউনের কারণে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীরা পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দুই ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ফেরিতে পারাপার করা হলেও যাত্রী নেয়া হচ্ছে না। ফেরিঘাটে লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলেও গোপনে চলছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। কিছু যাত্রীদের ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পার হতে দেখা গেছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের। এতে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। ৫০ টাকার ভাড়া যাত্রী প্রতি ২০০ নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে যাত্রীরা। আবুল হোসেন নামের কাজিরহাটের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘জুলুম-নির্যাতন সব গরীব মানুষের ওপর। ব্যক্তিগত গাড়িতে ধনীরা যাতায়াত করতে পারলেও আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি।’

মাদারীপুর প্রতিনিধি : লকডাউন দ্বিতীয় দিনও ঢিলেঢালাভাবে চলেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাস্তায় দেখা গেছে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। শহরে দোকানপাটও দেখা গেছে খোলা রয়েছে। মাঝে মাঝে শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ দেখা গেলেও কঠোর অবস্থানে ছিল না। প্রশাসনেরও তৎপরতাও তেমন চোখে পড়েনি। ফলে পুরো জেলাতেই লকডাউন ছিল ঢিলেঢালাভাবে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : সরকার ঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ছিল আগের দিনের চেয়েও স্বাভাবিক। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চাষাঢ়ায় পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও তা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই শীতলক্ষ্যা নদীতে খেয়া পারাপার চলেছে। শহরতলীর ও অলিগলির সব দোকানপাটও ছিল খোলা। হোটেল-রেস্তোরাঁতেও ছিল স্বাভাবিক দিনের চিত্র। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষের।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোজাফফর আহমেদ। জরুরি প্রয়োজনে মতিঝিল যেতে হবে তার। অন্য সময় বাসে গেলেও লকডাউনের কারণে পাচ্ছেন না কোন বাহন। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা অতিরিক্ত ভাড়ার। মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘প্রায় দেড় ঘণ্টা যাবত অপেক্ষা করছি। সিএনজি বা ইজিবাইক সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাবে, তাও আড়াইগুণ ভাড়ায়।’ দীর্ঘ অপেক্ষার পর গুলিস্তান পর্যন্ত ২৫০ টাকায় একটি মোটরবাইক ভাড়া করেছেন। পুলিশ বাধা দিলে অর্ধেক রাস্তায় নেমে যেতেও হতে পারে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ , ১০ আষাঢ় ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪২

লকডাউন তবুও বন্ধ হয়নি মানুষের চলাচল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকার আশপাশের ৭ জেলার বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ হয়নি মানুষের চলাচল। গতকাল সংশ্লিষ্ট জেলায় সাধারণ মানুষদের চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের চলাচলসহ ৭ জেলার সার্বিক কার্যাবলী ২২-৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘করোনাভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের সার্বিক কার্যাবলী/জনসাধারণ চলাচলসহ ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এ সময় শুধু আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিষেধাজ্ঞার আওতা মুক্ত থাকবে।’

কিন্তু গতকালও মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মাকিনগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢাকামুখী হতে দেখা গেছে অনেকেই। কারণ তারা ঢাকায় বিভিন্ন অফিসে কাজ করেন। তাদের অফিস-কারখানা খোলা থাকায় হেঁটে ও ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসছেন তারা। যাত্রাপথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি তাদের। যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও মানুষ চলচলা বন্ধ হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকলেও ঢাকামুখী মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়নি। ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার বিভিন্ন সড়কে ছিল মানুষের ভিড়। অনেকে হেঁটে, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও ইঞ্জিলচালিত নৌকায় ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে।

রাজধানীর গাবতলীর আমিনবাজার সেতু, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, ডেমরা সুলতানা কামাল সেতু, আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও পোস্তগোলা ব্রিজে এলাকায় ছিল ঢাকামুখী মানুষের জটলা। পুলিশের বাধার কারণে যাত্রীবাহী পরিবহন ঢাকা প্রবেশ করতে পারেনি। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আগত আটকেপড়া যাত্রীরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে এসব এলাকায় জটলা করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন সড়কে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। পুলিশ আটকালেই চিকিৎসাপত্র দেখিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে যাত্রীরা জানান।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইমরান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘২ হাজার টাকায় প্রাইভেট কার ভাড়া করে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসলাম। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে ছিল। কিন্তু ডাক্তারের কাগজ থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি।’’

গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসার মিন্টু নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ঢাকায় আসতে হয়েছে। প্রথমের সিএনজিতে আব্দুল্লাহপুর আসি। তারপর সেখান থেকে বাসের ঢাকা প্রবেশ করি। যাওয়ার সময় একই অবস্থা বাসে টঙ্গি পর্যন্ত আসি। তারপর হেঁটে টঙ্গি ব্রিজ পার হয়ে। লেগুনায় গাজীপুরে কালীগঞ্জ পর্যন্ত যায়। বাসে ঢাকায় আসতে ভাড়া লাগতো ৫০ টাকা। এখন প্রায় ২০০-৩০০ টাকা খরচ হচ্ছে।’’

এ বিষয়ে সানারপাড় এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. ফারুক সাংবাদিকদের জানান, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে নিয়ম মানানোর কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সবাইকেই মহামারী করোনার সংক্রমণ রোধে নিয়ম-কানুন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তবেই করোনা রোধ করা সম্ভব।’’

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিভিন্ন ছোট পরিবহন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে বলে যাত্রীরা জানান। গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা পরিষদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ঢাকামুখী মানুষ বন্ধ করা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায় ওসমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘বাসে করে গাইবান্ধা থেকে মির্জাপুরে আসতে প্রতি টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা। মির্জাপুর থেকে চন্দ্রা ভ্যানে এসেছেন জনপ্রতি ৩০০ টাকায়। সেখান থেকে নবীনগর এসেছেন ৪০০ টাকায়। আবার নবীনগর থেকে আমিনবাজার ব্রিজের গোড়া পর্যন্ত লেগুনায় এসেছেন ৩০০ টাকায়। এরপর শুধু চালের বস্তাটা ভ্যানে করে আমিনবাজর ব্রিজ পার হতে লেগেছে ২০০ টাকা।’’

ফরিদা বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘গাইবান্ধা থেকে আসতে স্বাভাবিক সময়ে ৫০০ টাকার বেশি লাগে না। এখন জনপ্রতি লাগছে দেড় হাজার টাকার মতো। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় গাইবান্ধা থেকে গাড়ি উঠি। সকালে মির্জাপুর নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে ভেঙে গাবতলী পর্যন্ত আসি। হঠাৎ সব বন্ধ না করে দিয়ে তিন-চার দিন আগে ঘোষণা দিলে এতো ভোগান্তিটা হতো না জানান তিনি।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজবাড়ীতে কঠোরভাবে চলছে লকডাউন। শহরের দোকানপাট, শপিংমল রয়েছে বন্ধ। শুধু কাঁচাবাজার, ফলমুল এবং ওষুধের দোকান খোলা ছিল। গত সোমবারের চেয়ে গতকার শহরে পুলিশী তৎপরতা ছিল বেশি। শহরে কিছু রিক্সা, অটো বাইক ও মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। এছাড়া জেলা প্রশাসনের তৎপরাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ছোটছোট দোকানী এবং রিক্সা, ভ্যান এবং অটোবাইক চালকদের দাবি লকডাউন চলাকালীন সময়ে তাদের সরকারিভাবে অনুদান দেয়া হোক। নইলে তাদের পরিবার পরিজনসহ অনাহা অর্ধাহারে দিন যাপন করতে হবে।

মানিকগঞ্জের আরিচা প্রতিনিধি : লকডাউনের কারণে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীরা পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দুই ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ফেরিতে পারাপার করা হলেও যাত্রী নেয়া হচ্ছে না। ফেরিঘাটে লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলেও গোপনে চলছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। কিছু যাত্রীদের ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পার হতে দেখা গেছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের। এতে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। ৫০ টাকার ভাড়া যাত্রী প্রতি ২০০ নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে যাত্রীরা। আবুল হোসেন নামের কাজিরহাটের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘জুলুম-নির্যাতন সব গরীব মানুষের ওপর। ব্যক্তিগত গাড়িতে ধনীরা যাতায়াত করতে পারলেও আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি।’

মাদারীপুর প্রতিনিধি : লকডাউন দ্বিতীয় দিনও ঢিলেঢালাভাবে চলেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাস্তায় দেখা গেছে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। শহরে দোকানপাটও দেখা গেছে খোলা রয়েছে। মাঝে মাঝে শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ দেখা গেলেও কঠোর অবস্থানে ছিল না। প্রশাসনেরও তৎপরতাও তেমন চোখে পড়েনি। ফলে পুরো জেলাতেই লকডাউন ছিল ঢিলেঢালাভাবে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : সরকার ঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ছিল আগের দিনের চেয়েও স্বাভাবিক। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চাষাঢ়ায় পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও তা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই শীতলক্ষ্যা নদীতে খেয়া পারাপার চলেছে। শহরতলীর ও অলিগলির সব দোকানপাটও ছিল খোলা। হোটেল-রেস্তোরাঁতেও ছিল স্বাভাবিক দিনের চিত্র। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষের।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোজাফফর আহমেদ। জরুরি প্রয়োজনে মতিঝিল যেতে হবে তার। অন্য সময় বাসে গেলেও লকডাউনের কারণে পাচ্ছেন না কোন বাহন। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা অতিরিক্ত ভাড়ার। মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘প্রায় দেড় ঘণ্টা যাবত অপেক্ষা করছি। সিএনজি বা ইজিবাইক সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাবে, তাও আড়াইগুণ ভাড়ায়।’ দীর্ঘ অপেক্ষার পর গুলিস্তান পর্যন্ত ২৫০ টাকায় একটি মোটরবাইক ভাড়া করেছেন। পুলিশ বাধা দিলে অর্ধেক রাস্তায় নেমে যেতেও হতে পারে।