পরিকল্পনাহীন বিধিনিষেধে জনভোগান্তি

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। সোমবার বিকালে আকস্মিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। রাজধানীতে বসবাসরত যেসব মানুষ ঢাকার আশপাশে কাজ করেন বা অন্য জেলার যেসব মানুষ কর্মস্থল রাজধানীতে তারা পড়েছেন বিপাকে। অনেককেই হেঁটে বা ছোট বাহনে চেপে কর্মস্থল বা বাসস্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আকস্মিক লকডাউনে ঢাকায় এসে যেমন, ঢাকার বাইরে গিয়েও তেমন আটকা পড়েছেন অনেকে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। সীমান্তের অনেক জেলাতেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউনের আওতা দিন দিন বাড়ছে। কঠোর বিধিনিষেধ ছাড়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যৎসামান্য টিকা আর ঢিলেঢালা স্বাস্থ্যবিধি দিয়ে করোনাকে প্রতিরোধ করা যাবে না। করোনাকে যেমন প্রতিরোধ করতে হবে তেমন মানুষের জীবিকারও সংস্থান করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারছে কিনা। বিধিনিষেধ জারি করা বা কর্মস্থল খোলা রাখার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিনা।

কাজ না করলে খেটে খাওয়া মানুষের পেটে ভাত জুটবে না। চাকরি রক্ষার জন্য কর্মস্থলে হাজির হতে হবে। জীবিকার প্রয়োজনে তাদের পথে নামতেই হয়। কলকরাখানা, অফিস-আদালত, ব্যাংক, দোকানপাট প্রায় সবই খোলা। যে কোন উপায়েই হোক সাধারণ মানুষকে নিজ নিজ কর্মস্থলে পৌঁছাতেই হবে। কর্মস্থলে যেতে হবে অথচ সেখানে যাওয়ার জন্য নেই প্রয়োজনীয় পরিবহন। বাড়তি ভাড়া গুনে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, ভ্যান প্রভৃতিতে ভাগাভাগি করে গাদাগাদি করে তারা কাজে যাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা যাচ্ছে না। মানুষের ভোগান্তি আর খরচও বেড়েছে। অতীতেও তাদেরকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

একের পর এক বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে, কাগজে-কলমে তা কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। কিন্তু সেই বিধিনিষেধ মানার বালাই নেই। বিধিনিষেধের ফলে জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলো আবার স্বাস্থ্যবিধিও লঙ্ঘিত হলো- এমন হলে অর্থনীতি বা জনস্বাস্থ্য কোনটাকেই বাঁচানো যাবে না। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারকে পরিকল্পনা করতে হবে এমন ভাবে যাতে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি দুটোকেই রক্ষা করা সম্ভব হয়।

সামাজিক দূরত্ব মেনে, মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ কীভাবে কাজ করে যেতে পারে সেই পথ খুঁজতে হবে। কর্মস্থল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা কঠিন। তবে কর্মস্থল যদি খোলা রাখা হয় তাহলে সেখানে মানুষের যাওয়ার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। কর্মস্থল খোলা কিন্তু যাওয়ার উপায় নেই- মানুষকে এমন উভয় সংকটে ফেলা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়।

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ , ১০ আষাঢ় ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪২

পরিকল্পনাহীন বিধিনিষেধে জনভোগান্তি

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। সোমবার বিকালে আকস্মিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। রাজধানীতে বসবাসরত যেসব মানুষ ঢাকার আশপাশে কাজ করেন বা অন্য জেলার যেসব মানুষ কর্মস্থল রাজধানীতে তারা পড়েছেন বিপাকে। অনেককেই হেঁটে বা ছোট বাহনে চেপে কর্মস্থল বা বাসস্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আকস্মিক লকডাউনে ঢাকায় এসে যেমন, ঢাকার বাইরে গিয়েও তেমন আটকা পড়েছেন অনেকে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। সীমান্তের অনেক জেলাতেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউনের আওতা দিন দিন বাড়ছে। কঠোর বিধিনিষেধ ছাড়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যৎসামান্য টিকা আর ঢিলেঢালা স্বাস্থ্যবিধি দিয়ে করোনাকে প্রতিরোধ করা যাবে না। করোনাকে যেমন প্রতিরোধ করতে হবে তেমন মানুষের জীবিকারও সংস্থান করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারছে কিনা। বিধিনিষেধ জারি করা বা কর্মস্থল খোলা রাখার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিনা।

কাজ না করলে খেটে খাওয়া মানুষের পেটে ভাত জুটবে না। চাকরি রক্ষার জন্য কর্মস্থলে হাজির হতে হবে। জীবিকার প্রয়োজনে তাদের পথে নামতেই হয়। কলকরাখানা, অফিস-আদালত, ব্যাংক, দোকানপাট প্রায় সবই খোলা। যে কোন উপায়েই হোক সাধারণ মানুষকে নিজ নিজ কর্মস্থলে পৌঁছাতেই হবে। কর্মস্থলে যেতে হবে অথচ সেখানে যাওয়ার জন্য নেই প্রয়োজনীয় পরিবহন। বাড়তি ভাড়া গুনে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, ভ্যান প্রভৃতিতে ভাগাভাগি করে গাদাগাদি করে তারা কাজে যাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা যাচ্ছে না। মানুষের ভোগান্তি আর খরচও বেড়েছে। অতীতেও তাদেরকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

একের পর এক বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে, কাগজে-কলমে তা কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। কিন্তু সেই বিধিনিষেধ মানার বালাই নেই। বিধিনিষেধের ফলে জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলো আবার স্বাস্থ্যবিধিও লঙ্ঘিত হলো- এমন হলে অর্থনীতি বা জনস্বাস্থ্য কোনটাকেই বাঁচানো যাবে না। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারকে পরিকল্পনা করতে হবে এমন ভাবে যাতে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি দুটোকেই রক্ষা করা সম্ভব হয়।

সামাজিক দূরত্ব মেনে, মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ কীভাবে কাজ করে যেতে পারে সেই পথ খুঁজতে হবে। কর্মস্থল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা কঠিন। তবে কর্মস্থল যদি খোলা রাখা হয় তাহলে সেখানে মানুষের যাওয়ার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। কর্মস্থল খোলা কিন্তু যাওয়ার উপায় নেই- মানুষকে এমন উভয় সংকটে ফেলা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়।