ঝামেলা এড়াতে ১ জুলাই থেকে যাচাই করে কিনতে হবে মোবাইল সেট

অবৈধ কিংবা নকল, বর্তমানে সচল কোন মোবাইল ফোনসেট বন্ধ করবে না বিটিআরসি। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এসব হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

তবে ১ জুলাই থেকে যেসব নতুন হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, সেগুলো নকল বা অবৈধ কিনা, তা শনাক্তকরণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাই ঝামেলা এড়াতে ১ জুলাই থেকে যাচাই করে হ্যান্ডসেট কিনতে গ্রাহকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। যার কারণে বছরে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ১ জুলাইয়ের পর নেটওয়ার্কে যুক্ত কোন হ্যান্ডসেট অবৈধ হলে, ব্যবহারকারীকে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে তিন মাস সময় দেয়া হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রমে শুরু হওয়ার তিন মাস পর অবৈধ হ্যান্ডসেটে কোন সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করবেন।

বিটিআরসির এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ সেট ব্যবহার করতে পারবেন না। চুরি করা সেট ব্যবহার করা যাবে না। সব মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা দুটোই বাড়বে।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, হ্যান্ডসেট বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করতে ‘ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর)’ শীর্ষক ব্যবস্থা চালু ও পরিচালনার জন্য গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করে বিটিআরসি। প্রযুক্তিগত সমাধান পেতে সংস্থাটি সিনেসিস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত নভেম্বরে চুক্তি করে।

তিনি বলেন, গ্রাহকের জাতীয় পরিচিতি নম্বর ও সিম নম্বরের (এমএসআইএসডিএন) সঙ্গে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর মিলিয়ে এনইআইআরে নিবন্ধন করা হবে। আগামী ১ জুলাই এ পরীক্ষামূলক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।

বিটিআরসির উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন খান জানান, এনইআইআর সম্পর্কিত যেকোন তথ্য বিটিআরসি’র হেল্পডেস্ক নম্বর ১০০ অথবা মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করে জানা যাবে।

হ্যান্ডসেট কেনার আগে করণীয়

১ জুলাই থেকে যেকোন মাধ্যম (বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন বিক্রয়কেন্দ্র, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) থেকে মোবাইল ফোনসেট কেনার আগে অবশ্যই মুঠোফোনের বৈধতা যাচাই ও রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে।

বৈধ কিনা তা যাচাইয়ের পদ্ধতি- মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি লিখতে হবে। এরপর ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি খুদে বার্তায় বৈধতা সম্পর্কে জানানো হবে।

বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আনলে

বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্কবিহীন সর্বোচ্চ দুটি ও শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি মুঠোফোন সেট সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন।

বিদেশ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। এরপর ১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য বা দলিল জমা দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য ব্যবহারকারীকে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন করলে মুঠোফোনটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। নিবন্ধন না করলে মুঠোফোন বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিবন্ধনের পদ্ধতি

neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে হবে। Special Registration সেকশনে গিয়ে হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বরটি দিতে হবে। প্রয়োজনীয় নথির ছবি বা স্ক্যান করা অনুলিপি (যেমন পাসপোর্টের ভিসা বা ইমিগ্রেশনের তথ্যাদি, ক্রয় রসিদ ইত্যাদি) আপলোড করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে।

হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে খুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় শেষ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের গিয়েও এ বিষয়ক সেবা নেয়া যাবে।

শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১ , ১১ আষাঢ় ১৪২৮ ১৩ জিলকদ ১৪৪২

ঝামেলা এড়াতে ১ জুলাই থেকে যাচাই করে কিনতে হবে মোবাইল সেট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অবৈধ কিংবা নকল, বর্তমানে সচল কোন মোবাইল ফোনসেট বন্ধ করবে না বিটিআরসি। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এসব হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

তবে ১ জুলাই থেকে যেসব নতুন হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, সেগুলো নকল বা অবৈধ কিনা, তা শনাক্তকরণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাই ঝামেলা এড়াতে ১ জুলাই থেকে যাচাই করে হ্যান্ডসেট কিনতে গ্রাহকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। যার কারণে বছরে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ১ জুলাইয়ের পর নেটওয়ার্কে যুক্ত কোন হ্যান্ডসেট অবৈধ হলে, ব্যবহারকারীকে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে তিন মাস সময় দেয়া হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রমে শুরু হওয়ার তিন মাস পর অবৈধ হ্যান্ডসেটে কোন সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করবেন।

বিটিআরসির এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ সেট ব্যবহার করতে পারবেন না। চুরি করা সেট ব্যবহার করা যাবে না। সব মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা দুটোই বাড়বে।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, হ্যান্ডসেট বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করতে ‘ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর)’ শীর্ষক ব্যবস্থা চালু ও পরিচালনার জন্য গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করে বিটিআরসি। প্রযুক্তিগত সমাধান পেতে সংস্থাটি সিনেসিস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত নভেম্বরে চুক্তি করে।

তিনি বলেন, গ্রাহকের জাতীয় পরিচিতি নম্বর ও সিম নম্বরের (এমএসআইএসডিএন) সঙ্গে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর মিলিয়ে এনইআইআরে নিবন্ধন করা হবে। আগামী ১ জুলাই এ পরীক্ষামূলক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।

বিটিআরসির উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন খান জানান, এনইআইআর সম্পর্কিত যেকোন তথ্য বিটিআরসি’র হেল্পডেস্ক নম্বর ১০০ অথবা মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করে জানা যাবে।

হ্যান্ডসেট কেনার আগে করণীয়

১ জুলাই থেকে যেকোন মাধ্যম (বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন বিক্রয়কেন্দ্র, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) থেকে মোবাইল ফোনসেট কেনার আগে অবশ্যই মুঠোফোনের বৈধতা যাচাই ও রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে।

বৈধ কিনা তা যাচাইয়ের পদ্ধতি- মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি লিখতে হবে। এরপর ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি খুদে বার্তায় বৈধতা সম্পর্কে জানানো হবে।

বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আনলে

বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্কবিহীন সর্বোচ্চ দুটি ও শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি মুঠোফোন সেট সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন।

বিদেশ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। এরপর ১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য বা দলিল জমা দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য ব্যবহারকারীকে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন করলে মুঠোফোনটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। নিবন্ধন না করলে মুঠোফোন বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিবন্ধনের পদ্ধতি

neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে হবে। Special Registration সেকশনে গিয়ে হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বরটি দিতে হবে। প্রয়োজনীয় নথির ছবি বা স্ক্যান করা অনুলিপি (যেমন পাসপোর্টের ভিসা বা ইমিগ্রেশনের তথ্যাদি, ক্রয় রসিদ ইত্যাদি) আপলোড করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে।

হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে খুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় শেষ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের গিয়েও এ বিষয়ক সেবা নেয়া যাবে।