ট্যাংক লরির ভেতরে গাঁজা, গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারে ইয়াবা

অভিনব কৌশলে রাজধানীতে মাদকের চালান ঢোকছে। মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। সর্বশেষ রাজধানীতে জ্বালানি বহনকারী ট্যাংক লরির ঢাকনা খুলে ভেতর থেকে গাঁজার বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। একই দিন একটি প্রাইভেটকার তল্লাশি করে খালি গ্যাস সিলিন্ডারের ভেতর থেকে ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে। গত বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) টিম এ দুইটি পৃথক অভিযান চালিয়েছে। ঘটনার সময় মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন ৫ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- রিগান খাঁন, জাকির হোসেন, খোকন মৃধা, জনি খান ও হৃদয় শিকদার। অভিযোগ রয়েছে, বান্দরবানের সীমান্তবর্র্তী নাইক্ষংছড়ি এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চোরাই পথে দেশে মাদক ঢুকছে।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ইফতেখারুল ইসলাম সংবাদকে জানান, গত বুধবার শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে জ্বালানি তেল বহনকারী একটি ট্যাংক লরি আটক করা হয়। ওই ট্যাংক লরি তল্লাশি করে ভেতর থেকে ৩৬ কেজি গাঁজাসহ রিগান, জাকির ও খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা বাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিক্রির জন্য গাঁজা ঢাকায় নিয়ে আসে।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে গাজীপুরে অভিনব কৌশলে প্রাইভেটকারযোগে ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে ডিবির টিম রাজধানীর রায়েরবাগের ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট স্থাপন করে গাড়ি তল্লাশি করছে। ওই সময় নম্বরবিহীন একটি প্রাইভেটকার আটক করে। ওই প্রাইভেটকারের থাকা জনি খান ও হৃদয় শিকদারকে সন্দেহ ভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে, প্রাইভেটকারের পিছনের গ্যাস সিলিন্ডারের ভেতর থেকে বিশেষ কায়দায় রাখা পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ২০ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

আমাদের বান্দরবান রিপোর্টার জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পরও থেমে নেই মাদকদ্রব্য পাচার। রোহিঙ্গাই মূলত এসব পাচারে জড়িত। তাদের মাধ্যমে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সীমান্তে পুলিশ-বিজিবের হাতে ইয়াবা এবং অস্ত্রসহ অনেক রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় মাদককারবারীদের আটক করা হয়।

পুলিশের অভিযানে গত ৬ মাসে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢোকার সময় প্রায় ৩ লাখ পিস ইয়াবা, সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণ, ৬ রাউন্ড গুলি এবং একটি দেশি এলজি উদ্ধার হয়। মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট বলে পরিচিত সীমান্ত সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকার। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দিয়ে অবাদে আসছে এসব ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য। স্থানীয় একটি মহলসহ রোহিঙ্গা পাচারকারী একটি সিন্ডিকেট দল রয়েছে এসব পাচার কাজে। এদিকে সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশ-মায়ানমারের মাঝে রয়েছে পাহাড় এবং কিছু কিছু এলাকা এখনো অরক্ষিত। যার কারণে রোহিঙ্গীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পয়ন্টে মায়ানমারে আসা-যাওয়া করেন। তারা রাতের বেলায় বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা চালান নিয়ে আবার ফিরে আসে। রোহিঙ্গারা বেপরোয়া চলাচল করার কারণে ইয়াবা, মাদক ও অপরাধ কর্মকা- বন্ধ হচ্ছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না হলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা যারা স্থানীয়, তাদের বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে।

জনপ্রতিনিধিরা আরও জানান, সীমান্ত এলাকাকে ইয়াবামুক্ত করা এলাকাবাসীর পরিকল্পনা থাকলে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না একমাত্র রোহিঙ্গার কারণে। তবে রোহিঙ্গাদের আনাগোনা বন্ধ করা যায় এবং ক্যাম্প থেকে বের হতে না দেয়া হয় তাহলে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা কোটিপতি হয়ে গেছেন তাদেরও একটি তালিকা করা করা গেলে দেখা যাবে কারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, গত ছয় মাসে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচারকালে পুলিশের অভিযানে প্রায় ৩ লাখ ইয়াবা, সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণ, ৬ রাউন্ড গুলি এবং একটি দেশি এলজি উদ্ধার করা হয়। পাহাড়ি এলাকা যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেক দুর্গম, যে কারণে আইশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে যেতে পারে না। তবে এখানে মাদক বিস্তারে অনেকটা ভূমিকা পালন করে রোহিঙ্গারা, যাদের এখনো অনেক আত্মীয়স্বজন বসবাস করে মায়ানমারে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তবে সব ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

প্রসঙ্গত, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের অন্তত ৯টি পয়েন্ট দিয়ে মায়ানমার থেকে আসছে নিষিদ্ধ ইয়াবা, বিয়ার, স্বর্ণ। পুলিশ-বিজিবির অভিযানে কিছু চালান আটক হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের চালানের বড় একটি অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। সীমান্তের প্রত্যেকটি পয়েন্টে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১ , ১১ আষাঢ় ১৪২৮ ১৩ জিলকদ ১৪৪২

ট্যাংক লরির ভেতরে গাঁজা, গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারে ইয়াবা

বাকী বিল্লাহ, ঢাকা ও শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

image

নাইক্ষ্যংছড়িতে আটক ট্যাংক লরি -সংবাদ

অভিনব কৌশলে রাজধানীতে মাদকের চালান ঢোকছে। মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। সর্বশেষ রাজধানীতে জ্বালানি বহনকারী ট্যাংক লরির ঢাকনা খুলে ভেতর থেকে গাঁজার বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। একই দিন একটি প্রাইভেটকার তল্লাশি করে খালি গ্যাস সিলিন্ডারের ভেতর থেকে ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে। গত বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) টিম এ দুইটি পৃথক অভিযান চালিয়েছে। ঘটনার সময় মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন ৫ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- রিগান খাঁন, জাকির হোসেন, খোকন মৃধা, জনি খান ও হৃদয় শিকদার। অভিযোগ রয়েছে, বান্দরবানের সীমান্তবর্র্তী নাইক্ষংছড়ি এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চোরাই পথে দেশে মাদক ঢুকছে।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ইফতেখারুল ইসলাম সংবাদকে জানান, গত বুধবার শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে জ্বালানি তেল বহনকারী একটি ট্যাংক লরি আটক করা হয়। ওই ট্যাংক লরি তল্লাশি করে ভেতর থেকে ৩৬ কেজি গাঁজাসহ রিগান, জাকির ও খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা বাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিক্রির জন্য গাঁজা ঢাকায় নিয়ে আসে।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে গাজীপুরে অভিনব কৌশলে প্রাইভেটকারযোগে ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে ডিবির টিম রাজধানীর রায়েরবাগের ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট স্থাপন করে গাড়ি তল্লাশি করছে। ওই সময় নম্বরবিহীন একটি প্রাইভেটকার আটক করে। ওই প্রাইভেটকারের থাকা জনি খান ও হৃদয় শিকদারকে সন্দেহ ভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে, প্রাইভেটকারের পিছনের গ্যাস সিলিন্ডারের ভেতর থেকে বিশেষ কায়দায় রাখা পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ২০ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

আমাদের বান্দরবান রিপোর্টার জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পরও থেমে নেই মাদকদ্রব্য পাচার। রোহিঙ্গাই মূলত এসব পাচারে জড়িত। তাদের মাধ্যমে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সীমান্তে পুলিশ-বিজিবের হাতে ইয়াবা এবং অস্ত্রসহ অনেক রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় মাদককারবারীদের আটক করা হয়।

পুলিশের অভিযানে গত ৬ মাসে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢোকার সময় প্রায় ৩ লাখ পিস ইয়াবা, সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণ, ৬ রাউন্ড গুলি এবং একটি দেশি এলজি উদ্ধার হয়। মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট বলে পরিচিত সীমান্ত সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকার। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দিয়ে অবাদে আসছে এসব ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য। স্থানীয় একটি মহলসহ রোহিঙ্গা পাচারকারী একটি সিন্ডিকেট দল রয়েছে এসব পাচার কাজে। এদিকে সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশ-মায়ানমারের মাঝে রয়েছে পাহাড় এবং কিছু কিছু এলাকা এখনো অরক্ষিত। যার কারণে রোহিঙ্গীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পয়ন্টে মায়ানমারে আসা-যাওয়া করেন। তারা রাতের বেলায় বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা চালান নিয়ে আবার ফিরে আসে। রোহিঙ্গারা বেপরোয়া চলাচল করার কারণে ইয়াবা, মাদক ও অপরাধ কর্মকা- বন্ধ হচ্ছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না হলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা যারা স্থানীয়, তাদের বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে।

জনপ্রতিনিধিরা আরও জানান, সীমান্ত এলাকাকে ইয়াবামুক্ত করা এলাকাবাসীর পরিকল্পনা থাকলে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না একমাত্র রোহিঙ্গার কারণে। তবে রোহিঙ্গাদের আনাগোনা বন্ধ করা যায় এবং ক্যাম্প থেকে বের হতে না দেয়া হয় তাহলে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা কোটিপতি হয়ে গেছেন তাদেরও একটি তালিকা করা করা গেলে দেখা যাবে কারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, গত ছয় মাসে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচারকালে পুলিশের অভিযানে প্রায় ৩ লাখ ইয়াবা, সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণ, ৬ রাউন্ড গুলি এবং একটি দেশি এলজি উদ্ধার করা হয়। পাহাড়ি এলাকা যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেক দুর্গম, যে কারণে আইশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে যেতে পারে না। তবে এখানে মাদক বিস্তারে অনেকটা ভূমিকা পালন করে রোহিঙ্গারা, যাদের এখনো অনেক আত্মীয়স্বজন বসবাস করে মায়ানমারে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তবে সব ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

প্রসঙ্গত, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের অন্তত ৯টি পয়েন্ট দিয়ে মায়ানমার থেকে আসছে নিষিদ্ধ ইয়াবা, বিয়ার, স্বর্ণ। পুলিশ-বিজিবির অভিযানে কিছু চালান আটক হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের চালানের বড় একটি অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। সীমান্তের প্রত্যেকটি পয়েন্টে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।