মূলধারায় ফেরাতে হবে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে

জহির চৌধুরী

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে (হিজরা) মূলধারায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যা প্রশংসনীয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোন প্রতিষ্ঠান যদি তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের অধিক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তবে ওই কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে কর রেয়াত হিসেবে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর একটি অংশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এ জনগোষ্ঠী অন্যান্য মানুষের চেয়ে আর্থসমাজিকভাবে পিছিয়ে আছে এবং তারা সমাজের মূলধারার বাইরে রয়েছে। কর্মক্ষম এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে।

দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই যে, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী অবহেলিত-অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে অবহেলিত-অধিকার বঞ্চিত রাখার কোনো যুক্তি নেই। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী মানব জাতিভুক্ত, রাষ্ট্রেরও নাগরিক। তৃতীয় লিঙ্গদের রাষ্ট্রের নারী-পুরুষ নাগরিকদের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজ যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছে তা অন্যায় ও অন্যায্য। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো নিজেদের দোষে বা ইচ্ছায় তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ইংরেজিতে হিজরার প্রতি শব্দ (ঊঁহঁপয) ইউনাক, যার অর্থ নপুংসক বা খোজা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ক্রোমোজমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মের পর লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, তারাই হিজরা। তৃতীয় লিঙ্গ হয়ে জন্মের ব্যাপারে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও নানা ব্যাখ্যা আছে। পূরাণে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘তৃতীয় প্রকৃতি’ হিসেবে।

সোজাসাপটা কথায় বলা যায় প্রকৃতির খেয়ালেই এরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে এসেছে। দুনিয়াতে হিজরা আর্বিভাবের সময় সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না হলেও, নৃতত্ত্ববিদরা মোটামুটি একমত, যে দিন থেকে মানবজাতির আবির্ভাব তার কয়েক বছর পর থেকেই তৃতীয় লিঙ্গ/ হিজরাদের আবির্ভাব। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আবির্ভাব কখন হয়েছে তা নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও সবাই একমত যে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোর জন্ম হয়েছে মানুষের গর্ভে, মানুষের ঘরে।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ায় সমাজ-পরিবার, রাষ্ট্র এদের প্রতি ঘৃণা-অবহেলা দেখানো, সমাজচ্যুত করে রাখা অবিচার অবশ্যই। সমাজ-রাষ্ট্র-পরিবার এদের বেঁচে থাকার অধিকার অগ্রাহ্য ও সমাজচ্যুত করে কার্যত মানবাধিকার ভুলণ্ঠিত করছে। রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবারে স্থান না হওয়ায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করতে হয়। রাস্তা-ঘাট, মহল্লার বাসা-বাড়িতে, দোকান-পাটে সন্ত্রাসীদের মতো চাঁদাবাজি করে, অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে জীবন বাঁচাতে হয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মানুষের অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করা না হলে তারাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সমাজ-রাষ্ট্রে অবদান রাখার নজিরও আছে। দিল্লির সুলতান আলাউদ্দীন খিলজির দুর্ধর্ষ সেনাপতি ছিলেন মালিক কাফুর। মালিক কাফুর ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের। সপ্তদশ শতাব্দীতে মোঘল দরবারে অনেক উচ্চ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে তৃতীয় লিঙ্গ/খোজা নিয়োগের নজির রয়েছে। আমাদের দেশেও দু-এক জায়গায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। ২০১০-১১ সালের দিকে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকার জেলাপ্রশাসকের অধীনস্থ এলএ শাখার অফিসে বহুবার যেতে হয়েছে। সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে পিয়ন পদে কর্মরত দেখেছি। এলএ শাখায় কর্মরতদের কাছ থেকে শুনেছি তার বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ নেই, কাজে-কর্মে সে যথেষ্ট আন্তরিক। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ পাকিস্তানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আসলাম খাকি দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে পাকিস্তানের মতো ধর্মীয় রক্ষণশীল রাষ্ট্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাকিস্তানের যে কোন নাগরিকের মতো সমান অধিকার নিশ্চিত করছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছেন; এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজনের মধ্যে জমিসহ কিছু ঘরের মালিকানা দলিল হস্তান্তরও করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি বিশ্বব্যাপীই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অবজ্ঞা-অবহেলা করা, অন্ত্যজন্মা-অচ্ছুৎ ভাবা অন্যায়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো কার্যত শারীরিক প্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের যেভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা হয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব দেখানো উচিত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কারণে অসহায় অবস্থায় রয়েছে। এদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে অনেকেই, এরাও নানা অনাচারে লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে পুর্নবাসিত এবং মানুষের মতো বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্র-সমাজের দায়িত্ব। শিশুকালে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হলে তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই বড় বড় পদে কাজের উপযুক্ত হবে, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। এতে দেশ উপকৃত হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না যে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আমাদের পরিবারেই জন্মেছে এবং প্রকৃতির খেয়ালে তৃতীয় লিঙ্গ হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা-অবহেলার, মূলধারার বাইরে রাখার মানসিকতা পরিবর্তন করা উচিত।

chowdhuryzahir@yahoo.com

শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১ , ১১ আষাঢ় ১৪২৮ ১৩ জিলকদ ১৪৪২

মূলধারায় ফেরাতে হবে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে

জহির চৌধুরী

image

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে (হিজরা) মূলধারায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যা প্রশংসনীয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোন প্রতিষ্ঠান যদি তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের অধিক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তবে ওই কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে কর রেয়াত হিসেবে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর একটি অংশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এ জনগোষ্ঠী অন্যান্য মানুষের চেয়ে আর্থসমাজিকভাবে পিছিয়ে আছে এবং তারা সমাজের মূলধারার বাইরে রয়েছে। কর্মক্ষম এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে।

দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই যে, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী অবহেলিত-অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে অবহেলিত-অধিকার বঞ্চিত রাখার কোনো যুক্তি নেই। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী মানব জাতিভুক্ত, রাষ্ট্রেরও নাগরিক। তৃতীয় লিঙ্গদের রাষ্ট্রের নারী-পুরুষ নাগরিকদের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজ যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছে তা অন্যায় ও অন্যায্য। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো নিজেদের দোষে বা ইচ্ছায় তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ইংরেজিতে হিজরার প্রতি শব্দ (ঊঁহঁপয) ইউনাক, যার অর্থ নপুংসক বা খোজা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ক্রোমোজমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মের পর লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, তারাই হিজরা। তৃতীয় লিঙ্গ হয়ে জন্মের ব্যাপারে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও নানা ব্যাখ্যা আছে। পূরাণে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘তৃতীয় প্রকৃতি’ হিসেবে।

সোজাসাপটা কথায় বলা যায় প্রকৃতির খেয়ালেই এরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে এসেছে। দুনিয়াতে হিজরা আর্বিভাবের সময় সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না হলেও, নৃতত্ত্ববিদরা মোটামুটি একমত, যে দিন থেকে মানবজাতির আবির্ভাব তার কয়েক বছর পর থেকেই তৃতীয় লিঙ্গ/ হিজরাদের আবির্ভাব। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আবির্ভাব কখন হয়েছে তা নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও সবাই একমত যে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোর জন্ম হয়েছে মানুষের গর্ভে, মানুষের ঘরে।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ায় সমাজ-পরিবার, রাষ্ট্র এদের প্রতি ঘৃণা-অবহেলা দেখানো, সমাজচ্যুত করে রাখা অবিচার অবশ্যই। সমাজ-রাষ্ট্র-পরিবার এদের বেঁচে থাকার অধিকার অগ্রাহ্য ও সমাজচ্যুত করে কার্যত মানবাধিকার ভুলণ্ঠিত করছে। রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবারে স্থান না হওয়ায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করতে হয়। রাস্তা-ঘাট, মহল্লার বাসা-বাড়িতে, দোকান-পাটে সন্ত্রাসীদের মতো চাঁদাবাজি করে, অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে জীবন বাঁচাতে হয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মানুষের অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করা না হলে তারাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সমাজ-রাষ্ট্রে অবদান রাখার নজিরও আছে। দিল্লির সুলতান আলাউদ্দীন খিলজির দুর্ধর্ষ সেনাপতি ছিলেন মালিক কাফুর। মালিক কাফুর ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের। সপ্তদশ শতাব্দীতে মোঘল দরবারে অনেক উচ্চ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে তৃতীয় লিঙ্গ/খোজা নিয়োগের নজির রয়েছে। আমাদের দেশেও দু-এক জায়গায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। ২০১০-১১ সালের দিকে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকার জেলাপ্রশাসকের অধীনস্থ এলএ শাখার অফিসে বহুবার যেতে হয়েছে। সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে পিয়ন পদে কর্মরত দেখেছি। এলএ শাখায় কর্মরতদের কাছ থেকে শুনেছি তার বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ নেই, কাজে-কর্মে সে যথেষ্ট আন্তরিক। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ পাকিস্তানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আসলাম খাকি দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে পাকিস্তানের মতো ধর্মীয় রক্ষণশীল রাষ্ট্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাকিস্তানের যে কোন নাগরিকের মতো সমান অধিকার নিশ্চিত করছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছেন; এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজনের মধ্যে জমিসহ কিছু ঘরের মালিকানা দলিল হস্তান্তরও করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি বিশ্বব্যাপীই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অবজ্ঞা-অবহেলা করা, অন্ত্যজন্মা-অচ্ছুৎ ভাবা অন্যায়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো কার্যত শারীরিক প্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের যেভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা হয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব দেখানো উচিত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কারণে অসহায় অবস্থায় রয়েছে। এদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে অনেকেই, এরাও নানা অনাচারে লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে পুর্নবাসিত এবং মানুষের মতো বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্র-সমাজের দায়িত্ব। শিশুকালে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হলে তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই বড় বড় পদে কাজের উপযুক্ত হবে, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। এতে দেশ উপকৃত হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না যে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আমাদের পরিবারেই জন্মেছে এবং প্রকৃতির খেয়ালে তৃতীয় লিঙ্গ হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা-অবহেলার, মূলধারার বাইরে রাখার মানসিকতা পরিবর্তন করা উচিত।

chowdhuryzahir@yahoo.com