কাল থেকে সীমিত, ১ জুলাই থেকে ‘কঠোর লকডাউন’

হেঁটে, হালকা যানবাহনে ঘাটে ঘাটে গাদাগাদি

এবার ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ

‘লকডাউন’ ঘোষণায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামের দিকে ছুটছেন বহু মানুষ। গতকাল ফেরিঘাটসহ ঢাকা থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন পথে গাদাগাদি করে ছোট যানবাহনে গ্রামের যেতে দেখা গেছে তাদের। যারা গ্রামের যাচ্ছেন এদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। যারা দৈনন্দিন আয়-রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। তারা বলছেন, লকডাউনে তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। আয় বন্ধ হলে তারা খেতেও পারবেন না। এই আশঙ্কায় তারা ঢাকা ছাড়ছেন। সে কারণে বাধ্য হয়েই বাড়িতে যাচ্ছেন। গ্রামে গেলেও যে তারা ভালো থাকবেন তেমন নয়। কেউ কেউ জানিয়েছেন, ঈদের সময় এমনেতেই বাড়িতে যেতাম। যেহেতু লকডাউন ঘোষণা হয়েছে তাই ঈদে গাড়ি চালু হয় কিনা সন্দেহ। তাই আগে ভাগেই গ্রামে চলে যাচ্ছেন তারা। ঈদের পরে ঢাকায় ফিরবেন। এদের বেশিরভাগই স্বল্প আয়ের মানুষ।

এদিকে আগামীকাল থেকে সীমিত পরিসরে ‘লকডাউন’ শুরু হবে। এই সময় থেকে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সীমিত পরিসরে কিছু প্রতিষ্ঠান বা ক্ষেত্র খোলা থাকবে। আর ৭ দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হবে ১ জুলাই থেকে। তবে শিল্প-কারখানা লকডাউনের আওতার বাইরে থাকতে পারে। এই সময়ে রপ্তানিমুখী কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে ব্যাংকিং সেবা খোলা রাখা হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল যারা ঢাকা ছাড়ছিলেন, তাদেরই একজন রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন। আচিরা ফেরিঘাটে তার সঙ্গে কথা হয় আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধির। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। লকডাউনে তার গ্রামে যাওয়া ছাড়া আর উপাই নেই বলে জানান তিনি। দেলোয়ার বলেন, ‘লকডাউনে ঢাকায় থাকলে না খেয়ে মরে যাব। এজন্য বাড়ি যাচ্ছি।’ একই কথা বললেন দিনমজুর আনোয়ার, সুজন, সাত্তারসহ আরও অনেকেই। এরা সবাই ঢাকা ছোট-খাটো কাজ করেন।

ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন রহিম আলী। লকডাউনের ঘোষণায় তারও কাজ বন্ধ। তাই তিনি গ্রামের বাড়ি পাবনা যাচ্ছেন। রহিম সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউনে না খেয়ে থাকার চেয়ে করোনায় মরা ভালো। পেটে খিদা সহ্য হয় না। কাজের সন্ধানে বাধ্য হয়েই বাড়ির বাইরে এসেছি। বাইরে এসে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছি। এখন না পারছি বাড়ি যেতে না পারছি কাজে ফিরতে। এর মধ্যে আবার লকডাউনের ঘোষণা। আমাদের মতো গরির মানুষের দেখার কেউ নেই।’

মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে রুহুল আমিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গতবার ‘লকডাউনে’ ঢাকাতেই আটকে পড়েছিলাম। পরে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তাই এবার গ্রামে চলে যাচ্ছি। অন্তত কাজ বা খাদ্যের সমস্যা তো হবে না আশা করি। আর নিম্নআয়ের মানুষদের পরিবারই তো সবকিছু। তাই গ্রামে পরিবারের কাছে ফিরছি।’

পরিবার নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে বের হওয়া আশরাফ নামে অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘এবার ইচ্ছে ছিল গ্রামে ঈদ করব। তবে ‘লকডাউনে’ তো বাস বন্ধ। খুলবে কিনা তারও ঠিক নেই। করোনার মধ্যে অফিসেও ঝামেলা। তাই সবকিছু পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আগেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে গ্রামে ফিরছি। যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশ, হেঁটেই যাত্রা বলা যায় এক রকম। এদিকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস চালকরাও ভাড়া হাঁকছেন দ্বিগুণ-তিনগুণ।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার আশপাশে ৭ জেলায় গত ২২ জুন থেকে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। তাই হেঁটে ও ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে গ্রামমুখী মানুষদের। অনেককে আবার বেশি ভাড়ায় প্রাইভেকার ও মাইক্রোবাস বাস রিজার্ড করে বাড়িতে যেতে দেখা গেছে। যাত্রাপথে দুই-তিন গুণ ভাড়া ও হয়রানিসহ নানা দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এ সময় করোনার ভয়ে দুই-এক জন মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

লকডাউন শুরুর আগেই এভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই হাজার হাজার মানুষ ফেরিতে গাদাগাদি গ্রামে যাওয়ার ফলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাওয়া আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। লকডাউন দেয়ার আগের এসব বিষয় বিবেচনা করেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউনের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে, জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা করা। যাতে সংক্রমণ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে না পড়ে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু প্রতিবার লকডাউন ঘোষণা হলেও এভাবে মানুষ দলবেধে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়। মানুষের ভিড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে ভিড় হবে সেখানেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে। লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে না। তাই লকডাউন ঘোষণার আগেই এই বিষয়গুলো বিবেচনা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তা না হলে লকডাউনে তেমন ফল হবে না।’

প্রতিনিধি, শিবালয় মানিকগঞ্জ : সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের কারণে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে গত শুক্রবারের চেয়ে শনিবার যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। গ্রামের যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা থেকে ভেঙে ভেঙে ফেরিঘাটে আসেন তারা। পাটুরিয়া ঘাটে এসে নদী পার হতে না পেরে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। দুই ঘাটে লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলেও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বেশি ভাড়ায় নদী পার হতে দেখা গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা অসহায়ের মতো গন্তব্যে ফিরছে। এতে যাত্রী হয়রানি আরও বেড়েছে। ৫০ টাকার ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া মোটরসাইকেল প্রাইভেটকার মাইক্রোবাস ড্রাইভাররা ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি দিয়ে ঢাকার যাত্রী পরিবহন করছে।

প্রতিনিধি মুন্সীগঞ্জ : করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণার দ্বিতীয় দিনেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফেরিতে পারাপার হচ্ছে হাজারও মানুষ। ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি যানবাহন থেকে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। তবে কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। আবার অনেকে মুখে মাস্কও পরেননি। ঢাকামুখী যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেশি। শুধুমাত্র পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন পারাপারের কথা থাকলেও ফেরিতে ব্যক্তিগত গাড়িও পারাপার হতে দেখা যায়। এদিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি পয়েন্টে ও শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশ মুখে রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। চেকপোস্টে যাত্রী চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পুলিশ।

প্রতিনিধি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : কঠোর লকডাউন ঘোষণায় গতকাল সকাল থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নামে। কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে মানুষ গ্রামের উদ্দেশে ছুটেছেন। গণপ?রিহন বন্ধ থাকায় গন্তব্যে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বেশি ভাড়ায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাহিন্দ্র, অটোরিকশাসহ বি?ভিন্ন যানবাহ?নে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা থেকে যশোরের উদ্দেশে আসা আশরাফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সোমবার থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তা ধারণা করতে পারছি না, তাই আগে থেকেই বাড়ি ফিরছি। গাবতলী থেকে ৫শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে করে পাটুরিয়া এসে ফেরিতে ঘাটে এসেছি। এখান থেকে ১ হাজার টাকা মোটরসাইকেল ভাড়া করেছি বাড়ি যাওয়ার জন্য।’

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২

কাল থেকে সীমিত, ১ জুলাই থেকে ‘কঠোর লকডাউন’

হেঁটে, হালকা যানবাহনে ঘাটে ঘাটে গাদাগাদি

এবার ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

এতদিন ঢাকামুখী ছিল মানুষ, কাল থেকে লকডাউন তাই ফের ঢাকা ছাড়ছে দলে দলে। গতকাল আমিনবাজার থেকে তোলা ছবি -সংবাদ

‘লকডাউন’ ঘোষণায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামের দিকে ছুটছেন বহু মানুষ। গতকাল ফেরিঘাটসহ ঢাকা থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন পথে গাদাগাদি করে ছোট যানবাহনে গ্রামের যেতে দেখা গেছে তাদের। যারা গ্রামের যাচ্ছেন এদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। যারা দৈনন্দিন আয়-রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। তারা বলছেন, লকডাউনে তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। আয় বন্ধ হলে তারা খেতেও পারবেন না। এই আশঙ্কায় তারা ঢাকা ছাড়ছেন। সে কারণে বাধ্য হয়েই বাড়িতে যাচ্ছেন। গ্রামে গেলেও যে তারা ভালো থাকবেন তেমন নয়। কেউ কেউ জানিয়েছেন, ঈদের সময় এমনেতেই বাড়িতে যেতাম। যেহেতু লকডাউন ঘোষণা হয়েছে তাই ঈদে গাড়ি চালু হয় কিনা সন্দেহ। তাই আগে ভাগেই গ্রামে চলে যাচ্ছেন তারা। ঈদের পরে ঢাকায় ফিরবেন। এদের বেশিরভাগই স্বল্প আয়ের মানুষ।

এদিকে আগামীকাল থেকে সীমিত পরিসরে ‘লকডাউন’ শুরু হবে। এই সময় থেকে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সীমিত পরিসরে কিছু প্রতিষ্ঠান বা ক্ষেত্র খোলা থাকবে। আর ৭ দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হবে ১ জুলাই থেকে। তবে শিল্প-কারখানা লকডাউনের আওতার বাইরে থাকতে পারে। এই সময়ে রপ্তানিমুখী কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে ব্যাংকিং সেবা খোলা রাখা হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল যারা ঢাকা ছাড়ছিলেন, তাদেরই একজন রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন। আচিরা ফেরিঘাটে তার সঙ্গে কথা হয় আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধির। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। লকডাউনে তার গ্রামে যাওয়া ছাড়া আর উপাই নেই বলে জানান তিনি। দেলোয়ার বলেন, ‘লকডাউনে ঢাকায় থাকলে না খেয়ে মরে যাব। এজন্য বাড়ি যাচ্ছি।’ একই কথা বললেন দিনমজুর আনোয়ার, সুজন, সাত্তারসহ আরও অনেকেই। এরা সবাই ঢাকা ছোট-খাটো কাজ করেন।

ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন রহিম আলী। লকডাউনের ঘোষণায় তারও কাজ বন্ধ। তাই তিনি গ্রামের বাড়ি পাবনা যাচ্ছেন। রহিম সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউনে না খেয়ে থাকার চেয়ে করোনায় মরা ভালো। পেটে খিদা সহ্য হয় না। কাজের সন্ধানে বাধ্য হয়েই বাড়ির বাইরে এসেছি। বাইরে এসে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছি। এখন না পারছি বাড়ি যেতে না পারছি কাজে ফিরতে। এর মধ্যে আবার লকডাউনের ঘোষণা। আমাদের মতো গরির মানুষের দেখার কেউ নেই।’

মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে রুহুল আমিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গতবার ‘লকডাউনে’ ঢাকাতেই আটকে পড়েছিলাম। পরে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তাই এবার গ্রামে চলে যাচ্ছি। অন্তত কাজ বা খাদ্যের সমস্যা তো হবে না আশা করি। আর নিম্নআয়ের মানুষদের পরিবারই তো সবকিছু। তাই গ্রামে পরিবারের কাছে ফিরছি।’

পরিবার নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে বের হওয়া আশরাফ নামে অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘এবার ইচ্ছে ছিল গ্রামে ঈদ করব। তবে ‘লকডাউনে’ তো বাস বন্ধ। খুলবে কিনা তারও ঠিক নেই। করোনার মধ্যে অফিসেও ঝামেলা। তাই সবকিছু পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আগেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে গ্রামে ফিরছি। যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশ, হেঁটেই যাত্রা বলা যায় এক রকম। এদিকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস চালকরাও ভাড়া হাঁকছেন দ্বিগুণ-তিনগুণ।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার আশপাশে ৭ জেলায় গত ২২ জুন থেকে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। তাই হেঁটে ও ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে গ্রামমুখী মানুষদের। অনেককে আবার বেশি ভাড়ায় প্রাইভেকার ও মাইক্রোবাস বাস রিজার্ড করে বাড়িতে যেতে দেখা গেছে। যাত্রাপথে দুই-তিন গুণ ভাড়া ও হয়রানিসহ নানা দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এ সময় করোনার ভয়ে দুই-এক জন মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

লকডাউন শুরুর আগেই এভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই হাজার হাজার মানুষ ফেরিতে গাদাগাদি গ্রামে যাওয়ার ফলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাওয়া আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। লকডাউন দেয়ার আগের এসব বিষয় বিবেচনা করেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউনের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে, জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা করা। যাতে সংক্রমণ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে না পড়ে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু প্রতিবার লকডাউন ঘোষণা হলেও এভাবে মানুষ দলবেধে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়। মানুষের ভিড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে ভিড় হবে সেখানেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে। লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে না। তাই লকডাউন ঘোষণার আগেই এই বিষয়গুলো বিবেচনা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তা না হলে লকডাউনে তেমন ফল হবে না।’

প্রতিনিধি, শিবালয় মানিকগঞ্জ : সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের কারণে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে গত শুক্রবারের চেয়ে শনিবার যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। গ্রামের যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা থেকে ভেঙে ভেঙে ফেরিঘাটে আসেন তারা। পাটুরিয়া ঘাটে এসে নদী পার হতে না পেরে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। দুই ঘাটে লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলেও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বেশি ভাড়ায় নদী পার হতে দেখা গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা অসহায়ের মতো গন্তব্যে ফিরছে। এতে যাত্রী হয়রানি আরও বেড়েছে। ৫০ টাকার ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া মোটরসাইকেল প্রাইভেটকার মাইক্রোবাস ড্রাইভাররা ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি দিয়ে ঢাকার যাত্রী পরিবহন করছে।

প্রতিনিধি মুন্সীগঞ্জ : করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণার দ্বিতীয় দিনেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফেরিতে পারাপার হচ্ছে হাজারও মানুষ। ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি যানবাহন থেকে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। তবে কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। আবার অনেকে মুখে মাস্কও পরেননি। ঢাকামুখী যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেশি। শুধুমাত্র পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন পারাপারের কথা থাকলেও ফেরিতে ব্যক্তিগত গাড়িও পারাপার হতে দেখা যায়। এদিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি পয়েন্টে ও শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশ মুখে রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। চেকপোস্টে যাত্রী চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পুলিশ।

প্রতিনিধি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : কঠোর লকডাউন ঘোষণায় গতকাল সকাল থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নামে। কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে মানুষ গ্রামের উদ্দেশে ছুটেছেন। গণপ?রিহন বন্ধ থাকায় গন্তব্যে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বেশি ভাড়ায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাহিন্দ্র, অটোরিকশাসহ বি?ভিন্ন যানবাহ?নে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা থেকে যশোরের উদ্দেশে আসা আশরাফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সোমবার থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তা ধারণা করতে পারছি না, তাই আগে থেকেই বাড়ি ফিরছি। গাবতলী থেকে ৫শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে করে পাটুরিয়া এসে ফেরিতে ঘাটে এসেছি। এখান থেকে ১ হাজার টাকা মোটরসাইকেল ভাড়া করেছি বাড়ি যাওয়ার জন্য।’