নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত কমেছে

এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ৪৯ শতাংশ, মৃত্যু ৪৮.৬১ শতাংশ

এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায়। পরীক্ষা কম হওয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তও কমেছে। তবে পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত বেড়েছে ৪৯ শতাংশ; এ সময়ে মৃত্যু ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনায় আগের দিন যেখানে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল, গতকাল তা কমে ৭৭ জনে নেমেছে। এর মধ্যদিয়ে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গেল।

একদিনে পরীক্ষা, শনাক্ত ও মৃত্যু কমলেও সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ ‘পিকে’ ওঠার পর্যায়ে রয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গতকাল সংক্রমণের হার ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ। আগের দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। দেশে গড়ে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের ওপরে ওঠাকে বিপদজনক বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

৭ দিনের মধ্যে সবচেয়ে

কম পরীক্ষা

গত একদিনে শনাক্ত ৪ হাজার ৩৩৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৮৩ হাজার ১৩৮ জনে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫৫৪টি পরীক্ষাগারে (ল্যাব) ১৯ হাজার ৮৪৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৮১টি। এ হিসেবে মোট নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।

এর আগে ২৫ জুন ২৭ হাজার ৬৫৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ দশমিক ২২ শতাংশের করোনা শনাক্ত, ২৪ জুন ৩০ হাজার ৩৯১টি নমুনা পরীক্ষা ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ সংক্রমণ শনাক্ত, ২৩ জুন ২৮ হাজার ২৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ২২ জুন ২৫ হাজার ২৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ২১ জুন ২৪ হাজার ৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ২০ জুন ২২ হাজার ২৩২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। উপসর্গ থাকলেও অনেকে ছুটির দিনে নমুনা দিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে চান না। আবার স্বাস্থ্যকর্মীদের কেউ কেউ ছুটির দিনে নমুনা সংগ্রহে আগ্রহ দেখায় না। এ কারণে অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কম হয়।

এক সপ্তাহে সংক্রমণ

ও মৃত্যু বেড়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘২৫তম এপিডেমিওলজিকাল সপ্তাহ ২০২১’

গত ২০ থেকে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে এক লাখ ৭৬ হাজার ৮৭৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ হাজার ১১১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই এক সপ্তাহে ৫৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

২৪তম সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, শনাক্ত ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, সুস্থতা ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং মৃত্যু ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে।

২৪তম সপ্তাহে ২৩ হাজার ৫৪১ জনের করোনা শনাক্ত এবং মৃত্যু হয়েছিল ৩৯৫ জনের।

১৫ দিনে হাজারের বেশি মৃত্যু

একদিনে ৭৭ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে গত ১৫ দিনে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হলো-করোনা সংক্রমণে। গত ১১ জুন করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর গতকাল এই সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৩ জনে পৌঁছে।

গত মার্চে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এরপর এপ্রিলে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। ওই সময় দশ দিনেই এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল করোনায়।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

প্রথম মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন এক হাজার ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা।

এরপর ৫ জুলাই দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ আগস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার ছাড়ায় প্রাণহানির সংখ্যা।

এরপর সংক্রমণ কমতে থাকে। মৃত্যুও কমে আসে। গত বছরের ৪ নভেম্বর মৃত্যু ছয় হাজার, ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার, এই বছরের ২৩ জানুয়ারি আট হাজার এবং ৩১ মার্চ ৯ হাজার ছাড়ায় করোনায় মৃত্যু।

পরবর্তীতে গত ১৫ এপ্রিল মৃত্যু ১০ হাজার, ২৫ এপ্রিল ১১ হাজার, ১১ মে ১২ হাজার এবং গত ১১ জুন ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায় করোনা মহামারীতে মৃত্যুর সংখ্যা।

গত ১৯ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই সময় টানা চারদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশ’র ওপরে।

সংক্রমণ হারে শীর্ষে খুলনা বিভাগ

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গত একদিনে দুই হাজার ২২টি নমুনা পরীক্ষায় ৮৪৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৪১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এই সময়ে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ৯ হাজার ৫৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৯১২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ বিভাগে সংক্রমণের হার ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় একদিনে সাত হাজার ৭৪৬টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৩২৮ জনের দেহে করোনা পাওয়া গেছে। পরীক্ষা বিবেচনায় ঢাকায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি জেলায় একদিনে ৫৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৮ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে; শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় দুই হাজার ৭১১টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৫৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় একদিনে দুই হাজার ৩৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় এক হাজার ১৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭৫ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ০১ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ২৭০টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ৭৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় ১২২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পেয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

১৪ হাজার ছাড়াল মৃত্যু

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৫৩ জনে।

গত একদিনে মৃত্যু ৭৭ জনের মধ্যে পুরুষ ৪৮ জন ও নারী ২৯ জন। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ২৯৫ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন আট লাখ ৮৫৪ জন।

একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন, রাজশাহী বিভাগে নয়জন, খুলনা বিভাগে ১৯ জন, সিলেট বিভাগে চারজন, রংপুর বিভাগে চারজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজন বাসিন্দা ছিলেন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৭ জনের বয়স ছিল ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৩ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, পাঁচজনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২

নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত কমেছে

এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ৪৯ শতাংশ, মৃত্যু ৪৮.৬১ শতাংশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায়। পরীক্ষা কম হওয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তও কমেছে। তবে পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত বেড়েছে ৪৯ শতাংশ; এ সময়ে মৃত্যু ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনায় আগের দিন যেখানে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল, গতকাল তা কমে ৭৭ জনে নেমেছে। এর মধ্যদিয়ে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গেল।

একদিনে পরীক্ষা, শনাক্ত ও মৃত্যু কমলেও সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ ‘পিকে’ ওঠার পর্যায়ে রয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গতকাল সংক্রমণের হার ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ। আগের দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। দেশে গড়ে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের ওপরে ওঠাকে বিপদজনক বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

৭ দিনের মধ্যে সবচেয়ে

কম পরীক্ষা

গত একদিনে শনাক্ত ৪ হাজার ৩৩৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৮৩ হাজার ১৩৮ জনে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫৫৪টি পরীক্ষাগারে (ল্যাব) ১৯ হাজার ৮৪৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৮১টি। এ হিসেবে মোট নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।

এর আগে ২৫ জুন ২৭ হাজার ৬৫৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ দশমিক ২২ শতাংশের করোনা শনাক্ত, ২৪ জুন ৩০ হাজার ৩৯১টি নমুনা পরীক্ষা ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ সংক্রমণ শনাক্ত, ২৩ জুন ২৮ হাজার ২৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ২২ জুন ২৫ হাজার ২৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ২১ জুন ২৪ হাজার ৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ২০ জুন ২২ হাজার ২৩২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।

গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। উপসর্গ থাকলেও অনেকে ছুটির দিনে নমুনা দিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে চান না। আবার স্বাস্থ্যকর্মীদের কেউ কেউ ছুটির দিনে নমুনা সংগ্রহে আগ্রহ দেখায় না। এ কারণে অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কম হয়।

এক সপ্তাহে সংক্রমণ

ও মৃত্যু বেড়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘২৫তম এপিডেমিওলজিকাল সপ্তাহ ২০২১’

গত ২০ থেকে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে এক লাখ ৭৬ হাজার ৮৭৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ হাজার ১১১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই এক সপ্তাহে ৫৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

২৪তম সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, শনাক্ত ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, সুস্থতা ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং মৃত্যু ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে।

২৪তম সপ্তাহে ২৩ হাজার ৫৪১ জনের করোনা শনাক্ত এবং মৃত্যু হয়েছিল ৩৯৫ জনের।

১৫ দিনে হাজারের বেশি মৃত্যু

একদিনে ৭৭ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে গত ১৫ দিনে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হলো-করোনা সংক্রমণে। গত ১১ জুন করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর গতকাল এই সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৩ জনে পৌঁছে।

গত মার্চে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এরপর এপ্রিলে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। ওই সময় দশ দিনেই এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল করোনায়।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

প্রথম মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন এক হাজার ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা।

এরপর ৫ জুলাই দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ আগস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার ছাড়ায় প্রাণহানির সংখ্যা।

এরপর সংক্রমণ কমতে থাকে। মৃত্যুও কমে আসে। গত বছরের ৪ নভেম্বর মৃত্যু ছয় হাজার, ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার, এই বছরের ২৩ জানুয়ারি আট হাজার এবং ৩১ মার্চ ৯ হাজার ছাড়ায় করোনায় মৃত্যু।

পরবর্তীতে গত ১৫ এপ্রিল মৃত্যু ১০ হাজার, ২৫ এপ্রিল ১১ হাজার, ১১ মে ১২ হাজার এবং গত ১১ জুন ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায় করোনা মহামারীতে মৃত্যুর সংখ্যা।

গত ১৯ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই সময় টানা চারদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশ’র ওপরে।

সংক্রমণ হারে শীর্ষে খুলনা বিভাগ

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গত একদিনে দুই হাজার ২২টি নমুনা পরীক্ষায় ৮৪৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৪১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এই সময়ে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ৯ হাজার ৫৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৯১২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ বিভাগে সংক্রমণের হার ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় একদিনে সাত হাজার ৭৪৬টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৩২৮ জনের দেহে করোনা পাওয়া গেছে। পরীক্ষা বিবেচনায় ঢাকায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি জেলায় একদিনে ৫৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৮ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে; শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় দুই হাজার ৭১১টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৫৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় একদিনে দুই হাজার ৩৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় এক হাজার ১৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭৫ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ০১ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ২৭০টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ৭৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় ১২২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পেয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

১৪ হাজার ছাড়াল মৃত্যু

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৫৩ জনে।

গত একদিনে মৃত্যু ৭৭ জনের মধ্যে পুরুষ ৪৮ জন ও নারী ২৯ জন। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ২৯৫ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন আট লাখ ৮৫৪ জন।

একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন, রাজশাহী বিভাগে নয়জন, খুলনা বিভাগে ১৯ জন, সিলেট বিভাগে চারজন, রংপুর বিভাগে চারজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজন বাসিন্দা ছিলেন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৭ জনের বয়স ছিল ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৩ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, পাঁচজনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।