কিশোর বিগ বস গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা দলবদ্ধ হয়ে স্কুল-কলেজে গিয়ে র্যাগিং, ইভটিজিং, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এলাকায় উৎপাদ করছে। রাম দা, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে এক গ্যাংয়ের সদস্যরা অন্য গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে আধিপত্য নিয়ে মারাপিট করছে। তাদের উৎপাতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ।
র্যাবের গোয়েন্দা অনুসন্ধ্যানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিগ বস গ্যাং, ডেঞ্জার সেভেন গ্যাং, কাটার গ্যাং, হৃদয় গ্যাং, নন স্টপ ড্যান্স গ্যাং সম্পর্কে র্যাব-১ টিম তথ্য উদঘাটন করেছে।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা মাদক সেবন, ছিনতাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত।
গতকাল সকালে র্যাব-১ সদস্যরা জানান, উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছুরি, চাকু, চাপাতি বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্রসহ ঘোরাফেরা করছিল। তারা বড় ধরনের অপরাধ করার পরিকল্পনা নেয়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কিশোর গ্যাং বিগ বস গ্রুপের সদস্য বাহাউদ্দিন হাসান শাওন, মো. শাকিল, রিফাত হোসেন আবদুল্লা আল মামুন, সাইফুল ইসলাম রিফাত, মো. রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছ থেকে একটি রাম দা, একটি চাইনিজ কুড়াল, ১টি ছোরা ও ৪টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে। এ গ্যাংয়ে জড়িত পলাতক অন্যদের ধরনে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। উত্তরা ও টঙ্গী মিলে ১০ থেকে ১২টি গ্যাং এখন তৎপর রয়েছে। প্রতিটি গ্যাংয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য রয়েছে। এ সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ৪শ’ হবে।
ঢাকা শহরে অর্ধশত কিশোর গ্যাং রয়েছে। গত দেড় মাসে কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য আটক করা হয়েছে। দেশজুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ধরপাকড় অভিযানের কারণে এখন কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকেই আত্মগোপনে গেছে। তবে অভিযান চলছে।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে ফোনে জানান, দেশজুড়ে অভিযানের কারণে কিশোর গ্যাং এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ধরনের কার্যক্রমে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। র্যাব ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অভিযান অব্যাহত আছে। এতে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে র্যাব সদস্যরা সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ডন নিরব ও লন্ডন বাপ্পিসহ কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ রয়েছে, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণক ও গডফাদাররা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এলাকাভিত্তিক গডফাদারদের গ্রেপ্তার করছে কিশোর গ্যাংয়ের অপকর্মের আরও নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে আসবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
পুলিশের একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ সংবাদকে ফোনে জানান, সব কিছুর পেছনে রাজনৈতিক বড়ভাই আছে। বড় ভাইরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের লালন-পালন করছে। নিয়মিত টাকা নিয়ে তাদের দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ নানা কাজে খাটায়। এজন্য তারা বড় ভাইয়ের হয়ে কাজ করে। বড়ভাই গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে মতামত দেন।
রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
কিশোর বিগ বস গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা দলবদ্ধ হয়ে স্কুল-কলেজে গিয়ে র্যাগিং, ইভটিজিং, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এলাকায় উৎপাদ করছে। রাম দা, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে এক গ্যাংয়ের সদস্যরা অন্য গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে আধিপত্য নিয়ে মারাপিট করছে। তাদের উৎপাতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ।
র্যাবের গোয়েন্দা অনুসন্ধ্যানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিগ বস গ্যাং, ডেঞ্জার সেভেন গ্যাং, কাটার গ্যাং, হৃদয় গ্যাং, নন স্টপ ড্যান্স গ্যাং সম্পর্কে র্যাব-১ টিম তথ্য উদঘাটন করেছে।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা মাদক সেবন, ছিনতাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত।
গতকাল সকালে র্যাব-১ সদস্যরা জানান, উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছুরি, চাকু, চাপাতি বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্রসহ ঘোরাফেরা করছিল। তারা বড় ধরনের অপরাধ করার পরিকল্পনা নেয়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কিশোর গ্যাং বিগ বস গ্রুপের সদস্য বাহাউদ্দিন হাসান শাওন, মো. শাকিল, রিফাত হোসেন আবদুল্লা আল মামুন, সাইফুল ইসলাম রিফাত, মো. রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছ থেকে একটি রাম দা, একটি চাইনিজ কুড়াল, ১টি ছোরা ও ৪টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে। এ গ্যাংয়ে জড়িত পলাতক অন্যদের ধরনে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। উত্তরা ও টঙ্গী মিলে ১০ থেকে ১২টি গ্যাং এখন তৎপর রয়েছে। প্রতিটি গ্যাংয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য রয়েছে। এ সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ৪শ’ হবে।
ঢাকা শহরে অর্ধশত কিশোর গ্যাং রয়েছে। গত দেড় মাসে কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য আটক করা হয়েছে। দেশজুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ধরপাকড় অভিযানের কারণে এখন কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকেই আত্মগোপনে গেছে। তবে অভিযান চলছে।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে ফোনে জানান, দেশজুড়ে অভিযানের কারণে কিশোর গ্যাং এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ধরনের কার্যক্রমে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। র্যাব ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অভিযান অব্যাহত আছে। এতে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে র্যাব সদস্যরা সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ডন নিরব ও লন্ডন বাপ্পিসহ কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ রয়েছে, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণক ও গডফাদাররা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এলাকাভিত্তিক গডফাদারদের গ্রেপ্তার করছে কিশোর গ্যাংয়ের অপকর্মের আরও নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে আসবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
পুলিশের একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ সংবাদকে ফোনে জানান, সব কিছুর পেছনে রাজনৈতিক বড়ভাই আছে। বড় ভাইরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের লালন-পালন করছে। নিয়মিত টাকা নিয়ে তাদের দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ নানা কাজে খাটায়। এজন্য তারা বড় ভাইয়ের হয়ে কাজ করে। বড়ভাই গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে মতামত দেন।