নির্যাতিত নারীর মামলা না নেয়ায় ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ

রংপুরের তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীর অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো তাকে চরিত্রহীনা বলে গালাগাল এবং সংসার করতে হলে স্বামীর হাতে একটু আধটু মার খেতে হয় বলে ফতোয়া দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানার ওসির বিচার দাবি করে গতকাল রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি এবং রংপুরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে বিচার দাবি করেছেন নির্যাতিতা নারী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদ বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার অভিযোগ করেছেন ডিআইজি ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে। তবে ওই মহিলা তার কাছে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগে জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলার পুর্ব কুর্শা দোলাপাড়া গ্রামের জিতেন্দ্র নাথের মেয়ে শিতা রানীর সঙ্গে সয়ার হাজির হাট এলাকার অধির চন্দ্রের ছেলে মিন্টু রায়ের দশ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের তৃষা মনি নামে ৫ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শিতা রানী অভিযোগ করেন, তার স্বামী মিন্টু রায় অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত, প্রায়ই সে গভীর রাতে বাসায় আসে। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করত স্বামী। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী মিন্টু রায় তার কাছে যৌতুক বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শিতা রানীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। অসুস্থ অবস্থায় বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার একমাত্র কন্যা তৃষা মনিকে জোর করে আটকে রেখেছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

শিতা রানী অভিযোগে আরো বলেন এ ব্যাপারে থারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের কাছে মামলা করতে গেলে তিনি মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরও স্বামী কর্তৃক নির্যাতন ও একমাত্র শিশু সন্তানকে উদ্ধার করার জন্য আবারও থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি ফারুখ আহাম্মেদ আমাকে চরিত্রহীনা নারী বলে গালাগাল দেন এবং স্বামীর হাতে মাঝে মাঝে মার খেতে হয়। এ কথা বলে থানা থেকে বের করে দেন।

শিতা রানী জানান, অবশেষে থানায় বিচার না পেয়ে গতকাল সকাল থেকে প্রথমে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন পরে জরুরি মিটিং শেষে ডিআইজির সঙ্গে দেখা করে ওসি ফারুখ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে তার মামলা গ্রহণ না করে তাকে চরিত্রহীনা বলে থানা থেকে বের করে দেয়ার বিচার দাবি করেন। শিতা রানী জানান, এ সময় ডিআইজি মহোদয় নিজেই ওসির সঙ্গে কথা বলে তার মামলা নেয়ার আদেশ দেন।

এরপর তিনি পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমারের সঙ্গে দেখা করতে তার কার্যালয়ে যান বলে জানান। তিনি পুলিশ সুপারকে সব ঘটনা জানালে তিনি তারাগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করে কেন মামলা নেয়া হয়নি জানতে চান। এ সময় ওসি নিজেকে বাঁচাতে তার কাছে আমি নাকি যাইনি বলে জানান। পরে পুলিশ সুপার শিতা রানীর অভিযোগে মামলা নেয়ার আদেশ দেন।

নির্যাতিতা গৃহবধূ শিতা রানী এ প্রতিনিধির কাছে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদকে একজন মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে বলেন, আমাকে চরিত্রহীনা বলেছে স্বামীর হাতে নির্যাতিত হতে হয় বলেছে এমন ওসির কাছে আমি কোন বিচার পাব না তিনি ওসির বিচার দাবি করেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের সঙ্গে তার সরকারি মোবাইল ফোনে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তাকে চরিত্রহীনা বলিনি। আমার কাছে ওই নারী আসেনি বলে উল্টো দাবি করেন। তিনি স্বীকার করেন, ডিআইজি ও পুলিশ সুপার মহোদয় দু’জনেই আমাকে ফোন করে রাগারাগি করেছেন মামলা না নেয়ার জন্য। নিজেকে একজন ভালো ওসি দাবি করে তিনি বলেন এলাকায় জিজ্ঞাসা করেন আমি কেমন মানুষ। যা হওয়ার হয়েছে ওই মহিলা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা নেবেন বলে জানান।

আরও খবর
‘শিক্ষকদের বেতন না দিলে অধিভুক্তি বাতিল’
কৃষিতে সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেলে উন্নীত করেছে : প্রধানমন্ত্রী
সালিশ করতে গিয়ে বিবাহিত ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই বিয়ে করলেন কিশোরীকে
বাংলাদেশকে মডার্নার ২৫ লাখ টিকা দেবে যুক্তরাষ্ট্র
জহুর হোসেন চৌধুরীর শততম জন্মদিন আজ
উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী অভিযানে ৬ সদস্য গ্রেপ্তার
গ্রামে উদ্যোক্তা তৈরিতে সবাইকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে : প্রতিমন্ত্রী
দ্রুত রায় বাস্তবায়ন চায় পরিবার : মিন্নি অসুস্থ
তারেককে নিয়ে কথা বলায় জাফরুল্লাহকে ছাত্রদলের প্রচ্ছন্ন হুমকি
দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিতে প্রধান সমস্যা বন্যা ও লবণাক্ততা
পোশাককর্মীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার ছয় আসামির

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১ , ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ ১৫ জিলক্বদ ১৪৪২

রংপুরের তারাগঞ্জে

নির্যাতিত নারীর মামলা না নেয়ায় ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুরের তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীর অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো তাকে চরিত্রহীনা বলে গালাগাল এবং সংসার করতে হলে স্বামীর হাতে একটু আধটু মার খেতে হয় বলে ফতোয়া দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানার ওসির বিচার দাবি করে গতকাল রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি এবং রংপুরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে বিচার দাবি করেছেন নির্যাতিতা নারী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদ বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার অভিযোগ করেছেন ডিআইজি ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে। তবে ওই মহিলা তার কাছে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগে জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলার পুর্ব কুর্শা দোলাপাড়া গ্রামের জিতেন্দ্র নাথের মেয়ে শিতা রানীর সঙ্গে সয়ার হাজির হাট এলাকার অধির চন্দ্রের ছেলে মিন্টু রায়ের দশ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের তৃষা মনি নামে ৫ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শিতা রানী অভিযোগ করেন, তার স্বামী মিন্টু রায় অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত, প্রায়ই সে গভীর রাতে বাসায় আসে। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করত স্বামী। এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী মিন্টু রায় তার কাছে যৌতুক বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শিতা রানীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। অসুস্থ অবস্থায় বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার একমাত্র কন্যা তৃষা মনিকে জোর করে আটকে রেখেছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

শিতা রানী অভিযোগে আরো বলেন এ ব্যাপারে থারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের কাছে মামলা করতে গেলে তিনি মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরও স্বামী কর্তৃক নির্যাতন ও একমাত্র শিশু সন্তানকে উদ্ধার করার জন্য আবারও থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি ফারুখ আহাম্মেদ আমাকে চরিত্রহীনা নারী বলে গালাগাল দেন এবং স্বামীর হাতে মাঝে মাঝে মার খেতে হয়। এ কথা বলে থানা থেকে বের করে দেন।

শিতা রানী জানান, অবশেষে থানায় বিচার না পেয়ে গতকাল সকাল থেকে প্রথমে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন পরে জরুরি মিটিং শেষে ডিআইজির সঙ্গে দেখা করে ওসি ফারুখ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে তার মামলা গ্রহণ না করে তাকে চরিত্রহীনা বলে থানা থেকে বের করে দেয়ার বিচার দাবি করেন। শিতা রানী জানান, এ সময় ডিআইজি মহোদয় নিজেই ওসির সঙ্গে কথা বলে তার মামলা নেয়ার আদেশ দেন।

এরপর তিনি পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমারের সঙ্গে দেখা করতে তার কার্যালয়ে যান বলে জানান। তিনি পুলিশ সুপারকে সব ঘটনা জানালে তিনি তারাগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করে কেন মামলা নেয়া হয়নি জানতে চান। এ সময় ওসি নিজেকে বাঁচাতে তার কাছে আমি নাকি যাইনি বলে জানান। পরে পুলিশ সুপার শিতা রানীর অভিযোগে মামলা নেয়ার আদেশ দেন।

নির্যাতিতা গৃহবধূ শিতা রানী এ প্রতিনিধির কাছে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদকে একজন মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে বলেন, আমাকে চরিত্রহীনা বলেছে স্বামীর হাতে নির্যাতিত হতে হয় বলেছে এমন ওসির কাছে আমি কোন বিচার পাব না তিনি ওসির বিচার দাবি করেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুখ আহাম্মেদের সঙ্গে তার সরকারি মোবাইল ফোনে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তাকে চরিত্রহীনা বলিনি। আমার কাছে ওই নারী আসেনি বলে উল্টো দাবি করেন। তিনি স্বীকার করেন, ডিআইজি ও পুলিশ সুপার মহোদয় দু’জনেই আমাকে ফোন করে রাগারাগি করেছেন মামলা না নেয়ার জন্য। নিজেকে একজন ভালো ওসি দাবি করে তিনি বলেন এলাকায় জিজ্ঞাসা করেন আমি কেমন মানুষ। যা হওয়ার হয়েছে ওই মহিলা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা নেবেন বলে জানান।