গৌরনদীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর বাঁধাই করতে গিয়ে বিপাকে প্রশাসন

উপজেলার রত্মপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের আব্দুল গফুর ১৯৬৮ সালে নিজ বাড়িতে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অথচ তার নাম এসেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসা অন্য তিনজনের কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকা হাতে পেয়ে সরেজমিন তদন্তে কবরের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন উপজেলা প্রশাসন। একইভাবে উপজেলার চারটি কবরস্থানের মধ্যে একটি নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা নন কিন্তু ডাকাতের হামলায় নিহত ব্যক্তির নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার সকালে রত্নপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন, বারপাইকা গ্রামের আব্দুর রহমান শিকদারের পুত্র শহীদ গেজেটধারী আব্দুল গফুর স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে কলেরায় মারা গেছেন। তার নাম শহীদ গেজেটের তালিকায় আসা গোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কলঙ্ক। আব্দুল গফুরের সহপাঠী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, আব্দুল গফুরের ডান হাতের কব্জি ছিলনা। সে বাম হাত দিয়ে খাবার খেত। ১৯৬৮ সালে সে নিজ বাড়িতে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার ১৬ জন তালিকাভুক্ত বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কিভাবে অস্তিত্বহীন তিনজন এবং ’৬৮ সালে মৃত ব্যক্তির নাম শহীদ গেজেটে এসেছে তা সত্যি রহস্যজনক। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ঢাকায় বসবাসরত আব্দুল গফুরের সন্তানরা প্রতারণার মাধ্যমে শহীদ পরিবার হিসেবে সরকারি ভাতা গ্রহণ করছেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সুশান্ত বালা বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসা চারজনের কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকা হাতে পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারি শহীদ আব্দুল মান্নান মোল্লা, শহীদ সামচুল হক মোল্লা, শহীদ তৈয়ব আলী বখতিয়ারের কবরস্থান তাদের বাড়ি কিংবা উপজেলার কোথাও নেই। তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বা তারপরে ওই তিনজনের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সমাজসেবা অফিসার আরও বলেন, শহীদ আব্দুল গফুরের কবরের সন্ধানে তার নিজ বাড়ি বারপাইকা গিয়ে জানতে পারি ১৯৬৮ সালে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে আব্দুল গফুর মারা গেছেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম বলেন, অস্তিত্বহীন এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের কিভাবে মন্ত্রণালয় তালিকা করেছে তা আমার জানা নেই। আমরা বিতর্কিত ব্যক্তি ও অস্তিত্বহীন কবরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেবো। তারপর তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। অপরদিকে সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে সাউদেরখালপাড় নামক এলাকায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম এর কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পায়নি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ডাকাতের হামলায় নিহত বাটাজোর গ্রামের সোনামদ্দিনের নাম রহস্যজনকভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারিভাবে তার কবরস্থান বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া তালিকার ভিত্তিতে গণপূর্ত বিভাগ দুই লাখ টাকা ব্যয়ে একেকটি কবরস্থান বা শ্মশান বাঁধাইয়ের কাজ বাস্তবায়ন করছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থান নিয়ে বিতর্ক থাকায় সঠিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান শনাক্ত করার জন্যই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তালিকানুযায়ী তারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই এর বাস্তবায়ন করছেন। এখানে কোনটা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে না

আরও খবর
সুন্দরগঞ্জ-কামারজানি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস
কাপাসিয়ায় নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ
কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বাজারের পয়ঃনিষ্কাশন নালা সংস্কার শুরু
পাঁচ জেলায় মৃত্যু ১৪, শনাক্ত ৪০২
দাগনভূঞার যুবক মীরসরাইয়ে নিহত
দেড় বছর ধরে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন ৬৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী
করোনাবিধি মানছেন না ভীমপুর ইউপি চেয়ারম্যান
সেনবাগে বিয়ের ১৫ দিন পর গৃহবধূর আত্মহত্যা স্বামী আটক
চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ ৩ ডাকাত আটক
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীর চাপে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি
মেয়াদ শেষ হলেও নির্মিত হয়নি দুর্যোগসহনীয় ঘর
সৈয়দপুরে বজ্রপাতে ছাত্রের মৃত্যু
চুয়াডাঙ্গার সীমান্তে ১৫ কেজি রুপা জব্দ : ধৃত দুই
তিতাসে সর্প দংশনে ছাত্রের মৃত্যু

সোমবার, ২৮ জুন ২০২১ , ১৪ আষাঢ় ১৪২৮ ১৬ জিলক্বদ ১৪৪২

গৌরনদীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর বাঁধাই করতে গিয়ে বিপাকে প্রশাসন

প্রতিনিধি, গৌরনদী (বরিশাল)

উপজেলার রত্মপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের আব্দুল গফুর ১৯৬৮ সালে নিজ বাড়িতে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অথচ তার নাম এসেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসা অন্য তিনজনের কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকা হাতে পেয়ে সরেজমিন তদন্তে কবরের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন উপজেলা প্রশাসন। একইভাবে উপজেলার চারটি কবরস্থানের মধ্যে একটি নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা নন কিন্তু ডাকাতের হামলায় নিহত ব্যক্তির নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার সকালে রত্নপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন, বারপাইকা গ্রামের আব্দুর রহমান শিকদারের পুত্র শহীদ গেজেটধারী আব্দুল গফুর স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে কলেরায় মারা গেছেন। তার নাম শহীদ গেজেটের তালিকায় আসা গোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কলঙ্ক। আব্দুল গফুরের সহপাঠী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, আব্দুল গফুরের ডান হাতের কব্জি ছিলনা। সে বাম হাত দিয়ে খাবার খেত। ১৯৬৮ সালে সে নিজ বাড়িতে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার ১৬ জন তালিকাভুক্ত বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কিভাবে অস্তিত্বহীন তিনজন এবং ’৬৮ সালে মৃত ব্যক্তির নাম শহীদ গেজেটে এসেছে তা সত্যি রহস্যজনক। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ঢাকায় বসবাসরত আব্দুল গফুরের সন্তানরা প্রতারণার মাধ্যমে শহীদ পরিবার হিসেবে সরকারি ভাতা গ্রহণ করছেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সুশান্ত বালা বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসা চারজনের কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকা হাতে পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারি শহীদ আব্দুল মান্নান মোল্লা, শহীদ সামচুল হক মোল্লা, শহীদ তৈয়ব আলী বখতিয়ারের কবরস্থান তাদের বাড়ি কিংবা উপজেলার কোথাও নেই। তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বা তারপরে ওই তিনজনের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সমাজসেবা অফিসার আরও বলেন, শহীদ আব্দুল গফুরের কবরের সন্ধানে তার নিজ বাড়ি বারপাইকা গিয়ে জানতে পারি ১৯৬৮ সালে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে আব্দুল গফুর মারা গেছেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম বলেন, অস্তিত্বহীন এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের কিভাবে মন্ত্রণালয় তালিকা করেছে তা আমার জানা নেই। আমরা বিতর্কিত ব্যক্তি ও অস্তিত্বহীন কবরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেবো। তারপর তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। অপরদিকে সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে সাউদেরখালপাড় নামক এলাকায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম এর কবরস্থান সরকারিভাবে বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পায়নি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ডাকাতের হামলায় নিহত বাটাজোর গ্রামের সোনামদ্দিনের নাম রহস্যজনকভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারিভাবে তার কবরস্থান বাঁধাই করার তালিকায় স্থান পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া তালিকার ভিত্তিতে গণপূর্ত বিভাগ দুই লাখ টাকা ব্যয়ে একেকটি কবরস্থান বা শ্মশান বাঁধাইয়ের কাজ বাস্তবায়ন করছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থান নিয়ে বিতর্ক থাকায় সঠিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান শনাক্ত করার জন্যই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তালিকানুযায়ী তারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই এর বাস্তবায়ন করছেন। এখানে কোনটা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে না