ফেরির দেড়শ গুণ বেশি টোল আদায়ের প্রস্তাব পদ্মা সেতুতে

ফেরি থেকে দেড়গুণ বেশি টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে একটি বড় বাসের জন্য ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। বর্তমানে ফেরি পার বড় বাসে লাগে ১৫৮০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে বড় বাসের টোল দিতে হয় ৯০০ টাকা। যা ১০০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

জানা গেছে, মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত পদ্মার মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এছাড়া দুই পাড়ের ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ পদ্মা বহুমুখী সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ।

পদ্মা সেতু চালু হলে যানবাহনের শ্রেণীবিন্যাসের টোলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা। যা ফেরিতে রয়েছে ৭০ টাকা, কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা। যা ফেরিতে রয়েছে ৫০০ টাকা। পিকআপ ও নিশান জিপের জন্য ১২০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৮০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ১৩০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৮৬০ টাকা, ছোট বাসের জন্য ১৪০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৯৫০ টাকা, মাঝারি বাসের জন্য ২০০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১৩৫০ টাকা। ছোট ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য ১৬০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১০৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন পর্যন্ত) ২১০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১৪০০ টাকা। মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন পর্যন্ত) ২৮০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১৮৫০ টাকা। ট্রাকের জন্য (৩ এক্সেল) ৫৫০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৩৯৪০ টাকা। ট্রেইলারের জন্য (৪ এক্সেল) ৬০০০ টাকা। ট্রেইলার ৪ এক্সেলের ঊর্ধ্বে ৭৫০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া ৫ দশমিক ০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতুর বিদ্যমান টোল বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের টোল ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, হাল্কা যানবাহন (কার/জিপ) ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা, মাইক্রোবাস/পিকআপ ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, ছোট বাস ৩১ আসন ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, বড় বাস ৩২ আসেনর ঊর্ধ্বে ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, ছোট ট্রাক ৮৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫-৮ টন) ১১০০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন) ১৪০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা, ট্রাকের ২০০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেল) ৩০০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেলের ঊর্ধ্বে) ৪০০০ টাকা (প্রতি এক্সেল ১০০০ টাকা) ও ট্রেনের বাৎসরিক টোল ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতুতে নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল বৃদ্ধি করা হয়। বিদেশি অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করা হলে কত টাকা টোল ধার্য করা উচিত, সে বিষয়ে দাতাদের শর্ত বা পরামর্শ থাকে। কিন্তু দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত সেতুর ক্ষেত্রে এ রকম কোন নীতিমালা নেই।

২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। সেতু নির্মাণের জন্য তাদের ঋণ হিসেবে টাকা দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই ঋণ সুদসহ ৩৫ বছরে ফেরত দিতে হবে।

টোল আদায়ের হার ঠিক করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের পূর্বাভাস ধরে। ২০২১ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রায় ৮ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। ৩৫ বছর পর যানবাহনের সংখ্যা দিনে ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই টোলপ্লাজায় যন্ত্রপাতি স্থাপন করে প্রস্তুত রাখা হবে। কত টাকা টোল আদায় হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এই বিষয়টি সেতু কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।’

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

সোমবার, ২৮ জুন ২০২১ , ১৪ আষাঢ় ১৪২৮ ১৬ জিলক্বদ ১৪৪২

ফেরির দেড়শ গুণ বেশি টোল আদায়ের প্রস্তাব পদ্মা সেতুতে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

ফেরি থেকে দেড়গুণ বেশি টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে একটি বড় বাসের জন্য ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। বর্তমানে ফেরি পার বড় বাসে লাগে ১৫৮০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে বড় বাসের টোল দিতে হয় ৯০০ টাকা। যা ১০০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

জানা গেছে, মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত পদ্মার মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এছাড়া দুই পাড়ের ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ পদ্মা বহুমুখী সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ।

পদ্মা সেতু চালু হলে যানবাহনের শ্রেণীবিন্যাসের টোলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা। যা ফেরিতে রয়েছে ৭০ টাকা, কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা। যা ফেরিতে রয়েছে ৫০০ টাকা। পিকআপ ও নিশান জিপের জন্য ১২০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৮০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ১৩০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৮৬০ টাকা, ছোট বাসের জন্য ১৪০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৯৫০ টাকা, মাঝারি বাসের জন্য ২০০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১৩৫০ টাকা। ছোট ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য ১৬০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১০৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন পর্যন্ত) ২১০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১৪০০ টাকা। মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন পর্যন্ত) ২৮০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ১৮৫০ টাকা। ট্রাকের জন্য (৩ এক্সেল) ৫৫০০ টাকা, যা ফেরিতে রয়েছে ৩৯৪০ টাকা। ট্রেইলারের জন্য (৪ এক্সেল) ৬০০০ টাকা। ট্রেইলার ৪ এক্সেলের ঊর্ধ্বে ৭৫০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া ৫ দশমিক ০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতুর বিদ্যমান টোল বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের টোল ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, হাল্কা যানবাহন (কার/জিপ) ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা, মাইক্রোবাস/পিকআপ ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, ছোট বাস ৩১ আসন ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, বড় বাস ৩২ আসেনর ঊর্ধ্বে ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, ছোট ট্রাক ৮৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫-৮ টন) ১১০০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন) ১৪০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা, ট্রাকের ২০০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেল) ৩০০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেলের ঊর্ধ্বে) ৪০০০ টাকা (প্রতি এক্সেল ১০০০ টাকা) ও ট্রেনের বাৎসরিক টোল ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতুতে নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল বৃদ্ধি করা হয়। বিদেশি অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করা হলে কত টাকা টোল ধার্য করা উচিত, সে বিষয়ে দাতাদের শর্ত বা পরামর্শ থাকে। কিন্তু দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত সেতুর ক্ষেত্রে এ রকম কোন নীতিমালা নেই।

২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। সেতু নির্মাণের জন্য তাদের ঋণ হিসেবে টাকা দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই ঋণ সুদসহ ৩৫ বছরে ফেরত দিতে হবে।

টোল আদায়ের হার ঠিক করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের পূর্বাভাস ধরে। ২০২১ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রায় ৮ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। ৩৫ বছর পর যানবাহনের সংখ্যা দিনে ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই টোলপ্লাজায় যন্ত্রপাতি স্থাপন করে প্রস্তুত রাখা হবে। কত টাকা টোল আদায় হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এই বিষয়টি সেতু কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।’

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।