মেজর সিনহা হত্যার বিচার শুরু, জামিন নাকচ

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনার প্রায় ১১ মাস পর বিচার শুরু। ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত। এদিকে শুনানির নির্ধারিত দিনে ৬ আসামির জামিন নামঞ্জুর করেও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মামলার সাক্ষীদের মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল দুপুর ১টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ ফরিদুল আলম। শুনানির সময় মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার আসামিরা হলো- টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও এসআই লিটন মিয়া, সাবেক কনস্টেবল সাফনুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, রুবেল শর্মা ও সাগর দেব, এপিবিএন-এর সদস্য সাবেক এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।

পিপি ফরিদুল আলম বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় শুনানির নির্ধারিত দিনে সব আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগপত্র গঠন করেছে। এ সময় আদালতে সব আসামি উপস্থিত ছিল। শুনানিতে মামলার সাক্ষীদের মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।

শুনানি চলাকালে মামলার উভয় পক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। পরে বিচারক আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এই আদেশ দিয়েছেন। এতে সব আসামি দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

পিপি বলেন, অভিযোগপত্র গঠন ছাড়াও সিনহা হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৬ আসামির জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। এ নিয়ে শুনানিতে এসব আসামির জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলো, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, সাবেক এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও লিটন মিয়া, সাবেক কনস্টেবল সাফানুর করিম, মো. কামাল হোসেন ও সাগর দেব।

এর আগে রোববার সকাল ১০.২০ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে অবসরপ্রাপ্ত সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ জন আসামিকে কড়া পুলিশ পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। পরে শুনানি শেষে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত বছর ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় ৫ আগস্ট তার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তভার দেন র‌্যাবকে।

পরদিন ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরে শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্য এবং সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী স্থানীয় ৩ জনকে আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে সাবেক ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অপর ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই হত্যা মামলায় গত ১৩ ডিসেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন। এতে টেকনাফ থানার সাবেক দুই পুলিশ সদস্যকে নতুন করে আসামি করা হয়। তারা হচ্ছেন কনস্টেবল সাগর দেব ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা।

পরে র‌্যাব কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করলেও কনস্টেবল সাগর দেব পলাতক ছিল। অবশেষে গত ২৪ জুন পলাতক আসামি সাগর দেবও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করে। পরে ওইদিন শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

এদিকে প্রায় ৯ মাস আগে দুদকের একটি মামলায় হাজিরা দিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে নেয়া হয়েছিল। এরপর গত ১০ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

সোমবার, ২৮ জুন ২০২১ , ১৪ আষাঢ় ১৪২৮ ১৬ জিলক্বদ ১৪৪২

মেজর সিনহা হত্যার বিচার শুরু, জামিন নাকচ

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনার প্রায় ১১ মাস পর বিচার শুরু। ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত। এদিকে শুনানির নির্ধারিত দিনে ৬ আসামির জামিন নামঞ্জুর করেও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মামলার সাক্ষীদের মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল দুপুর ১টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ ফরিদুল আলম। শুনানির সময় মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার আসামিরা হলো- টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও এসআই লিটন মিয়া, সাবেক কনস্টেবল সাফনুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, রুবেল শর্মা ও সাগর দেব, এপিবিএন-এর সদস্য সাবেক এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।

পিপি ফরিদুল আলম বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় শুনানির নির্ধারিত দিনে সব আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগপত্র গঠন করেছে। এ সময় আদালতে সব আসামি উপস্থিত ছিল। শুনানিতে মামলার সাক্ষীদের মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।

শুনানি চলাকালে মামলার উভয় পক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। পরে বিচারক আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এই আদেশ দিয়েছেন। এতে সব আসামি দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

পিপি বলেন, অভিযোগপত্র গঠন ছাড়াও সিনহা হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৬ আসামির জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। এ নিয়ে শুনানিতে এসব আসামির জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলো, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, সাবেক এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও লিটন মিয়া, সাবেক কনস্টেবল সাফানুর করিম, মো. কামাল হোসেন ও সাগর দেব।

এর আগে রোববার সকাল ১০.২০ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে অবসরপ্রাপ্ত সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ জন আসামিকে কড়া পুলিশ পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। পরে শুনানি শেষে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত বছর ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় ৫ আগস্ট তার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তভার দেন র‌্যাবকে।

পরদিন ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরে শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্য এবং সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী স্থানীয় ৩ জনকে আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে সাবেক ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অপর ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই হত্যা মামলায় গত ১৩ ডিসেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন। এতে টেকনাফ থানার সাবেক দুই পুলিশ সদস্যকে নতুন করে আসামি করা হয়। তারা হচ্ছেন কনস্টেবল সাগর দেব ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা।

পরে র‌্যাব কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করলেও কনস্টেবল সাগর দেব পলাতক ছিল। অবশেষে গত ২৪ জুন পলাতক আসামি সাগর দেবও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করে। পরে ওইদিন শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

এদিকে প্রায় ৯ মাস আগে দুদকের একটি মামলায় হাজিরা দিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে নেয়া হয়েছিল। এরপর গত ১০ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল।