হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ আমলে নিন

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ৬ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ১ হাজার ৭২০ জন মারা গেছে। এদের অনেকে মারা গেছে কথিত বন্দুকযদ্ধে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে, রিমান্ড চলাকালে। নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি যেমন রয়েছে তেমন সাধারণ মানুষ এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীও রয়েছে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় কোন বিচার হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে গতকাল সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১০টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গত শনিবার এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে যে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা হেফাজতে নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য সংস্থা ১০টি জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘আটকাবস্থায় নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেগুলোকে শুধুই অস্বীকার করা হয় আর অসত্য বক্তব্য পাওয়া যায়।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এই বিবৃতি ভিত্তিহীন ও অসত্য। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কাউকে আটক করা হলে অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইন অনুযায়ী, মানবাধিকারের সব কিছু অনুসরণ করেই আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ অনেক পুরোনো। এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না বললেই চলে। এ কারণে এ ধরনের বেশিরভাগের ঘটনার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা কোন প্রতিকার আশা করেন না। কোন কোন ঘটনায় ভুক্তভোগী বা তার স্বজনরা মামলা করলেও তার বিচার আর আলোর মুখ দেখে না। বরং মামলা করার জন্য বাদী পক্ষকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে তাহলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা বা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর একটি ঘটনাও ঘটবার কথা নয়। আমরা বলতে চাই, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ আমলে নিতে হবে। এসব অভিযোগ তদন্ত না করেই অস্বীকার করা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। সব অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যদি একই বাহিনী তদন্ত করে তবে সেটা কতটা সুষ্ঠু হবেÑতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি ২০১৯ সালে একটি স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিল। ?সুপারিশটি বাস্তবায়ন করা জরুরি। পাশাপাশি নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সোমবার, ২৮ জুন ২০২১ , ১৪ আষাঢ় ১৪২৮ ১৬ জিলক্বদ ১৪৪২

হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ আমলে নিন

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ৬ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ১ হাজার ৭২০ জন মারা গেছে। এদের অনেকে মারা গেছে কথিত বন্দুকযদ্ধে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে, রিমান্ড চলাকালে। নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি যেমন রয়েছে তেমন সাধারণ মানুষ এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীও রয়েছে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় কোন বিচার হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে গতকাল সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১০টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গত শনিবার এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে যে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা হেফাজতে নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য সংস্থা ১০টি জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘আটকাবস্থায় নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেগুলোকে শুধুই অস্বীকার করা হয় আর অসত্য বক্তব্য পাওয়া যায়।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এই বিবৃতি ভিত্তিহীন ও অসত্য। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কাউকে আটক করা হলে অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইন অনুযায়ী, মানবাধিকারের সব কিছু অনুসরণ করেই আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ অনেক পুরোনো। এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না বললেই চলে। এ কারণে এ ধরনের বেশিরভাগের ঘটনার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা কোন প্রতিকার আশা করেন না। কোন কোন ঘটনায় ভুক্তভোগী বা তার স্বজনরা মামলা করলেও তার বিচার আর আলোর মুখ দেখে না। বরং মামলা করার জন্য বাদী পক্ষকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে তাহলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা বা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর একটি ঘটনাও ঘটবার কথা নয়। আমরা বলতে চাই, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ আমলে নিতে হবে। এসব অভিযোগ তদন্ত না করেই অস্বীকার করা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। সব অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যদি একই বাহিনী তদন্ত করে তবে সেটা কতটা সুষ্ঠু হবেÑতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি ২০১৯ সালে একটি স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিল। ?সুপারিশটি বাস্তবায়ন করা জরুরি। পাশাপাশি নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।