২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শ্রমজীবী মানুষের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস তৈরির জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মহার্ঘ্যভাতা প্রদানের ব্যবস্থা, একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন, শ্রমিকের পুনঃকর্মসংস্থান এবং শ্রমিকদের টিকা দেয়ার জন্য একটি সম্পূর্ণ বাজেটিয় পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। গতকাল বিল্স সেমিনার হলে এবং ভার্চুয়ালি ‘২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর বিল্সের সুপারিশমালা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশমালা উপস্থাপনকালে বিল্স উপ-পরিচালক (গবেষণা) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকালে শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিভিন্ন দাবি থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তা উপেক্ষিত রয়ে গেছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ পর্যায় চলছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ধরনের চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে। ইতোমধ্যে ১২৮৪৪১ কোটি টাকার ২৩টি পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যা জিডিপির প্রায় ৪.২ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.১ শতাংশ। তারপরও কোভিডের কারণে শ্রমিকের আয় কমেছে। অনেক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। তারা সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেক শ্রমিক চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অন্যদিকে বিদেশে শ্রম অভিবাসনও উল্লেখযোগ্যহারে কমে বছরে মাত্র ২ লাখ জনে দাঁড়িয়েছে, বিগত বছরগুলোতে যা গড়ে প্রায় ৮ লাখ জন ছিল। এর মধ্যে কোভিডের কারণে বিগত কয়েক মাসে অনেক অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন।’
স্বাগত বক্তব্যে বিল্স মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কোভিডের কারণে চাকরি হারিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বহু শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে, তাদের সহায়তায় সামাজিক সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো বাজেটে থাকা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান, শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তাসহ বাজেট প্রক্রিয়ায় শ্রমিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন তাদের কর্মসংস্থান বিষয়েও বাজেটে কোন দিক-নির্দেশনা নেই। যতদিন পর্যন্ত তারা কাজে যোগদান করতে না পারছে তাদের সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া উচিত এবং তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিতে আরও গুরুত্বারোপ করা দরকার বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।’
সভাপতির বক্তব্যে বিল্স উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমিক বান্ধব নয়, এটি ব্যবসা বান্ধব বাজেট। তারপরও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বরাদ্দ নেই। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে কয়েক লাখ শ্রমিকের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। ডাটাবেস না থাকার কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেয়া অর্থ সহায়তা দেয়া যায়নি। শ্রমিকদের সহায়তার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস থাকার দরকার।’
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিল্স উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি কামরুল আহসান, বিল্স সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিল্স পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ ও নাজমা ইয়াসমীন, উপ-পরিচালক মো, ইউসুফ আল মামুন ও এমএ মজিদ প্রমুখ।
বিল্সের সুপারিশমালা হলো, শ্রমজীবী মানুষের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস তৈরি করার জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত তথ্যের সঙ্গে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট তথ্যের সমন্বয় করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ডাটাবেস তৈরি করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নসমূহকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রস্তাবিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৯টি হাইটেক পার্ক ন্যূনতম সময়ে স্থাপনের লক্ষ্যে বাজেটে কর্মী প্রশিক্ষণসহ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। ইতোমধ্যে গৃহীত সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পিপিপির আওতায় পরিচালিত শিল্পসমূহকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। ইতিপূর্বে গৃহীত সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলকে আধুনিকীকরণ করে পুনরায় চালু করার জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কাজ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। কুটির শিল্প, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট যাতে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয় এজন্য বাজেটে একটি কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব।
অন্যান্য সুপারিশমালাগুলো হলো- শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মহার্ঘ্যভাতা প্রদানের ব্যবস্থা এবং একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের লক্ষ্যে বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। কর্মহীন শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়াদি বিবেচনায় বেকার ভাতা প্রণয়নের লক্ষ্যে বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। শ্রমিকদের টিকা দেয়ার জন্য একটি সম্পূর্ণ বাজেটিয় পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। শ্রমঘন শিল্প এলাকাসমূহে কোভিড-১৯ বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব।
শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বীমা চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রাথমিক কাজের জন্য বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বর্ধিত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব।
প্রত্যাবর্তিত অভিবাসী শ্রমিকদের জীবিকা সহায়তা, কর্মসংস্থান ও যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা।
মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১ , ১৫ আষাঢ় ১৪২৮ ১৭ জিলক্বদ ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শ্রমজীবী মানুষের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস তৈরির জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মহার্ঘ্যভাতা প্রদানের ব্যবস্থা, একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন, শ্রমিকের পুনঃকর্মসংস্থান এবং শ্রমিকদের টিকা দেয়ার জন্য একটি সম্পূর্ণ বাজেটিয় পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। গতকাল বিল্স সেমিনার হলে এবং ভার্চুয়ালি ‘২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর বিল্সের সুপারিশমালা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশমালা উপস্থাপনকালে বিল্স উপ-পরিচালক (গবেষণা) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকালে শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিভিন্ন দাবি থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তা উপেক্ষিত রয়ে গেছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ পর্যায় চলছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ধরনের চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে। ইতোমধ্যে ১২৮৪৪১ কোটি টাকার ২৩টি পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যা জিডিপির প্রায় ৪.২ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.১ শতাংশ। তারপরও কোভিডের কারণে শ্রমিকের আয় কমেছে। অনেক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। তারা সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেক শ্রমিক চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অন্যদিকে বিদেশে শ্রম অভিবাসনও উল্লেখযোগ্যহারে কমে বছরে মাত্র ২ লাখ জনে দাঁড়িয়েছে, বিগত বছরগুলোতে যা গড়ে প্রায় ৮ লাখ জন ছিল। এর মধ্যে কোভিডের কারণে বিগত কয়েক মাসে অনেক অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন।’
স্বাগত বক্তব্যে বিল্স মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কোভিডের কারণে চাকরি হারিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বহু শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে, তাদের সহায়তায় সামাজিক সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো বাজেটে থাকা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান, শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তাসহ বাজেট প্রক্রিয়ায় শ্রমিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন তাদের কর্মসংস্থান বিষয়েও বাজেটে কোন দিক-নির্দেশনা নেই। যতদিন পর্যন্ত তারা কাজে যোগদান করতে না পারছে তাদের সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া উচিত এবং তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিতে আরও গুরুত্বারোপ করা দরকার বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।’
সভাপতির বক্তব্যে বিল্স উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট শ্রমিক বান্ধব নয়, এটি ব্যবসা বান্ধব বাজেট। তারপরও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বরাদ্দ নেই। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে কয়েক লাখ শ্রমিকের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। ডাটাবেস না থাকার কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেয়া অর্থ সহায়তা দেয়া যায়নি। শ্রমিকদের সহায়তার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস থাকার দরকার।’
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিল্স উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি কামরুল আহসান, বিল্স সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিল্স পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ ও নাজমা ইয়াসমীন, উপ-পরিচালক মো, ইউসুফ আল মামুন ও এমএ মজিদ প্রমুখ।
বিল্সের সুপারিশমালা হলো, শ্রমজীবী মানুষের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস তৈরি করার জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত তথ্যের সঙ্গে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট তথ্যের সমন্বয় করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ডাটাবেস তৈরি করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নসমূহকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রস্তাবিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৯টি হাইটেক পার্ক ন্যূনতম সময়ে স্থাপনের লক্ষ্যে বাজেটে কর্মী প্রশিক্ষণসহ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। ইতোমধ্যে গৃহীত সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পিপিপির আওতায় পরিচালিত শিল্পসমূহকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। ইতিপূর্বে গৃহীত সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলকে আধুনিকীকরণ করে পুনরায় চালু করার জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কাজ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। কুটির শিল্প, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট যাতে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয় এজন্য বাজেটে একটি কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব।
অন্যান্য সুপারিশমালাগুলো হলো- শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মহার্ঘ্যভাতা প্রদানের ব্যবস্থা এবং একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের লক্ষ্যে বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। কর্মহীন শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়াদি বিবেচনায় বেকার ভাতা প্রণয়নের লক্ষ্যে বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। শ্রমিকদের টিকা দেয়ার জন্য একটি সম্পূর্ণ বাজেটিয় পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। শ্রমঘন শিল্প এলাকাসমূহে কোভিড-১৯ বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব।
শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বীমা চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রাথমিক কাজের জন্য বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বর্ধিত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব।
প্রত্যাবর্তিত অভিবাসী শ্রমিকদের জীবিকা সহায়তা, কর্মসংস্থান ও যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা।