একদিনে শনাক্তের রেকর্ড

‘হটস্পট’ হচ্ছে ঢাকা

করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরদিন শনাক্তের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মৃত্যুও শতক ছাড়িয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণের হারও ২৪ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রেকর্ড আট হাজার ৩৬৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত ৭ এপ্রিল একদিনে রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

গত একদিনে শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগেই চার হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় তিন হাজার ১৬৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ঢাকা এখন সংক্রমণের ‘হটস্পটে’ পরিণত হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

রাজধানী ‘ঢাকা’ রক্ষায় এর চারপাশের সাত জেলায় গত ২২ জুন থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন করছে সরকার। কিন্তু ‘লকডাউনেও’ পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন না জনস্বাস্থ্যবিদরা।

‘লকডাউন’র মধ্যেও ঢাকা ও সাত জেলায় সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। জেলাগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। এই সাত জেলাসহ পুরো ঢাকা বিভাগে লকডাউন শুরুর দিন এক হাজার তিনশ’ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। অথচ গত একদিনে এই সংখ্যা চার হাজার দাঁড়িয়েছে।

যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে মৃত্যুও বেশি

দেশে করোনা সংক্রমণে গত এপ্রিলের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে মৃত্যু বেশি হচ্ছে।

সীমান্তবর্তী প্রায় সব জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন।

তিনি গতকাল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, ‘আমরা যদি সংক্রমণের হার ২১-২২ শতাংশ এভাবেই গুনতে থাকি, তাহলে অচিরেই যেসব বেড খালি আছে, তা আর দেখতে পাব না। আইসিইউ বেডের সংখ্যাও যা খালি আছে, সেগুলো ভরে জেতেও হয়ত বেশি সময় লাগবে না।’

সীমান্তবর্র্র্তী এলাকাগুলোতে অনেক বেশি সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘সীমান্তবর্তী প্রায় সব জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে মৃত্যু হচ্ছে। সব জায়গায় মৃত্যুর পরিমাণ অনেক বেশি দেখছি। এজন্য আমাদের যেসব স্থান দিয়ে বিদেশ থেকে মানুষ আসছেন, সেসব স্থানে আমরা বেশি পরিমাণে যদি হাউজ ট্রেনিং করতে পারি, তাহলে অনেক বেশি উপকার পেতে পারি।’

‘ঝুঁকিপূর্ণ ৫১ জেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট জরুরি’

দেশের সবচেয়ে করোনা সংক্রমিত ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ৫১ জেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট অতীব জরুরি মন্তব্য করে ওইসব জেলায় টেস্ট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন।

সংক্রমিত জেলার কেউ জ্বর বা জ্বর সংক্রান্ত অন্যকোন সমস্যায় ভুগলে তাদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ‘অতীব জরুরি’ মন্তব্য করে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘কারও করোনা পজেটিভ না হলেও নন-করোনা চিকিৎসার জন্যও এ টেস্ট দরকার।’

গত ১৯ জুন থেকে ২৬ জুন যেসব অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়েছে তাতে ‘পজেটিভের’ সংখ্যা আগের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি, জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘কিন্তু দেখা গেছে অধিক সংক্রমিত ১৮ জেলার ১৯০টি উপজেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা তুলনামূলক কম।’

শনাক্ত ৯ লাখের কাছাকাছি

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে একদিনে রেকর্ড আট হাজার ৩৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ ৯৬ হাজার ৭৭০ জনে।

২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫৫৪টি ল্যাবরেটরিতে (পরীক্ষাগার) ৩৫ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৪০টি। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়, এরপর থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।

টানা দ্বিতীয় দিন শতাধিক মৃত্যু

গত একদিনে করোনায় দেশে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ালো ১৪ হাজার ২৭৬ জনে। আগের দিন করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ১১৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনাক্ত অনুপাতে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ১০৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৬৮ জন ও নারী ৩৬ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৮২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ জন এবং বাসায় সাতজনের মৃত্যু হয়।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চারজন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৩ জন এবং ৫৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি।

বিভাগওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, ১০৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ জন, রাজশাহী সাতজন, খুলনায় ৩৫ জন, বরিশাল দুইজন, রংপুর বিভাগে ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

এছাড়া গত একদিনে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৫৭০ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ সাত হাজার ৬৭৩ জনে। মোট সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ।

৭ বিভাগে সংক্রমণ বৃদ্ধি

গত একদিনে সাত বিভাগেই সংক্রমণ বেড়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ১৭ হাজার ৪৫১টি নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার ১৬৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের দিন ঢাকায় এক হাজার ৮১ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণের হার ছিল ১২ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় একদিনে ২০ হাজার ২০০টি নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার ৯৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে এক হাজার ৬৪৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৩৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭৩ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন ময়মনসিংহে বিভাগে ২৭১ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় একদিনে তিন হাজার ৬০৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৮১১ জনের করোনা ধরা পড়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে ৪৮৯ জনের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল এবং সংক্রমণের হার ছিল ১৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ২৮৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৮৮৩ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সংক্রমণের হার ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ। আগের দিন রাজশাহী বিভাগে ৯৬২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ১২ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গত একদিনে এক হাজার ২৩২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫২০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়। এ হিসাবে শনাক্তের হার ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের দিন রংপুর বিভাগে ৪৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়, আর শনাক্তের হার ছিল ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে তিন হাজার ১৬৩টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৪৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে এক হাজার ২০২ জনের করোনা ধরা পড়েছিল, আর সংক্রমণের হার ছিল ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সংক্রমণের হার ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের এই বিভাগে ১৫০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ১১ শতাংশ।

সিলেট বিভাগের চার জেলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ২৩৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ৩০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আগের দিন সিলেট বিভাগে ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল, আর সংক্রমণের হার ছিল ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১ , ১৫ আষাঢ় ১৪২৮ ১৭ জিলক্বদ ১৪৪২

একদিনে শনাক্তের রেকর্ড

‘হটস্পট’ হচ্ছে ঢাকা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

করোনায় মুমূর্ষু রোগী নিয়ে স্বজনরা ছুটছে হাসপাতালে হাসপাতালে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে তোলা ছবি -সংবাদ

করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরদিন শনাক্তের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মৃত্যুও শতক ছাড়িয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণের হারও ২৪ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রেকর্ড আট হাজার ৩৬৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত ৭ এপ্রিল একদিনে রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

গত একদিনে শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগেই চার হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় তিন হাজার ১৬৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ঢাকা এখন সংক্রমণের ‘হটস্পটে’ পরিণত হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

রাজধানী ‘ঢাকা’ রক্ষায় এর চারপাশের সাত জেলায় গত ২২ জুন থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন করছে সরকার। কিন্তু ‘লকডাউনেও’ পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন না জনস্বাস্থ্যবিদরা।

‘লকডাউন’র মধ্যেও ঢাকা ও সাত জেলায় সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। জেলাগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। এই সাত জেলাসহ পুরো ঢাকা বিভাগে লকডাউন শুরুর দিন এক হাজার তিনশ’ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। অথচ গত একদিনে এই সংখ্যা চার হাজার দাঁড়িয়েছে।

যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে মৃত্যুও বেশি

দেশে করোনা সংক্রমণে গত এপ্রিলের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে মৃত্যু বেশি হচ্ছে।

সীমান্তবর্তী প্রায় সব জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন।

তিনি গতকাল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, ‘আমরা যদি সংক্রমণের হার ২১-২২ শতাংশ এভাবেই গুনতে থাকি, তাহলে অচিরেই যেসব বেড খালি আছে, তা আর দেখতে পাব না। আইসিইউ বেডের সংখ্যাও যা খালি আছে, সেগুলো ভরে জেতেও হয়ত বেশি সময় লাগবে না।’

সীমান্তবর্র্র্তী এলাকাগুলোতে অনেক বেশি সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘সীমান্তবর্তী প্রায় সব জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে মৃত্যু হচ্ছে। সব জায়গায় মৃত্যুর পরিমাণ অনেক বেশি দেখছি। এজন্য আমাদের যেসব স্থান দিয়ে বিদেশ থেকে মানুষ আসছেন, সেসব স্থানে আমরা বেশি পরিমাণে যদি হাউজ ট্রেনিং করতে পারি, তাহলে অনেক বেশি উপকার পেতে পারি।’

‘ঝুঁকিপূর্ণ ৫১ জেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট জরুরি’

দেশের সবচেয়ে করোনা সংক্রমিত ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ৫১ জেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট অতীব জরুরি মন্তব্য করে ওইসব জেলায় টেস্ট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন।

সংক্রমিত জেলার কেউ জ্বর বা জ্বর সংক্রান্ত অন্যকোন সমস্যায় ভুগলে তাদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ‘অতীব জরুরি’ মন্তব্য করে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘কারও করোনা পজেটিভ না হলেও নন-করোনা চিকিৎসার জন্যও এ টেস্ট দরকার।’

গত ১৯ জুন থেকে ২৬ জুন যেসব অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়েছে তাতে ‘পজেটিভের’ সংখ্যা আগের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি, জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘কিন্তু দেখা গেছে অধিক সংক্রমিত ১৮ জেলার ১৯০টি উপজেলায় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা তুলনামূলক কম।’

শনাক্ত ৯ লাখের কাছাকাছি

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে একদিনে রেকর্ড আট হাজার ৩৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ ৯৬ হাজার ৭৭০ জনে।

২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫৫৪টি ল্যাবরেটরিতে (পরীক্ষাগার) ৩৫ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৪০টি। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়, এরপর থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।

টানা দ্বিতীয় দিন শতাধিক মৃত্যু

গত একদিনে করোনায় দেশে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ালো ১৪ হাজার ২৭৬ জনে। আগের দিন করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ১১৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনাক্ত অনুপাতে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ১০৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৬৮ জন ও নারী ৩৬ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৮২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ জন এবং বাসায় সাতজনের মৃত্যু হয়।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চারজন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৩ জন এবং ৫৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি।

বিভাগওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, ১০৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ জন, রাজশাহী সাতজন, খুলনায় ৩৫ জন, বরিশাল দুইজন, রংপুর বিভাগে ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

এছাড়া গত একদিনে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৫৭০ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ সাত হাজার ৬৭৩ জনে। মোট সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ।

৭ বিভাগে সংক্রমণ বৃদ্ধি

গত একদিনে সাত বিভাগেই সংক্রমণ বেড়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ১৭ হাজার ৪৫১টি নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার ১৬৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের দিন ঢাকায় এক হাজার ৮১ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণের হার ছিল ১২ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় একদিনে ২০ হাজার ২০০টি নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার ৯৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে এক হাজার ৬৪৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৩৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭৩ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন ময়মনসিংহে বিভাগে ২৭১ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় একদিনে তিন হাজার ৬০৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৮১১ জনের করোনা ধরা পড়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে ৪৮৯ জনের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল এবং সংক্রমণের হার ছিল ১৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ২৮৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৮৮৩ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সংক্রমণের হার ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ। আগের দিন রাজশাহী বিভাগে ৯৬২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ১২ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গত একদিনে এক হাজার ২৩২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫২০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়। এ হিসাবে শনাক্তের হার ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের দিন রংপুর বিভাগে ৪৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়, আর শনাক্তের হার ছিল ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে তিন হাজার ১৬৩টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৪৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে এক হাজার ২০২ জনের করোনা ধরা পড়েছিল, আর সংক্রমণের হার ছিল ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সংক্রমণের হার ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের এই বিভাগে ১৫০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ১১ শতাংশ।

সিলেট বিভাগের চার জেলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ২৩৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ৩০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আগের দিন সিলেট বিভাগে ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল, আর সংক্রমণের হার ছিল ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।