সীমিত লকডাউন, ভোগান্তির শহর

সড়কগুলো ছিল প্রাইভেটকারের দখলে

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়। গতকাল সকাল ১০টায়। রিকশা বা সিএনজির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন শারমিন নামের এক যাত্রী। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘কাকরাইলে অফিসে যাব। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অপেক্ষা করছি। কোন রিকশা ও সিএনজি পাচ্ছি না। যাও পাওয়া যায় ভাড়া চায় অনেক বেশি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাকরাইলের রিকশা ভাড়া চাচ্ছে দুইশ’ টাকা। সিএনজি তো পাওয়া যায় না। সবাই শুধু মাওয়া ঘাট, মাওয়া ঘাট বলছে।’

শারমিন বেসরকারি একটি অফিসে চাকরি করেন। সোমবার থেকে সীমিত লকডাউনে তার অফিস খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু পরিবহনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর নির্ধারিত ভাড়ায় কোন রিকশা না পেয়ে হেঁটেই সামনের দিকে যেতে দেখা গেল তাকে।

শুধু শারমিন নয়। গতকাল যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তায় গণপরিবহনের অপেক্ষায় ছিল হাজারো মানুষ। নির্দিষ্ট গন্তব্যের যানবাহন না পেয়ে নানা ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে তাদের। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশা ও মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বন্ধ হয়নি মানুষের চলাচল।

সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা রেখেই গতকাল থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের লকডাউন। এ সময় রিকশা ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে পাশে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিল মানুষের দীর্ঘ লাইন। বাস-মিনিবাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই চলাচল করছে এসব গাড়ি। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ শিকার হতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় মিজান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমাদের মতো গরিব মানুষের বিপদ হয়। যারা বড় লোক তারা ঠিকেই প্রাইভেটকারে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কিন্তু পুলিশ ধরে না। আমার কাজের প্রয়োজনে বের হলেই গাড়ি পাইনি। যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত অন্তত ১০টি সিএনজি চালককে জিজ্ঞাস মিরপুর যাব কিনা। বেশিরভাগ বলে না। দুই-একজন যেতে চাইলেও ভাড়া চায় অনেক বেশি। যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের সাধারণ সময়ের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। কিন্তু এখন চাচ্ছে ৫০০ টাকা। তাই হেঁটেই যাচ্ছি দেখি কতদূর যাওয়া যায়। পরে গুলিস্তান থেকে একটি মোটরসাইকেলে চলে যাব।’

গুলিস্তান এলাকার বাচ্চু নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ভাড়া একটু বেশি নেয়া হচ্ছে। কারণ প্রধান সড়কে রিকশা চলতে বাধা দেয় পুলিশ। তাই পুলিশকে টাকা দিতে হয়। অনেক স্থানে প্রধান সড়কে চলতে দেয়া হয় না। অনেক স্থান ঘুরে যেতে হয়।’

গুলিস্তান এলাকায় বাদল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘জরুরি কাজে ফার্মগেট যেতেই হবে। কিন্তু এখন কোন যানবাহন পাচ্ছি না। রিকশা বা মোটরসাইকেলে যে ভাড়া চাচ্ছে, তা দিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। জানি না, কীভাবে যাব?’

রাজধানীর টিকাটুলি বাসিন্দা শোভা। বাংলা মোটরে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন তিনি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারে অফিস করেন তিনি। খরচ গড়ে প্রতিদিন একশ’ টাকা। তিনি বলেন, ‘অফিস খোলা। মানে যেতেই হবে। সিএনজিতে করে দেড়শ’ টাকায় অফিস চলে যেতাম। আজকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তারপর রিকশা করে অফিসে গেলাম ১৮০ টাকায়। জানি না ফেরার সময় কি হবে? ভাড়া যে শুধু বেশি লাগছে, তাই শুধু নয়; অফিসে যেতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় আবদুল কাদের নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে পল্টন মোড় টানা এক ঘণ্টা হেঁটে আসলাম। যাব রামপুরা। রিকশা ভাড়া চাচ্ছে দুইশ’ টাকা। তাই হেঁটেই রওয়ানা দিয়েছি।’

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশ চেকপোস্টের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজধানীর এয়ারপোর্ট সড়কে খিলক্ষেত থেকে বনানীগামী অংশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল প্রাইভেটকার ও জিপ। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের বাসও দেখা গেছে। এছাড়া মোটরসাইকেল এবং কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলাচল করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মোহাম্মদ সজীব সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সকাল থেকে এক ঘণ্টায় প্রায় ২০টির বেশি মামলা দায়ের করেছি। এগুলোর বেশিরভাগই মোটরসাইকেলে দুইজন আরোহন করার জন্য। এটা নিষেধ আছে। এছাড়া সিএনজি এবং রিকশা রয়েছে। রিকশার চলাচলের অনুমতি আছে শুধু পাড়া-মহল্লার সড়কে, প্রধান সড়কে না আর এমন ভিআইপি সড়কে তো নই। তবুও অনেকে রিকশা নিয়েই বেরুচ্ছেন।’

মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১ , ১৫ আষাঢ় ১৪২৮ ১৭ জিলক্বদ ১৪৪২

সীমিত লকডাউন, ভোগান্তির শহর

সড়কগুলো ছিল প্রাইভেটকারের দখলে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়। গতকাল সকাল ১০টায়। রিকশা বা সিএনজির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন শারমিন নামের এক যাত্রী। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘কাকরাইলে অফিসে যাব। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অপেক্ষা করছি। কোন রিকশা ও সিএনজি পাচ্ছি না। যাও পাওয়া যায় ভাড়া চায় অনেক বেশি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাকরাইলের রিকশা ভাড়া চাচ্ছে দুইশ’ টাকা। সিএনজি তো পাওয়া যায় না। সবাই শুধু মাওয়া ঘাট, মাওয়া ঘাট বলছে।’

শারমিন বেসরকারি একটি অফিসে চাকরি করেন। সোমবার থেকে সীমিত লকডাউনে তার অফিস খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু পরিবহনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর নির্ধারিত ভাড়ায় কোন রিকশা না পেয়ে হেঁটেই সামনের দিকে যেতে দেখা গেল তাকে।

শুধু শারমিন নয়। গতকাল যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তায় গণপরিবহনের অপেক্ষায় ছিল হাজারো মানুষ। নির্দিষ্ট গন্তব্যের যানবাহন না পেয়ে নানা ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে তাদের। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশা ও মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বন্ধ হয়নি মানুষের চলাচল।

সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা রেখেই গতকাল থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের লকডাউন। এ সময় রিকশা ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে পাশে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিল মানুষের দীর্ঘ লাইন। বাস-মিনিবাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই চলাচল করছে এসব গাড়ি। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ শিকার হতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় মিজান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমাদের মতো গরিব মানুষের বিপদ হয়। যারা বড় লোক তারা ঠিকেই প্রাইভেটকারে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কিন্তু পুলিশ ধরে না। আমার কাজের প্রয়োজনে বের হলেই গাড়ি পাইনি। যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত অন্তত ১০টি সিএনজি চালককে জিজ্ঞাস মিরপুর যাব কিনা। বেশিরভাগ বলে না। দুই-একজন যেতে চাইলেও ভাড়া চায় অনেক বেশি। যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের সাধারণ সময়ের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। কিন্তু এখন চাচ্ছে ৫০০ টাকা। তাই হেঁটেই যাচ্ছি দেখি কতদূর যাওয়া যায়। পরে গুলিস্তান থেকে একটি মোটরসাইকেলে চলে যাব।’

গুলিস্তান এলাকার বাচ্চু নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ভাড়া একটু বেশি নেয়া হচ্ছে। কারণ প্রধান সড়কে রিকশা চলতে বাধা দেয় পুলিশ। তাই পুলিশকে টাকা দিতে হয়। অনেক স্থানে প্রধান সড়কে চলতে দেয়া হয় না। অনেক স্থান ঘুরে যেতে হয়।’

গুলিস্তান এলাকায় বাদল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘জরুরি কাজে ফার্মগেট যেতেই হবে। কিন্তু এখন কোন যানবাহন পাচ্ছি না। রিকশা বা মোটরসাইকেলে যে ভাড়া চাচ্ছে, তা দিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। জানি না, কীভাবে যাব?’

রাজধানীর টিকাটুলি বাসিন্দা শোভা। বাংলা মোটরে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন তিনি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারে অফিস করেন তিনি। খরচ গড়ে প্রতিদিন একশ’ টাকা। তিনি বলেন, ‘অফিস খোলা। মানে যেতেই হবে। সিএনজিতে করে দেড়শ’ টাকায় অফিস চলে যেতাম। আজকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তারপর রিকশা করে অফিসে গেলাম ১৮০ টাকায়। জানি না ফেরার সময় কি হবে? ভাড়া যে শুধু বেশি লাগছে, তাই শুধু নয়; অফিসে যেতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় আবদুল কাদের নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে পল্টন মোড় টানা এক ঘণ্টা হেঁটে আসলাম। যাব রামপুরা। রিকশা ভাড়া চাচ্ছে দুইশ’ টাকা। তাই হেঁটেই রওয়ানা দিয়েছি।’

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশ চেকপোস্টের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজধানীর এয়ারপোর্ট সড়কে খিলক্ষেত থেকে বনানীগামী অংশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল প্রাইভেটকার ও জিপ। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের বাসও দেখা গেছে। এছাড়া মোটরসাইকেল এবং কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলাচল করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মোহাম্মদ সজীব সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সকাল থেকে এক ঘণ্টায় প্রায় ২০টির বেশি মামলা দায়ের করেছি। এগুলোর বেশিরভাগই মোটরসাইকেলে দুইজন আরোহন করার জন্য। এটা নিষেধ আছে। এছাড়া সিএনজি এবং রিকশা রয়েছে। রিকশার চলাচলের অনুমতি আছে শুধু পাড়া-মহল্লার সড়কে, প্রধান সড়কে না আর এমন ভিআইপি সড়কে তো নই। তবুও অনেকে রিকশা নিয়েই বেরুচ্ছেন।’