মগবাজারে ভবন বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি

৬ জনের মৃত্যু, আহত অর্ধশতাধিক

এখনও কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি মগবাজারে ভবনটিতে বিস্ফোরণের কারণ কী? সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে নানা ধরনের কথা বলছেন। তবে তারা কেউ বিস্ফোরণের উত্তর মিলাতে চেষ্টা করছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন কোন ধরনের গ্যাসের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তবে পুলিশের আইজি বলেছেন, তারা কোন ধরনের নাশকতা দেখছেন না এ বিস্ফোরণে।

পুলিশ বলছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আছেন অর্ধশতাধিক। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার কারণ তদন্ত করছে।

বিস্ফোরণের বিষয়ে গতকাল পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, এখন পর্যন্ত এই বিস্ফোরণ নাশকতামূলক কর্মকা- বলে মনে হচ্ছে না। গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। ভবনের ভেতরে এখনও মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। বোম্ব এক্সপ্লোশন ইউনিট নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় কোন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই। ‘যদি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকত, তাহলে ঘটনাস্থলে স্পিন্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত এবং মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। এ বিস্ফোরণ গ্যাস চেম্বার থেকে হতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, গ্যাস জাতীয় কোন কিছু থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিস্ফোরণটি মারাত্মক ছিল। প্রাথমিকভাবে নানা কারণ উঠে এলেও বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিত না। বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন ‘ঘটনাস্থলে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি মিলেছে। বিভিন্ন ধরনের গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা আলামত সংগ্রহ করব। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কী ঘটেছিল তা জানানো হবে।’ শুধু গ্যাস লিকেজ কিংবা সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এতো ক্ষয়ক্ষতি হয় না। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে এটা আলাদা। এত বড় বিস্ফোরণের কারণ কী সেটা নিয়ে আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি। এর পেছনে আরও কোন কারণ থাকতে পারে। সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিতাস গ্যাসের সহ-ব্যবস্থাপক দিদারুল আলম বলেন, তারা গ্যাস ডিটেক্টর (শনাক্তকরণ) মেশিনে পরীক্ষা করেছেন। ওই ভবনে সরকারি গ্যাস সংযোগের কোন লাইন নেই। তবে আমরা পরিদর্শন করে ভবনটিতে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার থাকার প্রমাণ পেয়েছি। ভবনটিতে যে লাইন ছিল সেটি আগ থেকে কাটা ছিল। এছাড়া গ্যাস লিকেজের কোন অস্বিত্বও আমরা খুঁজে পাইনি।

গত রোববার সন্ধ্যায় আকস্মিক বিস্ফোরণে ধসে পড়ে মগাবাজার ওয়ারলেস রেলগেট সংলগ্ন ৭৯ আউটার সার্কুলার রোডের ৩ তলার একটি পুরোনো বাড়ি। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে শুধু ওই বাড়িটিই ধসে পড়েনি, আশপাশে ২শ’ গজের মধ্যে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা ১৮টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩টি যাত্রীবাহী বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বাসের যাত্রীরাও এ ঘটনায় হতাহত হয়েছে। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত এ বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী ও শিশু, এবং একজন সাংবাদিকসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৬৬ জন। যারা মারা গেছেন তারা হলেন রেডিও ধ্বনির মোস্তাফিজুর রহমান, রুহুল আমিন নোমান, বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা, শর্মা হাউজের কর্মচারী স্বপন, বেঙ্গল মিটের জান্নাত ও তার ৬ মাসের মেয়ে সোবাহানা। তবে ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী হারুন এখনও নিখোঁজ। এছাড়া হাসিবুল ইসলাম নামে ১০ বছরের এক শিশুকে খুঁজতে গতকাল তার মা ঘটনাস্থলে এসেছিল। ওই ছেলের বাবা মগবজারে চাকরি করে। ছেলেটি নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার মা হাসিনা।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনকে ঘিরে উৎসুক মানুষের আনোগোনা। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ৭৯ নম্বর বাড়িটি এখন ধসে পড়ে আছে। নিচতলায় থাকা শর্মা হাউজ (ফাস্টফুডের দোকান) বেঙ্গল মিট (ফ্রিজে সংরক্ষণ করে মাংস বিক্রির প্রতিষ্ঠান)সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। এ দুটি দোকানে থাকা ফ্রিজ, অন্যান্য মালামাল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। শর্মা হাউজ, বেঙ্গল মিটের ভেতরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, কাঁচা মাংস, দোকানের খাতাপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভবনটির একাংশের দোতালার ছাদ ধসে পড়ে আছে। ভেতরে ইট ও কাঠের ডেকারেশনগুলো টুকরো হয়ে পড়ে আছে। গতকাল সকালেও সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করেছেন। ফায়ার সার্ভিস তাদের উদ্ধার কাজ শেষ করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন রাস্তায় পড়ে থাকা ভাঙা গ্লাসের অংশগুলো পরিষ্কার করা শুরু করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ৭৯ নম্বর বাড়িটির উল্টোপাশে আড়ংয়ের শো-রুম। শো-রুমের সামনের ও পাশের দেয়ালগুলো ধ্বংসাবশেষ রাস্তায় পড়ে আছে। পাশে একটি স্কুলের সবগুলো গ্লাস ভেঙে গেছে। পাশে মার্কেটের সামনের অংশের গ্লাসগুলো ভেঙে রাস্তায় পড়েছে। রাস্তার উপর ৩টি বাসের গ্লাস সব ভেঙে জানানাগুলো দুমড়ে-মুুচড়ে গেছে। একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। রাতেই বাসগুলো পুলিশের রেকার দিয়ে সরিয়ে নিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা চালু করা হয়েছে। ৭৯ নম্বর বাড়ির ১শ’ গজ দূরে আদ-দ্বীন হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকদের হোস্টেল এবং আরও একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেলের গ্লাসগুলো ভেঙে পড়েছে। পাশে সেঞ্চুরি আকের্ডসহ একাধিক মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশপাশের বাড়ির গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ নেই।

প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ স্টোরের মালিক বশির ওই বাড়ির পেছনে ৫০ গজ দূরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ঘটনার সময় তিনি দোকানেই ছিলেন। বশির আহমেদ জানান, সন্ধ্যায় অর্থাৎ মাগরিবের নামাজের পর বিকট শব্দ পান। সেই সঙ্গে অনুভব করেন বড় ধরনের কম্পনের। প্রথমে ভাবেন ভু-কম্পন হচ্ছে তাই রাস্তায় বের হননি। কিন্তু পরক্ষণে রাস্তায় গিয়ে দেখেন সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় পড়ে আছে সারি সারি মানুষ। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন সবাই মারা গেছেন।

বশির আহমেদ বলেন, এত ভয়ঙ্কর শব্দে কোন ভবনের এমন পরিস্থিতি হয় তা এ প্রথম দেখেছেন তিনি। গ্যাস বা এসি বিস্ফোরণে কোন বাড়ি এভাবে ধ্বংস হয়ে পড়তে পারে তা কখনও শুনেননি। তিনি সন্দেহ করছেন, এমন কোন কিছু ঘটেছে যা সামনে বেরিয়ে আসছে না।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় তীব্র যানজট ছিল। ভবনটির সামনে মগবাজার-বাংলামোটর যাওয়ার দিকের অংশে তখন যাত্রীবাহী বাস ও রিকশার জট ছিল। ফুটপাত দিয়ে লোকজন হাঁটছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর সবকিছু অন্ধকার। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-তে ৮ বার ফোন করার পর রেসপন্স পান তারা। এরপর ভবন ধসের খবর জানানোর অনেকক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস আসে।

সোলায়মান নামের একজন জানান, ঘটনার পর তিনি নিজেই ১৫ থেকে ২০ জনকে উদ্ধার করে মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। শর্মা হাউজের সামনে দেয়াল চাপা পড়ে থাকা এক শিশুকে উদ্ধার করেন। পাশে পড়ে ছিল ওই শিশুর মা। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে শিশুটি ঘটনাস্থলে মারা যায়। এছাড়া ১০ বছরের এক শিশুকেও আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালে মারা গেছেন।

প্রত্যক্ষর্শীরা জানিয়েছেন, পর পর দুটি শব্দে বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণে কম্পনের সময় ৫ মিনিট। প্রথম বিস্ফোরণে বজ্রপাতের মতো বিদ্যুৎ ঝটকা দিলেও দ্বিতীয় বিস্ফোরণে অন্ধকার হয়ে যায় আশপাশ। বিকট শব্দে আশপাশে ৫শ’ গজের মধ্যে ভবনগুলো সব কেঁপে ওঠে। অনেকেই মনে করেছিল বড় মাত্রায় ভূ-কম্পন হচ্ছে। কিন্তু সেই ধারণা থেকে সবাই যখন রাস্তায় আসে তখন দেখেন রাস্তায় পড়ে ছিল সারি সারি মানুষ। আশপাশের ভবনের কোনটির গ্লাস ভেঙে পড়েছে, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ঘটনার পর শুরু হয় ছোটাছুটি-উদ্ধার তৎপরতা। আসে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন।

গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইটেইন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত তিনতলা ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী মেরামত করেও ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর উপরে আরও দুটি ফ্লোর রয়েছে। বর্তমানে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন সময় ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনে যেন কেউ প্রবেশ না করেন। পরবর্তীতে কোন ধরনের বিপদের সম্মুখীন যাতে কেউ না হন।

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণে আশপাশে যে ভবন ছিল, সেগুলোর কাঁচ ভেঙে পড়া বা দেয়ালে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। ভবনের মালিককে বিষয়টি অবগত করা হবে। ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, এর আগে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল, সেটিও এখানকার সমপর্যায়ের উপাদান থেকে ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জ ও মগবাজারের ঘটনার আলামতের মিল রয়েছে। আমরা মগবাজারের ঘটনাটিও তেমন অনুমান করছি। আমরা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। ঘটনাস্থল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে তথ্য ও আলামত সংগ্রহ করছি। এই তথ্যগুলো একত্রিত করে পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সিদ্ধান্তে যেত পারব।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শাহজালাল জানান, ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন। ওই ভবনের পিছনের রাস্তা দিয়ে তার বাসায় যাতায়াত। তিনি বলেন, ৪ তলা এ বাড়িটি অনেক পুরনো। বাড়ির মালিকের নাম মশিউর রহমান খোকন। স্থানীয়রা তাকে খোকন সাবেহ বলেই জানেন। ১ বছর আগেও তিনি ওই বাড়ির দোতালায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। পরে চলে যান ধানমন্ডিতে। বাড়িটির নিচ তলায় ফাস্টফুডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শর্মা হাউজ, বেঙ্গল মিটসহ ৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। দোতলায় ১ মাস আগে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গারকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে ফ্রিজের গোডাউন বানিয়েছেন। দোতালায় বাড়ির মালিকের একটি ব্যক্তিগত অফিসও রয়েছে। ৩ তলায় একজন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার আছে। সেখানে কিডনি রোগী দেখার পাশাপাশি ডায়ালসিসের কাজ করা হয়। ৩ তলার চিলেকোঠায় একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

শাহজালাল জানান, শর্মা হাউজের পিছনে একটি কিচেন রুম আছে। সেখানে কাস্টমারদের জন্য নানা রকম খাবার রান্নার ব্যবস্থা আছে। ওই কিচেনে রান্নায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হয়। তিনি একদিন শর্মা হাউজে খেতে গিয়ে কিচেনে গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করতে দেখেছেন। তার ধারণা, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে যা থেকে বড় বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটেছে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আর বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকেও ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন কারা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পরিচাক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনইটেন্যন্স)।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, তিনি তখন তার অফিসে বসে কাজ করছিলেন। হঠাৎ তার অফিসটিতে কম্পন তৈরি হয়। পর পর দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেছিল। তিনি বলেন, বিস্ফোরণে কোন আগুনের ঘটনা ঘটেনি। এ ধরনের বিস্ফেরণের অভিজ্ঞতা তাদের প্রথম দেখা। সাধারণত গ্যাস সিলিন্ডার বা জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণে এমন ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এটি নতুন দেখেছেন। বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ঘটনায় তারা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে ঘটনায় মামলা হবে।

মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১ , ১৫ আষাঢ় ১৪২৮ ১৭ জিলক্বদ ১৪৪২

মগবাজারে ভবন বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি

৬ জনের মৃত্যু, আহত অর্ধশতাধিক

সাইফ বাবলু

এখনও কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি মগবাজারে ভবনটিতে বিস্ফোরণের কারণ কী? সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে নানা ধরনের কথা বলছেন। তবে তারা কেউ বিস্ফোরণের উত্তর মিলাতে চেষ্টা করছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন কোন ধরনের গ্যাসের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তবে পুলিশের আইজি বলেছেন, তারা কোন ধরনের নাশকতা দেখছেন না এ বিস্ফোরণে।

পুলিশ বলছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আছেন অর্ধশতাধিক। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার কারণ তদন্ত করছে।

বিস্ফোরণের বিষয়ে গতকাল পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, এখন পর্যন্ত এই বিস্ফোরণ নাশকতামূলক কর্মকা- বলে মনে হচ্ছে না। গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। ভবনের ভেতরে এখনও মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। বোম্ব এক্সপ্লোশন ইউনিট নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় কোন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই। ‘যদি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকত, তাহলে ঘটনাস্থলে স্পিন্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত এবং মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। এ বিস্ফোরণ গ্যাস চেম্বার থেকে হতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, গ্যাস জাতীয় কোন কিছু থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিস্ফোরণটি মারাত্মক ছিল। প্রাথমিকভাবে নানা কারণ উঠে এলেও বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিত না। বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন ‘ঘটনাস্থলে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি মিলেছে। বিভিন্ন ধরনের গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা আলামত সংগ্রহ করব। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কী ঘটেছিল তা জানানো হবে।’ শুধু গ্যাস লিকেজ কিংবা সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এতো ক্ষয়ক্ষতি হয় না। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে এটা আলাদা। এত বড় বিস্ফোরণের কারণ কী সেটা নিয়ে আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি। এর পেছনে আরও কোন কারণ থাকতে পারে। সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিতাস গ্যাসের সহ-ব্যবস্থাপক দিদারুল আলম বলেন, তারা গ্যাস ডিটেক্টর (শনাক্তকরণ) মেশিনে পরীক্ষা করেছেন। ওই ভবনে সরকারি গ্যাস সংযোগের কোন লাইন নেই। তবে আমরা পরিদর্শন করে ভবনটিতে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার থাকার প্রমাণ পেয়েছি। ভবনটিতে যে লাইন ছিল সেটি আগ থেকে কাটা ছিল। এছাড়া গ্যাস লিকেজের কোন অস্বিত্বও আমরা খুঁজে পাইনি।

গত রোববার সন্ধ্যায় আকস্মিক বিস্ফোরণে ধসে পড়ে মগাবাজার ওয়ারলেস রেলগেট সংলগ্ন ৭৯ আউটার সার্কুলার রোডের ৩ তলার একটি পুরোনো বাড়ি। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে শুধু ওই বাড়িটিই ধসে পড়েনি, আশপাশে ২শ’ গজের মধ্যে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা ১৮টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩টি যাত্রীবাহী বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বাসের যাত্রীরাও এ ঘটনায় হতাহত হয়েছে। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত এ বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী ও শিশু, এবং একজন সাংবাদিকসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৬৬ জন। যারা মারা গেছেন তারা হলেন রেডিও ধ্বনির মোস্তাফিজুর রহমান, রুহুল আমিন নোমান, বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা, শর্মা হাউজের কর্মচারী স্বপন, বেঙ্গল মিটের জান্নাত ও তার ৬ মাসের মেয়ে সোবাহানা। তবে ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী হারুন এখনও নিখোঁজ। এছাড়া হাসিবুল ইসলাম নামে ১০ বছরের এক শিশুকে খুঁজতে গতকাল তার মা ঘটনাস্থলে এসেছিল। ওই ছেলের বাবা মগবজারে চাকরি করে। ছেলেটি নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার মা হাসিনা।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনকে ঘিরে উৎসুক মানুষের আনোগোনা। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ৭৯ নম্বর বাড়িটি এখন ধসে পড়ে আছে। নিচতলায় থাকা শর্মা হাউজ (ফাস্টফুডের দোকান) বেঙ্গল মিট (ফ্রিজে সংরক্ষণ করে মাংস বিক্রির প্রতিষ্ঠান)সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। এ দুটি দোকানে থাকা ফ্রিজ, অন্যান্য মালামাল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। শর্মা হাউজ, বেঙ্গল মিটের ভেতরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, কাঁচা মাংস, দোকানের খাতাপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভবনটির একাংশের দোতালার ছাদ ধসে পড়ে আছে। ভেতরে ইট ও কাঠের ডেকারেশনগুলো টুকরো হয়ে পড়ে আছে। গতকাল সকালেও সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করেছেন। ফায়ার সার্ভিস তাদের উদ্ধার কাজ শেষ করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন রাস্তায় পড়ে থাকা ভাঙা গ্লাসের অংশগুলো পরিষ্কার করা শুরু করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ৭৯ নম্বর বাড়িটির উল্টোপাশে আড়ংয়ের শো-রুম। শো-রুমের সামনের ও পাশের দেয়ালগুলো ধ্বংসাবশেষ রাস্তায় পড়ে আছে। পাশে একটি স্কুলের সবগুলো গ্লাস ভেঙে গেছে। পাশে মার্কেটের সামনের অংশের গ্লাসগুলো ভেঙে রাস্তায় পড়েছে। রাস্তার উপর ৩টি বাসের গ্লাস সব ভেঙে জানানাগুলো দুমড়ে-মুুচড়ে গেছে। একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। রাতেই বাসগুলো পুলিশের রেকার দিয়ে সরিয়ে নিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা চালু করা হয়েছে। ৭৯ নম্বর বাড়ির ১শ’ গজ দূরে আদ-দ্বীন হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকদের হোস্টেল এবং আরও একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেলের গ্লাসগুলো ভেঙে পড়েছে। পাশে সেঞ্চুরি আকের্ডসহ একাধিক মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশপাশের বাড়ির গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ নেই।

প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ স্টোরের মালিক বশির ওই বাড়ির পেছনে ৫০ গজ দূরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ঘটনার সময় তিনি দোকানেই ছিলেন। বশির আহমেদ জানান, সন্ধ্যায় অর্থাৎ মাগরিবের নামাজের পর বিকট শব্দ পান। সেই সঙ্গে অনুভব করেন বড় ধরনের কম্পনের। প্রথমে ভাবেন ভু-কম্পন হচ্ছে তাই রাস্তায় বের হননি। কিন্তু পরক্ষণে রাস্তায় গিয়ে দেখেন সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় পড়ে আছে সারি সারি মানুষ। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন সবাই মারা গেছেন।

বশির আহমেদ বলেন, এত ভয়ঙ্কর শব্দে কোন ভবনের এমন পরিস্থিতি হয় তা এ প্রথম দেখেছেন তিনি। গ্যাস বা এসি বিস্ফোরণে কোন বাড়ি এভাবে ধ্বংস হয়ে পড়তে পারে তা কখনও শুনেননি। তিনি সন্দেহ করছেন, এমন কোন কিছু ঘটেছে যা সামনে বেরিয়ে আসছে না।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় তীব্র যানজট ছিল। ভবনটির সামনে মগবাজার-বাংলামোটর যাওয়ার দিকের অংশে তখন যাত্রীবাহী বাস ও রিকশার জট ছিল। ফুটপাত দিয়ে লোকজন হাঁটছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর সবকিছু অন্ধকার। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-তে ৮ বার ফোন করার পর রেসপন্স পান তারা। এরপর ভবন ধসের খবর জানানোর অনেকক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস আসে।

সোলায়মান নামের একজন জানান, ঘটনার পর তিনি নিজেই ১৫ থেকে ২০ জনকে উদ্ধার করে মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। শর্মা হাউজের সামনে দেয়াল চাপা পড়ে থাকা এক শিশুকে উদ্ধার করেন। পাশে পড়ে ছিল ওই শিশুর মা। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে শিশুটি ঘটনাস্থলে মারা যায়। এছাড়া ১০ বছরের এক শিশুকেও আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালে মারা গেছেন।

প্রত্যক্ষর্শীরা জানিয়েছেন, পর পর দুটি শব্দে বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণে কম্পনের সময় ৫ মিনিট। প্রথম বিস্ফোরণে বজ্রপাতের মতো বিদ্যুৎ ঝটকা দিলেও দ্বিতীয় বিস্ফোরণে অন্ধকার হয়ে যায় আশপাশ। বিকট শব্দে আশপাশে ৫শ’ গজের মধ্যে ভবনগুলো সব কেঁপে ওঠে। অনেকেই মনে করেছিল বড় মাত্রায় ভূ-কম্পন হচ্ছে। কিন্তু সেই ধারণা থেকে সবাই যখন রাস্তায় আসে তখন দেখেন রাস্তায় পড়ে ছিল সারি সারি মানুষ। আশপাশের ভবনের কোনটির গ্লাস ভেঙে পড়েছে, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ঘটনার পর শুরু হয় ছোটাছুটি-উদ্ধার তৎপরতা। আসে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন।

গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইটেইন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত তিনতলা ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী মেরামত করেও ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর উপরে আরও দুটি ফ্লোর রয়েছে। বর্তমানে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন সময় ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনে যেন কেউ প্রবেশ না করেন। পরবর্তীতে কোন ধরনের বিপদের সম্মুখীন যাতে কেউ না হন।

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণে আশপাশে যে ভবন ছিল, সেগুলোর কাঁচ ভেঙে পড়া বা দেয়ালে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। ভবনের মালিককে বিষয়টি অবগত করা হবে। ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, এর আগে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল, সেটিও এখানকার সমপর্যায়ের উপাদান থেকে ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জ ও মগবাজারের ঘটনার আলামতের মিল রয়েছে। আমরা মগবাজারের ঘটনাটিও তেমন অনুমান করছি। আমরা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। ঘটনাস্থল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে তথ্য ও আলামত সংগ্রহ করছি। এই তথ্যগুলো একত্রিত করে পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সিদ্ধান্তে যেত পারব।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শাহজালাল জানান, ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন। ওই ভবনের পিছনের রাস্তা দিয়ে তার বাসায় যাতায়াত। তিনি বলেন, ৪ তলা এ বাড়িটি অনেক পুরনো। বাড়ির মালিকের নাম মশিউর রহমান খোকন। স্থানীয়রা তাকে খোকন সাবেহ বলেই জানেন। ১ বছর আগেও তিনি ওই বাড়ির দোতালায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। পরে চলে যান ধানমন্ডিতে। বাড়িটির নিচ তলায় ফাস্টফুডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শর্মা হাউজ, বেঙ্গল মিটসহ ৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। দোতলায় ১ মাস আগে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গারকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে ফ্রিজের গোডাউন বানিয়েছেন। দোতালায় বাড়ির মালিকের একটি ব্যক্তিগত অফিসও রয়েছে। ৩ তলায় একজন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার আছে। সেখানে কিডনি রোগী দেখার পাশাপাশি ডায়ালসিসের কাজ করা হয়। ৩ তলার চিলেকোঠায় একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

শাহজালাল জানান, শর্মা হাউজের পিছনে একটি কিচেন রুম আছে। সেখানে কাস্টমারদের জন্য নানা রকম খাবার রান্নার ব্যবস্থা আছে। ওই কিচেনে রান্নায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হয়। তিনি একদিন শর্মা হাউজে খেতে গিয়ে কিচেনে গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করতে দেখেছেন। তার ধারণা, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে যা থেকে বড় বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটেছে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আর বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকেও ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন কারা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পরিচাক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনইটেন্যন্স)।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, তিনি তখন তার অফিসে বসে কাজ করছিলেন। হঠাৎ তার অফিসটিতে কম্পন তৈরি হয়। পর পর দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেছিল। তিনি বলেন, বিস্ফোরণে কোন আগুনের ঘটনা ঘটেনি। এ ধরনের বিস্ফেরণের অভিজ্ঞতা তাদের প্রথম দেখা। সাধারণত গ্যাস সিলিন্ডার বা জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণে এমন ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এটি নতুন দেখেছেন। বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ঘটনায় তারা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে ঘটনায় মামলা হবে।