নামের মিলে কারাগারে, মানিক হাওলাদারকে মুক্তির নির্দেশ

ক্ষতিপূরণ দাবি পরিবারের

নামের মিল থাকায় মাদক মামলায় ছয় মাস ৭ দিন ধরে কারাবন্দী মানিক হাওলাদারকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলার প্রকৃত আসামি মো. মানিক মিয়াকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি নিতে শরীয়তপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিকে আদালতে এ আদেশে মানিক হাওলাদারের পরিবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তার পরিবার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

মানিকের স্ত্রী সালমা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৬ মাস বিনা কারণে জেল খেটেছেন আমার স্বামী। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। সহায় সম্বল যা ছিল তা সবই শেষ করেছি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে এখন আমরা নিঃস্ব। ছেলেমেয়ে নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমরা আদালত আর সরকারের কাছে আর্থিক এই ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

নির্দোষ দাবি করে মানিকের মুক্তির জন্য তার স্ত্রী সালমা বেগমের গত ২৮ ফেব্রুয়ারি করা এক আবেদনে এ

আদেশ দেন আদালত। আদালতে নিরপরাধ মানিক হাওলাদারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট পার্থ সারথী রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এর আগে, গত ৮ মার্চ এক মানিকের বদলে অন্য মানিক জেল খাটছেন, এমন অভিযোগের ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামসুল আলম বিচারিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেন। গতকাল আদালতে বিচারিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

বিচারিক প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার আসামি মানিক মিয়া ও গত বছরের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার মানিক হাওলাদার একই ব্যক্তি নন। তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি। পরোয়ানাভুক্ত মানিক মূলত শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার মালতকান্দির ইব্রাহিম মৃধার ছেলে। অন্যদিকে গ্রেপ্তার মানিক হাওলাদার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার, চর সখিপুরের আলম চান বেপারী কান্দির নজরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় জানান, হাইকোর্ট মানিক হাওলাদারকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের জেলা জজের কাছে মামলার নথি তলব করেছেন। পাশাপাশি মূল আসামির সাজা পরোয়ানাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শোকজ করেছেন। এছাড়া আট সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।

আইনজীবীরা জানান, ২০০৯ সালে একটি গাড়িতে ৬৬৮ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এ ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা চারজনকে আসামি করে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় মামলা করা হয়। পরে ওই মামলার আসামি মো. মানিক মিয়াকে ২০০৯ সালের ৩ জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর একই বছর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান। মামলার দায়েরের দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ দায়রা জজ আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ফাহমিদা কাদের ওই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে চার আসামিকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন।

আসামিরা হলেন ফরিদপুরের আলফা ডাঙ্গার মন্টু শেখ ওরফে জামাল উদ্দিন ও সোহরাব হোসেন। পটুয়াখালী বাউফল থানার মো. জামাল হোসেন ও শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার পলাতক মো. মানিক মিয়া। কিন্তু গত ১৩ জানুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত মো. মানিক মিয়ার স্থলে শুধু নামের মিল থাকার কারণে মানিক হাওলাদারকে শরীয়তপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। অন্যদিকে মামলার প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার বাবার নাম ইব্রাহিম মৃধা, মাতা লুতফা, গ্রাম- মালত কান্দী, ওয়ার্ড- ৬, ডাকঘর ও থানা সখিপুর, উপজেলা ভেদরগঞ্জ, জেলা শরীয়তপুর।

মানিক হাওলাদারের ছোট ভাই রতন হাওলাদার জানান, মানিক আমার বড় ভাই। সে গ্রামে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাত। তার চারটি ছেলে মেয়ে। কষ্ট করে সংসার চলত। কিন্তু আমার বাবার নাম নজরুল ইসলাম আর মায়ের নাম রেজিয়া বেগম। গ্রাম- আলম চান ব্যাপারী কান্দী। ওয়ার্ড নং ৯। ডাকঘর ও থানা সখিপুর, উপজেলা ভেদরগঞ্জ, জেলা শরীয়তপুর। জন্ম তারিখ ১৯৭৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর।

মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১ , ১৫ আষাঢ় ১৪২৮ ১৭ জিলক্বদ ১৪৪২

নামের মিলে কারাগারে, মানিক হাওলাদারকে মুক্তির নির্দেশ

ক্ষতিপূরণ দাবি পরিবারের

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর/আদালত বার্তা পরিবেশক

নামের মিল থাকায় মাদক মামলায় ছয় মাস ৭ দিন ধরে কারাবন্দী মানিক হাওলাদারকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলার প্রকৃত আসামি মো. মানিক মিয়াকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি নিতে শরীয়তপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিকে আদালতে এ আদেশে মানিক হাওলাদারের পরিবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তার পরিবার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

মানিকের স্ত্রী সালমা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৬ মাস বিনা কারণে জেল খেটেছেন আমার স্বামী। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। সহায় সম্বল যা ছিল তা সবই শেষ করেছি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে এখন আমরা নিঃস্ব। ছেলেমেয়ে নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমরা আদালত আর সরকারের কাছে আর্থিক এই ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

নির্দোষ দাবি করে মানিকের মুক্তির জন্য তার স্ত্রী সালমা বেগমের গত ২৮ ফেব্রুয়ারি করা এক আবেদনে এ

আদেশ দেন আদালত। আদালতে নিরপরাধ মানিক হাওলাদারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট পার্থ সারথী রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এর আগে, গত ৮ মার্চ এক মানিকের বদলে অন্য মানিক জেল খাটছেন, এমন অভিযোগের ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামসুল আলম বিচারিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেন। গতকাল আদালতে বিচারিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

বিচারিক প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার আসামি মানিক মিয়া ও গত বছরের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার মানিক হাওলাদার একই ব্যক্তি নন। তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি। পরোয়ানাভুক্ত মানিক মূলত শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার মালতকান্দির ইব্রাহিম মৃধার ছেলে। অন্যদিকে গ্রেপ্তার মানিক হাওলাদার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার, চর সখিপুরের আলম চান বেপারী কান্দির নজরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় জানান, হাইকোর্ট মানিক হাওলাদারকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের জেলা জজের কাছে মামলার নথি তলব করেছেন। পাশাপাশি মূল আসামির সাজা পরোয়ানাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শোকজ করেছেন। এছাড়া আট সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।

আইনজীবীরা জানান, ২০০৯ সালে একটি গাড়িতে ৬৬৮ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এ ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা চারজনকে আসামি করে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় মামলা করা হয়। পরে ওই মামলার আসামি মো. মানিক মিয়াকে ২০০৯ সালের ৩ জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর একই বছর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান। মামলার দায়েরের দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ দায়রা জজ আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ফাহমিদা কাদের ওই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে চার আসামিকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন।

আসামিরা হলেন ফরিদপুরের আলফা ডাঙ্গার মন্টু শেখ ওরফে জামাল উদ্দিন ও সোহরাব হোসেন। পটুয়াখালী বাউফল থানার মো. জামাল হোসেন ও শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার পলাতক মো. মানিক মিয়া। কিন্তু গত ১৩ জানুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত মো. মানিক মিয়ার স্থলে শুধু নামের মিল থাকার কারণে মানিক হাওলাদারকে শরীয়তপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। অন্যদিকে মামলার প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার বাবার নাম ইব্রাহিম মৃধা, মাতা লুতফা, গ্রাম- মালত কান্দী, ওয়ার্ড- ৬, ডাকঘর ও থানা সখিপুর, উপজেলা ভেদরগঞ্জ, জেলা শরীয়তপুর।

মানিক হাওলাদারের ছোট ভাই রতন হাওলাদার জানান, মানিক আমার বড় ভাই। সে গ্রামে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাত। তার চারটি ছেলে মেয়ে। কষ্ট করে সংসার চলত। কিন্তু আমার বাবার নাম নজরুল ইসলাম আর মায়ের নাম রেজিয়া বেগম। গ্রাম- আলম চান ব্যাপারী কান্দী। ওয়ার্ড নং ৯। ডাকঘর ও থানা সখিপুর, উপজেলা ভেদরগঞ্জ, জেলা শরীয়তপুর। জন্ম তারিখ ১৯৭৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর।