মগবাজার বিস্ফোরণে আহতরা জীবন সংকটে

সন্তানের প্রাণভিক্ষা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন মা

মগবাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ইমরান হোসেন (২৫)। আইসিইউর বাইরে চলছে তার স্বজনদের হৃদয়বিদারক আহাজারি। কেউ বুক চাপড়াচ্ছেন, কেউ অচেতন হয়ে পড়ছেন, কেউ মাথা ঢুকরে কান্না করছেন। তবে ইমরানের মা লিজা আক্তার বুক ভাসাচ্ছেন দুহাত তুলে মোনাজাতের মাধ্যমে। নাড়ি ছেঁড়া ধন যেন তাকে আবার মা বলে একটি ডাক দেয় সৃষ্টিকর্তার কাছে এই একটিই চাওয়া তার। একবার মোনাজাত শেষ হলে বুক চাপড়াচ্ছেন। কয়েক মিনিট পর আবার মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তার সঙ্গে মোনাজাত ধরে চিৎকার করে ইমরানের প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছেন খালা হেনা বেগমও। তাদের পাশেই অচেতন হয়ে পড়ে আছেন ইমরানের স্ত্রী তামান্না। মেয়ের মাথা কোলে নিয়ে বসে বুক ভাসাচ্ছেন ইমরানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম। ভাইয়া আমাদের ছেড়ে যেও না বলতে বলতে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে বোন আইরিন। সবার একটিই চাওয়া মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে আসুক ইমরান।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউ ইউনিটে গিয়ে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে। শুধু ইমরান হোসেনই নয় মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি প্রত্যেকের স্বজনরাই প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন। ইমরানের বোন আইরিন চোখে মুর্ছা দিতে দিতে বলেন, আমার বাবা আবদুল মজিদ মিয়া কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে লিফটম্যান হিসেবে চাকরি করেন। আমি বাবা মার সঙ্গে শান্তিনগরের একটি বাসায় থাকি। ভাইয়া (ইমরান) বিস্ফোরণ ঘটা ভবনের নিচতলায় বেঙ্গল মিট নামে একটি দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করে। ৩ বছর আগে বিয়ে করে ভাইয়া। এরপর থেকে ভাবিকে নিয়ে মগবাজারের একটি বাসায় সাবলেট থাকেন ভাইয়া। রোববার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের পর মগবাজারের একটি হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে দ্রুত সেখানে যেতে বলা হয়।

আমি আর আম্মু সিএনজিতে ওঠার পর আবার ফোন দিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসতে বলা হয়। এখানে এসে ভাইয়ার চেহারা চেনার উপায় ছিল বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে আইরিন। পাশে থাকা তার মা লিজা আক্তার, বুক চাপরাতে চাপরাতে বলতে থাকেন, পোলাডা খালি কইলো, মা আমি, মা আমি। আর কিছু বলতে পারলো না। কত কষ্ট পাচ্ছে পোলাডা। আমার কোলে ফিরে আয় আব্বা। তোর কিছু হবে না। লিজার মতোই অন্য পাশে কান্না করছিলেন আইসিইউতে থাকা নুরনবী ম-লের স্ত্রী পপি আক্তার। গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশায় হলেও জীবিকা তাগিদে স্ত্রী ও ৬ বছরের ছেলে আবদুল্লা আল মামুনকে গ্রামে রেখে ঢাকায় ভ্যান চালান নুরনবী। গত ২২ দিন আগে গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসেন। থাকতেন এলিফ্যান্ট রোডের একটি মেসে। পপি আক্তার বলেন, ও চলে গেলে আমাদের কি হবে? ছেলেটাকে ১ম শ্রেণিতে ভর্তি করেছি। কত স্বপ্ন, বলতেই চোখ গড়িয়ে অনর্গোল পানি পড়তে শুরু করে পপির। দূর পানে তাকিয়ে আর কথা বলতে চাইলেন না। দোয়া করতে বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

এদিকে দিনাজপুরের একটি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ (২০)। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বাবা জসিম উদ্দিন কৃষি কাজ করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছেন। কৃষক বাবার পক্ষে পুরো পরিবারের ভরণপোষণ, তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ব্যয় করা নিতান্তই কষ্টসাধ্য। পরিবারের এমন বেগতিক দেখে ছাত্র জীবনেই চাকরির সন্ধান করতে থাকেন রাসেল। ছয় মাস আগে পরিচিত একজনের মাধ্যমে ঢাকায় এসে একটি চাকরিতে যোগ দেন। পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটিয়ে পরিবারের অভাব গোচানোর সংগ্রামে ব্যস্ত সময় পার করতেন রাসেল। কিন্তু পরিবারের সুখ দীর্ঘায়িত করতে পারলেন তিনি। হাল ধরা সেই রাসেলই এখন পুরো পরিবারের জন্য দীর্ঘ শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় মগবাজারে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন রাসেল। ৯০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে তিনি এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছেন।

রাসেলের ফুফাতো ভাই শরীফ হাসান বলেন, রাসেলের বোন হিরা এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ভাই রিয়াদ ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। অভাব-অনটনের সংসার। তাই বেতনের টাকা পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দিতো রাসেল। মোটামুটি ভালই চলছিল তারা। হাসান বলেন, গত ৮ দিন আগে বেঙ্গল মিট-এ সেলস একাউন্টার হিসেবে যোগদান করে রাসেল। কিন্তু ৮ দিনের মাথায় তার জীবনে এমন করুণ পরিণতি ঘটল। পরিবারকে স্বপ্ন দেখানো ছেলেটির জীবন যেন নিভু নিভু প্রদীপের মতো জ্বলছে। হাসান বলেন, পরিবারের সবাই চিন্তা করবেন, তাই রাসেলের গুরুত্বর বার্ন হওয়ার বিষয়টি কাউকে জানানো হয়নি। তাছাড়া লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গ্রাম থেকে কেউ ঢাকায় আসতে পারেননি। তাই ঢাকায় থাকা রাসেলের ফুফাতো ও চাচাতো ভাই-বোনরা তাকে দেখাশোনা করছেন। তারা শঙ্কায় আছেন এই ভেবে যে, রাসেলের নিভু নিভু প্রদীপ না জানি হঠাৎ করে নিভে যায়!

বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বর্তমানে মোট ৫ জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা ইমরান হোসেন ও নুরনবী এবং এইচডিওতে থাকা রাসেলের (নিচতলার বেঙ্গল মিটের একাউন্টার) শরীরে ৯০ শতাংশ দগ্ধ থাকায় অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। জাফর ও কালু নামে দুজনকে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। তারাও শঙ্কামুক্ত নয়।

এদিকে, ঢামেক বার্ন ইউনিটের মতোই আহাজারি চলছে ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ১ নম্বর বেডে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাথা, দুই হাত ও পেট ব্যান্ডেজে মোড়া এইচএম কামাল হোসেন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন থাকায় নড়াচড়া করতে পারছেন না। বিস্ফোরণে আগুনের স্ফুলিঙ্গ চোখে লাগায়, চোখ খুলতে পারছেন না। কথা বলারও যেন শক্তি নেই। তবে, বীড় বীড় করে স্ত্রী ছানোয়ারা খান সানুকে যন্ত্রনার কথা বলছেন। আর কান্নায় চোখ ভাসাচ্ছেন ছানোয়ারা। স্বামী চোখ খুলতে না পারায় ছানোয়ারা অন্যদের বলতে থাকেন, বিয়ের ১০ বছরেও বাচ্চা হইলো না, যাকে নিয়ে বাঁচবো সেও চোখটাও খুলতে পারছে না। ওর কিছু হয়ে গেলে কি নিয়ে বাঁচবো আমি।

জানতে চাইলে ছানোয়ারা বলেন, শাহজাহানপুরে শ্বশুরবাড়িতে থেকে টিউশনি করাতেন এক সময়ের গফরগাঁওয়ের ধরলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের লেকচারার কামাল হোসেন। করোনার সময় ছাত্র না থাকায় তারা গ্রামে চলে যান। মগবাজারের একটি দোকানে অর্ডার করা চশমা আনতে গিয়ে আহত হন কামাল। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কামাল ফিস ফিস করে বলেন, কারা যেন আমার পকেট থাকা ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল নিয়ে গেছে। আমি দেখতে পারিনি। তাকাতে পারছিলাম না। পুলিশ ৭ হাজার টাকা ফেরত দিলেও চিকিৎসার খরচ বাবদ আড়াই হাজার টাকা নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন ছানোয়ারা। একই ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে কাতরাতে দেখা যায় বরিশাল বিএম কলেজের মাস্টার্স বাংলা বিভাগের ছাত্র মো. হৃদয় হোসেনকে। তিনি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত আল-মক্কা বাসে ছিলেন। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ঢামেকে ৩ জন ভর্তি আছেন। তাদের সুস্থতার বিষয়ে তারা আশাবাদী।

ঢামেক মর্গে শোকের মাতম

অ্যাম্বুলেন্স থেকে ব্যান্ডেজে মোড়া একটি লাশ নামানো হচ্ছে মর্গে। লাশের পাশে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন যুবক। কাছে গিয়ে জানা গেল, লাশটি বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত রেডিও ধ্বনির আরজে মোস্তাফিজুর রহমানের। লাশটি মর্গের ভেতরে নেয়া হলেও পানিতে টলমল করা দৃষ্টিতে সেদিকে নির্বাক তাকিয়ে আছে নাঈম নামে এক যুবক। সে মোস্তাফিজুরের সঙ্গে একই মেসে থাকে এবং এক সঙ্গে কবি নজরুল সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। জানতে চাইলে নাঈম বলেন, ও খুব ভাল আবৃতি করতো। কণ্ঠ ভাল হওয়ায় মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতাম। এখন আর কেউ আবৃতি করে শেনাবে না। সময় মতো খেয়েছি কিনা সেই খোঁজও নিবে না। এ সময় পাশে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মোস্তাফিজুরের মাদ্রাসার বন্ধু আরিফসহ আরও ৩-৪ যুবক। সবার চোখে মুখে ফুটে ওঠে শোকের ছাঁয়া। মোস্তাফিজুর গফরগাঁওয়ের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। বর্তমানে শনিরআখরায় একটি মেসে থাকতেন। ডাক্তার দেখিয়ে ওয়ারলেসে অফিসে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান নাঈম।

মোস্তাফিজুরের মতোই ময়নাতদন্তের জন্য আরও ৩টি লাশ ঢামেক মর্গে নেয়া হয়। তারা হলেন, মগবাজার আড়ংয়ের সিনিয়র সেল্সম্যান জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকার ডা. খয়বার ম-লের ছেলে রুহুল আমিন নোমান, ক্ষতিগ্রস্ত আজমেরী বাসের চালক ও মালিক কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের উনকুট গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), প্রাইভেটকার চালক মগবাজার চেয়ারম্যান গলির বাসিন্দা স্বপন (৩৫)। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে মর্গ সূত্রে জানা গেছে। তাদের স্বজনদের মধ্যেও দেখা যায় শোকের মাতম। এ ঘটনায় নিহত জান্নাত কাকলী ও তার ৯ মাস বয়সী মেয়ে সোবাহানা তাইয়েবার লাশ ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা বিভাগরে ডিসি সাজ্জাদুর রহমান।

স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা সুজন

বিস্ফোরণের ঘটনায় স্ত্রী জান্নাত কাকলী (২৩) ও ৯ মাসের মেয়ে সুবহানাকে হারিয়ে দিশেহারা মো. সুজন। স্বজনদের ফোনে বারবার বলছিলেন, আমার বউ-মেয়ে সব শেষ। আমার আর কেউ নাই রে, তোরা কে কোথায় আছোস হাসপাতালে আয়। সুজন জানান, রোববার সন্ধ্যায় মেয়ে সুবহানা আর ১৩ বছরের ভাই রাব্বিকে নিয়ে মগবাজার আড়ংয়ের উল্টো দিকে শর্মা হাউজে খেতে গিয়েছিলেন স্ত্রী জান্নাত। বিস্ফোরণের খবর শুনে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে স্ত্রীর লাশ পেয়েছেন। ৯ মাসের মেয়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছে বলে স্বজনদের কাছে জানতে পারেন তিনি। স্বজনরা জানান, সুজন একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। শর্মা হাউজ নামের ওই রেস্তেÍারাঁ তাদের এক আত্মীয়ের। মেয়ে আর ভাইকে নিয়ে সন্ধ্যায় সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন জান্নাত। আজমেরী পরিবহনের চালক নিহত আবুল কাশেমের মেয়ে মিম জানান, বাবা বলেছিলেন, ‘সাবধানে থাইকো, আমি মজা নিয়ে আসব’। ঢামেক মর্গের সামনে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বাবার কথা মনে করছিল মিম। বিস্ফোরণের সময় আবুল কাশেম আজমেরী পরিবহনের স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন। দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পথেই তিনি মারা যান। আবুল কাশেমের স্ত্রী সোহাগী বেগম বলেন, আমার ডান পা প্যারালাইজড হয়ে আছে দুই বছর হলো। অনেক কষ্ট করে ১৩ লাখ টাকা ঋণ করে একটি বাস কিনেছিলেন আমার স্বামী। বলেছিলেন ঋণ শোধ হলে ইন্ডিয়া নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এখনও ঋণ শোধ হয়নি। তিনি বলেন, সব বোঝা আমাকে দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমার স্বামী। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের দাফনের জন্য তাদের পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক।

খোঁজ মিলছে না কেয়ারটেকার হারুনের

বিস্ফোরণের পর থেকে হারুনর রশিদ (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার মেয়ে হেনা বেগম এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন বাবার খোঁজে। যে ভবনে বিস্ফোরণ হয়, সেখানে তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে প্রায় আড়াই বছর ধরে চাকরি করেন। একাই একটি কক্ষে সেখানে থাকতেন বলে জানা গেছে। হারুনর রশিদের মেয়েজামাই জুলহাস মিয়া বলেন, কাল রাত থেকে খুঁজতেছি। পাঁচ থেকে সাতটা হাসপাতালে ঘুরছি, পাইনি। থানায় গিয়ে জানাব। দেখি কি হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, বিস্ফোরণের ঘটনায় মোট ৬৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আহত ৩৯ জনকে ঢামেক হাসপাতালে, ১৭ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে, দুইজন হলি ফ্যামিলিতে এবং আদ-দ্বীন হাসপাতালে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১ , ১৫ আষাঢ় ১৪২৮ ১৭ জিলক্বদ ১৪৪২

মগবাজার বিস্ফোরণে আহতরা জীবন সংকটে

সন্তানের প্রাণভিক্ষা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন মা

মাসুদ রানা

image

মগবাজার বিস্ফোরণে আহতদের স্বজনের শোকের মাতম চলছে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সামনে -সংবাদ

মগবাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ইমরান হোসেন (২৫)। আইসিইউর বাইরে চলছে তার স্বজনদের হৃদয়বিদারক আহাজারি। কেউ বুক চাপড়াচ্ছেন, কেউ অচেতন হয়ে পড়ছেন, কেউ মাথা ঢুকরে কান্না করছেন। তবে ইমরানের মা লিজা আক্তার বুক ভাসাচ্ছেন দুহাত তুলে মোনাজাতের মাধ্যমে। নাড়ি ছেঁড়া ধন যেন তাকে আবার মা বলে একটি ডাক দেয় সৃষ্টিকর্তার কাছে এই একটিই চাওয়া তার। একবার মোনাজাত শেষ হলে বুক চাপড়াচ্ছেন। কয়েক মিনিট পর আবার মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তার সঙ্গে মোনাজাত ধরে চিৎকার করে ইমরানের প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছেন খালা হেনা বেগমও। তাদের পাশেই অচেতন হয়ে পড়ে আছেন ইমরানের স্ত্রী তামান্না। মেয়ের মাথা কোলে নিয়ে বসে বুক ভাসাচ্ছেন ইমরানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম। ভাইয়া আমাদের ছেড়ে যেও না বলতে বলতে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে বোন আইরিন। সবার একটিই চাওয়া মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে আসুক ইমরান।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউ ইউনিটে গিয়ে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে। শুধু ইমরান হোসেনই নয় মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি প্রত্যেকের স্বজনরাই প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন। ইমরানের বোন আইরিন চোখে মুর্ছা দিতে দিতে বলেন, আমার বাবা আবদুল মজিদ মিয়া কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে লিফটম্যান হিসেবে চাকরি করেন। আমি বাবা মার সঙ্গে শান্তিনগরের একটি বাসায় থাকি। ভাইয়া (ইমরান) বিস্ফোরণ ঘটা ভবনের নিচতলায় বেঙ্গল মিট নামে একটি দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করে। ৩ বছর আগে বিয়ে করে ভাইয়া। এরপর থেকে ভাবিকে নিয়ে মগবাজারের একটি বাসায় সাবলেট থাকেন ভাইয়া। রোববার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের পর মগবাজারের একটি হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে দ্রুত সেখানে যেতে বলা হয়।

আমি আর আম্মু সিএনজিতে ওঠার পর আবার ফোন দিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসতে বলা হয়। এখানে এসে ভাইয়ার চেহারা চেনার উপায় ছিল বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে আইরিন। পাশে থাকা তার মা লিজা আক্তার, বুক চাপরাতে চাপরাতে বলতে থাকেন, পোলাডা খালি কইলো, মা আমি, মা আমি। আর কিছু বলতে পারলো না। কত কষ্ট পাচ্ছে পোলাডা। আমার কোলে ফিরে আয় আব্বা। তোর কিছু হবে না। লিজার মতোই অন্য পাশে কান্না করছিলেন আইসিইউতে থাকা নুরনবী ম-লের স্ত্রী পপি আক্তার। গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশায় হলেও জীবিকা তাগিদে স্ত্রী ও ৬ বছরের ছেলে আবদুল্লা আল মামুনকে গ্রামে রেখে ঢাকায় ভ্যান চালান নুরনবী। গত ২২ দিন আগে গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসেন। থাকতেন এলিফ্যান্ট রোডের একটি মেসে। পপি আক্তার বলেন, ও চলে গেলে আমাদের কি হবে? ছেলেটাকে ১ম শ্রেণিতে ভর্তি করেছি। কত স্বপ্ন, বলতেই চোখ গড়িয়ে অনর্গোল পানি পড়তে শুরু করে পপির। দূর পানে তাকিয়ে আর কথা বলতে চাইলেন না। দোয়া করতে বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

এদিকে দিনাজপুরের একটি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ (২০)। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বাবা জসিম উদ্দিন কৃষি কাজ করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছেন। কৃষক বাবার পক্ষে পুরো পরিবারের ভরণপোষণ, তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ব্যয় করা নিতান্তই কষ্টসাধ্য। পরিবারের এমন বেগতিক দেখে ছাত্র জীবনেই চাকরির সন্ধান করতে থাকেন রাসেল। ছয় মাস আগে পরিচিত একজনের মাধ্যমে ঢাকায় এসে একটি চাকরিতে যোগ দেন। পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটিয়ে পরিবারের অভাব গোচানোর সংগ্রামে ব্যস্ত সময় পার করতেন রাসেল। কিন্তু পরিবারের সুখ দীর্ঘায়িত করতে পারলেন তিনি। হাল ধরা সেই রাসেলই এখন পুরো পরিবারের জন্য দীর্ঘ শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় মগবাজারে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন রাসেল। ৯০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে তিনি এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছেন।

রাসেলের ফুফাতো ভাই শরীফ হাসান বলেন, রাসেলের বোন হিরা এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ভাই রিয়াদ ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। অভাব-অনটনের সংসার। তাই বেতনের টাকা পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দিতো রাসেল। মোটামুটি ভালই চলছিল তারা। হাসান বলেন, গত ৮ দিন আগে বেঙ্গল মিট-এ সেলস একাউন্টার হিসেবে যোগদান করে রাসেল। কিন্তু ৮ দিনের মাথায় তার জীবনে এমন করুণ পরিণতি ঘটল। পরিবারকে স্বপ্ন দেখানো ছেলেটির জীবন যেন নিভু নিভু প্রদীপের মতো জ্বলছে। হাসান বলেন, পরিবারের সবাই চিন্তা করবেন, তাই রাসেলের গুরুত্বর বার্ন হওয়ার বিষয়টি কাউকে জানানো হয়নি। তাছাড়া লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গ্রাম থেকে কেউ ঢাকায় আসতে পারেননি। তাই ঢাকায় থাকা রাসেলের ফুফাতো ও চাচাতো ভাই-বোনরা তাকে দেখাশোনা করছেন। তারা শঙ্কায় আছেন এই ভেবে যে, রাসেলের নিভু নিভু প্রদীপ না জানি হঠাৎ করে নিভে যায়!

বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বর্তমানে মোট ৫ জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা ইমরান হোসেন ও নুরনবী এবং এইচডিওতে থাকা রাসেলের (নিচতলার বেঙ্গল মিটের একাউন্টার) শরীরে ৯০ শতাংশ দগ্ধ থাকায় অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। জাফর ও কালু নামে দুজনকে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। তারাও শঙ্কামুক্ত নয়।

এদিকে, ঢামেক বার্ন ইউনিটের মতোই আহাজারি চলছে ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ১ নম্বর বেডে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাথা, দুই হাত ও পেট ব্যান্ডেজে মোড়া এইচএম কামাল হোসেন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন থাকায় নড়াচড়া করতে পারছেন না। বিস্ফোরণে আগুনের স্ফুলিঙ্গ চোখে লাগায়, চোখ খুলতে পারছেন না। কথা বলারও যেন শক্তি নেই। তবে, বীড় বীড় করে স্ত্রী ছানোয়ারা খান সানুকে যন্ত্রনার কথা বলছেন। আর কান্নায় চোখ ভাসাচ্ছেন ছানোয়ারা। স্বামী চোখ খুলতে না পারায় ছানোয়ারা অন্যদের বলতে থাকেন, বিয়ের ১০ বছরেও বাচ্চা হইলো না, যাকে নিয়ে বাঁচবো সেও চোখটাও খুলতে পারছে না। ওর কিছু হয়ে গেলে কি নিয়ে বাঁচবো আমি।

জানতে চাইলে ছানোয়ারা বলেন, শাহজাহানপুরে শ্বশুরবাড়িতে থেকে টিউশনি করাতেন এক সময়ের গফরগাঁওয়ের ধরলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের লেকচারার কামাল হোসেন। করোনার সময় ছাত্র না থাকায় তারা গ্রামে চলে যান। মগবাজারের একটি দোকানে অর্ডার করা চশমা আনতে গিয়ে আহত হন কামাল। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কামাল ফিস ফিস করে বলেন, কারা যেন আমার পকেট থাকা ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল নিয়ে গেছে। আমি দেখতে পারিনি। তাকাতে পারছিলাম না। পুলিশ ৭ হাজার টাকা ফেরত দিলেও চিকিৎসার খরচ বাবদ আড়াই হাজার টাকা নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন ছানোয়ারা। একই ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে কাতরাতে দেখা যায় বরিশাল বিএম কলেজের মাস্টার্স বাংলা বিভাগের ছাত্র মো. হৃদয় হোসেনকে। তিনি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত আল-মক্কা বাসে ছিলেন। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ঢামেকে ৩ জন ভর্তি আছেন। তাদের সুস্থতার বিষয়ে তারা আশাবাদী।

ঢামেক মর্গে শোকের মাতম

অ্যাম্বুলেন্স থেকে ব্যান্ডেজে মোড়া একটি লাশ নামানো হচ্ছে মর্গে। লাশের পাশে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন যুবক। কাছে গিয়ে জানা গেল, লাশটি বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত রেডিও ধ্বনির আরজে মোস্তাফিজুর রহমানের। লাশটি মর্গের ভেতরে নেয়া হলেও পানিতে টলমল করা দৃষ্টিতে সেদিকে নির্বাক তাকিয়ে আছে নাঈম নামে এক যুবক। সে মোস্তাফিজুরের সঙ্গে একই মেসে থাকে এবং এক সঙ্গে কবি নজরুল সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। জানতে চাইলে নাঈম বলেন, ও খুব ভাল আবৃতি করতো। কণ্ঠ ভাল হওয়ায় মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতাম। এখন আর কেউ আবৃতি করে শেনাবে না। সময় মতো খেয়েছি কিনা সেই খোঁজও নিবে না। এ সময় পাশে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মোস্তাফিজুরের মাদ্রাসার বন্ধু আরিফসহ আরও ৩-৪ যুবক। সবার চোখে মুখে ফুটে ওঠে শোকের ছাঁয়া। মোস্তাফিজুর গফরগাঁওয়ের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। বর্তমানে শনিরআখরায় একটি মেসে থাকতেন। ডাক্তার দেখিয়ে ওয়ারলেসে অফিসে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান নাঈম।

মোস্তাফিজুরের মতোই ময়নাতদন্তের জন্য আরও ৩টি লাশ ঢামেক মর্গে নেয়া হয়। তারা হলেন, মগবাজার আড়ংয়ের সিনিয়র সেল্সম্যান জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকার ডা. খয়বার ম-লের ছেলে রুহুল আমিন নোমান, ক্ষতিগ্রস্ত আজমেরী বাসের চালক ও মালিক কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের উনকুট গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), প্রাইভেটকার চালক মগবাজার চেয়ারম্যান গলির বাসিন্দা স্বপন (৩৫)। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে মর্গ সূত্রে জানা গেছে। তাদের স্বজনদের মধ্যেও দেখা যায় শোকের মাতম। এ ঘটনায় নিহত জান্নাত কাকলী ও তার ৯ মাস বয়সী মেয়ে সোবাহানা তাইয়েবার লাশ ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা বিভাগরে ডিসি সাজ্জাদুর রহমান।

স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা সুজন

বিস্ফোরণের ঘটনায় স্ত্রী জান্নাত কাকলী (২৩) ও ৯ মাসের মেয়ে সুবহানাকে হারিয়ে দিশেহারা মো. সুজন। স্বজনদের ফোনে বারবার বলছিলেন, আমার বউ-মেয়ে সব শেষ। আমার আর কেউ নাই রে, তোরা কে কোথায় আছোস হাসপাতালে আয়। সুজন জানান, রোববার সন্ধ্যায় মেয়ে সুবহানা আর ১৩ বছরের ভাই রাব্বিকে নিয়ে মগবাজার আড়ংয়ের উল্টো দিকে শর্মা হাউজে খেতে গিয়েছিলেন স্ত্রী জান্নাত। বিস্ফোরণের খবর শুনে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে স্ত্রীর লাশ পেয়েছেন। ৯ মাসের মেয়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছে বলে স্বজনদের কাছে জানতে পারেন তিনি। স্বজনরা জানান, সুজন একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। শর্মা হাউজ নামের ওই রেস্তেÍারাঁ তাদের এক আত্মীয়ের। মেয়ে আর ভাইকে নিয়ে সন্ধ্যায় সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন জান্নাত। আজমেরী পরিবহনের চালক নিহত আবুল কাশেমের মেয়ে মিম জানান, বাবা বলেছিলেন, ‘সাবধানে থাইকো, আমি মজা নিয়ে আসব’। ঢামেক মর্গের সামনে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বাবার কথা মনে করছিল মিম। বিস্ফোরণের সময় আবুল কাশেম আজমেরী পরিবহনের স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন। দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পথেই তিনি মারা যান। আবুল কাশেমের স্ত্রী সোহাগী বেগম বলেন, আমার ডান পা প্যারালাইজড হয়ে আছে দুই বছর হলো। অনেক কষ্ট করে ১৩ লাখ টাকা ঋণ করে একটি বাস কিনেছিলেন আমার স্বামী। বলেছিলেন ঋণ শোধ হলে ইন্ডিয়া নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এখনও ঋণ শোধ হয়নি। তিনি বলেন, সব বোঝা আমাকে দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমার স্বামী। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের দাফনের জন্য তাদের পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক।

খোঁজ মিলছে না কেয়ারটেকার হারুনের

বিস্ফোরণের পর থেকে হারুনর রশিদ (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার মেয়ে হেনা বেগম এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন বাবার খোঁজে। যে ভবনে বিস্ফোরণ হয়, সেখানে তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে প্রায় আড়াই বছর ধরে চাকরি করেন। একাই একটি কক্ষে সেখানে থাকতেন বলে জানা গেছে। হারুনর রশিদের মেয়েজামাই জুলহাস মিয়া বলেন, কাল রাত থেকে খুঁজতেছি। পাঁচ থেকে সাতটা হাসপাতালে ঘুরছি, পাইনি। থানায় গিয়ে জানাব। দেখি কি হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, বিস্ফোরণের ঘটনায় মোট ৬৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আহত ৩৯ জনকে ঢামেক হাসপাতালে, ১৭ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে, দুইজন হলি ফ্যামিলিতে এবং আদ-দ্বীন হাসপাতালে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে।