বিস্ফোরণে ৩ জনের ৯০ ভাগ দগ্ধ

রাজধানীর মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক, তাদের দেহের ৯০ শতাংশজুড়ে আগুনের ক্ষত। তারা হলো- মো. নুরুন্নবী (৩৫), ইমরান হোসেন (২৫) ও মো. রাসেল (২১)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউতে রয়েছেন তারা। ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন গতকাল বলেন, আইসিইউতে থাকা এই তিনজনের শরীরের ৯০ শতাংশই দগ্ধ। বলতে গেলে তারা এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই রয়েছেন। যে কোন মুহূর্তে খারাপ কিছু ঘটতে পারে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে সাধারণ বেডে ভর্তি আছেন মো. জাফর আহামেদ (৬১) ও আবুল কালাম কালু (৩৩) নামে দুইজন। তাদের সম্পর্কে সামন্ত লাল সেন বলেন, তাদের অবস্থা আগের মতো থাকলেও আশঙ্কাজনক নয়। তাদের চিকিৎসা চলছে, রিকভারি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শরীরের প্রায় পুরোটাই ঝলসে গিয়ে আইসিইউতে থাকা নুরুন্নবী পেশায় ভ্যানচালক। তিনি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাজপুর গ্রামের ইসলাম মন্ডলের ছেলে। ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগনাল এলাকার একটি মেসে থাকেন। আবদুল্লাহ নামের ছয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। নুরুন্নবীর স্ত্রী পপি বেগম জানান, ভ্যান চালিয়ে বাড্ডা থেকে ফেরার পথেই মগবাজারে বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন তার স্বামী। নুরুন্নবীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে পপি বলেন, উনি সকালে ডাবের পানি খাইতে চাইছেন। তার ভাই ডাবের পানি এনে দিছেন। নাকের নল দিয়ে তিনি খাইছেন। টুকটাক কথা বলতে পারলেও তার অবস্থা ভালো না। কী হবে, তা আল্লাহই জানে।

গুরুতর দগ্ধ ইমরান ও রাসেল বেঙ্গল মিটসে চাকরি করতেন। বিস্ফোরণে আংশিক ধসে পড়া তিনতলা ভবনটির নিচে বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র। রাসেলের চাচা মানারুল হক বলেন, গতকাল রাসেলের সঙ্গে কথা হলো। বারবার বলতেছিল- চাচা আমি বাঁচব না। রাসেলের পরিবার ঠাকুরগাঁওয়ে থাকে। বাবা কৃষক। আমি তারে পড়াশোনা করাইছি। আমিই লালনপালন করছি। ছেলেটা আর বাঁচবে না ভাবলে কিছু ভালো লাগতেছে না। সহ্য করা মুশকিল।

বার্ন ইনস্টিটিউটে সাধারণ বেডে ভর্তি জাফর আহমেদের ভাগ্নে জহির উদ্দিন বলেন, উনার শরীরে পোড়া কম, তবে ইনজুরি আছে। তার গলায় কাঁচের টুকরা ছিল বলে ডাক্তাররা বলেছেন। এছাড়া সারা শরীরে অসংখ্য কাঁচের টুকরা আছে। ঘটনার সময় জাফর মালিবাগ থেকে মগবাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন বলে জানান জহির। একই ঘটনায় আহত তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ভর্তি রয়েছেন। তারা হলেন- এসএম কামাল হোসেন (৪২), সুভাষ চন্দ্র সাহা (৩২) ও মো. হৃদয়(২৭)। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলের সাধারণ বেডে ভর্তি শামীমকে (৩০) সোমবার রাতে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

তিনি বলেন, কামালের মাথায় ও হাতে জখম রয়েছে। হৃদয়ের কোমরে ক্ষত রয়েছে। সুভাষের মাথায় ক্ষত আছে। কামালের স্ত্রী সানোয়ারা খান সানু জানান, তার স্বামী আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। এখন উত্তর শাহজাহানপুরে থাকেন এবং একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। সানু বলেন, কামালের ডান হাতের মাংস পুরোটাই নেই। কাল পরশুর মধ্যে অপারেশন হবে। এখন তার জন্যই হাসপাতালের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াতে হচ্ছে। কামাল রোববার সন্ধ্যায় চশমা ঠিক করার জন্য মগবাজারে গিয়ে এ দুর্ঘটনায় পড়েন। উপর থেকে তার গায়ের উপর কাঁচ ভেঙে পড়লে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি।

বরিশাল বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হৃদয় কিছুদিন আগেই ঢাকার নাখালপাড়ার মামা ইকবাল হোসেনের বাসায় বেড়াতে আসেন। তিনি সেগুনবাগিচা থেকে মামার সঙ্গে আল-মক্কা পরিবহনে করে বাসায় ফিরছিলেন। পথেই দুর্ঘটনার শিকার হন হৃদয় এবং তার মামা ইকবাল। হৃদয়ের বড়ভাই ইমাম হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই হৃদয় আর মামা দুজনকে আদদীন হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মামার পেটে জখম হওয়ায় ১৮টা সেলাই লাগে। সেলাইয়ের পর তাকে সেদিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। হৃদয়ের কোমরে ক্ষত রয়েছে বলে ডাক্তার বলেছেন। এখনও চিকিৎসা চলছে। কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়বে, সে কথা এখনও বলেনি।

সুভাষ চন্দ্র সাহার ছেলে সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, তার বাবা পুরান ঢাকার ইসলামপুরে কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি বাসে ছিলেন। বাসের জানালার কাঁচে তার মাথায় জখম হয়। এখনও তিনি কোন কথা বলতে পারেন না। রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঢাকার মগবাজার ওয়ারলেস গেট এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় তিনতলা ভবনটি আংশিক ধসে পড়া ছাড়াও আড়ং, বিশাল সেন্টারসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাঁচ ভেঙে সড়কে পড়ে। ওই ভবনের লোহার গ্রিল, আসবাবপত্র, ভবনের বিভিন্ন অংশ ছিটকে এসেছে রাস্তায় যানবাহনের উপর পড়ে। এতে আল মক্কাসহ দুটি বাস চুরমার হয়ে যায়।

বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৮ ১৮ জিলক্বদ ১৪৪২

বিস্ফোরণে ৩ জনের ৯০ ভাগ দগ্ধ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক, তাদের দেহের ৯০ শতাংশজুড়ে আগুনের ক্ষত। তারা হলো- মো. নুরুন্নবী (৩৫), ইমরান হোসেন (২৫) ও মো. রাসেল (২১)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউতে রয়েছেন তারা। ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন গতকাল বলেন, আইসিইউতে থাকা এই তিনজনের শরীরের ৯০ শতাংশই দগ্ধ। বলতে গেলে তারা এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই রয়েছেন। যে কোন মুহূর্তে খারাপ কিছু ঘটতে পারে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে সাধারণ বেডে ভর্তি আছেন মো. জাফর আহামেদ (৬১) ও আবুল কালাম কালু (৩৩) নামে দুইজন। তাদের সম্পর্কে সামন্ত লাল সেন বলেন, তাদের অবস্থা আগের মতো থাকলেও আশঙ্কাজনক নয়। তাদের চিকিৎসা চলছে, রিকভারি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শরীরের প্রায় পুরোটাই ঝলসে গিয়ে আইসিইউতে থাকা নুরুন্নবী পেশায় ভ্যানচালক। তিনি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাজপুর গ্রামের ইসলাম মন্ডলের ছেলে। ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগনাল এলাকার একটি মেসে থাকেন। আবদুল্লাহ নামের ছয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। নুরুন্নবীর স্ত্রী পপি বেগম জানান, ভ্যান চালিয়ে বাড্ডা থেকে ফেরার পথেই মগবাজারে বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন তার স্বামী। নুরুন্নবীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে পপি বলেন, উনি সকালে ডাবের পানি খাইতে চাইছেন। তার ভাই ডাবের পানি এনে দিছেন। নাকের নল দিয়ে তিনি খাইছেন। টুকটাক কথা বলতে পারলেও তার অবস্থা ভালো না। কী হবে, তা আল্লাহই জানে।

গুরুতর দগ্ধ ইমরান ও রাসেল বেঙ্গল মিটসে চাকরি করতেন। বিস্ফোরণে আংশিক ধসে পড়া তিনতলা ভবনটির নিচে বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র। রাসেলের চাচা মানারুল হক বলেন, গতকাল রাসেলের সঙ্গে কথা হলো। বারবার বলতেছিল- চাচা আমি বাঁচব না। রাসেলের পরিবার ঠাকুরগাঁওয়ে থাকে। বাবা কৃষক। আমি তারে পড়াশোনা করাইছি। আমিই লালনপালন করছি। ছেলেটা আর বাঁচবে না ভাবলে কিছু ভালো লাগতেছে না। সহ্য করা মুশকিল।

বার্ন ইনস্টিটিউটে সাধারণ বেডে ভর্তি জাফর আহমেদের ভাগ্নে জহির উদ্দিন বলেন, উনার শরীরে পোড়া কম, তবে ইনজুরি আছে। তার গলায় কাঁচের টুকরা ছিল বলে ডাক্তাররা বলেছেন। এছাড়া সারা শরীরে অসংখ্য কাঁচের টুকরা আছে। ঘটনার সময় জাফর মালিবাগ থেকে মগবাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন বলে জানান জহির। একই ঘটনায় আহত তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ভর্তি রয়েছেন। তারা হলেন- এসএম কামাল হোসেন (৪২), সুভাষ চন্দ্র সাহা (৩২) ও মো. হৃদয়(২৭)। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলের সাধারণ বেডে ভর্তি শামীমকে (৩০) সোমবার রাতে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

তিনি বলেন, কামালের মাথায় ও হাতে জখম রয়েছে। হৃদয়ের কোমরে ক্ষত রয়েছে। সুভাষের মাথায় ক্ষত আছে। কামালের স্ত্রী সানোয়ারা খান সানু জানান, তার স্বামী আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। এখন উত্তর শাহজাহানপুরে থাকেন এবং একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। সানু বলেন, কামালের ডান হাতের মাংস পুরোটাই নেই। কাল পরশুর মধ্যে অপারেশন হবে। এখন তার জন্যই হাসপাতালের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াতে হচ্ছে। কামাল রোববার সন্ধ্যায় চশমা ঠিক করার জন্য মগবাজারে গিয়ে এ দুর্ঘটনায় পড়েন। উপর থেকে তার গায়ের উপর কাঁচ ভেঙে পড়লে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি।

বরিশাল বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হৃদয় কিছুদিন আগেই ঢাকার নাখালপাড়ার মামা ইকবাল হোসেনের বাসায় বেড়াতে আসেন। তিনি সেগুনবাগিচা থেকে মামার সঙ্গে আল-মক্কা পরিবহনে করে বাসায় ফিরছিলেন। পথেই দুর্ঘটনার শিকার হন হৃদয় এবং তার মামা ইকবাল। হৃদয়ের বড়ভাই ইমাম হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই হৃদয় আর মামা দুজনকে আদদীন হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মামার পেটে জখম হওয়ায় ১৮টা সেলাই লাগে। সেলাইয়ের পর তাকে সেদিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। হৃদয়ের কোমরে ক্ষত রয়েছে বলে ডাক্তার বলেছেন। এখনও চিকিৎসা চলছে। কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়বে, সে কথা এখনও বলেনি।

সুভাষ চন্দ্র সাহার ছেলে সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, তার বাবা পুরান ঢাকার ইসলামপুরে কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি বাসে ছিলেন। বাসের জানালার কাঁচে তার মাথায় জখম হয়। এখনও তিনি কোন কথা বলতে পারেন না। রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঢাকার মগবাজার ওয়ারলেস গেট এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় তিনতলা ভবনটি আংশিক ধসে পড়া ছাড়াও আড়ং, বিশাল সেন্টারসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাঁচ ভেঙে সড়কে পড়ে। ওই ভবনের লোহার গ্রিল, আসবাবপত্র, ভবনের বিভিন্ন অংশ ছিটকে এসেছে রাস্তায় যানবাহনের উপর পড়ে। এতে আল মক্কাসহ দুটি বাস চুরমার হয়ে যায়।