পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

দুটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় বন্যার পদধ্বনি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। মিয়ারচর এলাকার যাদুকাটা নদীতে পড়ে সহোদর দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ দুই শিশু হলো বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের মস্তু মিয়ার পুত্র মেরাজুল ইসলাম (১০) ও খায়রুল ইসলাম (৭)।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সবিবুর রহমান জানান, যাদুকাটা নদীর পানি সমতলে বিপদ সীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সুরমা নদীর পানি সমতলে বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার চিলাই, মৌলা ও খাসিয়ামারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১১৬ মিলিমিটার ও লাউড়ের গড়ে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের চেরা পুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর ও বিশ্বমভরপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা দুর্গাপুর এবং তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সেতুর পাশের সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির জানান, উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আরও পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যার আশঙ্কা আছে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চোধুরী বাবুল বলেন, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং করোনার কারণে মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় আছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর বোগলা, বাংলাবাজার ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, পেকপাড়া, চিলাইপাড়, বাশতলাসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চিলাই, মৌলা ও খাসিয়ামারা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বোগলা বাজার ইউনিয়নের আলমখালী গ্রামের চিলাই নদীর বাঁধ সংস্কার না করায় এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, দুটি ইউনিয়ন নরসিংপুর ও বোগলাবাজারের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদীদ জানান, কিছু সড়ক প্লাবিত হওয়ায় মানুষ নৌকায় পারাপার হচ্ছে। মিয়ারচর এলাকার যাদুকাটা নদীতে পড়ে সহোদর দুই শিশু নিখোঁজ আছে। ডুবুরি দল নিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। তবে প্রবল স্রোতে উদ্ধার তৎপরতায় বিঘœ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উপজেলার নির্বাহী অফিসারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৮ ১৯ জিলক্বদ ১৪৪২

পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

দুটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

image

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় বন্যার পদধ্বনি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। মিয়ারচর এলাকার যাদুকাটা নদীতে পড়ে সহোদর দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ দুই শিশু হলো বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের মস্তু মিয়ার পুত্র মেরাজুল ইসলাম (১০) ও খায়রুল ইসলাম (৭)।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সবিবুর রহমান জানান, যাদুকাটা নদীর পানি সমতলে বিপদ সীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সুরমা নদীর পানি সমতলে বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার চিলাই, মৌলা ও খাসিয়ামারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১১৬ মিলিমিটার ও লাউড়ের গড়ে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের চেরা পুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর ও বিশ্বমভরপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা দুর্গাপুর এবং তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সেতুর পাশের সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির জানান, উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আরও পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যার আশঙ্কা আছে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চোধুরী বাবুল বলেন, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং করোনার কারণে মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় আছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর বোগলা, বাংলাবাজার ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, পেকপাড়া, চিলাইপাড়, বাশতলাসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চিলাই, মৌলা ও খাসিয়ামারা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বোগলা বাজার ইউনিয়নের আলমখালী গ্রামের চিলাই নদীর বাঁধ সংস্কার না করায় এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, দুটি ইউনিয়ন নরসিংপুর ও বোগলাবাজারের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদীদ জানান, কিছু সড়ক প্লাবিত হওয়ায় মানুষ নৌকায় পারাপার হচ্ছে। মিয়ারচর এলাকার যাদুকাটা নদীতে পড়ে সহোদর দুই শিশু নিখোঁজ আছে। ডুবুরি দল নিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। তবে প্রবল স্রোতে উদ্ধার তৎপরতায় বিঘœ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উপজেলার নির্বাহী অফিসারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।