শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবাস্তব

করোনার সময়কালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শীঘ্রই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো বলে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।

গতকাল সংসদে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাবেরও পর তাদের বক্তব্য দেন। এ সময় কোন কোন সংসদ সদস্য স্কুল খুলে দেয়ার দাবি করেন। অবশ্য কেউ কেউ এর বিরোধিতাও করেন।

বিজ্ঞানকে নিয়ে চলতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বৈশ্বিক সংকট করোনা অতিমারীর মধ্যে চলতে পারি না। বিজ্ঞান বলছে শতকরা ৫ শতাংশ বা তার কমে সংক্রমণের হার না নামা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, বিজ্ঞান সম্মত নয়। এখন সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশ। কোন কোন জেলায় সংক্রমণ ৫০ শতাংশ বা তারও ঊর্ধ্বে। এই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি আদৌ যৌক্তিক কী না তা ভেবে দেখার দরকার আছে। কারণ এই সংসদ জাতির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করেছিল। তারা খোলার পরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরে আবারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে শ্রেণী সাইজ ২০/২৫ জনের বেশি নয়। আমাদের এখানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গায়ে গায়ে লেগে বসে থাকে। সেখানে খোলার প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের কেউ কেউ খুলে দেয়ার কথা বললেও এ সময় খোলা হলে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না বলে একবাক্যে জবাব দেন। তারা বলেন, সন্তানদের মেরে ফেলার জন্য পাঠাতে পারি না। তাদের বিভিন্নভাবে এক্সপ্রেশন প্রকাশ করেন।

শীঘ্রই এসএসসি-এইচএসসির সিদ্ধান্ত

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বহু দেশ এমন কী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করেছে। কোন কোন প্রেডিকটেড গ্রেড দিচ্ছে। আমরা সেখানে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ফেলেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিক দুই/তিনদিন আগে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে আমরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তার ফলাফল দিয়েছিলাম। আমরা যেভাবে বিচার বিশ্লেষণ ও টালি করে ফলাফল দিয়েছি দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল এরকমই হতো। কাজেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

তিনি বলেন, এ বছরের সিদ্ধান্ত আমরা খুব শীঘ্রই জানাব। কী পদ্ধতি আমরা করব সবকিছুই আমরা জানাব। তবে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সবাইকে বলব উদ্বিগ্ন হবেন না। বৈশ্বিক সংকট চলছে।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সারা বিশ্বেই ব্যত্যয় ঘটেছে। আমাদের এখানেও কিছুটা ঘটেছে। কিন্তু তাদের যাতে দীর্ঘ মেয়াদে কোন ক্ষতি না হয়ে যায় তার জন্য সর্বোচ্চ নজর রাখছি। আমরা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।

বিকল্প সময়ে সরকার দ্রুত সময় পাঠদান শুরু করেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যত দ্রুত সক্ষম হয়েছি, বিশ্বের আর কোথাও এত দ্রুত শুরু করেনি। যে কারণে বিশ্বে শিক্ষা নিয়ে কোন সভা হলে বাংলাদেশের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইনে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়টির প্রশংসা করা হয়।

তিনি বলেন, দেশি-আন্তর্জাতিক নানা ধরনের জরিপ বলছে ৪৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান গ্রহণ করতে পারছে। সর্বনিম্নটা ধরে নিয়ে আমরা এই হার বাড়াতে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে গেছি। এতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার মধ্যে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয় সন্তুষ্টি রয়েছে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান বলছে শিশুদের মাধ্যমে ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। তারা নিজেরা হয়তো আক্রান্ত হলে তাদের সিমট্রম হয়তো থাকবে না কিন্তু বাড়িয়ে গিয়ে তাদের বাবা-মাসহ অন্যদের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় অনন্ত একজন করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে। তার মাধ্যমে মাঠপ্রশাসনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সংসদ সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বিষয়ে আপীল করা হয়েছে।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা সভাপতি থাকতে পারবেন না বলে আদালতের নির্দেশনার প্রসঙ্গটি ওঠে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখানে আইনমন্ত্রী রয়েছেন। উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আপিল হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে। আমরা আশাকরি আপিলটি যখন ওঠবে শুনানি হবে। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথোপযুক্ত দায়িত্ব পালন করবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কোন নাগরিকের এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারেন না।

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৮ ১৯ জিলক্বদ ১৪৪২

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবাস্তব

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনার সময়কালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শীঘ্রই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো বলে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।

গতকাল সংসদে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাবেরও পর তাদের বক্তব্য দেন। এ সময় কোন কোন সংসদ সদস্য স্কুল খুলে দেয়ার দাবি করেন। অবশ্য কেউ কেউ এর বিরোধিতাও করেন।

বিজ্ঞানকে নিয়ে চলতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বৈশ্বিক সংকট করোনা অতিমারীর মধ্যে চলতে পারি না। বিজ্ঞান বলছে শতকরা ৫ শতাংশ বা তার কমে সংক্রমণের হার না নামা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, বিজ্ঞান সম্মত নয়। এখন সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশ। কোন কোন জেলায় সংক্রমণ ৫০ শতাংশ বা তারও ঊর্ধ্বে। এই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি আদৌ যৌক্তিক কী না তা ভেবে দেখার দরকার আছে। কারণ এই সংসদ জাতির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করেছিল। তারা খোলার পরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরে আবারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে শ্রেণী সাইজ ২০/২৫ জনের বেশি নয়। আমাদের এখানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গায়ে গায়ে লেগে বসে থাকে। সেখানে খোলার প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের কেউ কেউ খুলে দেয়ার কথা বললেও এ সময় খোলা হলে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না বলে একবাক্যে জবাব দেন। তারা বলেন, সন্তানদের মেরে ফেলার জন্য পাঠাতে পারি না। তাদের বিভিন্নভাবে এক্সপ্রেশন প্রকাশ করেন।

শীঘ্রই এসএসসি-এইচএসসির সিদ্ধান্ত

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বহু দেশ এমন কী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করেছে। কোন কোন প্রেডিকটেড গ্রেড দিচ্ছে। আমরা সেখানে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ফেলেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিক দুই/তিনদিন আগে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে আমরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তার ফলাফল দিয়েছিলাম। আমরা যেভাবে বিচার বিশ্লেষণ ও টালি করে ফলাফল দিয়েছি দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল এরকমই হতো। কাজেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

তিনি বলেন, এ বছরের সিদ্ধান্ত আমরা খুব শীঘ্রই জানাব। কী পদ্ধতি আমরা করব সবকিছুই আমরা জানাব। তবে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সবাইকে বলব উদ্বিগ্ন হবেন না। বৈশ্বিক সংকট চলছে।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সারা বিশ্বেই ব্যত্যয় ঘটেছে। আমাদের এখানেও কিছুটা ঘটেছে। কিন্তু তাদের যাতে দীর্ঘ মেয়াদে কোন ক্ষতি না হয়ে যায় তার জন্য সর্বোচ্চ নজর রাখছি। আমরা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।

বিকল্প সময়ে সরকার দ্রুত সময় পাঠদান শুরু করেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যত দ্রুত সক্ষম হয়েছি, বিশ্বের আর কোথাও এত দ্রুত শুরু করেনি। যে কারণে বিশ্বে শিক্ষা নিয়ে কোন সভা হলে বাংলাদেশের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইনে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়টির প্রশংসা করা হয়।

তিনি বলেন, দেশি-আন্তর্জাতিক নানা ধরনের জরিপ বলছে ৪৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান গ্রহণ করতে পারছে। সর্বনিম্নটা ধরে নিয়ে আমরা এই হার বাড়াতে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে গেছি। এতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার মধ্যে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয় সন্তুষ্টি রয়েছে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান বলছে শিশুদের মাধ্যমে ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। তারা নিজেরা হয়তো আক্রান্ত হলে তাদের সিমট্রম হয়তো থাকবে না কিন্তু বাড়িয়ে গিয়ে তাদের বাবা-মাসহ অন্যদের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় অনন্ত একজন করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে। তার মাধ্যমে মাঠপ্রশাসনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সংসদ সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বিষয়ে আপীল করা হয়েছে।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা সভাপতি থাকতে পারবেন না বলে আদালতের নির্দেশনার প্রসঙ্গটি ওঠে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখানে আইনমন্ত্রী রয়েছেন। উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আপিল হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে। আমরা আশাকরি আপিলটি যখন ওঠবে শুনানি হবে। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথোপযুক্ত দায়িত্ব পালন করবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কোন নাগরিকের এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারেন না।