দেশে ছয় মাসে ১২০ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার আসক

গত ছয় মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেশে (জানুয়ারি-জুন) ১২০ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। নির্যাতিত সাংবাদিকদের মধ্যে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আক্রান্ত হন, নির্বাচনী সহিংসতায় ১৩ জন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় ১৮ জন সাংবাদিক আহত হন। অন্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন সাংবাদিক মারা গেছেন।

গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) প্রকাশিত দেশের মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে গত ৬ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৬৭ জন। এদের মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৬১১ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ১৫৬ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ২৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৫ নারী। এছাড়া ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১৬৬টি। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে দেশে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৬৪ নারী। আর যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন নারী। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ জন পুরুষ, যাদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২ জন নারীও হত্যার শিকার হয়েছেন।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ছয় মাসে প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং ‘ক্রসফায়ারে’ ৩২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময় বা এনকাউন্টারে নিহত হন ২০ জন। এ সময়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ৯ জন ও নির্যাতনে ৩ জন মারা যান। এছাড়া এই ছয় মাসে কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে ৪১ জন বন্দী মারা যান। এর মধ্যে কয়েদি ১৩ জন ও হাজতি ২৮ জন।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৪ এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউন চলাকালে জনজীবনে বিভিন্ন সংকট দেখা দিলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু কিংবা বিনা বিচারে হত্যা, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা নির্যাতন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২১ সালের গত ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে শিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। এ সময়ে ৭২২টি শিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার। হত্যার শিকার হয়েছে ৩১৭টি শিশু। প্রতিবেদন বলছে, সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩৯টি শিশু নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৪২০টি শিশু ধর্ষণের শিকার, আত্মহত্যা করেছে ৫১টি শিশু, বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৫০টি ছেলে শিশু। উত্ত্যক্তের শিকার, শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন, শিক্ষকের মাধ্যমে নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও ২০৯টি শিশু।

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৮ ১৯ জিলক্বদ ১৪৪২

দেশে ছয় মাসে ১২০ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার আসক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গত ছয় মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেশে (জানুয়ারি-জুন) ১২০ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। নির্যাতিত সাংবাদিকদের মধ্যে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আক্রান্ত হন, নির্বাচনী সহিংসতায় ১৩ জন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় ১৮ জন সাংবাদিক আহত হন। অন্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন সাংবাদিক মারা গেছেন।

গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) প্রকাশিত দেশের মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে গত ৬ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৬৭ জন। এদের মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৬১১ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ১৫৬ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ২৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৫ নারী। এছাড়া ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১৬৬টি। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে দেশে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৬৪ নারী। আর যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন নারী। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ জন পুরুষ, যাদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২ জন নারীও হত্যার শিকার হয়েছেন।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ছয় মাসে প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং ‘ক্রসফায়ারে’ ৩২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময় বা এনকাউন্টারে নিহত হন ২০ জন। এ সময়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ৯ জন ও নির্যাতনে ৩ জন মারা যান। এছাড়া এই ছয় মাসে কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে ৪১ জন বন্দী মারা যান। এর মধ্যে কয়েদি ১৩ জন ও হাজতি ২৮ জন।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৪ এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউন চলাকালে জনজীবনে বিভিন্ন সংকট দেখা দিলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু কিংবা বিনা বিচারে হত্যা, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা নির্যাতন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২১ সালের গত ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে শিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। এ সময়ে ৭২২টি শিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার। হত্যার শিকার হয়েছে ৩১৭টি শিশু। প্রতিবেদন বলছে, সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩৯টি শিশু নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৪২০টি শিশু ধর্ষণের শিকার, আত্মহত্যা করেছে ৫১টি শিশু, বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৫০টি ছেলে শিশু। উত্ত্যক্তের শিকার, শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন, শিক্ষকের মাধ্যমে নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও ২০৯টি শিশু।